রবিউল আলম একজন রুমাল বিক্রেতা । ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় রুমাল বিক্রি করেন । সবসময় যে তিনি রুমালই বিক্রি করেন তা না । সিজন বুঝে নানা জিনিস বিক্রি করে বেড়ান ।
রবিউল আলমের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ । তাঁর স্ত্রী , সন্তান এবং মা সবাই পাবনা জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাস করেন । জীবিকার সন্ধানে রবিউল আলম এখন ঢাকায় ।
রাস্তার জামে আটকে থাকা বাসগুলো তাঁর টার্গেট । প্রতিদিনের মত আজকেও তিনি সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়েছেন । হাতে নানা রঙের রুমাল । থেমে থাকা একটি বাসে তিনি উঠে পড়লেন ।
এই রুমাল ...। মাত্র ১০ টাকা , রুমাল ।এই রুমাল ...। মাত্র ১০ টাকা ।
রবিউল আলম আশা নিয়ে তাকিয়ে আছেন । আর মাত্র কিছু টাকা জমলেই তিনি মায়ের জন্য একটা শাড়ি , ছেলে মেয়ের জন্য জামা নিয়ে যেতে পারবেন , এবার হয়তো স্ত্রীকে কিছু দিতে পারবেন না ।
কিন্তু এই গরমের মাঝেও কেউ রুমাল কিনছে না । একটা ছেলে ফস করে কোকের বোতল খুলল । সে দর দর করে ঘামছে , তাঁর হয়তো রুমাল প্রয়োজন । রবিউল আলম ছেলেটার পাশে গিয়ে রুমাল , এই রুমাল ১০ টাকা বলে চেঁচিয়ে উঠলেন । বাস ছেড়ে দিচ্ছে , ছেলেটা ফিরেও তাকাচ্ছে না । রবিউল আলম মনে মনে হিসেব কষছেন । আর মাত্র একদিন হাতে আছে তাঁর । এর মাঝেই দেশে যাবার টাকা আর বাজার করার টাকা তুলে ফেলতে হবে ।
বাসের গতি বাড়ছে , রবিউল আলমকে নেমে যেতে হবে । তিনি শেষবার কি একটু চেষ্টা করে দেখবেন ?
রবিউল আলমের চোখে ছেলেমেয়েগুলোর চেহারা ভেসে উঠল ।তাঁর চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে । রুমাল হাতে নিয়ে তিনি নেমে আসলেন । পরের বাসটাতে নিশ্চয়ই একটা হলেও রুমাল বিক্রি হবে ।
রবিউল আলম তাকিয়ে আছেন , পরবর্তী বাসটার জন্য ।