somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যক্তিত্বের ভঙ্গুরতা

০৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিয়ের আগে অনেকেই সিংহ থাকেন, আর বিয়ের পরেই হয়ে যান বিলাই। কথাটা সবার জন্য প্রযোজ্য না হলেও বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই সত্য। বিয়ের আগে তাদের এমন ভাব থাকে যা বলে বুঝানো যাবেনা। যেমন- যারা বউয়ের কথায় উঠা বসা করে তাদেরকে এরা অবজ্ঞাসুরে বলে এরা “কেমন পুরুষ মানুষ? আমি হলে বউকে হ্যান করতাম,ত্যান করতাম”। পরে অবশ্য তারাও একই খাতায় নাম লেখায়।
আসলে থিওরি আর প্র্যাক্টিকালের মধ্যে যে অনেক তফাৎ সেটা সবাই বুঝতে পারে; কেউ আগে কেউবা একটু পরে। স্কুলে পড়াকালীন আমাদের স্কুলের পাশের কলেজটাতে এক নতুন স্যার যোগ দিলেন। দেখতে হেব্বি হ্যান্ডসাম। পুরাই নায়ক।
কোন স্যারকে তার মত পোজে আগে কখনো দেখিনি। সেই সময়ের আলোচিত স্যার ছিলেন তিনি। স্কুল ও কলেজের ছেলে মেয়েদের মধ্যে তখন একটাই গুঞ্জন চলতো।
-স্যারের লুকটা দেখছিস?
-পুরাই অস্থির
-স্যার কি কখনো এত্ত সুন্দর হয়?
-স্যার নায়ক হলে ভাল করতেন।
-এই , স্যার কি বিবাহিত? ইত্যাদি ইত্যাদি।
স্যারকে নিয়ে শুধু কলেজের না, স্কুলের ছাত্রীদের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা কাজ করতো। একদিন জানতে পারলাম আমাদের ক্লাসের মেয়েরা গোপনে নায়ক স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়া শুরু করে দিয়েছে। তারপর আমরা মেয়েদেরকে একটু খুঁচিয়ে কথা বলতাম,
-কিরে স্যার কি শুধু মেয়েদের পড়ায় নাকি? স্যারের কাছে পড়ার পর তোরাও বেশ সুন্দরী হয়ে যাচ্ছিস যে!! ব্যাপার কি? আমাদের কি নেওয়া যায়না তোদের ব্যাচে? নাকি সমস্যা হবে?
ওরা একদিন ব্যাপারটা নায়ক স্যারকে বলে দিল। নায়ক স্যার আমাদের দেখা করতে বললেন। আমাদের মধ্যে অনেকে ভয় পেয়ে গেল। তারা বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা বলতে লাগলো। আমি বললাম চল, দেখা করি। হাজার হলেও তিনি তো আর আমাদের স্কুলের স্যার না। কি-ই বা করতে পারবেন।
আমরা দেখা করতে গেলাম। স্যার অফিসে প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কথা বলছিলেন। আমাদের সাথে মেয়েরাও ছিল। স্যার তো আর আমাদের চিনেন না। মেয়েদের দেখে অফিস থেকে বের হয়ে আসলেন। আমরা একটু দূরে দাঁড়িয়েছিলাম। মেয়েরা স্যারকে আমাদের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখালো।নায়ক স্যার আমাদের ডাকলেন। আমাদের বললেন বাইরে কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে। প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে নাকি ওনার জরুরি মিটিং আছে। বেশিক্ষন লাগবেনা বলে উনি চলে গেলেন। মেয়েরাও মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে চলে গেল। মিটিং শেষে স্যার আমাদের একটা ক্লাসরুমে নিয়ে গেলেন। প্রথমে সবার সাথে পরিচিত হলেন। আমরা কিছু বলার আগেই স্যার বললেন- তোমরা কবে থেকে শুরু করতে চাও? আমরা তো অবাক।
কেউ কিছু বলছিলাম না। স্যার আবার বললেন- আমি আগামি দুই দিনের জন্য ছুটি নিয়েছি। তাহলে আমরা দুইদিন পর থেকেই শুরু করি, কি বল? আমরা তখনও কিছু বুঝতে পারছিলাম না। আমরা শুধু মাথা নাড়লাম। উঠার সময় স্যার আবার বললেন বেতন নিয়ে কিছু বলার নেই, মেয়েরা যা দেয় তোমরাও তাই দিয়ো। মেয়েরা কয়েকদিন ধরে ব্যাপারটা আমাকে বলছিল, আমি সময় পাচ্ছিলাম না। তাছাড়া ওদের ব্যাচে স্টুডেন্টও কম ছিল। দেখা হবে বলে স্যার সেইইই স্টাইলিশ ভঙ্গিতে হেটে চলে গেল। এতক্ষণে আমরা ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। পরের দিন মেয়েদেরকে ব্যাপারটা বলতেই ওরা হেসে লুটোপুটি। অবশেষে আমরা স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়া শুরু করলাম।
প্রতিদিন স্যার লেইট করে আসতো। সানগ্লাস পরে, চুলগুলো বাতাসে উড়িয়ে, প্যান্টের এক পকেটে হাত ঢুকিয়ে হেলে দুলে আসতো আমাদের নায়ক স্যার। আর আমরা স্যারকে নিয়ে বিশ্লেষণ করতাম। স্যার আমাদের বেশিক্ষন পড়াতোনা। বেশিরভাগ সময় আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতেই তার সময় চলে যেত। বেশিরভাগ প্রশ্নই ছিল স্যারের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। মেয়েরা বেশি ইন্টারেস্টেড ছিল। স্যার কি পছন্দ করে, কি অপছন্দ করে, কেমন মেয়ে স্যারের পছন্দ, স্যারের পড়াশুনা জীবন। স্যারও বিরক্ত হতেন না। মেয়েদের এক প্রশ্নের জবাবে স্যার বললেন-
-এমন কোন মেয়ে নেই যে আমাকে পাল্টে দিবে। আমি যেমন আছি তেমনই থাকবো। আমার পারসোনালিটি কেড়ে নিবে এমন মেয়েই জন্ম নেয়নি। কিন্তু তখন কি আর জানতাম সেই মেয়ে আরো ১৮-২০ বছর আগে জন্ম নিয়েছিল?
আমরা কলেজে যেতে না যেতেই অঘটন ঘটে গেল। কলেজের সেই ১৮-২০ বছরের মেয়ের হাত ধরে স্যার পালিয়ে গেলেন। মজার ব্যাপার হলো স্যার যতদিন কলেজে ছিলেন ততদিনই আলোচনায় ছিলেন সবসময়। তবে এবার একটু বেশি।
স্যারের সেই দিনের কথাগুলো আমার মনে ছিল। আর তাই জানতে ইচ্ছে হল, স্যারের জীবনে আসা সেই মেয়ে স্যারের পারসোনালিটি কেড়ে নিতে পেরেছে কি না। পরে যা জানলাম তা এমন-
স্যার বেশ সুখেই আছেন। প্রথম দিকে দুইজনই হাসাহাসি করে সময় পার করেছেন। তবে একজন যখন হাসতো তখন আরেকজন চুপ করে থাকতো। কেন? দুজনেই একই সাথে হাসতে পারেন না? এমন প্রশ্ন অনেকেই করতে পারেন। সিচুয়েশনটা বলেলে হয়তো বুঝতে পারবেন কেন তারা একসাথে হাসাহাসি করতে পারেন নি। দাম্পত্য জীবনের শুরুতেই স্যার নোটিশ করলেন বউয়ের অগ্নিমূর্তি।


বাসন-কোসন হাতের কাছে যাই পেত তাই দিয়ে স্যারের উপর হামলা করতো। যতবার স্যারের গায়ে হাঁড়ি-পাতিল লেগেছে ততবারই বউয়ের মুখের হাসি শুনা গেছে। মাঝে মাঝে যখন দুই একটা মিস হত তখন স্যারের মুখে রাজ্য জয়ের হাসি ফুটে উঠত। এজন্যই দুজনে একসাথে হাসতে পারেন নি। স্যার বলেছিলেন বৃদ্ধা মাকে কখনো একা ফেলে কোথাও যাবেন না। কিন্তু বউয়ের সাথে এমন লুকোচুরি হাসাহাসি খেলার জন্য হয়তো বৃদ্ধা মাকে একা রেখে শহরে পাড়ি জমান।
এরপরে স্যারের কোন আপডেট আমার জানা নেই। তবে নিজের কল্পনাশক্তি ব্যবহার করে আপনাদের কিছু বলতে চাই।
স্যার সর্বদা অস্বস্তিতে ভুগছেন। কোন কিছুতেই স্যার শান্তি খুঁজে পান না। স্যারের বউ স্যারের কাছে বিষের কাঁটারুপে আবির্ভূত হয়েছে। স্যার যখন একা থাকেন তখন আগের দিনগুলোর কথা ভাবেন।(কল্পনা) স্যারের মা তার পছন্দের মেয়েকে স্যারের সাথে বিয়ে দিয়েছেন। লক্ষ্মী বউ এসেছে সংসারে। সবকাজ একাই করছে। মাকে সেবাযত্ন করছে, স্বামীর প্রতি খেয়াল রাখছে। একটি সুখী সংসারের স্বপ্ন হয়তো স্যার এখনো দেখেন যদিও তিনি জানেন এ স্বপ্ন পূরণ হবার নয়।
স্যারকে রেখেই একদিন ম্যাডাম শপিং করতে গেলেন। রাত নয়টা বাজলেও ম্যাডাম ফিরে আসলোনা। স্যার চিন্তায় পড়ে গেলেন। কিছুক্ষন পর একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে স্যারের মোবাইলে ফোন আসলো। ওপার থেকে মোটা গলায় কেউ একজন বললো
-আপনার ওয়াইফ এখন আমাদের হাতে, এক লক্ষ টাকা নিয়ে আসুন, ওয়াইফকে নিয়ে যান।
স্যার ফোন রেখে দিলেন।
স্যারের কাছে একলক্ষ টাকা থাকা সত্ত্বেও স্যার আরো এক লক্ষ টাকা যোগাড় করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু কেন? ওরা তো এক লক্ষ টাকা চেয়েছে। বাকি টাকার দরকার কি? দরকার আছে আছে।
লোকটি ফোন করে স্যারের কাছে থেকে কোন রেসপন্স পাচ্ছিলনা। পরে লোকটি আবার ফোন করে বলেছিল
-আর এক লক্ষ টাকা বাড়াইয়া দিলে আপনার ওয়াইফের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে আমি রাজী আছি।
স্যার পরের প্রস্তাবে রাজী হয়েছেন। হয়তো যে স্বপ্নগুলো স্যারের কাছে অসম্ভব ও অপূরণযোগ্য মনে হয়েছে এতদিন, সেটিকেই পূরণ করার অদম্য ইচ্ছাশক্তি আজ ভর করেছে তার মাথায়।

৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×