somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশুদের বিকলাঙ্গ বানিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করছে একটি চক্র কেন এই বর্বরতা?

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজধানীতে বিকলাঙ্গ বানিয়ে শিশুদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের সদস্য শরিফুল ইসলাম কোরবানকে মঙ্গলবার রাতে উত্তরা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। একটি মানবাধিকার
সংগঠনের সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত কোরবান ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ৭ বছরের শিশু নিয়ামত বিকলাঙ্গ বানানোর লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। এই উপলক্ষে র‌্যাব সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের প্রধান কমান্ডার মোহাম্মদ সোহায়েল, ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এডভোকেট এলিনা খান, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীসহ র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের প্রধান কমান্ডার মোহাম্মদ সোহায়েল জানান, সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলে অনুষ্ঠান দেখে মঙ্গলবার রাতে র‌্যাবের গোয়েন্দারা উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের খালপাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে সিন্ডিকেট গ্রুপের অন্যতম সদস্য শরিফুল ইসলাম কোরবানকে গ্রেফতার করে। গত ৬ চেম্বার কামরাঙ্গীরচর এলাকার রিকশা চালক উমেদ আলীর ৭ বছরের ছেলে নেয়ামতকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় কোরবান। তাকে একই এলাকার পাকাপুল রেড়িবাঁধের পাশে পরিত্যক্ত একটি বিল্ডিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় কোরবান ও তার অপর সহযোগী সালাউদ্দিন, নাজমা, রনি, এমরান, রাসেল, রমজান ও সাদ্দামের সহযোগিতায় ধারালো ব্লেড দিয়ে শিশুটির পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে। অন্যরা তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ধারালো ব্লেড দিয়ে কেটে ক্ষতবিক্ষত করে। সংকটাপন্ন অবস্থায় নেয়ামত পালিয়ে এসে বাবা-মাকে সব খুলে বলে। এ ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা কামরাঙ্গীরচর থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। ফলে বাধ্য হয়ে তারা আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিববরণ শুনে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের পক্ষে এডভোকেট এলিনা খান ও ব্ল্যাক ট্রুথ প্রডাক্ট্রশনস সেন্টারের প্রধান অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী।
অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী বলেন, শিশুটিকে অসুস্থ অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করলেও একমাস হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই ফ্লোরে পড়েছিল। পরে এক মাস ছয় দিন পর তাকে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে একটু সুস্থ হলে শিশুর মুখ থেকে বর্ণনা শুনে তিনি এর সঙ্গে জড়িতদের ধরতে বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা চালান। কিন্তু প্রথমেই তিনি পুলিশের কাছ থেকে বাধার সম্মুখীন হন। তিনি আরও বলেন, আসামিরা পুলিশের সামনে ঘুরলেও কাউকে ধরা হয়নি। এ অবস্থায় মামলা তদন্তকারীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে জানান, মাত্র ৫ হাজার টাকায় মামলাটি মীমাংসা হয়ে গেছে। একই সঙ্গে তিনি এটাও জানতে পারেন, ঘটনায় উল্টো নেয়ামতের বাবা ও মামলার সাক্ষীসহ চার জনকে আসামি করে আসামিরা একটি অপহরণ মামলা করেছে।
রোকেয়া প্রাচী বলেন, এ সবই হয়েছে সাজানো নাটকের মতো। মামলা-মীমাংসা এবং অপহরণ মামলা সাজানোর বেলায় ভুয়া লোক দাঁড় করিয়ে তা করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নেয়ামতের দেয়া তথ্য মতে কথা বলেন অভিযুক্ত কোরবানের সঙ্গে। কোরবান ক্যামেরার সামনে সব অকপটে স্বীকার করেন। পরে তা একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয়। পরে তিনি র‌্যাবের সহযোগিতা নেন।
গ্রেফতারকৃত কোরবান জানায়, সে তার বস ওমর ফারুকের নির্দেশে অন্য সহযোগীদের নিয়ে কয়েক বছর যাবৎ এ কাজ করে। সে নিজেই শিশু নেয়ামতের পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে। ২০০৬ সালে রাহাত নামে এক শিশুর পায়ের রগ কেটে পঙ্গু করে তাকে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামানো হয়। ২০০৮ সালে আরেকটি শিশুকে ধরে নিয়ে ৬ মাস এলুমিনিয়াম পাতিলের ভেতরে আটকে রেখে পঙ্গু করে পরে ভিক্ষবৃত্তিতে নামায়। ২০০৪ সালে খুলনা জেলার শরীফ নামক ১৫ বছরের একটি ছেলেকে কামরাঙ্গীরচরের বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে অপহরণ করে বাম হাতের কব্জি কেটে দেয়। সে আরও জানায়, তার বস ফারুক কামরাঙ্গীরচরে একটি ক্লাবের ভেতরে বসে এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। তার নির্দেশে সিন্ডিকেটের সদস্যরা অসংখ্য শিশুকে নানাভাবে পঙ্গু করে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামিয়েছে। এ কাজ করলে প্রচুর টাকা দেয়া হয়। তাছাড়া ফারুক শিশুদের ভিক্ষার জন্য ভাড়া দেয়ার বিনিময়ে দৈনিক আয়ের অর্ধেক টাকা নেয়। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শিশুদেরকে ভিক্ষার জন্য ভাড়া দেয়া হয়।
নির্যাতনের শিকার শিশু নিয়ামত জানায়, তাকে যেখানে ধরে নেয়া হয়েছে, সেখানে আরও ৫টি শিশুকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তার পুরুষাঙ্গ কাটার পরও শরীর ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আকুতি-মিনতি করেও তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। তাদের কঠোর শাস্তি হলে একটু হলেও শান্তি পাব এ কথা বলেই সে অঝোরে কাঁদতে থাকে।
১২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×