somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রবীন্দ্রনাথের কোন বিকল্প নাই -১৪

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির সন্তান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ক্লাসিক থিয়েটারে তার নাটক 'রাজা ও রানী'র রিহাসার্ল দেখে সন্তুষ্ট হয়ে মঞ্চস্থ করার অনুমতি দিয়েছিলেন।রবি বাবু শুধু নাট্যকার নন,তিনি একজন ভালো গায়ক এবং সখের অভিনেতা হিসেবেও বেশ সুনাম ছিল।অনেক অভিনেত্রী এই অপরুপ মানুষটির সাথে শুধু একবার মঞ্চে অভিনয় করার জন্য অস্থির থাকতেন।কারন রবীন্দ্রনাথ সকলের চেয়ে আলাদা।তিনি সব সময় রাজা বাদশাদের মতো কারুকার্যময় আচকান পড়তেন।তার সারা শরীরে পুরুষোচিত দীপ্তি অথচ হাতের আঙ্গু্ল গুলি কী কমল।টানা টানা দু'টি চোখ কি গভীর।সারা মুখে চিকন দাঁড়ি।একদিন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে বলেন্দ্র আর রবীন্দ্রনাথ রামকৃষ্ণের শিষ্য স্বামী বিবেকান্দ আর জগদীশ চন্দ্র বসু কে দারুন আলোচনা করেন।(ওই সময় তারা দু'জন সারা পৃথিবীময় আলোচিত।)রবীন্দ্রনাথ জগদীশ চন্দ্রকে সামান্য চেনেন।তবে তেমন ঘনিষ্টতার সুযোগ ঘটেনি।একবার জগদীশ চন্দ্র বসু রবীন্দ্রনাথকে প্রেসিডেন্সি কলেজে আমন্ত্রন জানিয়ে ফোনোগ্রাফ যন্ত্রে তার কন্ঠে ব্রহ্ম সঙ্গীত রের্কড করিয়ে ছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ কবি হলেও সব সময় ভাবের জগতে থাকতেন না।অন্যান্য নানা বিষয়ের মতন বিজ্ঞানেও তার যথেষ্ট উৎসাহ ছিল।সময় পেলেই তিনি বিজ্ঞানের বই পড়তেন।একদিন হঠাৎ করে রবীন্দ্রনাথ জগদীশ চন্দ্রের সাথে দেখা করতে -তার বাড়ি যান,দুর্লভ ম্যাগনোলিয়া ফুলের একটি গুচ্ছ নিয়ে।কিন্তু জগদীশ চন্দ্র এবং তার স্ত্রী সেদিন বাড়ি ছিলেন না।রবীন্দ্রনাথ একটি চিরকূটে লিখে দিলেন- "বিজ্ঞান লক্ষ্মীর প্রিয় পশ্চিম মন্দিরে/দূর সিন্ধুতীরে/হে বন্ধু গিয়েছ তুমি জয় মাল্যখানি/সেথা হতে আমি/দীনহীনা জননীর লজ্জানত শিরে/পরায়েছ ধীরে।"
সরলা এবং ইন্দিরা যথাক্রমে পঁচিশ ও চব্বিশ বছর বয়স পর্যন্ত কুমারী থেকে ঠাকুর পরিবারে দারুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।সেই সময় শুধু ঠাকুর বাড়ি কেন বাংলায় আর কোনো ভদ্র,উচ্চবংশীয় পরিবারে এরকম সৃষ্টিছাড়া ব্যাপার একেবারে অকল্পনীয়।বেশ কিছু মানুষ সেই সময় রবীন্দ্রনাথের নামে কুৎসা রটাতো।কিছু খারাপ মানুষ সবসময় সব জায়গাতে থাকেই।খারাপ মানুষ গুলো বলতো- রবিবাবু বাঙালদেশে জমিদারি দেখতে গিয়ে বজরায় থাকতেন,মাটিতে পা দিতেন না।রবিবাবুর সেই বজরায় সাহেবরা,জমিদাররা,ব্যবসায়িরা আসতেন।খুব খানাপিনা হতো।সেখানে কি আর বাঈজী নাচে নি?সব জমিদাররা প্রত্যেক রাতে একটা করে বারবনিতা ধরে আনত।তাদের প্রত্যেকের বাঁধা মেয়েমানুষও আছে।রবিবাবুর বিয়ে করা বউয়ের ঘরে পাঁচটি ছেলে মেয়ে,আরও কত ছেলে মেয়ে কত জায়গায় ছড়িয়ে আছে কে জানে!(ফেরেশতার মতো মানুষটিকে নিয়ে কত বাজে কথা ছড়ানো হয়ো!)

আমি বুঝি না,রবীন্দ্রনাথ রমনীদের মনের কথা এমন সত্যভাবে প্রকাশ করেছেন কোন মন্ত্রবলে?তিনি যেন রমনীদের অন্তরের গহনে ডুব দিয়েছেন।কিংবা যেন পূর্বজন্মে নারী ছিলেন তাই তাদের ব্যথা-বেদনা-আকাংখার কথা ঠিক ঠিক জানতেন।"বৃথা এ বিড়ম্বনা!/কিসের লাগিয়া এতই তিয়াষ/কেন এত যন্ত্রনা!/আপন প্রানের গোপন বাসনা/টুটিয়া দেখাতে চাহিরে-/হৃদয় বেদনা হৃদয়েই থাকে,/ভাষা থেকে যায় বাহিরে।"

কোনও এক ঘোর বর্ষায় মৃণালিনী পুত্র কন্যাদের নিয়ে শান্তিনিকেতন থেকে চলে আসেন জোড়াসাঁকোয়।রবীন্দ্রনাথ তখন 'ভারতী' পত্রিকার জন্য লেখাপত্র সাজাতে বসে ছিলেন,অকস্মাৎ মৃণালিনী ঘরে প্রবেশ করে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন,তুমি আমার একটা কথা শুনবে?রবীন্দ্রনাথ মুখ তুলে মায়াভরা চোখে মৃণালিনীর দিকে তাকালেন।মৃণালিনী চুল খোলা,আঁচল মাটিতে পড়ে আছে,দুই চোখে টলটল করছে পানি।সারা চোখে মুখে ঝড়ের পূর্বাভাস।মৃণালিনী বললেন,তোমার অনেক কাজ জানি।সব সময় তুমি ব্যস্ত।তুমি এখানে যাও-সেখানে যাও।পৃথিবীর আর সবার জন্য তোমার সময় আছে,আমি কি তোমার স্ত্রী হয়ে দু'টো কথা বলারও সময় পাবো না?মৃণালিনী কথার মধ্যে এক আকাশ অপমানবোধ আর বেদনা মিশে ছিল।স্ত্রীর মেজাজ শান্ত করার জন্য রবীন্দ্রনাথ মৃণালিনীর এক হাত ধরে হেসে হেসে বললেন,কেন সময় পাবো না?তোমার জন্য আমি সব কাজ সরিয়ে রাখতে পারি।এই চেয়ারটিতে শান্ত হয়ে বসো।তারপর তুমি কি বলবে বলো- কিন্তু হাসি মুখে।মৃণালিনী বসলেন না,এক আকাশ অভিমান ভরা কন্ঠে বললেন,তোমাদের এ বাড়িতে আমি আর থাকব না।একদিনও থাকব না।রবীন্দ্রনাথ জানতে চাইলেন- কেন, এ বাড়ি কি করে তোমার অযোগ্য হলো?মৃণালিনী বললেন,এ তোমাদের বড় মানুষের বাড়ি,এখানে আমাকে মানায় না।আমি গ্রামের মেয়ে,এতদিন হয়ে গেল,তবুও অনেকেই এখানে আমাকে ঠেস দিয়ে কথা বলে,আড়ালে-আবডালে ফিসফিস করে,আমি সব শুনতে পাই,আমি নাকি ঘর সাজাতে পারি না,সব সময় রান্না ঘরে থাকলেই নাকি আমাকে মানায়।অর্থাৎ আমি শুধু রাঁধুনি।শুধু মাত্র বলু(বলেন্দ্র)ছাড়া আর কেউ নিজে থেকে আমায় ডেকে একটাও ভালো কথা বলে না।তাহলে এখানে আমি কেন থাকব?রবীন্দ্রনাথ নরম সুরে বললেন- মৃণালিনী তুমি কাঁদছ তা আমার বুকে বাজছে।তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো।তোমার সব কথা শুনব।এত বড় পরিবারে নানা রকম মানুষ থাকবেই।মৃণালিনী,রবিকে ধমক দিয়ে বললেন- আমি আর কিছু শুনতে চাই না।আর এক মিনিটও আমার এখানে থাকতে ইচ্ছা করছে না।রবীন্দ্রনাথ একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।সংসারে এক একটা তীক্ষ্ম সমস্যার করাঘাত যে হঠাৎ কখন কোণ দিক দিয়ে আসে তার ঠিক নেই।একটা নতুন গানের সুর তার মাথার মধ্যে গুনগুন করছিল,তা মৃণালিনীর কথা শুনে কোথায় মিলিয়ে গেল।জীবন শুধু কাব্য আর সঙ্গীতে মগ্ন থাকতে পারে না।কবিকেও প্রায়ই তুচ্ছ বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়।


(চলবে...)
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×