somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুবিধাবাদী লেখক এবং বোবা শয়তানের গল্প

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে লেখালেখির ক্ষেত্রে নাস্তিকতাকে প্রগতির সমার্থক শব্দ বানিয়ে দেয়া হয়েছে। যেন নাস্তিক বা তার কাছাকাছি যেতে না পারলে প্রগতিশীল লেখক হওয়া যাবে না! প্রগতির ঠিকাদার সেজে রাজধানীতে বসে যারা হামকে-তুমকে করেন, তারা সংখ্যায় খুব কম তবে প্রভাবশালী। নাস্তিকতাকে মাপকাটি বানিয়েই তারা লেখার ভালমন্দ গুণাগুন বিচার করেন তবে তাদের অনেকেই নিজেকে নাস্তিক বলে প্রকাশ করেন না।

বলার আর অপেক্ষা রাখেনা যে, কোনো সরকারের মাথায় ইসলাম বিদ্বেষের পোকা ঢুকিয়ে দেয়াই তাদের আসল কাজ। এই কাজটি না করলে তাদের পেটের ভাত হজম হয় না।

বাংলাদেশে আরো কিছু লেখক আছেন যারা ফেরাউন স্বভাবী। ফেরাউনের নীতিতে বিশ্বাসী। কথাটি ব্যাখ্যা করছি। তার আগে আরো কিছু কথা জেনে নেয়া দরকার।

আমাদের সমাজে কিছু লেখক আছেন, যারা নাস্তিক তো নন, তবে নিজের ধর্ম বিশ্বাস প্রকাশ করতে কুন্ঠাবোধ করেন। পাছে না আবার প্রগতির গায়ে দাগ লেগে যায়, এই ভয়ে। আমার মনে পড়ছে দেশের জনপ্রিয় একজন ঔপন্যাসিককে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, “আপনি কি আস্তিক?” ক্রিকেটের বাউন্সার থেকে গা বাঁচানোর মত করে সুকৌশলে জবাব এড়িয়ে গেলেন তিনি। বললেন, “বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলে পরিচয়।”

কিছু লেখক আছেন যারা বৎসরে দুই ঈদের নামাজে হাজির হন। এই অর্থে তারা আল্লাহ বিশ্বাসী। কিন্তু তারা তাদের লেখালেখিতে আল্লাহ শব্দটি উচ্চারণ করেন না? তারা বলেন ঈশ্বর!

এবার ফেরাউন স্বভাবীদের কথা বলি।
ফেরাউন আস্তিক ছিলো না নাস্তিকও ছিলো না। সে ছিলো সস্তিক(!)। সস্তিক শব্দটি উৎপাদন করা হলো। স্রষ্টায় বিশ্বাসী হলে আস্তিক। না হলে নাস্তিক। কিন্তু নিজেকেই স্রষ্টা দাবি করলে তার জন্য কোনো না কোনো শব্দতো লাগবেই। সস্তিক শব্দটি আমার কাছে মন্দ মনে হয় নি।

তো ফেরাউন নিজেকেই খোদা বলে দাবি করতো। তাও যেন-তেন খোদা না, সবচে’ বড় খোদা। যদিও সেও জানতো, সত্যিকারের আল্লাহ একজন ঠিকই আছেন। তবে প্রকাশ করতো না। কিন্তু কথায় আছে না, সাপ গর্তে ঢুকে সোজা হয়ে। ফেরাউনও গর্তে ঢোকার সময় সোজা হতে চেয়েছিলো। ঈমান আনতে চেয়েছিলো আল্লাহর উপর। সুযোগ দেয়া হয় নি।

আমাদের দেশের ফেরাউন স্বভাবী লেখকরাও বয়স হয়েগেলে সুর নরম করে ফেলেন। ধীরে ধীরে যখন এগিয়ে চলেন বার্ধক্যের অন্ধকার সরু গলির পথ ধরে, তখন মৃত্যুর ভয় তাদের কাবু করে ফেলে। তখন খোদাদ্রোহী প্রগতির ভাঙ্গা রেকর্ড আর বাজান না। এমনকি তখন তাদের অনেককে নামাজ রোযার দিকে বিশেষ নজর দিতেও দেখা যায়। প্রয়াত লেখক, ড. হুমায়ুন আজাদের মত স্বঘোষিত নাস্তিক লোকেরও পাশে বসে তার মেয়েকে আমরা সুরায়ে ইয়াসিন তেলাওয়াত করতে দেখেছ্।জানাযাও হয়েছে যথারীতি।


আমাদের দেশে বেশ ওজনদার লেখক আছেন কিছু। যারা লিখনে আচরণে যাই হোন, নামটি তাদের ইসলামী। মা বাবার দেয়া মুসলমান নামটি আর পরিবর্তন করেন নি। তবে ইসলাম শব্দটি থেকেই গুনে গুনে একশ হাত দূরে থাকতে চেষ্টা করেন। তাদেরকে কিন্তু নাস্তিক লেখক বলা যাবে না। কেউ আল্লাহ বিশ্বাস না করলেও, খোদাদ্রোহী কথাবার্তা বললেও, তাকে আর যা-ই বলা যাক, নাস্তিক বলা যায় না। নাস্তিক অই ব্যক্তিকেই বলা যাবে, যে স্রষ্টা বলে কারো অস্তিত্বেই বিশ্বাসী না। দাউদ হায়দার, হুমায়ূন আজাদ, ড. আহমদ শরীফ, তসলিমা নাসরিনরা নাস্তিক ছিলেন কারণ, তারা স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন না। তারা ছিলেন স্বঘোষিত নাস্তিক। এছাড়া ইসলাম ও ধর্মীয় ব্যাপারে উল্টা-পাল্টা বললেই বা লিখলেই তাকে নাস্তিক বলা যাবে না।

পাঠক বিভ্রান্ত হবেন না। ভাববেন না আমি তাদের ডিফেন্স করার চেষ্টা করছি। মোটেও না। আবেগের জগতের বাইরে এসে যা সত্য, তাই তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। যে যা, তাকে তো তাই বলা দরকার। বাড়িয়ে বলার তো প্রয়োজন নেই। তাছাড়া আমড়াকে জোর করে জলপাই বানানোর জন্য টানা-হেছড়া করারইবা দরকার কী? আমড়াও তো আর কম টক না।

এই লেখকদের মাঝে চমৎকার একটি সম্প্রীতির সম্পর্ক কাজ করে। নাক কেটে হলেও বিশেষ ধর্মের যাত্রাপথে কাটা বিছাতে তারা বিকৃত ধরনের আনন্দ পান। তারা তাদের এই আনন্দ একে অপরের সাথে শেয়ার করেন। চমৎকার একটি ইউনিটি কাজ করে তাদের মধ্যে। ধর্মের বিরুদ্ধে তাদের কেউ একজন কোনো কথা লিখলে বাকীরা সেটা পড়ে দেখার আগেই সেটাকে সাপোর্ট করে হারমোনিয়ামে একই সুর তুলেন। বলেন, ‘তথাস্তু।’

তথাস্তু’র ব্যাখ্যা কি পাঠকের জানা আছে? জানা না থাকলে আপনার আশেপাশে থাকা কোনো হিন্দু লোকের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে নিয়েন। সংক্ষেপ ঘটনা হলো, আমাদের হিন্দু ভাইজানরা যখন কোনো বিপদ-আপদে পড়েন, বা তাদের কোনো কিছুর দরকার হয়, তখন তারা তাদের ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেন। ভগবান তো আর এত অবসর থাকেন না। তিনি থাকেন মহাব্যস্ত। সমস্ত জগত দেখাশুনা করে রাখা তো কম কথা নয়। উপাসকের বিস্তারিত শুনার সময় থাকে না তাঁর। তাই যেভাবে চাওয়া হয়, সেভাবেই তিনি কবুল করে নেন। তিনি শুধু বলেন ‘তথান্তু’। এর মানে, ‘তাই হোক।’
ব্যস, প্রার্থনা মঞ্জুর হয়েগেলো।

বাম ধারার এই লেখকরাও চোখ বন্ধ করে ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ করে থাকেন। আর একে অপরকে সমর্থন জানান ‘তথাস্তু’ কায়দায়।
...চলবে
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×