somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিআইবির চেয়ারম্যানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা : কুমিল্লায় সকালে পরোয়ানা রাতে খারিজ, চট্টগ্রামে তলব : রিপোর্ট বস্তুনিষ্ঠ, মামলা লড়ব - টিআইবি

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(সুত্রঃ আমার দেশ)
সেবা খাতের দুর্নীতির জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খানসহ সংস্থার তিন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। চট্টগ্রামে দায়ের করা মামলায় তাদের আদালতে তলব করা হয়েছে। কুমিল্লায় দায়ের করা মামলায় তাদের বিরুদ্ধে সকালে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে দিনভর নানা নাটকীয়তা-গোপনীয়তার পর রাতে মামলাটি খারিজ করে দেয়া হয়েছে। উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপে প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ নিয়ে গোপনীয়তা ও নাটকীয়তার আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সন্ধ্যা ৬টায় পিপি গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় মামলাটি খারিজ করে আদেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তিন মামলার অন্য আসামিরা হচ্ছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও সিনিয়র ফেলো ওয়াহিদ আলম। তিন আইনজীবীর দায়ের করা এসব মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে দেশের বিচার বিভাগকে সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এতে বিচার বিভাগের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। এসব মামলার ব্যাপারে টিআইবি ও নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, প্রকাশিত জরিপের তথ্য নির্ভরযোগ্য ও বস্তুনিষ্ঠ। মামলা করা দুঃখজনক। দায়ের করা মামলা আদালতে আইনগতভাবেই মোকাবিলা করবেন বলেও জানান টিআইবি চেয়ারম্যান ও নির্বাহী পরিচালক।
টিআইবি ২৩ ডিসেম্বর সেবা খাতগুলো নিয়ে পরিচালিত খানা জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে। এতে দেশের বিচার বিভাগ সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। জরিপের ফলাফল নিয়ে শাসক দলের বিরূপ মন্তব্যের পর গতকাল কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে তিনটি মামলা হয়।
কুমিল্লায় গ্রেফতারি পরোয়ানা : আমাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি গোলাম কিবরিয়া জানান, টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দিন খানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে এক আইনজীবীর মামলা করার পর গতকাল সকালে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট আদালত। মামলাটি করেছেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান। মামলার অন্য আসামিরা হচ্ছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জমান ও সিনিয়র ফেলো মো. ওয়াহিদ আলম। কুমিল্লার ১নং সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের বিচারক গাজী সাইদুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়ে সকালে গ্রেফতারি পরোয়ানার এ মৌখিক আদেশ দেন।
মামলা দায়ের ও গ্রেফতারি পরোয়ানার মৌখিক আদেশের পর কুমিল্লার আদালতপাড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঢাকা থেকে মন্ত্রণালয় ও আইন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা কুমিল্লায় যোগাযোগ করেন। বিকালে মামলার বিষয়টি নিয়ে বিচারকরা বৈঠকে বসেন। কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী জানান, মামলার বাদী আমাদের সদস্য কিনা এ নিয়ে সন্দেহ আছে। মামলাটি তার ব্যক্তিগত। আমরা এর দায়দায়িত্ব নেব না। বিভিন্ন টিভি চ্যানেল সংবাদটি প্রচার করলে এ নিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে আলোচনার ঝড় ওঠে। সারাদিন এ নিয়ে চলে নানা নাটকীয়তা। রাত ৬টার দিকে মামলার লিখিতভাবে আদেশ দেননি। রাত ৮টার দিকে জানানো হয়, মামলাটি খারিজ করে নথিতে আদেশ দেয়া হয়েছে।
দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, টিআইবির রিপোর্টে বিচার বিভাগকে সেবা খাতের শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত বিভাগ হিসেবে উল্লেখ করে বিচার বিভাগের মানমর্যাদা এবং সুনাম ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। মামলার বাদী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান জানান, টিআইবির রিপোর্টে বিচার বিভাগকে দুর্নীতির শীর্ষে দেখানোর বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক এবং ষড়যন্ত্রেরই অংশ। টিআইবির এ প্রতিবেদন বিচার বিভাগের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি কর্মীর কর্মস্পৃহা ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন মঈনুল আলম খান, আমিনুল ইসলাম টুটুলসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। বাদীপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম টুটুল জানান, আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তিনজনের বিরুদ্ধেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আদেশে লেখা হয়েছে, ‘সকল আসামির প্রতি ডব্লিও/এ ইস্যু’। মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, গত ২৩ ডিসেম্বর ঢাকার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বিআইআইএসএস মিলনায়তনে সেবা খাতের দুর্নীতি : জাতীয় খানা জরিপ-২০১০’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানের আলোচনায় সেবা খাতগুলোর মধ্যে বিচার বিভাগের দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি বলে তথ্য প্রকাশ করে। এর ফলে বিচার বিভাগের একজন কর্মী এবং এর অংশ হওয়ায় টিআইবির প্রকাশিত রিপোর্টের কারণে বাদীর পেশাগত মানসম্মান ও সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। মামলায় ৫০১, ৫০২ ও ১০৯ ধারায় প্রতিকার চাওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামে সমন জারি : চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ জাহিদুল করিম কচি জানান, চট্টগ্রামের দুটি আদালতে একই ধারায় টিআইবি চেয়ারম্যান নির্বাহী পরিচালক ও সিনিয়র ফেলোর বিরুদ্ধে দুটি মানহানির মামলা করা হয়েছে। এ দুটি মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর হাকিমের আদালতে তাদের ১৩ জানুয়ারি ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৩০ জানুয়ারি হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে সমন জারি করা হয়েছে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আদালত দুটির বিচারকরা এ নির্দেশ দেন। বিচার বিভাগকে হেয় করার অভিযোগ এনে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০০, ৫০১ ও ১০৯ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দুটি করা হয়। দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমানের আদালতে মামলাটি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। সহকারী মহানগর পিপি অশোক কুমার দাশ জানান, আগামী ১৩ জানুয়ারি তিনজনকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করা হয়েছে। একই সময়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কেশব চন্দ্র রায়ের আদালতে মামলা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী সদস্য মো. মুজিবুল হক। চট্টগ্রাম জেলা পিপি আবুল হাসেম জানান, এ মামলায় ৩০ জানুয়ারি আদালতে হাজির হওয়ার সমন জারি করা হয়েছে।
মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা মামলায় অভিযোগকারী তার আরজিতে উল্লেখ করেন, প্রখ্যাত মাস্দার হোসেন মামলায় যুগান্তকারী রায় ও নির্দেশনার আলোকে বিগত ১ নভেম্বর ২০০৭ তারিখে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করা হয়। পৃথকীকরণের পর বিচার বিভাগে আমূল সংস্কার সাধিত হয়েছে। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর থেকে একটি প্রতিক্রিয়াশীল ও স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন স্বাধীন ও বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকরণে ও বিচার বিভাগকে অকার্যকর করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। অভিযুক্তরা এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে মর্মে সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ ডিসেম্বর টিআইবি আয়োজিত ‘সেবা খাতে দুর্নীতি : জাতীয় খানা জরিপ-২০১০’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বিচার বিভাগ সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা ওই তারিখে দেশীয় আন্তর্জাতিক ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়সহ পরবর্তী তারিখে সব ধরনের মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে অভিযোগকারী অবগত হয় এবং মর্মাহত হয়।
গোলটেবিল আলোচনায় সব অভিযুক্ত ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন, দুই ও তিন নং অভিযুক্ত জরিপের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। ৯ জুন ২০০৯ থেকে ২০ জুলাই ২০১০ পর্যন্ত দেশের সব বিভাগীয় অঞ্চলের ৬ হাজার পরিবারের ওপর পরিচালিত বিভিন্ন সেবাখাতের দুর্নীতির জরিপ প্রকাশ করে বলা হয়, উক্ত খাতগুলোর মধ্যে বিচার বিভাগ দুর্নীতির শীর্ষে। এবং এই সময়ে যারা বিচার বিভাগের শরণাপন্ন হয়েছেন তাদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ মানুষ ঘুষ ও অনিয়মের শিকার হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সেবাগ্রহীতারা দ্রুত শুনানি হওয়া মামলার রায়কে প্রভাবিত করা, নথি তোলা, শুনানির তারিখ পেছানো ও নথি গায়েব করে দেয়ার জন্য ঘুষ দেন। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এ সময়কালে সবচেয়ে বেশি ঘুষ নিয়েছে হাইকোর্ট, তারপর ক্রমান্বয়ে জজকোর্ট ও ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট। এছাড়া উকিলের হয়রানির শিকার হয়েছে ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ, ৪১ শতাংশ মানুষ সময়ক্ষেপণ, ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ মহুরির, ২ দশমিক ৭ শতাংশ দালালের হয়রানি এবং ৯ দশমিক ১ শতাংশ নথি তোলায় হয়রানির শিকার হন বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়।
জরিপ প্রতিবেদনে ঢালাওভাবে বিচার বিভাগকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টা করা হয়েছে এবং দেশের সব মানুষের মতামত হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা সুস্পষ্টভাবে বিচার বিভাগকে ধ্বংস করার একটি ষড়যন্ত্র। প্রতিবেদনে মূলত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছে, বিচার বিভাগে কর্মরত বিজ্ঞ বিচারকগণ, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, যা বাস্তবতার সম্পূর্ণ বিপরীত। অভিযোগকারী তার আরজিতে আরও উল্লেখ করেন, টিআইবির প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর অভিযোগকারীর পরিবার হতে শুরু করে নিকটজন ও একাধিক সম্মানিত ব্যক্তি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে অভিযোগকারীকে কটাক্ষ করেছেন। এতে অভিযোগকারী ব্যক্তিগতভাবে মর্মাহত ও সংক্ষুব্ধ হয়েছেন, যাতে মামলা করার কারণের উদ্ভব ঘটেছে। প্রকৃতপক্ষে অভিযুক্তরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সীমিত সংখ্যক ব্যক্তির অনুমাননির্ভর অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তথাকথিত জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। অভিযুক্তরা পরস্পরের যোগসাজশে পেনাল কোডের ৫০০, ৫০১ ও ৫০৯ ধারার অধীনে মানহানির অপরাধ সংঘটন করেছেন। তাদের কাজে বিচার বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার মতো অভিযোগকারীও সংক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং পুরো বিচার বিভাগসহ অভিযোগকারীর ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে ও মানহানি ঘটেছে।
একই ধারায় টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান, নির্বাহী পরিচালক ও সিনিয়র ফেলোর বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কেশব চন্দ্র রায়ের আদালতে মামলা করেছেন চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সদস্য মো. মুজিবুল হক।
মোকাবিলা করবে টিআইবি : বিচার বিভাগের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরার পর মামলা দায়েরের বিষয়টিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দিন খান। তিনি বলেন, আদালতে আইনগতভাবেই এসব মামলা মোকাবিলা করা হবে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রকাশিত জরিপের তথ্য নির্ভরযোগ্য ও বস্তুনিষ্ঠ। মামলা দায়েরের পর বিডিনিউজকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তারা এসব কথা বলেন।
এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, আইনি প্রক্রিয়াতেই মামলা মোকাবিলা করা হবে। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। জরিপের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি কারও ব্যক্তিগত মতামতের বিষয় নয়। জরিপে প্রাপ্ত ফলাফলই কেবল প্রকাশ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসরণ করে জরিপ চালানো হয়েছে। এতে দেশের বিচার বিভাগ, পুলিশ ও জনপ্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের চলমান দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠেছে, যা টিআইবি প্রকাশ করেছে মাত্র। তিনি বলেন, এতে করে কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে আঘাত পেয়ে থাকেন তাতে টিআইবি’র করার কিছু নেই। এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতি নতুন কিছু না। দেশের প্রত্যেকটি মানুষকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তবে তারাই বলবে এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা কিভাবে দিনের পর দিন নির্যাতিত হচ্ছেন।
মামলার বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একজন সংক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছে, তার মানে এই নয় যে আমরা অপরাধী। প্রকাশিত জরিপের ফলাফল নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই। এ বিষয়ে কোনো দ্বিমতও নেই। এর পুরোটাই তথ্যনির্ভর ও বস্তুনিষ্ঠ। জরিপ প্রতিবেদন সম্পর্কে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের মন্তব্য উদ্ধৃত করে ড. ইফতেখার বলেন, দুদক চেয়ারম্যানও বলেছেন বাস্তবে দুর্নীতির চিত্র আরও ভয়াবহ। এ প্রতিবেদনে দুর্নীতির আরও অনেক চিত্র উঠে আসতে পারত। ড. ইফতেখার আরও বলেন, প্রকাশিত জরিপ প্রতিবেদনের জন্য সাধারণ মানুষ ও গণমাধ্যম টিআইবিকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
কুমিল্লার মামলায় এজাহারে যারা বলা হয়েছে : এজাহারে বলা হয়েছে, বিখ্যাত মাসদার হোসেন মামলায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের যুগান্তকারী রায় ও নির্দেশনার আলোকে গত ১ নভেম্বর ২০০৭ইং তারিখে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করা হয়। সে সময় থেকে বিচার বিভাগের ব্যাপক সংস্কার হয় এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাসহ মামলা নিষ্পত্তির হার, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, সমাধান, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বিচারকার্য সম্পন্নকরত বিচার প্রার্থী জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সমন্বিত বিচার বিভাগ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। বিচারক, আইনজীবী, আদালত সহায়ক কর্মচারী, বাংলাদেশ পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নিয়ে এ ‘সমন্বিত বিচার বিভাগ’। বাদী একজন আইনজীবী বিধায় ওই এই সমন্বিত বিচার বিভাগের অংশও বটে।
প্রসঙ্গত, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর একটি প্রতিক্রিয়াশীল ও স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্নভাবে পৃথক ও স্বাধীনতা অর্জনমুখী বিচার বিভাগের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্নকরণ ও অকার্যকর প্রতীয়মান করার নিমিত্তে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। বর্ণিত ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় বিবাদীরা তাহাদের সংস্থা টিআইবি’র ব্যানারে ঘটনার দিন ও সময় উল্লেখিত ঘটনাস্থলে ‘সেবাখাতে দুর্নীতি : জাতীয় খানা জরিপ- ২০১০’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানের আলোচনায় সেবাখাতগুলোর মধ্যে বিচার বিভাগের দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি প্রদর্শন করে খানা জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে, যা সম্পূর্ণ অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক এবং উপরোল্লিখিত ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিক প্রকাশ। এ গোলটেবিল আলোচনায় টিআইবি প্রকাশিত জরিপের ফলাফল তাত্ক্ষণিকভাবে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার করা শুরু হয় এবং পরের দিন দেশি ও বিদেশি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার হয়।
টিআইবি প্রকাশিত সেবাখাতে দুর্নীতি শীর্ষক খানা জরিপের ফলাফল সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনের মিডিয়ায় প্রকাশিত অংশ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাভিত্তিক পরিসরে সীমিত সংখ্যক ব্যক্তির মতামতের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত জরিপের ফল প্রকাশ করে ঢালাওভাবে সমন্বিত বিচার বিভাগের সব অংশকে সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত বলে দায়ী বা অভিযুক্ত করে ওই জরিপের ফলকে সাধারণ মানুষের মতামত বা পুরো জনগোষ্ঠীর মত বলে প্রদর্শনের অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে, যা স্পষ্টতই উদ্দেশ্যমূলক বটে।
Click This Link
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×