somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিজিকস্ অভ দ্য ইমপসিবল: মিচিও কাকু

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এর আগে একটি পোস্টে বলেছিলাম মিচিও কাকুর বিজ্ঞান বই নিয়ে কিছু কাজ করবো।

যে বইটা মনে ধরেছে সেটা হল, ফিজিকস্ অভ দ্য ইমপসিবল: এ সায়েন্টিফিক এক্সপ্লোরেশন ইনটু দ্য ওয়ার্লড অভ ফেজার, ফোর্স ফিল্ড, টেলিপোর্টেশন এন্ড টাইম ট্রাভেল।



অসম্ভব কিছু সম্ভাবনাকে সম্ভব কিছু বিজ্ঞান ব্যবহার করে কিভাবে বাস্তব করা যেতে পারে তা এখানে দেখানো হয়েছে।

আজ এখানে কেবল ভুমিকার একটি অংশ দিলাম। জানি, দেখে বলবেন, আরও নেই কেন অথবা ভুমিকা বাদ দিযে সরাসরি বইয়ে গেলাম না কেন। প্রথম কথা, এই ভুমিকাটুকু বইয়ের জন্য দরকার। পরের কথা, আমি এ টু যেড ছাড়া কাজ করতে পারি না। শুরু তো শুরু, শেষ তো শেষ!

ফিজিকস অভ দি ইমপসিবল
লেখকের ভুমিকা:

“যদি প্রথম বার শুনেই একটি আইডিয়াকে চরম রকম উদ্ভট মনে না হয়, তাহলে বুঝতে হবে সেই আইডিয়ার কোন ভবিষ্যত নেই।
-- অ্যালবার্ট আইনস্টাইন


একদিন কি আমরা দেয়াল ভেদ করে হাটতে পারবো? বানাতে পারবো এমন মহাকাশযান, যেটা কিনা আলোর থেকেও বেশি গতিতে যেতে পারবে? মানুষের মনের চিন্তা পড়ে ফেলার মত প্রযুক্তি কি আবিস্কার করা সম্ভব হবে অথবা অদৃশ্য হয়ে যাবার ক্ষমতা? মানসিক ক্ষমতা ব্যবহার করে কোন জিনিসকে নাড়াতে পারবো এষান থেকে সেখানে? টেলিপোর্টেশন এর মাধ্যমে নিমেষের মধ্যে এক গ্রহ থেকে আর এক গ্রহে কিংবা এক গ্যালাক্সি থেকে আর এক গ্যালাক্সি যাবার স্বপ্ন কি সত্যি হবে ?

সেই বাচ্চাকাল থেকেই এইসব প্রশ্নের মধ্যে ডুবে থাকতাম আমি। অনেক পদার্থবিদের মত, বেড়ে উঠার সময়টায় আমাকেও মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে অতীতে ফিরে যাবার সম্ভাবনা, লেজার রে গান, ফোর্স ফিল্ড, প্যারালাল মহাবিশ্ব সহ আরও কত সব আশ্চর্য জিনিস। জাদু, রুপকথা ও বৈজ্ঞানিক কল্পগল্প এইসবই ছিল আমার কল্পনার জগৎ। কে জানে, বোধহয় তাদেরই প্রভাবে অসম্ভব সব জিনিসের প্রতি একটা আগ্রহ, একটা ভালবাসা তৈরি হয় আমার ভেতরে, যেটা এখনও সমানভাবে তীব্র।

সেই সময়ের কথা মনে পরে, প্রত্যেক শনিবার আমি টিভির সামনে বসে থাকতাম ফ্ল্যাশ গর্ডন এর আশ্চর্য সব অভিযান দেখার জন্য। অবাক বিশ্বয়ে দেখতাম কিভাবে ফ্ল্যাশ, ড. জারকভ এবং ডেল আরডেন আশ্চর্য সব চোখ ধাঁধানো যন্ত্র ব্যবহার করে কি আশ্চর্য সব কান্ডকারখানা করে বেড়াত। রকেট শিপ, অদৃশ্য হবার যন্ত্র, লেজার রে গান, আকাশে মেঘের মত ভেসে বেড়ানো মানুষের বসতি! একটা সপ্তাহ বাদ যেত না। এই টিভি শো আমার সামনে সম্পুর্ন এক নতুন পৃথিবী খুলে দিয়েছিল। অজানা গ্রহে রকেট নিয়ে নেমে নতুন সব ঘটনার অংশ হবার কল্পনা আমাকে রোমানচিত করে তুলত। এই আশ্চর্য অসাধারণ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা, কল্পনায় বুঁদ হয়ে থাকতে থাকতেই আমি বুঝতে পারি আমার ভবিষ্যত কোন এক ভাবে বিজ্ঞানের অসম্ভব কিন্তু সম্ভাবনাময় বিশ্বয়গুলোর সাথে ঘনিষ্ট ভাবে জড়িত।

সময়ে আবিস্কার করি, আমি একা নই এই কল্পনার রাজত্বে। অনেক বিখ্যাত ও সফল বিজ্ঞানী বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন বৈজ্ঞানিক কল্পগল্পের প্রভাবে। বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ এডুইন হাবল জুলভার্ণের লেখার ভীষণ ভক্ত ছিলেন। এর ফলে যেটা হয়, তা হল, তিনি নিজের সম্ভাবনাময় আইনবিদের জীবনের হাতছানি অগ্রায্য করে, বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের জগতে প্রবেশ করেন। যার ফলাফল, আমরা পেয়েছি বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম জ্যোতির্বিদ।

কার্ল সাগান, বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ও নামকরা লেখক, মঙ্গলের লাল মাটিতে হেটে বেড়াবার স্বপ্ন দেখতেন। তার এই স্বপ্নের ভিত্তি ছিল এডগার রাইজ বারোজ এর বৈজ্ঞানিক কল্পগল্প “জন কার্টার অভ মার্স”। তার জ্যোতির্বিদ হবার পেছনে প্রেরনা ছিল এটাই।

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন যেদিন মারা যান, আমি তখন ছোট্ট এক বাচ্চা মাত্র। তারপরেও আমার স্পষ্ট মনে পড়ে আমার আশে পাশের মানুষরা আলোচনা করছে তাকে নিয়ে। পরেরদিন সংবাদপত্রে দেখলাম তার কাজের ঘরের ছবি। আগোছালো টেবিলের উপরে অসমাপ্ত কাজের পান্ডুলিপি। যে জিনিসটা আমাকে সবচেয়ে অবাক করেছিল, কি এমন রহস্য থাকতে পারে যেটা সময়ের শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক সমাধান করে যেতে পারেন নি!

সংবাদপত্রের প্রবন্ধে বলা হয়েছিল, তার স্বপ্ন ছিল একটা অসম্ভব রকম জটিল সমস্যা সমাধান করার যেটা কোন মানুষের পক্ষে এক জীবনে সমাপ্ত করা সম্ভব নয়। অনেকগুলো বছর পরে আমি জানতে পারি সেই অসমাপ্ত পান্ডুলিপি কি বিষয়ে ছিল। একটি বিশাল, ব্যপ্ত এমন এক থিয়োরি যেটা ব্যখ্যা করতে পারবে মহাবিশ্বের প্রত্যেকটি ঘটনার কার্যকরণ। এর নাম দেয়া হয়, “থিয়োরি অভ এভরিথিং”। যে স্বপ্ন আইনস্টাইনকে জীবনের শেষ তিনটা দশক ব্যস্ত রেখেছে, সেই একই স্বপ্ন আমাকেও কিছু করতে উদ্ভুদ্ধ করতে শুরু করে।। আমার মধ্যে এই ইচ্ছাটুকু আসে, এই মহাকর্মযজ্ঞে আমারও কিছু অবদান থাক। এটা এমন এক কাজ, যেটা শেষ করতে পারলে পদার্থবিদ্যার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা থিয়োরিগুলো একসাথে করা যাবে, একই ভাবে ব্যখ্যা করা যাবে।

বড় হবার একটা পর্যায়ে আমি বুঝতে শুরু করলাম, যদিও ফ্ল্যাশ গর্ডনই টিভি শো এর নায়ক, সব কৃতিত্ব তার নামেই যায়, শো এর আসল নায়ক হল শো এর বৈজ্ঞানিকরা। ড. জারকভ ও তার সহকারীরা না থাকলে কোন মহাকাশযানও থাকতো না, মঙ্গোর উদ্দেশ্যে যাত্রা হত না, পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোও হত না। হিরোদের কার্যকলাপ এর পাশাপাশি, বিজ্ঞান ছাড়া বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী বানানো সম্ভব না।

একটু বড় হবার পরে বুঝলাম, এই টিভি শো এর কাজগুলো এক কথায় বৈজ্ঞানিকভাবে অসম্ভব, এগুলো কেবল লাগামছাড়া কল্পনামাত্র। বড় হওয়া মানে এইসব কল্পনাকে একপাশে সড়িয়ে রাখা। দৈনন্দিন জীবনে আমাকে বলা হল, এইসব ফালতু চিন্তা ছাড়, বাস্তব চিন্তা কর।

যাই হোক, আমি বুঝতে পারলাম, আমাকে যদি “অসম্ভব” নিয়ে কার্যকর কিছু করতে হয়, আমাকে অবশ্যই বিজ্ঞান মেনেই তা করতে হবে। উচ্চতর পদার্থবিদ্যায় একটি শক্তপোক্ত অবস্থান ছাড়া একাজ সম্ভব নয়। পদার্থবিদ্যায় ভাল জ্ঞান ছাড়া আমি অসম্ভব অবাস্তব সব ধারনার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকবো, সময় নষ্ট করতে থকবো। সঠিক দিকে যাবার জন্য আমাকে উন্নত গনিত ও ত্বাত্বিক পর্দাবিদ্যা শিখতেই হবে, আর আমি তাই করলাম।

কলেজে থাকার সময়ে বিজ্ঞান মেলার এর জন্য আমি একটা এটম স্ম্যাশার বানালাম আমার মায়ের গাড়ির গ্যারেজে। আমার সম্বল ছিল ওয়েস্টিংহাউজ কোম্পানী থেকে আনা চারশ পাউন্ড লোহার কোর আর অনেক খানি তামার তার, ট্রান্সফরমারে ব্যবহারের জন্য। সারা ক্রিসমাসের ছুটিতে আমি কলেজের ফাকা মাঠে বসে বসে ২২ মাইল লম্বা তামার তার দিয়ে বানালাম কয়েল। এভাবে এক সময় আমি সত্যি সত্যিই বানিয়ে ফেললাম একটা ২৩ লক্ষ ইলেকট্রন ভোল্ট বিটাট্রন পার্টিকেল এক্সেলারেটর। এই এক্সেলারেটর পাওয়ার নিত আমার বাড়ি থেকে। ছয় কিলো ওয়াট এর সবটুকু। এ থেকে যে বৈদ্যুতিক চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল, তা পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র থেকে ২০,০০০ গুন বেশি শক্তিশালী ছিল। আমার পার্টিকেল এক্সেলারেটর বানাবার উদ্দেশ্য ছিল শক্তিশালী গামা রে উৎপন্ন করা যেন সেটা ব্যবহার করে আমি এন্টি-ম্যাটার বানাতে পারি!

আমার কলেজ বিজ্ঞান মেলার প্রজেক্ট আমাকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে গেল। শ্রেষ্ঠ প্রজেক্ট হিসাবে গন্য হবার পাশাপাশি আমি হার্ভার্ড এ পড়ার একটি স্কলারশীপ পর্যন্ত পেয়ে গেলাম। আমার একটা স্বপ্ন পুরন হল। অন্য একটা স্বপ্ন পুরণ হবার উপায় দেখা দিল, আমার নায়ক এলবার্ট আইনস্টাইন এর পথে হাটা, তার শেষ না করে যাওয়া কাজে কিছু অবদান রাখা।

এখন আমি প্রায়ই বিজ্ঞান কল্প লেখক ও বিজ্ঞান সিরিজের স্ক্রীপ্ট লেখকদের কাছ থেকে ফোন পাই। তারা আমার কাছে জানতে চায়, কিভাবে তারা তাদের আইডিয়াগুলোকে আরও ভালভাবে, বাস্তব বিজ্ঞান এর উপরে ভিত্তি করে দেখাতে পারে তাদের সিরিজে অথবা বইয়ে।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:৪৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×