কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে আবার ও শীতকাল। শহরের যান্ত্রিকতার করাল গ্রাসে গিলে খেয়ে নিয়েছে যদিও সেই সকালের খেজুরের রস আর পিঠপুলির উৎসব তবুও প্রকৃতির আবর্তে এক নতুন সুরব্যাঞ্জনা নিয়ে আবারও হাজির হয়েছে এই শীত। আমার লেখার প্রথমে আমি দুই ধরণের ইমো যোগ করতে চেয়েছি কারণ এই শীতকাল আনন্দ হতাশা সুখ ও দুঃখ এই দুইয়ের সম্মিলনে ই আসে । আমি বরাবরই কেন যেন রবিঠাকুরের কবিতা পছন্দ করি না। আমার আমার মতো খুদে ছারপোকার ভাল লাগা না লাগার কোন মূল্য নাই। একবার আমাদের পঞ্চম শ্রেণীতে পরীক্ষায় রচনা আসলো। তোমার প্রিয় ঋতু । আমি সরাসরি লিখেছিলাম । আমি আমাদের বইয়ের রচনা লেখকের মতো অবিবেচক নই। যে রবি ঠাকুর এর প্রিয় ঋতু বর্ষাকালকে প্রিয় ঋতু কল্পনাকরে আমার পরীক্ষার খাতা লিখে ভরে ফেলব।
তার পর শুরু হয় আমার নিজের ভাষাতে লেখা।
শীতকাল আসে ঠাণ্ডা শীতল পরশ নিয়ে আর খেজুর রসে ভেজা মিস্টি পিঠা খাওয়ার সুযোগ করে দিতে। হাজার বললে ও আম্মা যে পিঠা কোন দিন বানাতে রাজি হতেন না তা সম্ভব করায় শীতকাল। আসলে আমার সেই পিচ্চি কালে শুধু খাবারের উপর কেন্দ্র করেই শীতকালকে ভেবেছিলাম প্রিয় ঋতু । কিন্তু সেদিন বুঝিনাই যে শীতকাল কত লোকের জন্য আসে মৃত্যুর হীমশীতল পরশ নিয়ে। তাই আমার সেদিনের ভুলটি শুধরে দিতেই আজ আমি যোগ করলাম পরের দুটি ইমোটকন।
আমার এখন ফাইনাল পরীক্ষা চলছে ।এইতো সেদিন দুর্দান্ত একটা পরীক্ষা দেওয়ার পর মন ছিল অনেক উচ্ছল। ঢাকায় ফিরতে হবে । তবুও দীর্ঘ চার ঘন্টার যুদ্ধ শেষে আমার অবস্থা ছিল বিজয়ী কিন্তু ক্লান্ত হতবিহ্বল সৈনিকের মতো। তাই বন্ধুদের সাথে নিয়ে বসেছিলাম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত পরিযায়ী পাখির স্পট । ট্রাণ্সপোর্ট এর পাশে রাখা স্টিলের বেঞ্চগুলোতে। যদিও সেগুলোর বেশির ভাগই দখলে থাকে প্রেমিক প্রেমিকাদের । আমাদের মতো ছন্নছাড়া ব্যাচেলররা খুব একটা সুযোগ সেখানে পায়না। তবুও সেদিনের হাভাতে বিকালে কেন যেন আমাদের স্থান সংকুলান হল। আমরা বসলাম আড্ডা জমাতে গেলে মনে যোশ থাকলেই হয় না। এনার্জির ও দরকার। কিন্তু আমাদের কারও তেমনটি ছিল না। আমরা বসে ছিলাম একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম এই যা।
তবে এর উল্টোদিকে ছিল আমাদের বন্ধু আতিক । আমরা সবাই বলি আতিকুর বলে কথা । তার একটা ডায়ালগ ছিল হালাক্কা । ওই হটাৎ চিৎকার দিল হালাক্কা পাখি আসছে ।আসলে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা আমাদের বছর তিনেক হয গেলেও এই পাখিরা আমাদের সবাইকে আজ ও টানে। আমাদের সবার মনে আজও আনে এক অনাবিল প্রশান্তি । আসলে শাশ্বত সুন্দর বলতে যা বোঝায় তাই। বারবার নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন হয়। বার বার মারামারি হানাহানি হয় । অনেকে আহত হয়। কিন্তু এই পাখিরা আছে সবার মনে একইভাবে সেই যেমনটি ছিল প্রথমবর্ষে আমরা যখন এখানে ভর্তি হয়েছিলাম। আসলে আমরা শঙ্কায় ছিলাম মানিকের মতো লম্পট কুকুরের উদ্ভবেও যে পাখিরা ঘেন্নাতে পালিয়ে যায়নি । তার এবার গাছ কাটার দুঃখে পালিয়ে গেল নাকি। না তারা যায়নি তারা ফিরে এসেছে। তবে সংখ্যায় নিতান্ত কম। এই যা। তবুও মনটা ভাল হলো। আমাদের সবার মনে জানান দিচ্ছে এক হীমশীতল অনুভুতি । আসছে । আসছে। শীত আসছে । অতিথী পাখিগুলো তাদের ডানায় ভর করে নিয়ে এসেছে শীতকে। তার এক আনন্দময় অনুভূতি যেন আস্টেপিস্টে বেধে ফেলেছে আমাদের সবাইকে। রওনা হই ডেইরী গেটের দিকে সবাই চা পান করবো । তারপর আড্ডা । কারন ভর্তি পরীক্ষার নাটক ও হরতালের কারণে দীর্ঘ সাতদিনে বন্ধ পরে হবে পরীক্ষা।
ডেইরী গেটের দিকে যাওযার সময় আমার অবচেতন মন ঠিকই ভেবে চলেছ। অনেকের জন্য কল্পনার খায়েশ চিন্তার মায়াবী উর্বশী এই শীতকাল হটাত জেকে বসবে তারপর আবার চলে যাবে। কিন্তু শহরের এই যান্ত্রিকতার মাঝে এর শীতলতার পরশ কই। আমরা যারা এখানে থাকি তারা তো রোবট । আজ আর মন চায়না শীতের অছিলাতে স্কুল ফাকি দেই। আজ আর মন চায়না সেই খেজুর গাছে চড়তে। আজও খেজুরের রস ঠিকই খাই। তবে তা কিনি আগোরা স্টল থেকে। গতকাল কিনেছিলাম একবার তবে বুঝলাম না তা খেজুর গুড়ের শরবত না খেজুরের রস।
আর সকালে এমনিতেই উঠি বেলা বারটার পর । সারারাত যখন ভোর হতে বসে তখন তা আমার কাছে মনে হয় সন্ধা এল বুঝি।
এমনি করেই একদিন শেষ হবে এই শীতকাল । তার পর আবার এসির বিরক্তিকর গোঁ গোঁ শব্দ । তারপর :::::::: তারপর !!!!!!!!!!!!!! তারপর!!!!!!!!!!!!!!!১
এভাবেই আমাদের নিরন্তর পথচলা।
মো:আদনান আরিফ সালিম (অর্ণব)
প্রত্নতত্ত্বে অধ্যয়নকারী ও অবিনির্মানবাদী লেখক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়,
বাংলাদেশ.
[email protected]