somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি আমার মাকে যে কারণে পছন্দ করি এবং যে কারণে অপছ্ন্দ করি।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মায়ের সবচেয়ে আদরের যে বস্তু যেটা সেইটা মনে হয় আমি। যখন বাড়িতে ছিলাম(এস.এস.সি পরীক্ষার পরীক্ষার আগ পর্যন্ত) তখন মায়ের মমতা বুঝতে পারতাম না। কলেজে পড়ার সময় বাড়ি ছাড়তে হল। উঠলাম একটা মেসে। কলেজ ফরিদপুরেই ছিল।

তাই প্রতিসপ্তাহে একবার বাড়িতে যেতাম। যদিও মাসের খরচের টাকাটা অগ্রীম নিয়ে নিতাম। আব্বু মেপে টাকা দিত(মাসে পাচহাজার)। প্রতিমাসে বাবা টাকা দেওয়ার পরও মা আমাকে পাচশত টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিত। আমি নিতে না চাইলেও একপ্রকার জোড় করেই টাকাটা দিত। এই খবর বাবা জানত না। জানলে হয়তো বাজেট থেকে পাচশত টাকা কমিয়ে দিত। আমার মিষ্টি খাওয়ার একটা নেশা ছিল। যাহোক অতিরিক্ত এই টাকাটা দিয়ে সেই নেশা নিবৃত্ত করা যেত। বাবার পাচাহাজার টাকার কথা ভূলে গেলেও মায়ের পাচশত টাকার কথা হাশরের ময়দানেও হয়তো ভূলতে পারবো না। কারন টাকাটা চকচকে এবং অতি যত্নে রাখা বলে মনে হতো।(এটা মায়ের জমানো টাকা)। যাহোক দুবছর ভালই কেটেছিল।
ভর্তি কোচিং করার সময় প্রথম ঢাকায় এসেছিলাম ২০০৭ এ। তখনই মূলত মাকে বেশি মিস করা শুরু করি। কারণ তখন প্রতি সপ্তাহে মায়ের সাথে দেখা করার সুযোগ ছিল না। তখন আমার মোবাইল ছিল না। অনেক আবদার করেও মোবাইল নামক জিনিসটা পাইনি। মাঝে মাঝে খুব রাগ হতো বাবার প্রতি এই কারণে। যেহেতু মোবাইল ছিল না। তাই দোকান থেকে আমিই মাঝে মধ্যে বাসায় ফোন দিতাম। আমি আবার কিছুটা সময়জ্ঞানহীন মানুষ। একবার একটানা পনেরো দিন বাসায় ফোন না দিয়ে ছিলাম। পনেরোদিন যে বাসায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল এটা আমার অনুভূতিতেই আসেনি কারন তখন কোচিং এর প্রেশার একটু বেশি ছিল। তখন মা পাগলের মত হয়ে গীয়েছিল আমার সাথে কথা বলার জন্য। পনেরো দিন পরে ঢাকায় এক আঙ্কেলের মাধ্যমে আমার সাথে ফোন করে কথা বলে, সে সময় বকা খেয়েছিলাম অনেক।
বিশ্ববিদ্যালয় নামক স্বপ্নের ক্যাম্পাসে পদচারনা শুরু হল। যখন পিলখানা ট্রজেডি শুরু হলো তখন আমি হলে অবস্থান করছিলাম। নিউমার্কেট-আজিমপুরবাসীদের সরে যেতে হয়েছিল। সেদিন আমার মোবাইলে চার্জ না থাকার কারণে মোবাইল বন্ধ ছিল এবং আমি রুমের বাইরে ছিলাম। মা আমার রুমমেটদেরকে কমপক্ষে পন্চাশ বার ফোন দিয়েছিল। পরে আমি ফ্রেন্ড-এর মোবাইল দিয়ে বাসায় কল করতেই খেলাম গরম গরম ঝাড়ি। আমি কি আর করব আতঙ্ককে সাথে নিয়ে রাতটা কাটিয়ে দিলাম। পরেরদিন দশটার দিকে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। পোছাতো প্রায় ৩ টা বেজে গেল। সেদিন মা আমাকে জড়িয়ে ধরে ঢুকরে কেদেছিল। আমি মাকে বারবার বলছিলাম আমি ঠিক আছি মা কোন সমস্যা নেই। সে যেন ছেলেকে হাতে ধরেও বিশ্বাস করতে পারছে না যে তার ছেলে ফিরে এসেছে। মায়ের প্রতি আমার অভিমান হলো সে কেন আমার জন্য এতটা চিন্তা করে। আমার জন্য কেউ চিন্তা করে কষ্ট পাবে এইটা আমি মেনে নিতে নারাজ।
মুক্তিযুদ্ধের একটা নাটক "রেবেকা" দেখলাম। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছেলের ফিরে আসার আকুতি আর পেরেশানি দেখে আমি ছেলের প্রতি মায়ের ভালবাসা কিছুটা আচ করতে পেরেছি।
আজ মা কে খুব মনে পড়ছে।
আজ দেশ মায়ের হাজার হাজার সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। ছেলের জন্য তার চিন্তার অন্ত নেই, চোখে ঘুম নেই, ছেলের চিন্তায় মা যে কত রাত নির্ঘুম কাটায় তা আমাদের অজানা। মা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ছেলেকে দিয়েছে জ্ঞান অর্জন করা জন্য নেতা হবার জন্য নয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ঘটনা ঘটেছে তাতে কত মায়ের যে ঘুম হারাম হয়ে গেছে, কত মায়ের চোখের পানি যে অঝড়ে পড়েছে তার হিসাব আমাদের কাছে নাই।
জবি তে যারা মারামারি করেছে তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, আপনি যাকে মারলেন ক্ষমতার জন্য তার মা হয়তো তাকে কোনদিন একটা থাপ্পর পর্যন্ত দেয়নি। আর আপনি তাকে মেরে রক্তাক্ত করে দিলেন। এ ক্যামন বিবেক আপনার?
আমারা কিন্তু সবাই দেশ মায়ের সন্তান। বিশ্বের বুকে আমাদের পরিচয় আমরা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ছেলে। যেহেতু আমরা দেশের সন্তান সেহেতু সবাই আমরা ভাই ভাই। ভাই ভাই মারামারি করলে কি আর চলে?
আসো আমরা সমস্ত হিংসা বিদ্বেস আর স্বার্থের উর্ধ্বে একান্ত ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে সুদৃঢ় করে দেশ মায়ের কষ্ট নিবাড়ন করি।

-------------------
পোষ্ট শেষ। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ২:৪২
১৬টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×