somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসলিম সমাজে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৮ম পর্ব
ইসলামের জীবনযাপন পদ্ধতি সব সময়ই সুশৃঙ্খল এবং বৈজ্ঞানিক। ফলে তা মানুষের জন্য কল্যাণকর। কিন্তু এই কল্যাণকে আমরা অনেকেই ব্যক্তিগত জীবনের বাস্তবতায় যথার্থভাবে কাজে লাগাতে পারছি না বলেই কল্যাণবিমুখ হয়ে হতাশায় ভুগি। আমাদের একটা অভ্যাস অজান্তেই গড়ে ওঠেছে, তাহলো না জেনে না বুঝে পাশ্চাত্যের ভেঙ্গে পড়া পরিবার কাঠামোর অনুসারী হয়ে পড়া। তাদের উশৃঙ্খল ও অযৌক্তিক জীবনযাপন পদ্ধতিকে ‘আধুনিক' আখ্যা দিয়ে আমরা যখন তার চর্চা শুরু করে দেই, তখনই ইসলামের জীবন পদ্ধতি আমাদের সামনে সেকেলে হয়ে দাঁড়ায়। অথচ পাশ্চাত্যের এই আধুনিকতার দাবীদাররা বহু আগেই তাদের জীবন চর্চার ভ্রান্তির ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠেছে। তাদের উশৃঙ্খল জীবন পদ্ধতি কেবল পরিবার নয় সমাজ থেকে রাষ্ট্রপতি সর্বত্রই এক দুর্বিসহ বিশৃঙ্খলার জন্ম দিয়েছে। পরিবার কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা তারা এখন হাড়ে হাড়ে উপলদ্ধি করছে। অথচ ইসলাম দেড় হাজার বছর আগে যে পারিবারিক শৃঙ্খলা বিধান করে গেছে, তার আজো পরম সত্যের আলোকবর্তিকা হিসাবে পৃথিবীকে আলো বিকিরণ করে যাচ্ছে। কিয়ামত পর্যন্ত ইসলামের এই জীবন বাস্তবতা অক্ষুন্ন থাকবে। তাই আমাদের উচিত ভেঙ্গে পড়া সমাজের ভঙ্গুর আদর্শের চাকচিক্যকে আধুনিকতার মোড়কে বন্দী করে নিজেদেরকে বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত না করা। ইসলামের শ্বাশ্বত আদর্শে অবগাহিত হয়ে তারি আলোকে পারিবারিক জীবনকে সাজিয়ে তুলে ইহকাল এবং পরকালীন সুখ-শান্তির পথ সুগম করা। ইসলামের দিক নির্দেশনা আনুযায়ী আমরা ইতোপূর্বে পরিবারের অভিভাবক পুরুষের দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
এবারে আমরা সংসারের সুখ-শান্তির নিশ্চয়তা বিধানকারিনী স্ত্রীর দায়িত্ব এবং কর্তব্য নিয়ে আলোচনা করবো।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মহিলাদেরকে এক অসাধারণ ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। পরিবারের সুখ-সমৃদ্ধি কিংবা অশান্তি বা দুর্ভোগ এসবের অধিকাংশই নির্ভর করে নারীর ওপর। নারী ইচ্ছে করলে ঘরকে বানাতে পারে বেহেশত, আবার সে-ই ঘরকে পরিণত করতে পারে জ্বলন্ত দোযখে। একইভাবে নারী তার স্বামীকে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে যেমন সাহায্য করতে পারে, তেমনি খুব সহজেই স্ত্রী পারে স্বামীকে দুর্ভাগ্যের অতল গহ্বরে পৌঁছে দিতে। নারীর এই বিশেষ ক্ষমতা বা গুন আল্লাহর দান। অতএব গুনের প্রয়োগ যথার্থ হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। অর্থাৎ নারীকে অবশ্যই তার এই গুন বা যোগ্যতাকে স্বামী ও সংসারের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। রাসূলে কারীম (সাঃ) বলেছেন, "যদি কোন মহিলা তার স্বামীর প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে সে আল্লাহর প্রতি তার কর্তব্যকেও পালন করেনি।" কতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এটি। পাশ্চাত্য চিন্তার অনুসরণে তথাকথিত আধুনিক নারীদের দায়িত্ববোধে এ ব্যাপারটি আপাত দৃষ্টিতে হাস্যকর বলে মনে হলেও পরিণতিতে তার চরম সত্যের রূপ পরিগ্রহ করে। যেসব নারী ব্যক্তিস্বাতন্ত্র চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে স্বামীর প্রতি নিজস্ব দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়ে, তাদের সংসার, পরিবার তথা জীবনের সুখ-শান্তি যে সুদূর পরাহত, তার প্রমাণ পাশ্চাত্যের ভেঙ্গে পড়া পরিবার কাঠামো। হযরত আলী (আঃ) বলেছেন, "একজন স্ত্রীলোকের জিহাদ হলো তার স্বামীকে ভালো রাখা।" এই ভালো রাখতে গেলেই স্ত্রীর ওপর বিচিত্র দায়িত্ব বর্তায়। এই দায়িত্ব পালনে স্ত্রীকে হতে হয় চটপটে ও চালাক-চতুর। তীক্ষ্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক অনুভূতি, সুরুচীবোধ এবং অকৃত্রিম ও অকপট আচরণের মাধ্যমে স্ত্রী তার স্বামীকে ভালো অর্থাৎ কাঙ্খিত লক্ষ্য নিয়ে যেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে স্ত্রীর প্রাথমিক কাজ হবে স্বামীর হৃদয়কে জয় করা এবং স্ত্রীর ওপর স্বামীর ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাস জাগিয়ে তুলে তাকে খারাপ কাজ থেকে কৌশলে ফিরিয়ে রাখার চেষ্টা করা। ভালোবেসে পৃথিবী জয় করা যায়। ভালোবাসা বন্ধুত্বের সম্পর্ককে দৃঢ় করে। প্রতিটি মানুষই ভালোবাসা প্রত্যাশা করে। কারণ ভালোবাসাহীন মানুষ বড়ো একা-নিঃসঙ্গ এমনকি পরিত্যক্ত। তাই একজন স্ত্রী হিসাবে স্বামীকে যতোবেশী ভালোবাসা যাবে, ততোই পারস্পরিক সম্পর্ক হয়ে উঠবে মধুর ও সুখের। কারণ ভালোবাসা এমন একটি পরস্পরমুখী সম্পর্ক যা দুটি হৃদয়কে একত্রিত করে দেয়। এই ভালোবাসার প্রকাশ বিচিত্র। ভালোবাসা কেবল প্রকাশ্যে নয়, আন্তরিক হতে হবে। ঘরে-বাইরে সবখানেই তার অভিব্যক্তি হতে হবে অকৃত্রিম। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবার সামনেই স্বামীর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ স্বামীর প্রশংসা ও সৎগুনাবলীর ইতিবাচকতা তুলে ধরতে হবে। সব মিলিয়ে স্বামীর সাথে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে না উঠলে পরস্পরের প্রতি হৃদয়ের টান অনুভূত হবে না। আর দুটি হৃদয় যদি অভিন্ন না হয়, তাহলে সেখানে ভালোবাসা থাকে না। ভালোবাসা না থাকলে সংসারে বিরাজ করে অশান্তি। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন ও আকর্ষণকে শান্তি ও কল্যাণের উৎস হিসাবে প্রকাশ করেছেন এভাবে-"এবং তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে এই যে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে সঙ্গীনি তৈরী করেছেন, যাতে করে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক দয়া ও ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল লোকদের জন্যে এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।" ইমাম রেজা (আঃ) বলেছেন, ‘কোন কোন স্ত্রীলোক তাদের স্বামীদের জন্যে আশীর্বাদস্বরূপ- যারা তাদের ভালোবাসা ও অনুগত্যকে প্রকাশ করে।'
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×