somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজয় দিবস কবে আসবে প্রকৃত বিজয় হয়ে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে??

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৬ই ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। গত ৩৯টি বছর ধরে শ্যামল সবুজ সোনার বাংলাদেশে বিজয় দিবস নতুন সপথের স্বপ্ন নিয়ে আসে, মনের অলিন্দে কিছু করার প্রত্যয় সবার অজান্তে নাড়া দিয়ে যায়। স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচারের দাবী গত ৩৮টি বিজয় দিবসে যেমন ছিলো আজও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। বরং নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের অপরিসীম অবদানের বিন্দু পরিমাণ ঋন শোধ করার অভিলাষ আজ পাহাড় সমান। মুক্তিযোদ্ধাদের নিঃস্বার্থ আত্মদানের ঋন কোন ভাবেই পরিশোধ করা যায় না। তবু শহীদের বিদেহী আত্মার শান্তির জন্য, লাঞ্চিত, নিগৃহীত, অপমানিত মা বোনের কষ্টের পাহাড় থেকে কিছু বরফ গলিয়ে দেয়ার জন্য অনতিবিলম্বে রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের বিচার করা সময়ের দাবী। নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার মূল্যবোধ সঠিক ভাবে তুলের ধরার একমাত্র অন্যতম উপাদান।
বর্তমান সরকার স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ সেই পথেই হাঁটছে। ১৬ই ডিসেম্বরের সকালের সুর্য সবুজ মাটির বুক স্পর্শ করার আগে ধরা পরেছে কুখ্যাত রাজাকার সাকা চৌধুরী। বিজয়ের প্রথম প্রহরে সংবাদটি মানুষের বিজয় উল্লাসকে করেছে বাঁধ ভাঙ্গা ঝর্নার মত দূর্বার। কাল রাজপথে ছিল তার অনিন্দ্য সুন্দর বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রিয় মানুষ গতকাল ঘর ছেড়ে রাজপথে এসে বিজয়কে উদযাপন করেছে প্রাণের স্পন্দনে, ভালোবাসার অকৃত্রিম শ্রদ্ধায়।
সাকার গ্রেফতারের সংবাদটা যেন সবার মাঝে প্রশান্তির ঠান্ডা হিমেল বাতাস বুলিয়ে দিয়ে গেছে। রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন যেন আজ হাতের মুঠোয়। তাইতো একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের আহবানে হাজার হাজার মানুষ এক কাতরে দাড়িয়ে, এক সুরে দেশের বরেণ্য শিল্পীদের সাথে গলা ছেড়ে গাইলো-"আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।"
গতকাল ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে ছিল একই চিত্র, একই স্বপ্নের দোলা সবার মনে দোল দিয়ে গেছে। রাজাকার সাকা চৌধুরীর গ্রেফতার বিজয় দিবসের তাৎপর্য এবং আবেদনকে সবার কাছে অন্য রকম এক সুখের সুবাতাস হয়ে ছুঁয়ে গেছে। নানান রঙের ব্যানারে, ফেস্টুনে, প্ল্যা-কার্ডে প্রতিটি শহর ছিল রঙিন বর্ণে বর্ণিল। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের রেকর্ড যেন জীবন্ত মজিবকে দাড় করিয়ে দিয়েছিল লক্ষ জনতার বিজয় মিছিলে।
গতকাল ঢাকা শহরে সৃষ্টি হয়েছিল চিরচেনা যন্ত্রণার যানজট, কিন্তু স্বাধীনতা প্রিয় মানুষ একটু বিরক্তি প্রকাশ করেনি, বরং অতি উৎসাহে চেয়ে চেয়ে দেখেছে বিজয়ের উল্লাস। নিজেকে সামিল করে নিয়েছে সানন্দে। ঘুরে বেড়িয়েছে প্রিয়জনকে নিয়ে। সকাল থেকে লাখো মানুষের ঢল ছিল জাতীয় স্মৃতি সৌধে।

কালকে যে লক্ষ মানুষের ঢল নেমেছিল সারা বাংলাদেশের প্রতিটি শহরে, গঞ্জে, পাড়ায়-মহল্লায়, গ্রামে, হাটে-বাজারে সেখানে ছিল নতুন প্রজন্মের ঢল। আমি বিস্ময় নিয়ে দেখেছি, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, বইতে পড়ে, মায়ের কাছে , বাবার কাছে শোনে জেনেছে, সেই প্রজন্মের স্বঃস্ফুর্ত অংশ গ্রহণ। তাদের অভাবনীয় দেশ প্রেম সত্যি ঈর্ষনীয়। এই নতুন প্রজন্মের প্রতি রইল আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
এই নতুন প্রজন্মের প্রাণের দাবী-"রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ" রুখবে সাধ্য কার? বিচারের দাবী আজ আগুনের শিখার মত ছড়িয়ে পড়ছে নারী-পুরুষ-কিশোর-যুবক সবার প্রাণের মাঝে, একে থামাবে কে, কার আছে উপেক্ষা করার দুঃসাহস! এই আগুনে পুড়ে মরবে রাজাকারের বাচ্চারা।
রাজাকারের বিচারই শেষ দাবী নয়, যে স্বপ্নের সপথ নিজে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিল হাজার হাজার নারী-পুরুষ সে স্বপ্নের বাস্তাবায়ন দেখতে চাই। যে মায়ের কোল থেকে সন্তানকে নিয়ে লাশ বানিয়ে ফেলে রেখে গেছে বদ্ধভূমিতে , সেই মায়ের চোখে জল দেখতে চাই না। সোনার বাংলাদেশ শ্লোগান আর বক্তিতায় শোনতে চাই না। কর্মে, আচরণে, বিশ্বাসে, ভাবনায় বহিঃপ্রকাশ দেখতে চাই। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাত থেকে যে স্বপ্নের স্বাধীনতা আমাদের পূর্ব পুরুষেরা দিয়ে গেছেন তার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। প্রকৃত গণতন্ত্র চাই, নিশ্চিত নিরাপত্তা চাই। খাদ্য-বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থানের অধিকার চাই। সুন্দর বাংলাদেশ চাই। খুন-খারাবী, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, হল দখল-জমি দখল, হিংস্রা বিদ্বেষ, কুৎসা, পারস্পারিক অসম্মান দেখতে চাই না।
আজ থেকে বিজয় দিবসে নতুন প্রজন্মের দাবী হোক "দূর্নীতিমুক্ত প্রশাসন চাই, রাজনীতি মুক্ত নিয়োগ চাই, জীবনের নিরাপত্তা চাই, প্রকৃত গণতন্ত্র চাই, রাকনৈতিক শিষ্টতা চাই, নেতাদের মধ্যে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ চাই। সোনার বাংলাদেশে সোনার মাটিতে আর এক ফোটা রক্ত দেখতে চাই না। যে মাটি শহীদের রক্তে ভেজা, সেই মাটিতে স্বার্থের রক্ত দেখতে চাই না।"
যদি এই দাবী বাস্তবায়িত হয়, দেশটা যদি মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবনার মত সহজ, সরল হয়, তাহলেই স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌছে যাবে। অন্যথা কতিপয় ভোগ বিলাশীর হাতেই থেকে যাবে স্বাধীনতার চেতনা। বিজয় দিবস আসবে, রাজপথে মানুষের ঢল নামবে কিন্তু সাধারণ মানুষের কোন পরিবর্তন হবে না।
ধন্যবাদ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×