somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রবীন্দ্রনাথের কোন বিকল্প নাই -১৩

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রবীন্দ্রনাথ অনেক রাত করে ঘুমাতে যান।বাড়ির সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন সেই নিস্তব্দতা তিনি উপভোগ করেন।তখন তিনি সব অস্থিরতা দূরে সরিয়ে রেখে কবিতা লিখতে বসেন।কোনও কোনও দিন কিছু না লিখলেও কাগজ-কলম নিয়ে বসে থাকেন।না লেখা কবিতা নিয়ে খেলা করতেও যে কত আনন্দ পাওয়া যায়,তা কবি ছাড়া অন্য কেউ বুঝবে না।মৃণালিনী কোনদিনই রবীন্দ্রনাথের মনের কাছাকাছি পৌছাতে পারেন নি।তার কাছে রবীন্দ্রনাথ সব সময়ই যেন একজন অন্যমনস্ক,উদাসীন মানুষ।কিন্তু রবীন্দ্রনাথ কোনদিন তার কর্তব্যের ক্রুটি করেন নি।রবীন্দ্রনাথ বাইরের লোকদের কাছে অতি নিঁখুত,ভদ্র-বিনয়ী।তিনি শুধু তার বড় ভাইয়ের মেয়ে, 'বিবি'র সাথে প্রান খুলে কথা বলতেন।তিনি বিবির সাথে কথা বলে দারুন আনন্দ পেতেন।ঠাকুর বাড়ির সকলেই জানেন,বিবিকে রবীন্দ্রনাথ রাশি রাশি চিঠি লিখতেন।রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ কিংবা পতিসরে গিয়ে যখন বোটে থাকতেন,তখন প্রায় প্রতিদিনই বিবির নামে একখানা করে চিঠি আসত।আর নিজের বউ মৃণালিনীর কাছে চিঠি আসত দু-একটা মাত্র,দায়সারা গোছের। রবীন্দ্রনাথ বিয়ের পর রাতে মৃণালিনীকে ডেকে সদ্য রচিত কবিতা শোনাতেন কিংবা কোনও বইয়ের মজাদার অংশ শোনাতেন।কিন্তু খানিকক্ষন শুনেই মৃণালিনীর চোখে ঢুলুনি এসে পড়ত।রবীন্দ্রনাথ এতে খুব মানসিক কষ্ট পেতেন।মৃণালিনী সারাদিন সংসারের কাজ আর বাচ্চাদের দেখাশোনা করে এক আকাশ ক্লান্তি নিয়ে বিছানায় গেলেই তার দু'চোখ গভীর ঘুমে জড়িয়ে আসত।অবশেষে মৃণালিনী মেনেই নেন বিখ্যাত স্বামীর সেবা আর পুত্র কন্যাদের জননী হয়েই তাকে থাকতে হবে।রবীন্দ্রনাথের মনোজগতে তার ঠাঁই নেই।মৃণালিনী ঘুমিয়ে পড়ার পরও রবীন্দ্রনাথ একা অনেকক্ষন জেগে থাকতেন।

শুধু মাত্র গান রচনার ক্ষেত্রেই রবীন্দ্রনাথের কোনও তাগিদের প্রয়োজন হতো না।গানের কথা গুলো নিজে থেকেই রবীন্দ্রনাথের কাছে সে ধরা দিত।কথা'র আগে আসত সুর।দূর থেকে ভেসে আসা কোনও ফুলের সুগন্ধের মতন একটা কোনও নতুন সুর মাথার মধ্যে গুঞ্জরিত করত।তারপর আপনি আপনি যেন সেই সুর কথার অবয়বে ফুটে উঠত।"আরও কত দূরে আছে সে আনন্দধাম/আমি ক্লান্ত-আমি অন্ধ/আমি পথ নাহি জানি..."।আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কারোর বিয়ে হলে রবীন্দ্রনাথ সেই বিয়ে উপলক্ষে নতুন গান বাঁধতেন।রবীন্দ্রনাথকে তার বন্ধু দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বলতেন- "আপনার গান এত শক্ত যে আমার গলায় ওঠে না কিছুতেই।আপনি সুরের মধ্যে কী একটা ঘটিয়ে দেন বলুন তো!"
কাদম্বরী আত্মহত্যা করার অনেক বছর পরও রবীন্দ্রনাথ কখনও কখনও মধ্যরাত্রে যেন,কাদম্বরীর অস্তিত্ব টের পেতেন।প্রায়'ই কাদম্বরীর ছায়া দেখতেন।রবীন্দ্রনাথের বার বার মনে হত,দরজার আড়ালে যেন কাদম্বরী দাঁড়িয়ে আছেন।এক গভীর অসুখী অতৃপ্ত হাহাকার ভরা নারীর আত্মা যেন মৃত্যলোক থেকে ফিরে এসে আবার শরীর ধারন করতে চাইছে।কিন্তু পারছে না।স্বচ্ছ কাচের টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে।রবীন্দ্রনাথ বার বার মনে প্রানে চাইতেন কাদম্বরী আর একবার তার কাছে দেহ ধারন করে আসুক।একমাত্র কাদম্বরীই ছিলেন রবীন্দ্রনাথের বন্ধু ও কবিতার প্রধান সমজদার ও প্রেরনা।কাদম্বরীর মৃত্যর পর রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন- "ওই মুখ ওই হাসি কেন এত ভালোবাসি/কেন গো নিরবে ভাসি অশ্রুধারে/তোমারে হেরিয়া যেন জাগে স্মরনে/তুমি চির-পুরাতন চির জীবনে"।কবিতা টি 'মৃত্যুর পরে' নাম দিয়ে ছাপা হবার পর অনেকেই মনে করেছিলেন,এটা বুঝি বঙ্কিমবাবুর স্মরনে লেখা।

যখন রবীন্দ্রনাথের বয়স ছত্রিশ।একদিন সকালে রবীন্দ্রনাথ ঘুম থেকে উঠেই আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবলেন- মৃত মানুষদের বয়স বাড়ে না।কাদম্বরী যে বয়সে আত্মহত্যা করেছিলেন সেই বয়সেই আটকে আছেন।কাদম্বরী বেঁচে থাকল,রবীন্দ্রনাথ ছত্রিশ বছর বয়সে কী পারতেন,নিরিবিলিতে জ্যৈষ্ঠ ভ্রাতৃবঁধুর সাথে খুনসুটি করতে?তখন তার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে মাধুরী আর রথী কিছুটা বড় হয়েছে।লেখালেখি আর জমিদারি পরিদর্শন ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ পাট ও আখ মাড়াই এর ব্যবসা করেছেন,গ্রামে গ্রামে গিয়ে কাঁচা চামড়া কিনে সেগুলো বিক্রি করতেন কলকাতায়।দেবেন্দ্রনাথ তার এই গুনী পুত্র রবীন্দ্রনাথকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নী দেন।যার ফলে ঠাকুর বাড়ির সমস্ত খুঁটিনাটি সমস্যায় রবীন্দ্রনাথকেই মাথা ঘামাতে হতো।কখনও ছুটতে হতো আদালতে।উকিল ব্যারিস্টারদের সাথে নানান পরামর্শ করতে হতো।তখন দেবেন্দ্রনাথ থাকতেন পার্ক স্ট্রিটের এক ভাড়া বাসায়।রবীন্দ্রনাথের সেখানেও ঘন ঘন ছুটতে হতো।পিতার কাছে হিসেবনিকেশ দাখিল করতে হতো।দেবেন্দ্রনাথকে খুশি করা সহজ ব্যাপার ছিল না।সামান্য গাফিলতিও তার নজর এড়াত না।তবে রবীন্দ্রনাথের কাজকর্মে পিতা দেবেন্দ্রনাথ অনেক খুশি থাকতেন সবসময়।তিনি অন্য পুত্রদের বাদ দিয়ে জোড়াসাঁকো বাড়ির সংলগ্ন একখন্ড জমি রবীন্দ্রনাথকে দেন।রবীন্দ্রনাথ সেখানে নিজস্ব একটি বাড়ি তৈরী করেন।বাড়ি তৈরীর খরচ দেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

একবার মধ্যরাত্রে রবীন্দ্রনাথ ঘুম থেকে উঠে গ্যাসের বাতি জ্বালিয়ে লিখতে বসলেন।কিন্তু কিছুতেই লিখতে পারছেন না।বার বার তার মনে হচ্ছিল কে যেন,জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ঠক ঠক শব্দ করছে।ঠক ঠক শব্দ শুনেই মনে হচ্ছে যেন কেউ ব্যকুলভাবে বলতে চাইছে,খুলে দাও,দ্বার খুলে দাও।ঝড়ের মধ্যে আমি আর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না।দরজা খোল ভেতরে আসতে দাও আমাকে।বাইরে কালবৈশাখী ঝড় হচ্ছিল তখন।রবীন্দ্রনাথ অনেকক্ষন জানালাটির দিকে তাকিয়ে রইলেন।তারপর উঠে গিয়ে জানালা খুলতেই এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগল তার।(অনেক বছর আগে এ রকম ঝড়ের রাতেই কাদম্বরী আত্মহত্যা করেছিলেন)কলম দিয়ে আঁকিবুঁকি কাটতে কাটতে এক সময় একটা ছবি ফুটে ওঠে।একটি নারীর মুখের আদল।হঠাৎ রবীন্দ্রনাথের বুকের মধ্যে হাহাকার করে উঠল।তারপর তিনি কিছুক্ষন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলেন আর বিড় বিড় করে বললেন- 'কাদম্বরী,নতুন বউঠান আমার!আমি তোমাকে ভুলে যেতে পারি?আমি কি এত অকৃতজ্ঞ হতে পারি?নতুন বউঠান সবসময় আমার তোমার কথা মনে পড়ে।সেদিন বিডন স্কোয়ারে গান গাইবার পর যখন হাজার হাজার লোক আমার সুখ্যাতি করছিল আমি তখন শুধু ভাবছিলাম,নতুন বউঠান এই দৃশ্য দেখলে কত খুশি হতো!অন্যলোক আমাকে যতই সম্মান দিক,শিরোপা দিক সবই আমার তুচ্ছ মনে হয়।নতুন বউঠান তুমিই তো আমাকে সমাট্র করেছ।তুমি আমার মাথায় পরিয়েছ ভালোবাসার মুকুট।"আমার সত্য মিথ্যা সকলই ভুলিয়ে দাও/আমায় আনন্দে ভাসাও/না চাহি তর্ক না চাহি যুক্তি/না জানি বন্ধন না জানি মুক্তি/তোমার বিশ্বব্যাপি ইচ্ছা/আমার অন্তরে জাগাও..."

[তথ্যসুত্র শেষ পর্বে দেওয়া হবে,আর এক পর্ব লিখব।]
(চলবে....)
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×