somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি অনন্ত বৈশাখের ঝড়ে ছিন্নপত্র

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
আমি বসে আছি আশাসিন্দ্ধুর কূলে সদাই। মেঘ-ধেয়ানে বসে আছি। আমার বেহাল দশা।

কুতর্কের দিন শেষ। এখন সোজা কথা, সহজ কথা বলার সময়। ঢাকা শহরে চরম মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। সে-ই যে আদমের ঘরে, অনন্ত কুঠুরি আছে, সেগুলোতে মাকড়সার বাসা। ছাড়া বাড়ির মতো সে-ই সব কুঠুরিতে কেউ বাস করে না। এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, রাস্তা-ঘাটে চলে ফিরে এমন মানুষের মধ্যে পাঁচজনের একজন মানসিক রোগি, মনোবিকারের এইসব অচেনা অদৃশ্য লক্ষণ নিয়ে যারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাদের জন্য আমার কষ্ট। এই শতাব্দির সবচে’ বড়ো সমস্যা যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তাকে মার্কিন কাপড়ে দাফন-কাফন করার সময় এখন। আর দেরি করা যায় না। মার্কিন কাপড় নিয়ে কিছু ইতিহাস বলা দরকার। যিনি জাহের আছেন ত্রিসংসারে, সে-ই প্রজ্ঞার হাত থেকে কারো নিস্তার নাই। ভানু পাটে বসার সময় এসে গেছে। এই ঘোর সংকটে আমাদের বসে থাকলে তো চলবে না।


মার্কিন কাপড় একাত্তরের পর পর খুবই পাওয়া যেতো । লাশ দাফনের জন্য ব্যবহৃত হতো।


২।

কোন কোন প্রভাতে সবকিছু ফুটে থাকে। কিংবা কোন কোন রাত জ্যোৎস্না জলজ, শিশির-শশী একাকার ভূমন্ডলে। আকাশ অধিকার করে থাকে মায়া। এতো মায়ার ভেতর নিজেকে দরবেশ-দরবেশ লাগে। কোন কোন দুপুর হাওয়ায় উতাল। সব কিছু বিরান শূন্যতার মাঝে হাহাকার করতে থাকে। আমার কিন্তু এইসব সুরয়াল ভাবনার সময় নাই।
আমি অনন্ত বৈশাখের ঝড়ে ছিন্নপত্র। কিন্তু এও এরাদা করেছি যে অনন্ত বৈশাখের ঝড়ে কালের ঘুড়ি উড়াব নিশ্চয়। কারণ সবাই ছেড়ে দিলেও কালতো ছাড়বে না। কালের হাতে প্রায় ধরা খেয়ে গেছি। কতো পাপ যে করেছি। শুধু প্রতিবাদ না করার পাপের ভার আর বইতে বইতে ক্লান্ত। বিশুদ্ধ জ্ঞানের, চৈতন্য – সে-ই অধরা অভিমুখিন রোজ রুজু হই। জানি তার দেখা পাবো না। তাতে কী! চাহিয়া কৃষ্ণ প্রেম, তুমি যদি রাধা হতে শ্যাম। যে কাঁদনে কাঁদায়েছো মোরে, কাঁদাতাম তোমারে তেমন করে। যদি পেতাম, হে পরম! আর যুগল রুপে আসতাম মাটির পরে। কপালে নাই। আজ এই প্রভাতে জিকিরের পরে, অজিফা পাঠের শেষে যখন মোমিনের অশ্রু রেখা এখনো দৃশ্যমান, যখন সেজদা-আনত বৃক্ষেরা এইমাত্র সরল সুঠাম উঠে দাঁড়িয়েছে।

এই সময় বাংলার মুসলিম সাহিত্য পাঠ করতে বসেছি। আমার ভেতর ভাষার মুকুল ফুটি ফুটি। আমার কিসমতে কাব্যভাষার ভাগ যতটুকু পেয়েছি, সেটিকে বীজ রুপে বপন করেছি। উপ্ত বীজ নক্ষত্র ফল, একতারা ফুলে গুপ্ত। যা কিছু প্রকাশিত, জাহের – আত্মপ্রকাশে ডগমগ- তা তোমারই নিয়ামত। আমার সাহিত্যের পরম্পরা ভুলতে চাই না, মাবুদ। আমার ঠাকুর ভাষাকে সংস্কৃতের পায়রুবি করা থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। মধুকর ফুলে মধু পেলে রহে না চঞ্চলা (নজরুল); নজরুল বাংলা ভাষাকে প্রাণ দিয়েছিলেন। প্রেমে ভাবে, পেয়ারে-মহব্বতে ঝিলমিল-খিলখিল করে তুলেছিলেন। বাঙালি মোসলমানের মুখের জড়তা কাটিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আপন সাংস্কৃতিক সম্পদ ছাড়া তো ভাব হয় না। সে-ই ভাবসম্পদ নজরুল আমাদের দান করেছেন নির্ভিক মহাবয়ান তৈরি করে। মনের কথা কী মুখে সব বলা যায়, রাতের আঁধারে যত তারা ফুটে আঁখি কি দেখিতে পায়? (নজরুল)

এই প্রভাতে এই সবই আমার ভাবনা। নজরুল সমস্ত “আরব” বঙ্গ-আত্মস্থ করেছিলেন। বাংলার ইসলামকে আরবদের কাছ থেকে জুদা করার প্রাথমিক মাল-মসলা আমাদেরকে দেয়।

৩।

আমার সভা আছে। বেঙ্গল উইম্যান কনসার্ট এসোসিয়েসনের সভা আজ। আজকের সভায় আমার ভাষণ দেবার কথা। আমাকে নোট নিতে হবে।
নোট ১; কুক্কুরুৎ ধ্বনি দিয়ে শুরু করতে চাই। বাঙলায় এখন আর মোরগ বাগের সময় নাই। এই ক্ষণ ফিরিয়ে আনার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ। দি সাঊন্ড অব কক নামে যে এ্যালবামটি মিঊজিক পোলট্রি আগেই বের করেছিল, সে কথা আমাদের মনে রাখা দরকার। চন্দ্রমল্লিকা ভাণু স্বরপ্রধান ছিলেন অই দলে। যা হোক, কুক্কুরুৎ ধ্বনি একটি জাগজাগানিয়া স্বর।প্রথম মোরগ বাগের সময় আমাদের আড়মোড়া ভাভার সময়ের কথা ভুলে গেলে চলবে না। এটি বৈপ্লবিক ধ্বনিমন্ডলের প্রথম নোট। তা-ই আজকের সভায় বেঙ্গল প্রাণ জেনেটিক কাঊন্সিল আমাদের আদি মোরগ-মুরগি ফিরিয়ে আনার যে উদ্যোগ নিয়েছে, সে-জন্য তাদেরকেও সাধুবাদ জানি।
এই ধ্বনি হালে আমাদের কাব্যেও প্রবেশ করেছে। তারা বুঝেছেন যে কাব্য একটি জীবন্ত ব্যাপার। তাই প্রত্যেক কবি দেশি মোরগের চাষে ব্রতী হয়েছেন। তাদের জন্য বলি; অসময়ে কৃষি করে যারা মিছিমিছি যারা খেইটে মরে,তাদের জন্য কষ্ট। মহাযোগ সব সময় দিনে উদয়। আমাবস্যায় পূর্ণিমা হয়। দিন থাকতে দিনের সাধন কর।
নোট-২; হুক্কাহুয়া; ঐকতান। শিয়ালের তেলে বাত-ব্যাথা ভালো হয় এই বিশ্বাসের বলি হয়েছে কতো শিয়াল। শিয়ালের মাংসও কোন কোন রোগের জন্য উপকারি –এই ভ্রমে তাদের বংশ নিপাত এখনো হয়নি। এখনো গভীর জংগলে শিয়াল আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিয়াল গবেষণা কেন্দ্রেও কিছু লাল ও কালো শিয়াল রয়েছে। রাজশপুর শহরে সর্বভারতীয় বিপ্লবের যুগে যে ভারত-বাঙলাদেশ মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছিল সাত ভাই চম্পা বিপ্লবী স্কোয়াড-এর পক্ষ থেকে, সেখানকার শাল-নিরজনে বৃষ্টি এলে এখনও কিছু শিয়াল চিৎকার করে। এই ঐকতানকে কেঊ কেঊ ‘এক রা’ বলেন। আমি বলি, এই ডাক একলা দোসর।

৪।
অঝর ক্রন্দনে বিধান নাহি বদলায়। সাত ভাই চম্পা বিপ্লবী স্কোয়াড এগিয়ে চলেছে। বাঙলা ও ককবোরক ভাষায় প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে। বোরক জাতির ভাষা বড়ো মিষ্ট। বোদো ভাষায়ও লিফলেট দিয়েছি। সমতল ও পাহাড়ের সকল ভাষায় ব্যাপক প্রচারণা চলছে। স্ব-শকতির বলে ভয়-তরাস ভুলে সঙ্ঘশক্তি, এই মন্ত্র। সকল ভাষা তার সবাক বাগশক্তির অপার সম্ভাবনা নিয়ে বোলে-রোলে নিনাদিত। আমরা এখন খন্ডলে আছি। আমাদের মনচিত্রে মানচিত্র পর্ব পার। গুরু তাই বলেছিলেন। ধান ফুটিলে হবে চাল, তুষ ফুটিলে কী বা হয়। কাঁচা হাঁড়ি জলে দিলে গলে যাবে, এই ব্যাপারে আমরা সাবধান ছিলাম। মাটির পিঞ্জরা ও দেহের ফারাক আমরা বুঝি। এই বিপ্লব শুরু হয়েছিলো যেদিন মান্দী নগর,লালনগর, বাংলাদেশের আশি হাজার গ্রামে বিপ্লবী আখড়াঘর প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×