somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যোগ ব্যায়াম

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যায়াম সম্পর্কে ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি :
১. স্থুল দেহ, অতিরিক্ত মোটা ,উচ্চতার তুলনায় যাদের অতিরিক্ত ওজন এবং ফিগার সচেতন ব্যক্তিদের জন্যেই ব্যায়াম। যারা হালকা-পাতলা, লিকলিকে, শারীরিক ওজন কম তাদের জন্যে প্রয়োজন নেই ব্যায়ামের।
২. সারাদিন অনেক কাজ করতে হয়। মহিলারা ভাবেন রান্না-বান্না, ঘর- দোড় সামলানো, বাচ্চাদের দেখাশোনা- সবকিছু ব্যালেন্স করতে যেয়ে শারীরিকভাবে অনেক কষ্ট করতে হয়। এতো পরিশ্রমের পরও ব্যায়াম কেন করতে হবে। পুরুষেরা ভাবেন, সংসারের বাজার করা, অফিসে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত টানা কাজ করতে হয়, ফলে শরীরের ওপর অনেক ধকল যায়- ব্যায়াম কেন করতে হবে।
ব্যায়ামের সাথে আসলে প্রধান সম্পর্ক সুস্থতার বা সুস্বাস্থ্যের।
সুস্বাস্থ্যের প্রচলিত ধারণা :
সুস্বাস্থ্য বলতে প্রচলিত ধারনা- যার কোনো অসুখ-বিসুখ নেই। আবার কেউ ভাবেন, শরীরে অনেক মাংস থাকবে, চর্বি থাকবে, দেখতে মোটা সোটা মনে হবে- এরকমই ব্যক্তিই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।
সুস্বাস্থ্যের প্রকৃত সংজ্ঞা :
সুস্বাস্থ্য মানে কর্মক্ষমতা বা প্রাণশক্তি বা জীবনীশক্তি। আমি একনাগাড়ে কতক্ষণ কাজ করতে পারি, কাজ করতে যেয়ে ক্লান্ত হই কি না, প্রয়োজনে কতক্ষণ হাঁটতে পারি বা দাঁড়িয়ে থাকতে পারি, হেঁটে বা দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হই কি না, প্রয়োজনে ক রাত জেগে কাজ করতে পারি, রাত জাগলে অসুস্থ হয়ে পড়ি কি না, পর্যাপ্ত খাবার না পেলে অল্প আহারে কতদিন চলতে পারি, অল্প আহারে দুর্বল হয়ে পড়ি কি না? ভ্রমনের ক্লান্তি আমাকে দুর্বল করে ফেলে কি না?
আসলে আপনি দেখতে হালকা-পাতলা যাই হোন না কেন আপনার কর্মক্ষমতা যদি বেশি থাকে তাহলেই আপনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।
আর সুস্বাস্থ্যের ৫টি ভিত্তির মধ্যে ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
নবীজ বলেন, একজন মানুষকে স্রষ্টা যত ধরনের নেয়ামত দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার মধ্যে প্রধান এবং শ্রেষ্ঠ নেয়ামত সুস্বাস্থ্য। সুস্বাস্থ্য বিহীন জীবন বোঝাপূর্ণ জীবন। বোঝা কেউ গ্রহণ করতে চায় না। রোগ- শোকে আক্রান্ত ব্যক্তি মানুষের অবহেলা এবং করুণার পাত্র হয়। মানুষের অনেক বড় বড় ডিগ্রী, যশ, প্রতিপত্তি ম্লান হয়ে যায় যখন একজন মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়। সাধারণত অসুস্থ না হলে আমরা দেহের প্রতি যত্ন নেই না, নজর দেই না। আর স্বাস্থ্য একবার নষ্ট হলে তাকে ফিরিয়ে আনা কঠিন। তারচেয়ে বরং স্বাস্থ্য নষ্ট হবার আগেই সচেতন থাকা দরকার যাতে সময়মতো প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি। আসলে যার প্রতিই নজর কম দেয়া হবে তা-ই আপনার দুরাবস্থার কারণ হবে। দেহের প্রতি কেন যত্ন নেই না- দেহটাকে ফ্রি পেয়েছি, এজন্যে এটার প্রতি কোনো যত্ন নেই না। একটি দু’ভরি ওজনের বালার বা এমিটেশনের বালার যে পরিমাণ যত্ন নেই, হাতের সে রবম যত্ন নেই না।


কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি : আমাদের শরীরের যখন যে মাত্রায় যে হরমোনটা প্রবাহিত হওয়ার দরকার সেই মাত্রায় যদি প্রবাহিত হয়, তাহলে একজন মানুষ ফিজিক্যাল ফিটনেসের তুঙ্গে থাকবে। সে তখন বাতাসের সাথে চলবে, নিজেকে হালকা বোধ করবে। টানা ২২ ঘণ্টা কাজ করেও ক্লান্ত অনুভব করবে না।আর এটা সম্ভব যোগ ব্যায়ামে। এজন্যে যারা নিয়মিত ব্যায়াম চর্চা করেন তারা আগের চেয়ে বেশি পরিশ্রম এবং কাজ করতে পারেন এবং এ কারণে তারা চারপাশের মানুষের কাছে কৌতূহলে এ পরিণত হন।
তারুন্য বজায় এবং ত্বকের লাবন্যতা বৃদ্ধি : যোগ ব্যায়াম বয়বৃদ্ধির হারটাকে কমিয়ে দেয়। অর্থাৎ বয়স বাড়লেও আপনাকে দেখে বোঝা যাবে না। তারুন্য নির্ভর করে মেরুদন্ডের নমনীয়তার উপর। যোগ ব্যায়ামে মেরুদন্ডের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায়। ফলে আমরা তারুন্যকে ধরে রাখছি। ওজন কমলেও যোগ ব্যায়ামে স্ক্রিনে ভাজ পড়ে না বরং ত্বকের লাবণ্যতা বৃদ্ধি পায় ।একটি মেয়ে ব্যায়াম করে ওজন কমিয়েছে ৪০ কেজি কিন্ত তার চেহারায় একটুও ভাজ পড়েনি।অন্যান্য ব্যায়াম ওজন কমলে কাঠখোট্টা লাগে, যোগ ব্যায়াম চেহারায় লাবন্যতা বাড়ে।


আভ্যন্তরীন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুস্থতা : দেহের আভ্যন্তরীন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে (হার্ট, লিভার, কিডনী, অগ্ন্যাশয়) সুস্থ্য এবং গতিশীল না রাখতে পারলে দেহের পেশী শক্তি এক সময়ে বিপর্যস্ত হতে বাধ্য। দেহের আভ্যন্তরীন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ এবং গতিশীল রাখার জন্যে ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি :
আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয় বায়ু দুষন,শব্দ দুষন, এবং রেডিয়েশনএর বিরুদ্ধে। ইমিউন সিস্টেমকে ঠান্ডা অর্থাৎ রোগ- প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যে ব্যায়ারে কোনো বিকল্প নেই।

হরমোনের গতিশীলতা :
যদিও রক্তের তুলনায় দেহের হরমোন পরিমান নগন্য।তবুওদেহের পুষ্টি,আকৃতি, প্রকৃতি,গঠনে এদেও ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ । হরমোনের অভাবে চিন্তাশক্তি কমে যায়, বৃদ্ধি প্রাপ্ত কম হয়, বুদ্ধি কমে যায়, লম্বায় বাড়ে না। যোগ ব্যায়ামে হরমোন প্রবাহ গতিশীল হয়। অন্য কোনো ব্যায়ামে হরমোন গতিশীল হয় না।

ব্যায়াম নিরাময়ের ধারা :
এমন অনেক রোগ আছে যা কোনো ওষুধে ভালো হবে না কিন্তু ব্যায়ামে ভালো হবে।যোগ ব্যায়াম করে অনেকেই ব্যাকপেইন, স্পন্ডিলাইটিস,সমস্যাসহ বহু মনোদৈহিক রোগ থেকে মুক্ত হয়েছেন।
তবে নিয়মিত ব্যায়ামে আপনার ঘুমের সমস্যা, হাপানি, দরোগ,আর্থারাইটিস, ফ্রোজেন শোল্ডার, সায়াটিকা, ডায়াবেটিস, মেরুদন্ডের সমস্যা, স্থূলতা, হাটু ব্যাথাসহ উপরোক্ত রোগগুলো কখনোই হবে না।

ব্যায়ামের উপকারিতা:
বজ্রাসন : হজম করতে সহায়তা করে, চুল পাকে না, চুল পড়ে না।
ভুজঙ্গাসন : মেরুদন্ডের সমস্যা বা স্পন্ডিলাইটিসের সমস্যা দূর করে ও উচ্চরক্তচাপ নিয় করে
উষ্ট্রাসন : কনস্টিপেশন দূর করে।
গো-মুখাসন : ঘুম আনতে সহায়তা করে।
ভদ্রাসন : পিরিয়ডের সমস্যা দূর করে

দৃষ্টিদান : চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
জানুশিরাসন : প্যানক্রিয়াসে ইনসুলিনের উৎপাদন বেড়ে যায়। এ কারণে ডায়বেটিস হতে পারে না।

যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তারা আগের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে পারেন, কাজ করতে পারেন, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যোগ ব্যায়াম হার্ডডিজিজ নিয়েও করা যায়।

কিভাবে যোগ ব্যায়াম অনুশীলন করবেন/ শিখবেন:

১. যোগ ব্যায়ামের ওপর দেশি বিদেশি অনেক বই পাওয়া যায়। নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেটে খুজে পাবেন। বই সংগ্রহ করার পর নিজে নিজেই অনুশীলন করতে পারেন।

২. আপনি ইচ্ছা করলে কোন প্রশিক্ষন কেন্দ্রেও ভর্তি হতে পারেন। ভারতীয় হাই কমিশনের ধানমন্ডি ভবনে ফ্রি অনুশীলন এর ব্যাবস্থা আছে।

৩. ভাল কোন ওয়েব সাইটের সাহায্য নিতে পারেন। বাংলা ভাষায় এরকম একটি সাইট আছে ঢু মেরে দেখতে পারেন।

Click This Link


অন্যান্য ব্যায়ামের সাথে যোগ ব্যায়ামের পার্থক্য :
=> প্রচলিত যে ব্যায়ামগুলো- অ্যারোবিক্স, ইন্সট্রুমেন্টাল, জিমনেসিয়াম হয়তো খুব দ্রুত আপনাকে কৃশকায় করে ফেলছে অথবা আপনাকে বডি বিল্ডার হিসেবে গড়ে তুলছে। কিন্তু যোগ ব্যায়াম শরীরের ওজন স্ট্যান্ডার্ড করে। আমার জন্যে যে ওজন থাকা প্রয়োজন সেই ওজন নিয়ে আসে।
=> অন্যান্য ব্যায়াম করলে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজন হয়।কারণ এর ফলে শারীরিক ক্ষয় হয়। এই ব্যায়ামে শরীরের কোন ক্ষয় হয় না। এ জন্যে অতিরিক্ত খাবারের প্রয়োজন হয় না।
=>প্রচলিত এই ব্যায়ামের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। ব্যায়ামের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া একটাই হতে পারে যে আপনি সুস্থ থাকবেন।
=>প্রচলিত ব্যায়ামগুলো করা মানে আপনি বাঘের পিঠে বসে আছেন। পড়লেই যেমন বাঘ খপ করে আপনাকে খেয়ে ফেলবে তেমনি ব্যায়াম ছেড়ে দিলেই আপনি মোটা হয়ো যাবেন। কিন্তু কোনো কারণে আপনি যদি যোগ ব্যায়াম নাও করতে পারেন তাও আপনি সহজে মোটা হয়ে যাবেন না।

তাহলে আর দেরি না করে আজ থেকেই চর্চা শুরু করে দিন। মনে রাখবেন কোন কাজ কালকের জন্য ফেলে রাখলে সেটা দীর্ঘ সুত্রিতার বেরাজালে পরে যেতে পারে। অতএব আজ থেকেই শুরু করুন।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×