somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহানবীর স: শিক্ষানীতি

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আদর্শ জাতি গঠনের জন্যে প্রয়োজন আদর্শ ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা। মহানবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে একটি বিশ্বজনীন জাতি গঠনের উদ্দেশ্যেই পাঠানো হয়েছিল। ইসলাম আল্লাহর মানোনীত একমাত্র জীবনাদর্শ। এ আদর্শের ভিত্তিতে মানবজীবন গঠনের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীগণকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আদর্শের ভিত্তিতে একটি বিরাট মানবগোষ্টী গঠন করে তাকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।

শুধুমাত্র মানুষকে ইসলামের আদর্শ শিক্ষা দানের মাধ্যমে তিনি প্রথমে মানসিক বিপ্লব ঘটান। তারই ফলশ্রুতিতে সংঘটিত হয় নৈতিক ও সামাজিক বিপ্লব। ইসলামী বিপ্লব ছাড়া বিনা প্রয়োগে শুধু শিক্ষা দানের মাধ্যমে পৃথিবীতে আর কোনো বিপ্লব সংঘটিত হয়নি। তাঁর এই শিক্ষাভিত্তিক বিপ্লব পৃথিবীতে এক অনন্য ইতিহাস। অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও মূর্খতার চরম অন্ধকারে নিপতিত একটি অধপতিত জাতিকে শুধুমাত্র আদর্শিক শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতিতে তিনি রূপান্তরিত করেন। গঠন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব দল। এ ছিলো একটি অনন্য আর্দশের অধিকারী মানব দল। কোনো দিক থেকেই তাঁদের সাথে পৃথিবীর অন্য কোনো মানব গোষ্ঠীর তুলনা হয়না। এখানে আমরা আলোচনা করে দেখবো, কোন্ ধরণের শিক্ষার মাধ্যমে মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ ওয়াসাল্লাম এই অন্যন্য শ্রেষ্ঠ মানব দলটি গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন?

রসূলের শিক্ষানীতি কতিপয় দিকঃ

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আল্লাহর নবী। সর্বশেষ নবী। নবূয়্যতি সর্বশেষ আদর্শ। তাঁর পরে এ বিশ্বে আর কোনো নবীর আগমন ঘটবেনা। তাই তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা নবূয়্যতি শিক্ষা মিশনের পূর্ণতা দান করেন। এ কারণে তাঁর প্রদত্ত শিক্ষা কাঠামো ছিলো সর্বদিক থেকে পূর্ণাংগ। ষোলকলায় সমৃদ্ধ, সর্বাংগীন সুন্দর ও পরিপাটি। তাঁর শিক্ষা ব্যবস্থা বিনির্মিত হয়েছিল মানব জাতির ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তির উদ্দেশ্যে। তাঁর শিক্ষানীতি কোনো বিশেষ জাতি গোষ্ঠীর জন্যে নয়, বরং বিশ্ব মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে রচিত হয়েছে। তা কোনো দিশা তাতে রয়েছে। তাই তাঁর প্রদর্শিত শিক্ষানীতি সার্বজনীন ও চিরন্তন। কিয়ামত পর্যন্ত এই চিরন্তন শিক্ষানীতির বিকল্প কোনো শিক্ষানীতি মানবতার জন্যে সর্বাংগীন কল্যাণবহ হবেনা। তাঁর দেয়া শিক্ষাই কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের শাশ্বত ও সার্বজনীন শিক্ষাদর্শ। তাঁর শিক্ষানীতির মৌলিক বৈশিষ্টগুলো নিন্মরূপঃ

১. জ্ঞানের মূল উৎস আল্লাহ তাআলাঃ

রসূলের শিক্ষানীতির প্রথম কথাই হলো, জ্ঞানের প্রকৃত উৎস আল্লাহ তাআলা। মানুষ ও বিশ্ব নিখিলের স্রষ্টা মহান আল্লাহই সমস্ত জ্ঞান বিজ্ঞানের মূল উৎস ও প্রকৃত মালিকঃ

قُلْ اِنَّامَ الْعِلْمُ عَنْدَ اللهِ ـ (الملك : 26 الاحقاف : 23)

হে নবী‍ বলুন ! আল্লাহই সমস্ত জ্ঞানের মালিক (সূরা মূলক : ২৬, আহকাফ : ২৩)

وَاللهُ عَلَيْمُ حَكِيْمٌ ـ (النساء: 26)
আল্লাহ মহাজ্ঞানী, মহা প্রজ্ঞাময় [সূরা নিসা : ২৬]

গোপন প্রকাশ্য, দৃশ্য অদৃশ্য, মূর্ত বিমূর্ত সব কিছুর জ্ঞান তাঁর কাছে রয়েছে এবং একমাত্র তাঁরই কাছে আছে:
هُوْ اللهُ الَّذِىْ لاَ اِلَهَ هُوْ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ـ (الحاشر :22)

তিনিই আল্লাহ যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং যিনি দৃশ্য অদৃশ্য সমস্ত জ্ঞানের অধিকারী। [সূরা হাশর : ২]
মানুষ এতোই সীমিত জ্ঞানের অধিকারী যে, তাঁর অসীম জ্ঞান সীমার নাগালের ধারে কাছেও পৌঁছুতে সক্ষম নয়। তবে যিনি ইচ্ছে করে মানুষ কে যতোটুকু জ্ঞান দান করতে চান, সে কেবল ততোটুকু জানে :

وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَئٍ مِنْ عِلْمِهِ اِلاَّ بِمَا شاَءَ ـ (البقرة : 255)

তাঁর জ্ঞাত বিষয়ের কোনো কিছুই মানুষ নিজের আয়ত্বাধীন করতে পারেনা, তবে যিনি যতটুকু চান। [সূরা বাকারা: ২৫৫]
মানুষকে তিনিই জ্ঞান দান করেন। তবে মানুষকে তিনি সামান্য জ্ঞানই দান করেছেন :
وَمَا اُوْتِيْتُمْ مِنْ الْعِلْمِ اِلاَّ قِلَيْلاً ـ (الاسراء :85)
তোমাদের জ্ঞানের কোনো অংশ দেয়া হয়নি, তবে সামান্য মাত্র। [সূরা বনি ইসরাইল : ৮৫]
তাই, মানুষের কর্তব্য তাঁর কাছেই জ্ঞানের জন্যে আরাধনা করা:
وَقُلْ رَبّ زَدْنِىْ عِلْمًا ـ (طه : 114)
বলোঃ প্রভু! আমাকে আরো অধিক জ্ঞান দাও। [সূরা তোয়াহা : ১১৪]

২. জ্ঞানের মূলসূত্র অহী ও নবূয়্যত :

জ্ঞানের মূল উৎস আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানই প্রকৃত জ্ঞান। এই প্রকৃত জ্ঞান লাভ ছাড়া মানুষের পক্ষে প্রকৃত কল্যাণ ও মুক্তি লাভ করা সম্ভব নয়। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জ্ঞান লাভের সূত্র হলো অহী ও নবূয়্যত। আল্লাহ যুগে যুগে বিভিন্ন জাতির কাছে তাদের মধ্যে থেকেই কিছু কিছু ব্যক্তিকে নবী রসূল নিযুক্ত করেছেন। তাদের কাছে তিনি প্রকৃত জ্ঞান অবতীর্ণ করেন। সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর মাধ্যমে তিনি মানবতার মুক্তির জন্য পূর্ণ জ্ঞান অবতীর্ণ করেন। যে পদ্ধতিতে নবীর কাছে জ্ঞান অবতীর্ণ করা হয়, তার পারিভাষিক নাম অহী। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী হবার কারণে তাঁর মাধ্যমে অবতীর্ণ শিক্ষা সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ নিজেই গ্রহণ করেছেন। এ শিক্ষা আমাদের কাছে দুইভাবে সংরক্ষিত আছে। এক, কুরআনের মাধ্যমে। দুই, হাদীস বা সুন্নাতে রসূলের মাধ্যমে। কুরআন সম্পূর্ণ নির্ভুল গ্রন্থ। একেকটি শব্দসহ গোটা গ্রন্থটি সন্দেহ সংশয়ের সম্পূর্ণ ঊর্দ্ধে। এই প্রতিটি বাক্য ও শব্দ হুবহু [as it is] আল্লাহর নকিট থেকে অবতীর্ণ। এ হচ্ছে জ্ঞানের সম্পূর্ণ নির্ভূল ও অনাবিল সূত্র। হাদীস মূলত কুরআনেই ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ। কুরআনকে নবূয়্যতি পন্থা ও দৃষ্টান্ত অনুযায়ী বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া হাদীসের মাধ্যমেই জানা সম্ভব। তাই ইহজগত ও পরজগতের সর্বাংগীন কল্যাণ লাভ করতে হলে মানুষকে অবশ্যি জ্ঞানের এই মূল সূত্রের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। এছাড়া বিকল্প নেই।

وَاُوْحِىْ اِلَىَّ هَذَا الْقُرْاَنُ لاُِنْرِكُمْ بِهِ ـ (الانعام : 19)
এই কুরআন আমার কাছে অহীর মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়েছে, যেনো আমি এর সাহায্যে তোমাদের সতর্ক করতে পারি। [সূরা আনআম : ১৯]
وَاِنَّكَ لَتُلَقَّى الْقُرْاَنَ مِنْ لَّدُنْ حِكِيْمِ عِلِيْمِ ـ (النمل : 6)
নি:সন্দেহে তুমি এই কুরআন এক মহাবজ্ঞানী সত্তার নিকট থেকে লাভ করছো। [সূরা নামল : ৬]
وَاَنْزَلَ اللهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمِةَ وَعَلَيْكَ مَالَمْ تَكُنْ تَعْلَمْ ـ (النساء : 113)
আল্লাহ তোমার প্রতি কিতাব ও হিকমাহ নাযিল করেছেন আর তোমাকে এমন জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন যা তোমার জানা ছিলোনা। [সূরা আন নিসা: ১৩৩]
اِنَّ هَذَ الْقُرْاَنَ يَهْدِىْ لِلَّتِىْ هِىَ اَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ المُؤْمِنِيْنَ : (بنى السرائل : 9)
এই কুরআন সেই পথ প্রদর্শন করে, যা সম্পূর্ণ সরল সোজা ও ঋজু। আর যারা একে মেনে নেয়, তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান করে। [সূরা বনি ইসরাঈল : ৯]
شَهَرَ رَمَضَانَ الَّذِىْ اَنْزِِلَ فِيْهِ الْقُرْاَنْ هُدًىْ لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٌ مِنْ الْهُدَىْ ـ (البقرة : 185)

রমযান মাস! এ মাসেই কুরআন নাযিল করা হয়েছে। এতে গোটা মানব জাতির জন্য রয়েছে। জীবন যাপনের জন্য বিদান এবং তা এমন সুস্পষ্ট শিক্ষায় পরিপূর্ণ যা সঠিক ও সত্য পথ প্রদর্শন করে। [সূরা আল বাকারা : ১৮৫]

৩. আসল শিক্ষক নবী নিজে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে গেছেন, তার মূল শিক্ষক রসূল নিজেই। কী শিক্ষা দিতে হবে? এসব ব্যাপারে রসূল (সা) নিজেই আদর্শ। তাকেঁই আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার সকল দিক ও বিভাগে অনুসরণ করতে হবে তাঁরই পদাংক:
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِىْ رَسُوْلَ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمِنْ كَانَ يَرْجُوْا اللهَ وَالْيَوْمَ الاَخِرَ ـ (الاحزاب : 21)

তোমাদের জন্যে আল্লাহর রসূলের মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম নমুনা। ঐ ব্যক্তির জন্যে, যে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি আশাবাদী। [সূরা আহযাব : ২১]
তিনি শুধু নমুনাই নন। বরঞ্চ মুমিনদের পক্ষে তাঁর নমুনা গ্রহণ করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। জীবনের সবকিছু গ্রহণ বর্জন করতে হবে কেবল তাঁর শিক্ষার ভিত্তিতে :
وَمَا اتَاكُمْ الرَّسُلُ فَخُذُهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا ـ (الحاشر : 7)
রসূল তোমাদের যা দেয় তাই গ্রহণ করো যা বর্জন করতে বলে, তা থেকে বিরত থাকো। [সূরা হাশর : ৭]
قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِىْ يُحْبِبْكُمْ اللهَ ـ (المران : 31)
হে নবী! তাদের বলো : তোমরা যদি সত্যিই আল্লাহর প্রতি ভালবাসা পোষণ করো, তবে আমাকে অনুসরণ করো। [সূরা আলে ইমরান : ৩১]
৪. আল্লাহর দাসত্ব ও মানুষের প্রতিনিধিত্ব নীতির শিক্ষা ব্যবস্থা :
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা যে মূল বক্তব্য কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, তাহলে মানুষ বিশ্ব নিখিলের সৃষ্টিকর্তা, মালিক ও পরিচালক এক লা-শরীক আল্লাহর দাস। তাঁর দাসত্ব করার জন্যই তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি তাঁর দাস মানুষকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধিত্ব দায়িত্ব অর্পণ করেছেন :
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالاَّ لِيَعْبُدُوْنَ ـ (الزاريات : 56)
আমি জিন আর মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুধু মাত্র আমার দাসত্ব করার জন্য। [সূরা যারিয়াত : ৫৬]
এই দাস মানুষকে পৃথিবীতে যে তাঁর প্রতিনিধিও নিযুক্ত করবেন, একথা মানুষকে সৃষ্টি করবার প্রাক্কালেই তিনি ফেরেশতাদের জানিয়ে দিয়েছিলেন :
وَاِذَ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلاَئِكَةِ اِنْىْ جَاعِلٌ فِىْ الاَرْضِ خَلَيْفَةً ـ (البقرة : 30)
মানুষের মধ্যে আল্লাহর দাসত্বও প্রতিনিধিত্ব করার চেতনা জাগ্রত করে দিয়ে তাকে আল্লাহর সত্যিকার দাস ও প্রতিনিধিরূপে গড়ে তোলাই এ শিক্ষানীতর মূল কথা। আর এটাই মানুষের প্রকৃত ও সত্যিকারের মর্যাদা। তাই নব্যুয়াতি শিক্ষানীতি উদ্দেশ্যে আদর্শ নাগরিক তৈরি নয়, আদর্শ মানুষ তৈরি।

এই শিক্ষনীতি মানুষকে যেভাবে গড়ে তুলবার পরিকল্পনা দিয়েছে, তাহলে, মানুষ এক লা-শরীক আল্লাহ প্রতি ঈমান আনবে। রাসূলের মাধ্যমে প্রদত্ত বিধানের [দীন ও শরীয়ার[ ভিত্তিতে তাঁর দাসত্ব করবে। সে শুধু নিজের একার মুক্তির জন্যেই কাজ করবেনা, বরঞ্চ আল্লাহ প্রদত্ত বিধানের ভিত্তিতে গোটা বিশ্ব মানবতার পার্থিব ও পারলৌকিক কল্যাণ মুক্তি ও উন্নয়নের জন্যে নি:স্বার্থ ভাবে কাজ করা যাবে। এসব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করলে আদালতে আখিরাতে তাকে কঠিন জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে এবং পরিণতিতে চিরকাল যন্ত্রাণাদায়ক শাস্তি ভোগ করতে হবে। পক্ষান্তরে এ সব দায়িত্ব পালন করবে। এক্ষেত্রে তার সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি ও ভালবাসা লাভকে তার জীবনের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করবে। এভাবেই মানুষ সত্যিকারভাবে ইবাদাত ও খিলাফত সঠিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আর্দশ মানুষে পরিণত হবে। আর এ উদ্দেশ্যেই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْرِىْ نَفْسَهُ اِبْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللهِ وَاللهِ رَؤُفٌ بِالْعِبادِ ـ (البقره : 207)
আরেকটি মানব দল আছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে নিজেদের জান প্রাণ উৎসর্গ করে দেয়। মূলত : আল্লাহ তাঁর এই দাসদের প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল। [সূরা আলা বাকারা : ২০৭]
মানুষকে এভাবে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্য। কারণ এটাই মানুষের পার্থিব ও পারলৌকিক মুক্তি ও কল্যাণ লাভের একমাত্র পথ।

৫. পূর্ণাংগ জীবন ভিত্তিক সমন্বিত শিক্ষা

মুহাম্মাদ রসূলুল্লাহর শিক্ষা মানব জীবনের কোনো একটি বা দুটি দিকের জন্য সীমাবদ্ধ শিক্ষা নয়। বরঞ্চ তাঁর শিক্ষা ব্যবস্থার কেবল বৈষায়িক ও বস্তগত শিক্ষার প্রতিই গুরুত্বারোপ করা হয়। এই একমুখী বস্তুগত শিক্ষাই বর্তমান বিশ্বের সমস্ত বিপর্যয়ের মূল কারণ। আসলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পূর্ণাংগ জীবন ভিত্তিক শিক্ষাই কেবল মানুষকে মুক্তি দিতে পারে। ইসলাম মানব প্রকৃতির স্বাভাবিক বিকাশ সাধন করতে চায়। তাই ইসলাম প্রকৃতির ধর্ম।

রসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথিদের একই সাথে আত্মিক, মানসিক, নৈতিক, শরীরিক, জৈবিক ও সামাজিক শিক্ষা প্রদান করেছেন। মানব জীবনকে বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করেননি। বরঞ্চ একটি এককের অধীন করেছেন। মূলত জীবনের সকল দিকের সামঞ্জস্যপূর্ণ জ্ঞান ও উপলব্ধির মাধ্যমে জীবনের ষোল আনাকে বিকশিত করতে পারলেই মানুষ আদর্শ মানুষ পরিণত হতে পারে :

لَيْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوْلُّوْا وُجُهُكُمْ قِبَلَ الْمِشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اَمِنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الاخِرِ وَالْمَلَئَكَةِ وَالْحِتَابِ وَالنَّبًِيِّنَ وَاَتِىْ المَالَ عَلَىْ حُبِّهِ ذُوْىِ الْقُرْبَىْ وَالْيَتِمَىْ وَالمُسَاكِيْنَ وَاِبْنَ السَّبِيْلَ وَالسَّائِلِيْنَ وَفِىْ الرِّقَابِ وَاَقَامَ الَصَلَوَةِ وَاِتِىْ الزَّكَوْةِ وَالْمُوْفُوْنَ بِعَهْدِهِمْ اِذَا عَاهَدْوْا وَالصَّبِرِيْنَ فِىْ الْبَأسَاءِ وَالضَّرَّاِءِ وَحِيْنَ الْبَأسِ ـ
اُوْلِئِكَ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَاُوْ لِئِكُهُمْ الْمُتَّقُوْنَ ـ (البقرة : 177)

পূর্ব কিংবা পশ্চিম দকে মুখ ফিরানো আসল পূরণের কাজ নয়। প্রকৃত পূণ্যের কাজ তো সেই ব্যক্তি করলো, যে নিষ্ঠার সাথে ঈমান আনলো আল্লাহ, পরকালে, ফেরেশতা, আল কিতাব ও নবীদের প্রতি আর আল্লাহর ভালবাসা পাবার জন্যে নিজের ধন সম্পদ ব্যয় করলো আত্মীয় স্বজন, এতীম, মিসকীন, পথিক, সাহায্যপ্রার্থী ও দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্যে। তাছাড়া সালাত কায়েম করলো এবং যাকাত পরিশোধ করলো আর এই পূণ্যবান লোকেরা হয়ে থাকে প্রতিশ্রুতি পূর্ণকারী এবং দারিদ্র দু:সময়, দু:খ দুর্দশা, বিপদ আপদ ও সত্যপন্থী আর এরাই ন্যায়বান আর্দশে মানুষ। [সূরা আল বাকারা : ১৭৭]

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে এ রকম সত্যপন্থী ন্যায়বান আর্দশ মানুষই তৈরি করেছিলেন। জীবনের সকল দিক ও বিভাগের সর্বোত্তম মানবীয় গুণাবলী বিকশিত করে দিয়েছিলেন তিনি তার সর্বাংগীন পরিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে। এ শিক্ষা মানুষকে কবেল বৈষায়িক দিক থেকেই যোগ্য করেনা, পরকালীন সাফল্যোও প্রদান করে। তাইতো নবীর ছাত্ররা তাদের মনিবের দরবারে উভয় জগতের সাফল্য ও কল্যাণের ফরিয়াদ করে :
رَبَّنَا اتِنَا فِىْ الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِىْ الاَخِرَةِ حَسَنَةً وَقَنَا عَذَابَ النَّارِ ـ (البقرة : 201)

আমাদের প্রভু! আমাদেরকে দুনিয়ার কল্যাণও দান করো। আর পরকালের কল্যাণ ও দান করো এবং আগুনের শাস্তি থেকে বাঁচাও। -সূরা বাকারা : ২০১
বস্তুত এই শিক্ষানীতির পূর্ণাংগতার কারণেই নবীর সাথীরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব দলে পরিণত হয়েছিলেন।
লেখক : আবদুস শহীদ নাসিম
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×