somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বীরশ্রেষ্ঠরা কে কোথায় ঘুমিয়ে

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশে এখন ৪০তম বিজয়োৎসবের আমেজ। যাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের এই বাংলাদেশ, তাদের মধ্যেও যারা শ্রেষ্ঠ তারাই বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি পেয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে এসব বীরশ্রেষ্ঠের সমাধি। এইসব বীরশ্রেষ্ঠর বীরত্বগাঁথা অনেকেরই জানা। আবার অনেকেরই কাছে ৪০ বছর পরেও রয়ে গেছে অজানা। বাংলানিউজের পাঠকের জন্য বীরদের আত্মদানের সেই সব কাহিনী এখানে তুলে ধরা হলো।

শুরুতেই জানিয়ে রাখি বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, মুন্সী আবদুর রউফ, ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন, নূর মোহাম্মদ শেখ আগেই ঘুমিয়ে ছিলেন বাংলার মাটিতে। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ও সিপাহি হামিদুর রহমান দেশের বাইরে সমাধিস্থ হলেও স্বাধীনতার ৩৫ বছর পর ২০০৬ সালের ২৪ জুন মতিউর এবং ৩৬ বছর পর ২০০৭ সালের ১১ ডিসেম্বর সিপাহি হামিদুরকে দেশে এনে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর : বরিশালের বাবুগঞ্জের কৃতী সন্তান ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্য ছিলেন। পিতার নাম মোতালেব হাওলাদার। মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগীসহ ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার মেহেদিপুরে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে যোগ দেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ দখলের নেতৃত্বভার দেওয়া হয় তাঁকে। ১৪ ডিসেম্বর তিনি দলবল নিয়ে মহানন্দা নদী পার হয়ে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে শত্রু দের কয়েকটি পরিখা ধ্বংস করেন। এ সময় দু পক্ষের তুমুল সংঘর্ষ চলাকালে বুলেটবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন এই বীরশ্রেষ্ঠ। পরে তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছোট সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়।

বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ: যশোরে শায়িত আছেন বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ। ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের মহেশখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম আমানত শেখ ও মাতার নাম জিন্নাতুন্নেছা খানম। ইপিআরে কর্মরত এই বীর যোদ্ধা ১৯৭১ সালের মার্চে বাড়ি ফিরে যুদ্ধ শুরু করেন। যোগ দেন ৮ নম্বর সেক্টরে। গোয়ালহাটি গ্রামে মুক্তিবাহিনীর একটি স্থায়ী টহল দলের দায়িত্ব পালনকালে ৫ সেপ্টেম্বর হানাদার বাহিনী তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে তাকে। শুরু হয় পাল্টা লড়াই। আক্রমণে টিকতে না পেরে ঘাতকদের বুলেটে প্রাণ হারান তিনি। পরে সহকর্মীরা তাকে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গোয়ালহাটি গ্রামে দাফন করেন।

বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমান: ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ২৮ অক্টোবর তৎকালীন সেনাবাহিনীর সিপাহী হামিদুর রহমান শহীদ হন। মৌলভীবাজারের ধলই সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি ঘাঁটি দখলের জন্য যুদ্ধ করছিলেন হামিদুর। সহযোদ্ধারা ত্রিপুরার আগরতলা থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে ঢালাই জেলার আমবাসা গ্রামের জঙ্গলের মধ্যে তাকে সমাধিস্থ করেন। স্বাধীনতার ৩৬ বছর পর ২০০৭ সালের ১১ ডিসেম্বর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুরকে। যশোরের খারদো খালিশপুর গ্রামে ১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম আক্কাছ আলী মন্ডল ও মাতার নাম কায়মুন্নেছা।

বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ: ইপিআরে কর্মরত ছিলেন ফরিদপুরের মধুখালীর সন্তান ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ। ১৯৪৩ সালের মে মাসে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মুন্সী মেহেদী হোসেন ও মাতার নাম মকিদুন্নেছা। কিন্তু দেশের টানে চাকরি ছেড়ে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রামের বুড়িঘাট এলাকায় পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে নিহত হন তিনি। ১৯৯৬ সালে জানা যায়, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ ঘুমিয়ে আছেন বান্দরবানে। সেখানকার স্থানীয় এক আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা তার কবর শনাক্ত করেন।

বীরশ্রেষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন: বাংলার জলে মিশে আছেন নৌবাহিনীর আর্টিফিশার বীরশ্রেষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন। ১৯৩৫ সালে নোয়াখালীর বাঘচাপড়ায় জন্মগ্রহণ করেন রুহুল আমিন। তার পিতার নাম আজাহার পাটোয়ারী। মাতার নাম জুলেখা খাতুন।

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মংলা বন্দরে পাকিস্তানি নৌঘাঁটি ও জাহাজ পিএএস তিতুমীরে এক দুঃসাহসী অভিযানে যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অপর নৌ কমান্ডো বীর প্রতীক মুহিবুল্লাহ। কিন্তু আত্মরক্ষামূলক শক্ত অবস্থানে থাকা এবং অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর প্রচণ্ড প্রতিরোধের মুখে পড়েন তারা। কামানের গোলা আর টর্পেডোর আঘাতে ধ্বংস করে দেওয়া হয় রুহুল আমিনের গানবোট ‘পলাশ’। এ ঘটনায় শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ও বীরপ্রতীক মুহিবুল্লাহ।

১০ ডিসেম্বর স্থানীয়রা রূপসা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ফেরিঘাটের পাশে সমাহিত করেন। স্বাধীনতার পরে নৌবাহিনী তার কবরটি সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়। বর্তমানে খুলনায় অবস্থিত বিএনএস (বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ) তিতুমীর বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের মাজার দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে।

বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল: সিপাহী মোস্তফা কামাল চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন আখাউড়ার দরইন গ্রামে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সেনাক্যাম্প থেকে পালিয়ে মোস্তফা কামাল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে শত্রু নিধন শুরু করেন। কিন্তু ১৭ এপ্রিল আখাউড়ার দরইন গ্রামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ হন তিনি। পরে তাকে সেখানেই দাফন করা হয়। ১৯৪৮ সালে ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার পশ্চিম হাজিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতার নাম হাফিজ উদ্দিন।

বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান: দেশকে শত্রু মুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বিমানবাহিনীর ফাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান পাকিস্তান থেকে (টি-৩৩ ব্লুবার্ড) নামের একটি প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ে চলে আসতে চেয়েছিলেন স্বদেশে। কিন্তু বাঁধ সাধে সহকর্মী পাকিস্তানি মিনহাজ রশীদ। তার কাছ থেকে বিমানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ভারতীয় সীমান্তের কাছে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন মতিউর। পরে তাকে সমাহিত করা হয় সেখানকার মশরুর বিমানঘাঁটিতে।

১৯৪২ সালে নরসিংদীর রায়পুরার উপজেলার রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতার নাম মৌলভী আবদুস সামাদ। স্বাধীনতার ৩৫ বছর পর ২০০৬ সালের ২৪ জুন পাকিস্তানের মশরুর বিমান ঘাঁটিতে অবস্থিত চতুর্থ শ্রেণীর একটি কবরস্থান থেকে মতিউরের দেহাবশেষ বাংলাদেশে এনে ২৫ জুন মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×