somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারুণ্যের অহঙ্কার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ ।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের আগস্ট মাসে ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার সালামতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মুন্সী মেহেদী হাসান ছিলেন একজন আদর্শ কৃষক, মাতা মকিদুননেছা ছিলেন গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই আব্দুর রউফ ছিলেন দুরন্তপনা স্বভাবেরর। বাড়ির পাশেই ছিল প্রমত্তা মধুমতি। মধুমতি নদীতে সাঁতার প্রতিযোগিতায় বরাবরই প্রথম হতেন আব্দুর রউফ। তারুণ্যের প্রতীক আব্দুর রউফ যুবক বয়স থেকেই ছিলেন অত্যন্ত সাহসী। বড়দের সম্মান করা, রোগীর সেবা করা, মৃতদেহ কবর দেওয়া ইত্যাদি নানা সমাজসেবামূলক কাজে থাকতেন সবার আগে। গরিব পিতা-মাতার স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে সরকারি চাকরি করবে, দেশ মাতৃকার সেবা করবে, পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যা দূর করবে। পিতা-মাতার স্বপ্ন পূরণ করতে মুন্সী আব্দুর রউফ ১৯৬৩ সালের ৮ মে যোগদান করেন ইপিআরে (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল্স)। আব্দুর রউফের এক ছোট বোন ছিল, টাকার অভাবে বিয়ে হচ্ছিল না আদরের ছোট বোনটির। ইপিআরে যোগদানের পূর্বে আব্দুর রউফ বোনের হাত ধরে বলেছিল_ 'বোন আমার তুই কষ্ট পাস না, আমি চাকরি করে তোর বিয়ের জন্য লাল শাড়ি কিনে আনব'। ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সাত বছর ইপিআরে চাকরি করে, আব্দুর রউফ ছোট বোনকে দেওয়া কথা রাখেন। পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করেন। হাসি ফুটতে থাকে দরিদ্র ছোট্ট মুন্সী পরিবারে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলের একটা অংশ এবং তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের কজন সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রামে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধকালীন মুন্সী আব্দুর রউফ কোম্পানির মেশিনগানার হিসেবে রাঙামাটি মহালছড়ি নৌপথে প্রহরারত ছিলেন। কোম্পানিটি বুড়িঘাট চিংড়ি খালের পাড়ে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল। ৮ এপ্রিল শত্রুপক্ষের জয় কমান্ডো ব্যাটালিয়নের ১টি কোম্পানি ৬টি ৩ ইঞ্চি মর্টার ও ৩টি লঞ্চ নিয়ে প্রতিরক্ষা এলাকায় ঢুকে পড়লে ল্যান্স নায়েক আব্দুর রউফ তার নিজের অবস্থান থেকে একাই শত্রুপক্ষের ২টি লঞ্চ ও ১টি স্পিডবোট পানিতে ডুবিয়ে দেন। ফলে প্রায় ২ প্লাটুন শত্রু সৈন্য সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আচমকা বিপক্ষ মর্টারের গোলার আঘাতে নানিয়াচরের বাকছড়ি নামক স্থানে তিনি শাহাদাৎবরণ করেন। তার অপরিসীম বীরত্ব, সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে সর্বোচ্চ সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করে। আব্দুর রউফের মৃত্যুতে একটি পরিবারের স্বপ্ন চিরতরে বিলীন হয়ে যায়। দিশেহারা হয়ে পড়েন পিতা-মাতা ও আদরের ছোট বোন। এ সময় পরিবারের পাশে দাঁড়ায় বাংলাদেশ সরকার ও দেশের জনগণ। আব্দুর রউফ আমাদের মাঝে নেই, আমাদের মাঝে রয়েছে আব্দুর রউফের বীরত্ব, সাহসিকতা, আর অকৃত্রিম দেশপ্রেম। সেই সালামতপুর গ্রামে এখনো জীবিত আছে বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফের জন্মদাত্রী মাতা মকিদুননেছা ও আদরের ছোট বোন। সরকারি অনুদান আর সাহায্য-সহযোগিতাতেই চলছে পরিবারটি। স্বাধীনতাপরবর্তী বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তা ঘাট। মাতা মকিদুননেছার শেষ স্বপ্ন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের নামে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও ফরিদপুর জেলায় একটি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম নির্মাণ_ তাহলেই পূরণ হবে রত্নগর্ভা মায়ের অকৃত্রিম ইচ্ছা। তরুণ প্রজন্মের অহংকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের মায়ের স্বপ্ন সরকার সার্থক করবে_ আমরা সেই প্রত্যাশা করি।

Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:৩৯
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×