somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিবাহ এবং ...

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আজকের দিন খেকে ঠিক ২৩ দিন পর আমার শুভ বিবাহ। অর্থাৎ এই কয়েকদিন আমার ব্যাচেলর পার্টি করা উচিৎ। ক্লাবে গিয়ে মদ খেয়ে নাচানাচি করা উচিৎ। দোকানে গিয়ে যাই পছন্দ হয় কিনে ফেলা উচিৎ। আমার কোনটাই করতে ইচ্ছা করছে না। আমি বিমর্ষচিত্তে লক্ষ্য করছি যে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে এটা নিয়ে আমার তেমন কোন উত্তেজনা নেই।

অথচ থাকাটাই স্বাভাবিক ছিল। বিয়ে নিয়ে প্রত্যেকটা মেয়ের অন্য এক ধরনের স্বপ্ন থাকে। স্বপ্ন না বলে বলা উচিৎ "Vision"। ব্যাপারটাকে প্রায় মহিমান্বিত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আগে যেমন টুথপেস্টে'র টিউব থেকে টুথপিক দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা সাদা রং গালে-কপালে লাগিয়ে বৌ সাজানো হত, এখন আর তেমন হয় না। বিয়ে'র এক মাস আগে থেকে নাকি বিউটি পার্লারগুলোতে ব্রাইডাল প্যাকেজ শুরু হয়। হবু কনেকে থাকতে হয় বিউটি এক্সপার্টদের কড়া "বিউটি রুটিন"'এর বেড়াজালে। তাদের ভাত খাওয়া মানা ওজন বেড়ে যাবে বলে, চকলেট খাওয়া মানা মুখে ব্রন উঠবে বলে, চুলা'র কাছে যাওয়া মানা গায়ে'র রঙ পুড়ে যাবে বলে ... তাদের একমাত্র কাজ রুটিন মেনে খাওয়া-দাওয়া করা এবং "বিউটি স্লিপ" নেওয়া। আহা রে, বাংলাদেশে'র হবু বউদের আমার হিংসা হচ্ছে।

আর আমি? যা-তা খেয়ে বড় হয়েছি; এখনো সমানে চলছে। চকলেট, বাদাম, কোকো, ফাজ এইসব তো প্রত্যেক ঘন্টায় পেটে পাচার করছি। নিষেধ করার মতো এক বাবা, তিনিও চব্বিশ ঘন্টা কাজ নিয়ে ব্যস্ত। সপ্তাহে সাতদিনে'র মাঝে তিন দিন'ই ট্রপিকাল রৌদ্র গায়ে লাগিয়ে লাগিয়ে চামড়া'র অবস্থাও কাহিল আমার।

এই সপ্তাহ অবশ্য দৌড়ে'র উপর ছিলাম। কিছুক্ষণ আগে ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে বাসায় ফিরেছি। এসে দেখি ফ্রিজ গড়ে'র মাঠ। ভাবলাম খানিক জিরাই, তাই এখানে এসে আঙ্গুলে'র এক্সারসাইজ করছি। পেটে ছুঁচো'র নাচন নিয়ে জিরানো যায় না। নাঃ ... আমার একটা "ব্রাইডাল প্যাকেজ" থাকলে মন্দ হতো না। অন্তত সারারাত পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিয়ে অফিস থেকে বাসায় এসে ডাল, মুরগী, আর ভাত রান্না'র মতো বিরক্তিকর কাজ থেকে রেহাই মিলতো।

বিয়ে'র প্রসঙ্গ আসায় আরও কিছু ব্যাপার মনে পড়ল। ইদানিং বাংলাদেশে যেই ভয়াবহ জাঁকজমকে'র সাথে বিয়ে হয়, তাতে করে আমি কিছুটা শংকিত। শাড়ি-গয়না'র কথা বাদ দিলাম। যাঁরা বউ সাজান তাঁদের পারিশ্রমিকে'র যে নমুনা বান্ধবীরা দিল, তাতে করে তো আমার ভিমড়ি খাওয়ার জোগাড়। আমি নিজেও ফেইসবুকে অতি সাম্প্রতিক কিছু বিয়ে'র ছবি দেখেছি। সত্যি কথা বলতে, একটা মেয়ে'র চেহারাকে একদিনে'র জন্য ফেয়ার এন্ড লাভলি'র মডেল বানানো'র যাঁরা কারিগর, তাঁদের উপর আমার একটু সহমর্মিতা আছে। মানুষ চায় বলেই তো নিশ্চয়ই তাঁরা এমনটা করেন(!)। এর উপর আছে ফটোগ্রাফি'র খেলা। ... কাকে কার বিয়ে'র দিন বেশি সুন্দর লাগবে, কে কার চে' কত বেশি গয়না পড়তে পারবে, কে সেলিব্রিটি মেকআপ আর্টিস্টে'র কাছ খেকে সাজতে পারবে, কে পারবে না, কে মুম্বাই থেকে শপিং করে ক্যাটরিনা স্টাইলে'র একটা ল্যাহেঙ্গা বিয়ে'র দিন পড়তে পারবে (এখনকার বউরা তো আবার শাড়ি পড়ে না, পড়ে ল্যাহেঙ্গা ... )। কারো কারো বাবা আবার পার্লামেন্টে'র সদস্য, তাদের বিয়ের অতিথিরা পুরো ঢাকা শহরে ট্রাফিকে'র বারোটা বাজিয়ে "ফ্রি স্ট্রিট পার্কিং" করবেন; তাদের জন্য বন্ধ থাকবে শেরাটন-ভি.আই.পি. ক্রসিং, কল্যাণপুর-নাখালপাড়া-ঝিকাতলা-রামপুরাকে ছয় ঘন্টা'র জন্য অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়ে ছয় হাজার স্কয়ারফিট ঝলমলে আলোকসজ্জা'র পালকিতে চড়ে রাণী'র বেশে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মানো যেই কন্যা শ্বশুরবাড়িগামী হবেন, তার দাম্পত্য-জীবন না জানি কতো ফার্স্ট ক্লাস হবে! আহা! ভাবতেই ভালো লাগছে ...

"স্ট্যাটাস" রক্ষা করা এ ধরনের বিয়ের আয়োজন করা আমার বাপ-দাদা-চৌদ্দ গুষ্টি'র পক্ষে সম্ভব না। সে কারণে বাংলাদেশে যাওয়া নিয়েও আমি বেশ চিন্তিত। আমার ধারণা, বাংলাদেশে জীবনযাত্রা'র ব্যয়ভার আমেরিকা'র চেয়ে বেশি। এখানে এক ডলার পকেটে থাকলে এক বেলা'র খাবার জোটে। একটা শ্যাম্পু কেনার জন্য সাড়ে সাতশ' টাকা খরচ করতে হয় না। চাকরি চলে গেলে বিনা ট্যাক্সে'র বেকার ভাতায় পায়ে'র উপর পা চড়িয়ে এক বছর কাটিয়ে দেওয়া যায়। রাস্তায় বের হলেই সি.এন.জি-ওয়ালা দেড়শ' টাকা ভাড়া দাবি করে বসে না। ধানমণ্ডি-টু-গুলশান একটা ট্রিপে'র ভাড়া দিতেই তো আমি ফকির হয়ে যাব! বিয়ে'র শাড়ি, গয়না, মেকআপ, ফটোগ্রাফার এসব তো বাদই দিলাম।

আমার বাবা অবশ্য অনেক খরচ করে আমার বড় বোনে'র বিয়ে দিয়েছিলেন। প্রেমে'র বিয়ে। বিয়ে যদিও টেকেনি। ডিভোর্স হয়ে গেছে।

আমার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে, সে আমার high-school sweetheart :D। সে একটা সরকারী চাকরি করে; যা কামায় তা দিয়ে হয়তো বাংলাদেশে'র সব মানুষে'র দু'বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব না, কিন্তু কিছু জিনিস সম্ভব। যেমন:
১. আমাকে একদিনে'র জন্য ফেয়ার এন্ড লাভলি'র মডেল সাজানোর জন্য ফারজানা শাকিল/কানিজ আলমাস খানে'র কাছে অ্যাপয়ন্টমেন্ট নেওয়া সম্ভব
২. আমার জন্য মুম্বাই থেকে ক্যাটরিনা ধাঁচে'র একটা ল্যাহেঙ্গা আনানো সম্ভব (যেটা পড়লে বাই দা ওয়ে আমাকে জীবনেও ক্যাটরিনা'র মতো লাগবে না)
৩. শুধু ভিডিও'র লাইটই যথেষ্ট না, আমাকে যাতে আরও উজ্জ্বল দেখায় এবং পুরা এলাকা'র লোকজন যাতে করে বুঝতে পারে যে আমাদের অনেক টাকা, সে জন্য পুরা ধানমণ্ডি লাইটিং করে ফেলা সম্ভব
৪. আমার বিয়ের ছবি দেখে যেন মনে হয় ইন্ডিয়া'র কোন মহারাজা'র বিয়ে, সেজন্য সেলিব্রিটিদের ছবি তুলে এমন কোন ফটোগ্রাফারকে ৫০,০০০ টাকা খরচ করে ভাড়া করা সম্ভব
৫. অনেক দামী কোন ভিডিওগ্রাফি কোম্পানিকে দিয়ে বিয়ের বিভিন্ন দৃশ্য নিয়ে ধামাকা মিউজিকে'র সাথে একটা মিউজিক ভিডিও বানানো সম্ভব, যেটা দেখে মনে হবে বিয়ে তো না যেন হলিউডি সিনেমা (বিশ্বাস না হলে YouTube'এ দেখতে পারেন, অনেকেরটা আছে ...)

... ... ... ইত্যাদি ইত্যাদি।

এতো কিছু'র পরও আমার মধ্যে কোন উত্তেজনা নেই। আমি ঠিক করেছি এই সব কিছু'র পেছনে যেই পরিমাণ টাকা খরচ হতো, সেই টাকাটা দিয়ে একটা ট্রাস্ট ফান্ড খুলে দেশে আমাদের বাসায় যেই ছোট মেয়েটা কাজ করে, তাকে ফান্ডের beneficiary করে যাব। সে আমাকে বলেছে তাকে আমেরিকা নিয়ে যেতে, সে পড়াশোনা শিখে অনেক বড় চাকরি করতে চায়। আমি চাই সে স্কুলে যাক, আর তার পড়াশোনার খরচ এই ফান্ডের টাকা খেকে দেওয়া হোক। আমি চাই বাংলাদেশে'র আর একশ'টা দারিদ্র্যপীড়িত শিশু'র থেকে তার জীবনটা একটু অন্যরকম হোক। সে জানুক শৈশব কি। সে তার জীবনের কাছ থেকে শুধুমাত্র খেটে খেয়ে রোজগার করা দুই পয়সা'র চেয়েও আরেকটু বেশি কিছু পাক।

কি? অনেক বড় বড় কথা বলছি? অনেক মহৎ মহানুভব ভাব ধরেছি? ধরলে ধরেছি B-)। আমি মহিলা হাজী মোহাম্মদ মহসিন না। একটা ট্রাস্ট ফান্ড খুলে দেশটাকে পাল্টে দেওয়া যায় না। পরিবর্তনও রাতারাতি হয় না। আমি বলতে চাচ্ছি না যে আমি কোন পরিবর্তনের সূচক অথবা তেমন কেউ। আমি আসলে কিছুই বলতে চাচ্ছি না্।

একটি শিশু'র সারাজীবনে'র পড়াশোনা'র টাকা দিয়ে ট্রাস্ট ফান্ড খোলাটা বেশ কষ্টকর, সেটা ইউ.এস্ ডলারে উপার্জন করে হলেও। কিছু কিছু কষ্ট আছে সুখে'র মতো।

ও, আরেকটা কথা। আমার ফকিরা বিয়েই ভালো।:D:):P
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:৩৫
১০টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×