somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কালা পাহাড় ২০০০
আমি স্বপ্ন দেখি এক যুবকের, যে নরকের কীটদের বিশাল বাহিনীর সামনে যুদ্ধের ময়দানে হাজির হবে। যুদ্ধে জিতে বিজয়ী হবার জন্য নয়, শুধু ন্যায়ের পক্ষে দাড়াবার জন্যেই যুদ্ধে যাবে সেই যুবক। মহাভারতের সেই চরিত্র "সংশপ্তক" এর মত, যে পরাজয় নিশ্চিত জেনেও যুদ্ধের ময়দানে হা

'বিশ্বাস'-এর সংক্ষিপ্ত কথা

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রশ্ন ১: আমরা কিভাবে স্রষ্টার (আল্লাহ, God) অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে পারি?

আমরা যখন চারপাশে তাকাই, দেখতে পাই গাছপালা, পশুপাখি, সাগর-মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত আর অনেক রকম মানুষ। আরো আছে অণুজগতের জৈব ও অজৈব অনেক কিছু - যার কিছু দেখতে পাই আবার কিছু দেখতে পাই না। এই সবকিছুই মহাজ্ঞানী এক সত্তার অস্তিত্ব বহন করে। একইভাবে, মহাবিশ্বের সাম্যাবস্থা, শৃঙ্খলা ও নিখুঁত সৃষ্টি প্রমাণ করে এক মহাজ্ঞানী সত্তার নিখুঁত ডিজাইন। এই মহাজ্ঞানী ও পরম সত্তাই হচ্ছেন আল্লাহ।

আমরা আল্লাহর সৃষ্ট নিখুঁত সিষ্টেম এবং জৈব ও অজৈব সৃষ্টির অপূর্ব সমাবেশ থেকে আল্লাহর অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে পারি। এই অপূর্ব নিখুঁত ব্যবস্থা পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে এভাবে:

"যিনি সৃষ্টি করিয়াছেন স্তরে স্তরে সপ্তাকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখিতে পাইবে না; তুমি আবার তাকাইয়া দেখ, কোন ত্রুটি দেখিতে পাও কি? অতঃপর তুমি বারবার দৃষ্টি ফিরাও, সেই দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হইয়া তোমার দিকে ফিরিয়া আসিবে।"
[সূরা মূলক: ৩-৪]


প্রশ্ন ২: আমরা কিভাবে আল্লাহকে জানি?

মহাবিশ্ব জুড়ে থাকা নিখুঁত সৃষ্টি আবারও আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয় সর্বশক্তিমান আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে। অবশ্য আল্লাহ সৃষ্টজগতের জন্য প্রেরিত সঠিক জীবন বিধান পবিত্র কুরআনে নিজের পরিচয় দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহর মহান গুণাবলী আমাদের কাছে বর্নিত হয়েছে:

"তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা; তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু। তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনিই অধিপতি, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই নিরাপত্তা বিধায়ক, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অতীব মহিমান্বিত। উহারা যাহাকে শরীক স্থির করে আল্লাহ তাহা হইতে পবিত্র, মহান। তিনিই আল্লাহ সৃজনকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, রূপদাতা, তাঁহারই সকল উত্তম নাম। আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে, সমস্তই তাঁহার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।"
[সূরা হাশর: ২২-২৪]


প্রশ্ন ৩: সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি?

সৃষ্টির উদ্দেশ্য আল্লাহ আমাদের বলেছেন এভাবে:

"আমি সৃষ্টি করিয়াছি জিন্ন এবং মানুষকে এইজন্য যে, তাহারা আমারই ইবাদত করিবে"
[সূরা যারিয়াত: ৫৬]

এই আয়াত থেকে দেখা যায়, পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্বের উদ্দেশ্যই হচ্ছে আল্লাহর উপাসনা করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এই ব্যাপারে মানুষকে পরীক্ষা করা হবে যতক্ষণ পর্যন্ত সে পৃথিবীতে আছে।


প্রশ্ন ৪: আমরা কেন পরীক্ষিত হই?

আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষকে পরীক্ষা করেন বিশ্বাসীদের অবিশ্বাসীদের থেকে পৃথক করার জন্য, এবং বিশ্বাসীদের মাঝে কারা আচার-ব্যবহারে শ্রেষ্ঠ তা নির্ধারণের জন্য। তাই কারো জন্য, "আমি বিশ্বাস করি" শুধু এতটুকুই বলা যথেষ্ট নয়। যতদিন পর্যন্ত একজন বেঁচে থাকেন, তার আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও একাগ্রতা, ধর্ম পালনে অধ্যবসায়, সংক্ষেপে, আল্লাহর দাস হবার ব্যাপারে তার ঈমান পরীক্ষা করা হয় বিশেষ পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে। এই সত্য আল্লাহ নিচের আয়াতে এভাবে বলেছেন:

"যিনি সৃষ্টি করিয়াছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদিগকে পরীক্ষা করিবার জন্য - কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।"
[সূরা মূলক: ২]


প্রশ্ন ৫: আমরা কিভাবে আল্লাহর দাসত্ব করব?

আল্লাহর দাসত্ব করা মানে হচ্ছে একজনের সমগ্র জীবন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ব্যয় করা। একজনের সকল চিন্তা, কথা ও কাজ শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও আল্লাহর ভয়েই ব্যয় করা উচিত। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এই ব্যাপারটি আমাদের নজরে এনেছেন:

"বল, 'আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে'।"
[সূরা আনাম: ১৬২]


প্রশ্ন ৬: ধর্ম প্রয়োজনীয় কেন?

যে আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করে, তাকে প্রথমে জানতে হবে স্রষ্টার হুকুম এবং কি সন্তুষ্ট করবে সেই স্রষ্টাকে যিনি মানুষকে দিয়েছেন আত্মা, দিয়েছেন পানাহার, জীবন ও স্বাস্থ্য। তাকে সমগ্র জীবন যাপন করতে হবে আল্লাহর হুকুম মেনে ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে। ধর্ম আমাদের দেখায় আল্লাহ প্রদত্ত জীবনাচরণ, ব্যবহার ও নৈতিকতা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন:

"আল্লাহ ইসলামের জন্য যাহার বক্ষ উন্মুক্ত করিয়া দিয়াছেন এবং যে তাহার প্রতিপালক প্রদত্ত আলোতে রহিয়াছে, সে কি তাহার সমান যে এরূপ নহে? দুর্ভোগ সেই কঠোর হৃদয় ব্যক্তিদের জন্য যাহারা আল্লাহর স্মরণে পরাঙ্মুখ! উহারা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে।"
[সুরা আয-যুমার: ২২]


প্রশ্ন ৭: কিভাবে একজন তার ধর্ম (দ্বীন) পালন করবে?

যারা আল্লাহতে বিশ্বাস রাখে, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলে, তারা নিজেদের জীবনকে কুরআনে আল্লাহর দেখানো পথে সাজায়। যে জীবনে এই ধর্ম মেনে চলে, সে বিবেকের সঠিক অনুপ্রেরণা মেনে চলে এবং রিপুর তাড়নায় খারাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকে। আল্লাহ বলেন:

"তুমি একনিষ্ঠ হইয়া নিজকে দ্বীনে প্রতিষ্ঠিত কর। আল্লাহর প্রকৃতির অনুসরণ কর, যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করিয়াছেন; আল্লাহর সৃষ্ষ্টির কোন পরিবর্তন নাই। ইহাই সরল দ্বীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।"
[সূরা রূম: ৩০]


প্রশ্ন ৮: ধর্ম ছাড়া নৈতিকতা হয় কিভাবে?
'বিশ্বাস'-এর সংক্ষিপ্ত কথা: প্রশ্ন ৮: ধর্ম ছাড়া নৈতিকতা হয় কিভাবে? - এর কমেন্ট

যে সমাজে ধর্ম নেই, সেখানে মানুষ বিভিন্ন রকম অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। যেমন একজন ধার্মিক ব্যাক্তি কখনোই ঘুষ নেবেন না, জুয়া খেলবেন না, হিংসা করবেন না, মিথ্যা বলবেন না। কারণ, তিনি জানেন ঠিকই পরে গিয়া এগুলার হিসাব দেয়া লাগবে। একজন অধার্মিকের এসব কাজ করার সম্ভাবনা বেশি। "আমি একজন নাস্তিক এবং আমি ঘুষ খাইনা, বা আমি একজন নাস্তিক কিন্তু আমি জুয়া খেলিনা" - এটুকু বলাই একজন মানুষের জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ, যে আল্লাহকে ভয় পায় না, যে মনে করে না এর পরে গিয়ে তাকে জবাবদিহি করতে হবে, সে পরিস্থিতি বদলে গেলে যে কোন কিছুই করতে পারে। একজন বলল, "আমি নাস্তিক কিন্তু আমি ব্যভিচার করি না"। পশ্চিমা বিশ্বে যেখানে ব্যভিচার স্বাভাবিক, সেখানে গিয়েতো সে ব্যভিচার করতেই পারে। অথবা, যে নাস্তিক বলে সে ঘুষ নেয়না, বলল, "আমার বাচ্চা অসুস্থ, মারা যেতে বসেছিল, তাই ঘুষ নিতে হয়েছিল।" আল্লাহকে ভয় না থাকলেতো এরকমই হবে।

একজন ধার্মিক কিন্তু এই রকম অনৈতিকতা প্রদর্শন করে না। কারণ, সে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিকে ভয় পায় এবং বুঝে যে আল্লাহ তার চিন্তা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানেন। সে দায়িত্বশীল আচরণ করে ও পাপকে পরিহার করে।

একজন মানুষ, যে ধর্ম থেকে দূরে, সে বলতে পারে, "আমি নাস্তিক কিন্তু, আমি খুবই ক্ষমাশীল। আমি ঘৃণা, প্রতিষোধ কোনটাই অনুভব করি না।" কিন্তু একদিন কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনা তাকে আত্মনিয়ন্ত্রন বিচ্যুত করল। সে কাউকে খুন বা আহত করার চেষ্টা করল। কারণ, সে যে নৈতিকতা অনুসরণ করে, তা তার চারপাশের পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে পরিবর্তনশীল।

তাই যে আল্লাহকে ও পরকালকে বিশ্বাস করে, কখনো নৈতিকতা হতে বিচ্যুত হয় না পরিবেশ ও পরিস্থিতি যাই হোক না কেন। আর তার নৈতিকতাও পরিবর্তনশীল নয়। মহান আল্লাহ বলেন,

"যাহারা আল্লাহকে প্রদত্ত অংগীকার রক্ষা করে এবং প্রতিজ্ঞা ভংগ করে না, এবং আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখিতে আদেশ করিয়াছেন যাহারা তাহা অক্ষুণ্ন রাখে, ভয় করে তাহাদের প্রতিপালককে এবং ভয় করে কঠোর হিসাবকে, এবং যাহারা তাহাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্য ধারণ করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাহাদিগকে যে জীবনোপকরণ দিয়াছি তাহা হইতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যাহারা ভাল দ্বারা মন্দ দূরীভূত করে, ইহাদের জন্য শুভ পরিনাম - স্থায়ী জান্নাত।"
[সূরা রা'দ : ২০-২২]


(চলবে)
মূল: হারুন ইয়াহিয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×