somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

মন্ত্রী এবং তার ছেলে

০৮ ই আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মন্ত্রীর ছেলের নাম সোহান। সোহানের সাথে আমার বন্ধুর মত সম্পর্ক। সোহান খুবই ভালো ছেলে। দেখতে হলিউডের নায়কের মত। বিদেশ থেকে লেখা-পড়া শেষ করে এসেছে। তার বাবা তেল জ্বালানী মন্ত্রী আবদুর রব।আবদুর রব সব সরকারের আমলেই কোনো না কোনো মন্ত্রী থাকেন। কঠিন লোক। এই আবদুর রবের অতীত ইতিহাস খুব ভালো নয়। আবদুর রবের বাবা সেকান্দর আলী কাঁধে করে গামছা-লুঙ্গি বিক্রি করতেন।এখন আবদুর রবের চার শো কোটি টাকা আছে। দুই টা টিভি চ্যানেল আছে। একটা দৈনিক পত্রিকা আছে। আবদুর রবের কোনো দোষ নেই, মন্ত্রী মানেই অনেক, গাড়ি -বাড়ি ব্যাংক ব্যালেন্স থাকবেই। মন্ত্রীর কি আছে, না আছে সেটা আমার লেখার বিষয় নয়। আজ আমি বলব- মন্ত্রীর ছেলে সোহানের কথা। যদিও আপনারা জানেন কান টানলে মাথা আসবেই। তাই তেল ও জ্বালানী মন্ত্রী আবদুর রব এর কথা এই গল্পে বার বার চলে আসলে খুব দোষনীয় মনে করার কোনো কারন নেই।

আবদুর রব মন্ত্রী হওয়ার আগেই সোহানের সাথে আমার পরিচয় হয়। আমরা একই সাথে লেখা-পড়া করতাম। সোহানের বাবা মন্ত্রী হওয়ার পর- মনে হলো- সারা বাংলাদেশটাই যেন আমাদের। হাতে অনেক ক্ষমতা। গাড়ি করে আমরা কোথাও যাচ্ছি- হঠাত রাস্তায় কোনো সার্জেন গাড়ি থামালে- সোহান বলত, এই সার্জেন কে নেমে দুই টা থাপ্পড় দিয়ে আয়। সাথে সাথে সোহানের চামচা মুহিত গাড়ি থেকে নেমে সার্জেন কে সত্যি সত্যি দু'টা থাপ্পড় দিয়ে দিত। যেখানে যেতাম- সবাই অতি মাত্রায় ভদ্রতা দেখাতো। সোহানের গাড়ি ছিল দুইটা। গাড়িতে সব সময় টিভি চ্যানেলের স্টিকার লাগানো থাকতো। কোথাও বের হলে সোহান পানিত মত টাকা খরচ করতো। মুহূর্তের মধ্যে আশি হাজার, নব্বই হাজার টাকা খরচ করে ফেলত। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। বন্ধু হিসেবে সোহান আমাকে খুব বেশী পছন্দ করতো। টানা চার বছর সোহানের সাথে ঘুরা-ঘুরি করে আমি ক্লান্ত। আমি বুঝতে পারলাম- এই ধরনের জীবন আমার জন্য নয়।

এরপর থেকে আমি সোহানকে এড়িয়ে যেতে শুরু করলাম। ফোন করলে ফোন ধরতাম না। বাসায় লোক পাঠালে- আমি বলে দিতাম, আমার কাজ আছে, খুব ব্যস্ত এখন আমি। অবসর পেলে দেখা করবো। এইভাবে দেখা না করে এক বছর পার হয়ে গেল। আমি আমার মতন চলতে শুরু করলাম। বিলাসিতা আমার কখনই ভালো লাগে না। নিজে টুকটাক কাজ করে চলি- তাতে অনেক শান্তি। কারণ আমি জানি, সুখের থেকে স্বস্তিতে থাকা ভালো।তবে আমি সব সময়ই সোহানের খোঁজ খবর রাখতাম। ছেলে হিসেবে সোহান অনেক ভালো। দরিদ্র মানুষের প্রতি অন্য রকম একটা ভালোবাসা আছে। তাদের জন্য অনেক কিছুই করেছে। একদিন সন্ধ্যায় সোহান হঠাত করে আমাকে ফোন দিয়ে বলল- দোস্ত, মহাখালী জাকারিয়া বারে আয়। তোকে খুব দরকার। কি মনে করে যেন আমি- জাকারিয়া বারে গেলাম। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল, সেই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আমি বারে গেলাম। গিয়ে দেখি- দশ-পনের টা ছেলে গোল একটা টেবিলে বসে আছে।--

সেদিন ছিল সোহানের জন্মদিন। সোহান আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, দোস্ত তুমি এসেছো আমি অনেক খুশি হয়েছি। সোহানের চোখের এক ইশারাতে বারের বয় এসে সবাইকে একটা করে বড় মদের বোতল দিল। আমাকে একটা দিল। বোতলের গায়ে বড় করে লেখা ব্লাক ডগ। সোহানের মদের বোতলের গায়ে লেখা- ওল্ড স্মাগলার। বারের বয় সবাইকে পেগ সাজিয়ে দিচ্ছে। সাথে সাথে আছে পরোটা -গ্রীল চিকেন আর ঝাল ছোলা। সোহানকে খুশি করার জন্য পটাপট তিন-চার পেগ শেষ করলাম। ( মদ কখনই আমার ভালো লাগেনি, যে ক'বার খেয়েছি- বন্ধুকে খুশি করার জন্যই খেয়েছি। ) সন্ধ্যা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত আমরা সবাই তরল পানীয় খেয়ে চললাম। এর মধ্যে তিনজন বমি করে সারা শরীর মাখা-মাখি করে ফেলেছে। দুই জন কাঁদছে। চার জন মেয়েদের কোন অঙ্গ বেশী সুন্দর তা নিয়ে তর্ক করছে। আমি সোহানের দিকে তাকিয়ে বললাম, দোস্ত আমি যাই। পরে আবার দেখা হবে। সোহানের চামচা মুহিত খুব ভাব নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল- আর এক পর্ব বাকি আছে দাদা।

মদের বিল দিয়ে টাকা শেষ। সোহান, মুহিতকে বাসায় টাকা আনতে পাঠিয়েছে। পরের পর্বের জন্য অনেক টাকা লাগবে। মদের পর্বে টাকা খরচ হয়েছে বাহাত্তর হাজার টাকা। আমাদের এগারো জনের জন্য এগারোটা মেয়ে এসেছে। এই মেয়ে গুলো আজকের রাতটা আমাদের জন্য এক আকাশ আনন্দ এনে দিবে। মেয়ে গুলো কোনো সাধারন মেয়ে নয়। মডেল কন্যা আছে, অভিনেত্রী আছে, সিনেমার নায়িকা আছে- ইডেন এবং আহছান উল্লাহ ভার্সিটির চারজন মেয়ে আছে। সত্যি কথা বলি- প্রতিটা মেয়ে দেখতে অসাধারন সুন্দরী। এরপর মধ্যেই মডেল কন্যা- এক ছেলের কোলে বসে আদর নিচ্ছে-সবার সামনেই। মেয়েটির মধ্যে কোনো সংকোচ বোধ দেখলাম না। আমার আর সোহানের জন্য যে দু'টি স্পেশাল মেয়ে আসছে- মেয়ে দু'টি বাংলাদেশ বিমানের বিমানবালা । কিন্তু দু'জন বিমানবালাকেই আমার কাছে খাটো বলে মনে হলো। যাইহোক, আমি সোহানকে বললাম- মেয়ে সঙ্গ আমি পছন্দ করি না। আমাকে বিদায় দাও। মদ তো প্রচুর খেলাম, দেখছো না, ঠিক ভাবে দাঁড়াতে পারছি না। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। টাল মাতাল অবস্থা আমি পথে নামলাম।

রাত দুইটায় বাসায় ফিরে গোছল করলাম। তারপর ঘুম। সকাল দশ টায় ঘুম থেকে উঠার পর পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে গেল।আমার অপরাধ- আমি বিমানবালাকে ধর্ষণ করার পর খুন করেছি। থানা থেকে আমাকে নিয়ে গেল জজ কোর্টে, জজ কোর্ট থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে। কারাগারে আমাকে দেখতে এলেন তেল ও জ্বলানী প্রতিমন্ত্রী আবদুর রব । মন্ত্রী আবদুর রব আমাকে বললেন- আমি জানি, সে রাতে তুমি জাকারিয়া হোটেলে ছিলে না। বিমানবালাকে তুমি ধর্ষণ বা খুন করনি। কিন্তু তুমি সব স্বীকার করবে যে, তুমি বিমানবালাকে ধর্ষণ করার পর, নেশাগস্ত থাকার কারণে খুন করেছো। আমি তোমাকে কথা দিলাম- তোমার ফাঁসি হবে না এবং আমি তোমাকে এক বছরের মধ্যে বের করে নিয়ে আসবো। তুমি তো জানো আমার ঘরে সব সময় পনের-বিশটা টাকার বস্তা থাকে- আমি তোমার বাসায় দু'টা টাকার বস্তা পাঠিয়ে দিব। তুমি আমার ছেলের বন্ধু।খুব ভালো বন্ধু, তুমি আমার ছেলেকে বাঁচাও। আমি আমার ছেলেকে অনেক ভালোবাসি।

এরপর কি হলো- আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। হয়তো অন্য কোনো লেখায় এ বিষয়ে আবার লিখব। কোথায় যেন ইংলিশ গান বাজছে। অ্যাভরিল ল্যাভিনের গান ।গানের কথা এবং সুরটাও খুব সুন্দর- " I'm giving up, on everything
Because you messed me up
Don't know how much you screwed it up
You never listen, that's just too bad

I know I wanna runaway, I know I wanna runaway
Runaway
If only I could runaway, if only I could runaway
Runaway
I told you what I wanted, I told you what I wanted
What I wanted
But I was forgotten, I won't be forgotten
Never again

( এই গল্পের ঘটনা প্রবাহ , প্রতিটি শব্দ , প্রতিটি বাক্য, গল্পের চরিত্র গুলো এবং তাদের সংলাপ শতভাগ সত্য ! তাই গল্পের কারণে আমি ব্যাতীত অন্য কারো অনূভুতিতে আঘাত লাগলে সেটার জন্য আমি দায়ী এন্ড আই ডোন্ট কেয়ার এবাউট ইট !!!! )
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×