somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন বীরাঙ্গনার পিতার চিঠি

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নোয়াখালী
মাননীয়
বঙ্গবন্ধু,
আপনার প্রতি আমার আন্তরিক ভালোবাসা।আমার সংসারে আমার বলিতে একমাত্র মেয়ে (নাম মুছে দেওয়া হয়েছে)।সে কলেজের ছাত্রী ছিল।তাহাকে দিয়া আমার আশা-ভরসা ছিল।স্বাধীনতার প্রাক্কালে বর্বর পাক সৈনিকরা এবং এইদেশের দালাল রাজাকার আমার সকল আশা-আকাঙ্ক্ষা শেষ করিয়া দেয়।বিগত ৭১ সালের ১৩ই ডিসেম্বর দেশীয় রাজাকার দের সংগে লইয়া পাক বাহিনী আমাদের এলাকা ঘেরাও দেয়।যথেচ্ছ লুটতরাজ ও বাড়ি-বাড়িতে যুবকদের নির্বিচারে হত্যা করে।সেই সময় আমার একমাত্র মেয়েকে তাহারা ধরিয়া লইয়া (অংশটি মুছে দেওয়া হয়েছে) আমরা ফেরত পাই নাই।১৬ তারিকে স্বাধীনতার পর ১৭ তারিখে সে বাসায় ফিরিয়া আসে।কিন্তু মান-ইজ্জত সমস্তই বিসর্জন দিয়া।এখন সে বিড়ঙ্গনা।আমি এই বিড়ঙ্গনা মেয়েকে নিয়া খুব অসুবিধায় আছি।শুনিতে পাইলাম এই দেশের ২০,০০০ নির্যাতিত ও অগনিত বিড়াঙ্গনা মহিলার পুনর্বাসনের জন্য আপনি আলাদা দপ্তর খুলিয়া দেন।আমার এই বিড়ঙ্গনা মেয়ের একটা বিহিত করিবেন এই আশা নিয়া লেখনী শেষ করিলাম।

নোয়াখালী থেকে একজন বীরাঙ্গনার পিতা এই চিঠিটি লিখেন শেখ মুজিবকে।
একজন পিতার কণ্ঠ থেকে একমাত্র আদুরে মেয়ের সম্ভ্রমহানি কালো অধ্যায়ের আর্তনাদ মুছে দিতে পারেনি বীরাঙ্গনা খেতাবের সম্মান।পিতার এ আকুতিকে আমরা বুঝি।কিন্তু আমরা কি অনুভব করতে পেরেছি বীরাঙ্গনার সেই অন্ধকার রাতগুলোর যন্ত্রণা!
যুদ্ধ শেষে বীরযোদ্ধারা যখন ফিরে আসে তাদের ভালোবাসায় গর্বে বরন করেছিল তাদের পরিবার ।কিন্তু এই বীরাঙ্গনাদের অপেক্ষায় কেউ দাঁড়িয়ে ছিল না!যুদ্ধে অনেকেই হারিয়েছে নিজের পরিবার।কিন্তু পরিবার থেকেও যারা পরিবারহারা সেইসব বীরাঙ্গনার ব্যথা কি অনুভব করতে পেরেছি আমরা!
জাফর ইকবালের একটি গল্প ছিল।অনেক আগে পড়েছিলাম নামটা মনে করতে পারছি না বলে দুঃখিত।গল্পটি ছিল এমন-একদিন পাক হানাদার বাহিনী বাড়ি তল্লাশি করতে আসলে ঘরের সুন্দরী বউকে দেখে পছন্দ হয়ে যায়।বেডরুমের দরজা বন্ধ করে তাকে ভোগ করার পর নিজের বাকি সৈন্যদের আনন্দের জন্য তাকে তুলে নিয়ে যায়।অসহায় স্বামীর দেড় বছরের সন্তানকে কোলে নিয়ে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।যুদ্ধে শেষে স্ত্রী ফিরে আসে কিন্তু স্বামী তাকে আর স্বীকার করে নেয় না।ছেলে একসময় বড় হয়।বিদেশে পড়ালেখা করতে গিয়ে বিদেশী এক মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করে।বাবা ততদিনে মারা যায়।ছেলেটি একসময় তার পরিবারের কাছে তার মায়ের ব্যাপারে সম্পূর্ণ কথা জানতে পারে।ছেলে তার স্ত্রীর সহযোগিতায় অনেক সন্ধানের পর এক সময় তার মাকে খুঁজে পায়।কিন্তু মা তার পুরনো দিনের সংসার স্বামী ছেলের কথা অস্বীকার করেন।ছেলে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে।আসার সময় ফোন নম্বর রেখে আসে।যদি মা কোনোদিন নিজের ছেলেকে বরন করে নিতে চায়।ছেলেটি প্রতিদিন টেলিফোনের পাশে অপেক্ষা করে সেই কাঙ্ক্ষিত একটি মাত্র ফোনের জন্য।টেলিফোনের ক্রিং ক্রিং শব্দে প্রতিবার ছুটে যায় ছেলেটি তার মাকে আবারও ফিরে পাওয়ার আশায়!
গল্পের শেষ পর্যায়ে ছেলেটি নিজেকে প্রশ্ন করে-কে বেশী দোষী তার মায়ের???পাক হানাদার বাহিনী যারা কুকুরের মত দিনের পর দিন মাংস চামড়া খুবলে খেয়েছে ভোগ করেছে নাকি তার নিজের বাবার যিনি তার নিজের স্ত্রীকে স্বীকার করে নেওয়ার মত যোগ্যতা অর্জন করতে পারে নি???
আজকে এই বিজয়ের আনন্দের দিনে গল্পের ছেলেটির মত এই প্রশ্নটি করা সমীচীন হবে কিনা জানি না!তবে আজ এড়িয়ে গেলেও প্রশ্ন চিহ্নটি যে থেকেই যায়!!!
বিজয়ের এই দিবসে শহীদদের সাথে বীরযোদ্ধাদের সাথে বীরাঙ্গনাদের প্রতিও রইল আমার অশেষ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×