somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসা আর ইলেক্ট্রনিক্স এ জর্জরিত একজন ঊনমানুষ

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১০ ভোর ৪:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ, ঘুম ভাংল মুঠোফোনের শব্দে । ওটি বন্ধ করে সাধের ঘুমটা কে প্রলম্বিত করার প্রচন্ড ইচ্ছা সত্তেও কেন জানি হাতটা বাড়িয়ে মুঠোফোনটিকে আর বন্ধ করা হল না । বরং ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি বাজে রাত ২টা ।
এবার বুঝলাম কেন এত রাতে মুঠোফোনটা বেরসিক এর মত বেজে যাচ্ছে, য়্যালার্ম দেয়া ছিল । নিত্যদিনের মত আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে হাজারো কাজ-অকাজের কথা । সে বেচারির বোঝার কিবা সাধ্য যে তুমি আজ আর নেই সেই আমার তুমি । কিভাবে বুঝবে বেচারি, যে -আমার রাত্রিগুলো এখন বড়ই নিঃসঙ্গ । আজকাল আর আগের মত তাকে সময় দেয়া হয় না । আগে যেমন রাত-বিরাতে,কাজে-আকাজে,কারণে-অকারণে তোমায় ফোন দেবার বাহানায় মুঠোফোনটা কে পরম মমতায় কানে চেপে ধরে রাখতাম,এখন আর তা হয় নাহ, ও বেচারি বড়ই অবহেলায় পড়ে থাকে প্যান্ট এর পকেট এর এক কোনায়,কিংবা টেবিল এর পাশে । আগে যেখানে আমার সাথে সবখানেই তার উপস্থিতি আর ক্ষণিক পর পর ব্যবহার ছিল অবধারিত এখন ত তাকে পরম অযত্নে ফেলে রেখে যাই বিছানায় ,আধা-খাওয়া সিগ্রেট স্তুপ এর মাঝে , এমনকি মেঝেতেও মাঝে মাঝে গড়াগড়িরত অবস্থায় তাকে আমার রুম্মেট আবিষ্কার করেছে ।

ভালবাসায় অভ্যস্ততা বড়ই বাজে জিনিস । এটা জানি বলেই,মুঠোফোন বেচারির কষ্টটা আমি বুঝি, হাত বাড়িয়ে টেনে নেই । আলতো হাত চালাই তার নরম কী-প্যাডে, কখন যে সেই ১১ টি সংখ্যা ভেসে উঠেছে , খেয়াল করিনি । যখন করলাম, তখন অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম কোনো এক অজানা দেয়াল দাড়িয়ে গিয়েছে আমাদের মাঝে আজ, কোনো এক অচেনা জড়তা কাজ করছে আজ,কোনো এক অবুঝ অভিমান জমাট বেধেছে আজ,গতকাল,পরশু,ইদানীং..................

কতক্ষণ কেটেছে জানি না । বৃদ্ধাংগুলী এখনো সেই সবুজ বাটনে স্থির;কিন্তু মন ছুটে চলেছে , ছুটে চলেছে হাজার পাওয়া-না পাওয়ার হিসাবের খেরোখাতার পাতায় ।পাতার পর পাতা হাতড়ে বেড়াই,খাতার পৃষ্ঠা অতীত ছাপিয়ে বর্তমানের দোড়গোড়ায়,কিন্তু হিসাব মেলে না । ভবিষ্যতেও আদৌ কখনো মিলবে কিনা ভাবতে ভাবতে নির্বিকার ভঙ্গিতে বৃদ্ধাংগুলী সরিয়ে লাল বাটনেই চাপ দেই,বেপরয়া ভাবে ছুড়ে ফেলি মুঠোফোনটা ।

বারান্দায় দাড়াতেই শীতের ঝাপ্টা আসে,বেশ জাকিয়ে পড়েছে শীত । এমন এক শীতের রাতে ধূমায়িত কফি হাতে ঠক-ঠক কাপ্তে কাপ্তে তোমার গলায় শুনেছিলাম গুণের কবিতা -

শিশুরা খেলাঘর করে ।
তারা হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-কোসন নিয়ে
বড়দের মতো সংসার সংসার খেলে ।
তারপর একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে
ঘুমভাঙ্গার পর শুরু হয় তাদের অন্যখেলা ।
বড়োরাও খেলাঘর করে ।
তাদের বাসন-কোসনগুলো আকৃতিতে বড়ো,
তাদের কামনা বাসনার মতো ।
শিশুদের মতো তারাও ক্লান্ত হয় ,
তারাও সংসার ভাঙ্গে, কিন্তু শিশুদের মতো
তারা ঘুমুতে পারে না ।


আমারও ঘুম আসে না । তুমি বলছিলে "টারম ফাইনাল টা ভালভাবে দাও, আমার থেকে বেশী খুশী কেউ হবে নাহ ! " আমি পারিনি, পারিনি তোমায় ধরে রাখতে, পারিনি তোমায় খুশি করতে, ইলেক্ট্রনিক্স পরীক্ষাটা স্মরণ কালের সব চাইতে খারাপ দিয়েছি। বাকিগুলোও সুবিধার হবে না বুঝতে পারছি । আর ইচ্ছে করছে না অদৃশ্য-অস্পৃশ্য তোমায় খুশী করতে ।
অনেকদিন আকাশ দেখিনা , আজ দেখব,বুক ভরে দেখব সেই আকাশ যা একসময় তোমার সাথে ভাগাভাগি করে নেবার কথা দিয়েছিলাম । আজ তোমার আর আমার আকাশের বিস্তর দুরত্ব, তীব্র বেগে ছুটে চলা বিমান ১১ঘন্টা ১৫ মিনিটে যতটা দুরত্ব যেতে পারে ততটা,ব্যবধান এক মহাদেশের , ফারাক দুই দৃষ্টিভঙ্গির , ব্যপ্তি তিন মাসের । এই বিশাল দুরত্ব নিমেষে পার করে ফেল্লেও, ঐ সবুজ বাটন টেপার দুরত্বটাকে আর পার করতে পারি না ।

তুমি আমার নওতো সুখ, তুমি সুখের বেদনা । সেই বেদনা নিয়ে আজ আমি আকাশ দেখব,আকাশ দেখবে ভালবাসা আর ইলেক্ট্রনিক্স এ জর্জরিত একজন ঊনমানুষ ।


বিঃদ্রঃ সকল চরিত্র ঘটনা কিঞ্চিত কাল্পনিক, বেশীরভাগ ধ্রুব সইত্য ।
আমার জীবনের সাথে মিল্যা গেলে, আমার কুনু দোষ নাইক্যা :P :P
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১০ ভোর ৫:৫২
১৯টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×