somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বীরাঙ্গনাদের তালিকা চাই, যুদ্ধশিশুদের তাদের মায়েদের সাথে সাক্ষাতেরও ব্যবস্থা চাই

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত প্রায় ৪০টি বছর ধরে প্রতিটি সরকারই কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করে। প্রতি টার্মেই লিস্টে কাঁটা ছেঁড়া, নতুন করে লিস্ট করা চলছেই। আজকের পত্রিকাতেও দেখলাম বিভিন্ন সময়ের মুক্তিযোদ্ধাদের লিস্ট নিয়ে নানারকম অসংগতি। এমনকি অনেক অমুক্তিযোদ্ধা বা রাজাকারেরাও লিস্টে নাম ঢুকিয়েছে, এমন অভিযোগও আছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত নাম লিস্টে উঠার অভিযোগও দেখলাম। এদেশে শ্রদ্ধেয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিভিন্ন যৎসামান্য সাহায্য উদ্যোগও বিভিন্ন সরকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠন মাঝে মাঝে নিয়ে থাকে। হ্যাঁ, যারা জীবন বাজী রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন, দেশের স্বাধীনতা এনেছেন, যাদের জন্য আমরা বলতে পারি এই বাংলাদেশ আমার, আমি বাংলাদেশী নারী,তাদের জন্য এ সাহায্যগুলো অনেক ক্ষুদ্রই, আরো অনেক কিছুই তাদের জন্য করা লাগতো আমাদের।

তবুও আমার কিছু সুপ্ত ক্ষোভ আছে। আজ বিজয় দিবসের প্রাক্কালে সেই ক্ষোভটুকু প্রকাশ করতেই এই লেখা। বেশি ভূমিকা না নিয়েই বলতে চাই, আমাদের বীরাঙ্গনাদের তালিকা কই মাননীয় সরকার? তাদের জন্য কি রকমের ভাতার ব্যবস্থা করেছেন আপনারা এই পর্যন্ত? তাদের বা তাদের সন্তানদের জন্য কিরকম চাকুরীর কোটার বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোটার ব্যবস্থা করা হয়েছে এ পর্যন্ত?

বীরাঙ্গনাদের ত্যাগের কথা আজ আর বিস্তারিত বর্ণনার কিছু নেই, সবাই জানে সে কথা। ডঃ নীলিমা ইব্রাহীমের "আমি বীরাঙ্গনা বলছি" বইটা পড়ে যদি কারো চোখে পানি না আসে, বুকে মোচড় না দেয়, সে মানুষের সংজ্ঞাতেই পড়ে না। সেই ৭২-এ না হয় ঐসব নারীদের নিয়ে সমাজ বা লোকলজ্জার ভয় ছিল। অনেকেই তাদের গ্রহণ করতে চাইতো না। কিন্তু আজ এই ২০১০-এ? এখনো কি তাদের জন্য লোকলজ্জার ভয় আছে? সমাজ তাদের ত্যাগ করবে এরকম ভয় আছে? সত্যি আমরা এ ধরণের একটা পরিস্থিতি মেনে নেব? যদি আজো আমরা ভাবি যে তাদের প্রতি ৭১-এ যে অপরাধ করা হয়েছে, সেটা আসলে তাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার, তাহলে আমি বলতে চাই এটা বীরাঙ্গনাদের লজ্জা নয়, এটা আমাদের লজ্জা!

ওই সময়ে অনেক যুদ্ধশিশুকে অনেক বিদেশীরা দত্তক নিয়ে গিয়েছিলেন। অনেকে হয়তো গোপন আতুরঘরে জন্মেছে, যারা প্রকাশ্যে নিজের বাবার পরিচয় দিতে পারে না, বা হয়তো জানেও না কে তার বাবা? আবার অনেকেই হয়তো নিজের সত্যিকারের মাকে একনজর দেখারও সুযোগ পায়নি আজ পর্যন্ত।

আজতক আমরা কেবল যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধীদের বিচার চাইছি, সেখানেও অনেক গড়িমসি, ঢিলেমী দেখা যাচ্ছে। আবার পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার তেমন কোন উদ্যোগও দেখছি না। তারপরেও বলি শেষ পর্যন্ত যদি বিচার সংগঠিত হয়ও কেবল কিছু লোকের বড় জোর ফাঁসি হতে পারে। তাতে করে কিছু মানসিক সান্তনা ছাড়া আর কি কিছু হবে?

তাই সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ এসব বীরাঙ্গনাদের ও যুদ্ধশিশুদের নিয়ে সত্যিকারের কিছু করুন। তাদের ত্যাগের স্বীকৃতি কেবল একটা উপাধি দিয়ে নয়, আরো কিছু করার মাধ্যমে দিন। তাদের তালিকা তৈরী করে বিভিন্ন সরকারী সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনুন। তাদের সন্তানদের জন্যও লেখাপড়া ও চাকুরী কোটার ব্যবস্থা নিন। জোর প্রচারণা চালান বীরাঙ্গনাদের সম্মানের পক্ষে যাতে করে কেউ তাদের ন্যূনতম অসম্মান করার সাহস না দেখাতে পারে, বা ভিটেছাড়া করতে না পারে।

এছাড়া দেশে-বিদেশে যেখানেই যুদ্ধশিশুরা আছে, একটা জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সকল বীরাঙ্গনাদের সাথে তাদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হোক। সবাইকে অন্তত একবারের জন্য এদেশে আসুক। যে দেশের জন্মের সাথে তাদের জন্ম জড়িয়ে আছে, যে দেশের জন্য ঐসব শিশু তাদের আসল মায়ের বুকে থাকতে পারেনি, যারা তাদের আসল পিতার পরিচয় জানে না, যাদের আমরা এদেশে এতোটুকু ঠাই দিতে পারিনি, তাদেরকে অন্তত একবার তাদের মায়ের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ করে দিন। হয়তো আজ এতো বছর পর অনেক শিশুই তাদের আসল মাকে খুঁজে পাবে না বা একে অপরকে চিনবে না, তবুও অন্য আরো অনেক বীরাঙ্গনা মায়েদের মুখ দেখে নিজের হতভাগী মায়ের মুখ তো তারা কল্পনা করে নিতে পারবে, এতেই বা কম কি!



সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৮:০৩
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×