somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেমের ট্রেনে ইঁদুরের স্পার্ম

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুরুষ কাঠ ইঁদুরের বাবা হওয়া নিয়ে প্রকৃতি এক অভিনব কৌশল প্রণয়ন করেছে। এদের হাজার হাজার স্পার্ম মাথা ও লেজ বরাবর লাইন ধরে একটি দীর্ঘ এক্সপ্রেস ট্রেনের মতো আকৃতি তৈরি করে। এতে করে একাকী কোনো সাঁতারুর চেয়ে অনেক আগেই ট্রেনটি তার যাত্রীদের নিয়ে একটি ডিমের কাছে পৌঁছাতে পারে। সি ফিল্ড ইউনিভার্সিটির জীববিদ হ্যারি মুর সর্বপ্রথম বিষয়টি প্রত্যক্ষ করার পর নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কেননা বিগত ৩০ বছর ধরে বিভিন্ন প্রাণীর স্পার্ম নিয়ে তিনি একনাগাড়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তার ধারণা, একটি শুক্র কোষকে নিশ্চিত সাফল্যের দ্বারে পৌঁছে দিতে এবং অন্যদের আত্মত্যাগের মহান ব্রত অবলম্বনের মধ্য দিয়ে শুক্র কোষের এমন বিচিত্র বিবর্তন ঘটেছে।
অন্য প্রাণীগুলোর তুলনায় কাঠ ইঁদুর (Apodemus sylvaticus) খুবই উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করে। তাই চাহিদা অনুযায়ী শুক্র উৎপাদনের জন্য শরীরের অনুপাতের চেয়ে বড় আকৃতির শুক্র থলির অধিকারী এরা। এমন বৈশিষ্ট্য কেবল সন্তান জন্মদানে খুব বেশি প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয় এমন প্রাণীদের মধ্যেই দেখা যায়। এদের শুক্র থলির আয়তন শরীরের অনুপাতের চার শতাংশ, যা সত্যিকার অর্থে খুবই বড়। মনে করা হয়, এসব ইঁদুরের অন্যান্য তৎসংশ্লিষ্ট বৈশিষ্ট্য ও তাদের উত্তরণ পুরুষ ইঁদুরের মতো স্ত্রী ইঁদুরের দেহে সার্থকভাবে ডিম্বকে নিষিক্ত করার জন্য অভিযোজিত হয়েছে।
মুর এবং তার সহকর্মীরা মাইক্রোস্কোপের নিচে দেখেছেন এ প্রজাতির ইঁদুরের শুক্র কোষগুলো হুক আকৃতির; যা তাদের মাথা ও লেজ বরাবর বীর্য থলি থেকে নিক্ষেপের কয়েক মিনিটের মাথায় ৫০ থেকে ২ হাজারটি শুক্র কোষকে পরস্পর সংযুক্ত হয়ে লম্বা ট্রেন গঠন করতে সাহায্য করে থাকে। এ ধরনের বৃহৎ চেইন খালি চোখেই দেখতে পাওয়া সম্ভব। শুক্র কোষের এ রকম একটি ট্রেন একাকী ভ্রমণশীল যে কোনো বীর্য কোষের চেয়ে ৫০ গুণ অধিক বেগে ডিম্বর দিকে ধেয়ে যেতে সক্ষম। আর জরায়ুর ঘন রসের মধ্য দিয়ে অতি সুচতুরভাবে চালিতও হতে পারে এরা। শুধু কাঠ ইঁদুর কেন, পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেও শুক্রের বৈচিত্র্যময় সব অভিযোজন লক্ষ্য করা গেছে। শিশুকালে মায়ের বিশেষ থলিতে বেড়ে ওঠা মারসুপিয়ালদের শুক্র কোষ পাশাপাশি জোড় গঠন করে তাদের সাঁতারের দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
গিনিপিগের শুক্র কতোগুলো গুচ্ছাকারে পুঁটলি বাঁধে, যদিও এতে করে তারা চক্রাকারে ঘোরে ও বংশ বৃদ্ধির কাজে তেমন একটা সুবিধা ভোগ করতে পারে না। অপরদিকে মানুষের শুক্র কোষকে দেখা যায় সামনের কোনো চলমান শুক্র কোষকে অনুসরণ করতে। ঠিক ঝানু সাইক্লিস্ট যেমন সামনের জনের বায়ু স্রোতের মধ্যে আশ্রয় নিয়ে করে নিজের গতি ধরে রাখে, মানুষের শুক্র কোষগুলোকেও সেই একই কৌশল গ্রহণ করতে দেখা যায়। বংশ বিস্তারের খাতিরে প্রাণীজগতে শুক্র কোষের বৈচিত্র্যময় অভিযোজনের ভূরি ভূরি উদাহরণ বিদ্যমান। ট্রেনে করে পর্বতের চূড়ায় আরোহনের এই প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের পরস্পরের সহযোগিতার বিষয়টি এতোদিন বিরল হলেও কাঠ ইঁদুরের শুক্র কোষে এমনতরো বিরল সহযোগিতার বাস্তব প্রমাণ মিলেছে। কাঠ ইঁদুরের একই প্রকার জেনেটিক্স যোগ্যতাসম্পন্ন শুক্র কোষগুলো পরস্পর পরস্পরের প্রতিযোগী হওয়া সত্ত্বেও অপর প্রতিযোগীকে একই প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেতে সহায়তা করে থাকে। স্ত্রী ইঁদুরের জরায়ুর বন্ধুর পথ পাড়ি দেয়ার সময় এদের নির্দিষ্ট সংখ্যক শুক্র কোষ মিলে ট্রেন গঠন করে। আর ট্রেন গঠন করার এক ঘণ্টা পর অর্ধেক সংখ্যক শুক্র কোষে অকালিক বিক্রিয়ায় অ্যাক্রোজম নিঃসরণ ঘটে।
এ অ্যাক্রোজম ডিম্বের আবরণের ক্ষয় সাধন করে শুক্র কোষকে ডিম্বের ভেতর প্রবেশ করতে সহায়তা করে। উপরন্তু অ্যাক্রোজমের কারণে সম্মিলিত বীর্যকোষ ট্রেনের বগিগুলো আলাদা হয়ে যায়, তথা ট্রেনে ভাঙন ধরে এবং এ প্রক্রিয়ায় কিছু স্পার্ম স্থায়ীভাবে নিষেধের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু সুস্থ সামর্থ্য অন্য বীর্য কোষগুলো ডিম্বর কাছাকাছি আসার পর পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে নিজেদের মধ্যে আবার প্রতিযোগিতা শুরু করে। ডিম্ব নিষিক্ত করতে সুন্দর সুযোগ গ্রহণ করে আবার এ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় তারা। এভাবেই কাঠ ইঁদুরের অধিক বংশ বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে প্রকৃতি। বর্তমানে মুর কাঠ ইঁদুরের এ বীর্যের ট্রেনের সুবিধাজনক দৈর্ঘ্যরে পরিমাপসহ ট্রেন গঠনে পূর্ব নির্ধারিত সব প্রভাবককে খুঁজে বের করা ও দীর্ঘ হতে দীর্ঘতর শুক্র কোষের ট্রেন গঠনে ভূমিকা রাখতে সক্ষম- এমন ফ্যাক্টরকে চিহ্নিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে দেন।
নিউ সায়েন্টিস্ট অবলম্বনে
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১২:১৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×