'বিজয়' শব্দ টি আমাদের -বিজয় আমাদের নয়
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
কবি নান্দীপাঠে প্রায়ই যান না
প্রেমের চেয়ে বিরহের অধিক অনুরাগী
কবি ঘুমান না এবঙ জেগে থাকেন
এসব প্রচলিত নানাবিধ কথার হামাগুড়ি...
নান্দীপাঠ কবির ধর্ম নয়
অঘুম ও বিরহ সমগোত্রীয় আত্মচাষক্ষেত্র...
তবে একটি শব্দ - একটি মহাশব্দ
কবি যার নান্দীপাঠ করেন; প্রেমে আপ্লুত হন
সেই মহাশব্দ! 'বিজয়' !
কবি দীর্ঘ লিখতে পারেন যার 'উচ্চারণগুলি শোকের' হয়,
কবি বিজয়কে ভাবতে পারেন 'যেমন ইচ্ছে লেখা কবিতার খাতা' !
কবি এখানে ঈশ্বর
কবি এখানে সম্রাট
কবি এখানে স্থপতি
কবি এখানে নির্মানশ্রমিক
কবিতার শব্দে শব্দে গেঁথে দিতে পারেন বায়ান্ন,বাষট্টি, ছেষট্টি, ঊনসত্তর, সত্তর । তারপর একাত্তর।
এইতো আমাদের একটু একটু করে বিজয়ের কাছে যাওয়া
এইতো আমাদের চেতনার অগ্নিপ্রকাশ; দেশপ্রেমের জ্বলন্ত মশাল।
বিজয় মানে মুক্তি।
ভাষার অধিকার আদায়কারী অকুতোভয় বাঙালির দ্বিধাহীন সংগ্রামের সন্তান।
ছেষট্টির মঞ্চ কাঁপানো হাতে অবিরাম গর্জে যাওয়া রাইফেল
নিশ্চিহ্ণ করে গেছে হায়েনার পর হায়েনা...
তারপর নতুন সূর্য উঠে দেখে
রাইফেল ট আর গর্জন করছে না - আর কখনো করবে না।
এই তো আমাদের বিজয়।
এইতো সেই প্রাণের সম্মিলন।দৃপ্ত অগ্নিশপথ।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে আসা
হাজার হাজার খিজিরের আকাশ-মিছিল ওসমানদের শেকল ভাঙার গানে গানে
মিশে যায় রুমি জামী দের তারুণ্যে; সারি সারি মুর্দা ফকিরে...
শহরের চৌকাঠ পেরিয়ে মফস্বলের রাস্তায়
গ্রামের কচি ধানখেতের আইল ধরে ছুটে যায়
যে গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিলো।সামনে ধানখেত ।লাউয়ের মাচা।
যেখানে কচি লাউ ঝুলতো।তারপরে আরেকটা গ্রাম।দাউ দাউ আগুন জ্বলতো।
যেখানে ইটের দেয়াল আর মনের দেয়ালে জমে উঠতো ঘৃণা আর ভালোবাসার দাগ।
সে সময় পদ্মা যমুনায় কেবল জল বইত না।
রক্ত বইত। লাশ বইত। জাগরণের সুর আর দেশপ্রেমের জোয়ার বইত।
তারপর একদিন
রক্তের স্রোতে গা ভিজিয়ে, প্রতিটা লাশ ছুঁয়ে ছুঁয়ে আসে বিজয়ের কিশতি।
দামাল মুক্তি মাতাল ছেলের দল সেদিন লাল সবুজ হাতে গৌরবের হিমালয়।
সেই থেকে 'বিজয়' শব্দটি আমাদের।
কবি কেঁপে উঠেন।
শব্দের গভীরে লাভার মত চেতনার অগ্নিময়তায় কবি বিমোহিত
আজো কি অদ্ভুত শিহরণ তোলে রুধির ধারায়!
কবি সন্ধান করেন।মেলে না।আরো সন্ধান করেন।অবশেষে মেলে।
কবি আতংকে চিৎকার করে উঠেন।এই জবুথবু অবয়ব!
এ যে বিজয় নয়! এ তো সেই বাঁধভাঙা মিছিল হতে পারে না!
লেবেল আঁটা বিজয়ে খোঁজ মেলে না আত্মত্যাগের উচ্ছ্বাস!
কবি আরো নেমে যান শব্দের গভীরে।কেবল শুন্যতা!
এই কি সেই বিজয়? বিজয় কোথায়?
কালো পিচে ছায়া ফেলা ক্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধার ভিক্ষার হাতে,
যা একটু পরেই হয়তো কোনো যুদ্ধাপরাধীর মার্সিডিজে পিষ্ট হয়ে যাবে?
বিজয় কি মেডিকেল কলেজের বারান্দায় মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত মুক্তিযোদ্ধার জমাট বেঁধে থাকা বাঁচার আকুতি?
এরাই কি সেই উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে আসে বীর সন্তান?
কবি কুঁকড়ে যান লজ্জায়।
কবির সামনে জরাজীর্ণ বিজয় ফুটে উঠে।
কবি দেখতে পান একটি কষ্টাকীর্ণ মায়ের মুখ
আটকে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সে আত্ম ও আত্মজের প্রাণের বিনিময়ে যে পার করেছে রাষ্ট্রকর্তার গাড়িবহর!
মিছিল করে যায় ক্ষুধা আর শীতে প্রাণ হারানো ফুটপাথের বাসিন্দা রা!
কেঁপে উঠে দৃশ্যপট ধর্ষিতা সদ্যকিশোরীর চিৎকারে!
কবি চিৎকার করে উঠেন, না। এ বিজয় নয়।
এই রুগ্ন বাঙলা মায়ের মুখ , স্বার্থবাদী নেতৃত্বের দূর্নীতির খতিয়ান
যুদ্ধাপরাধীর স্পর্শে কলংকিত সংসদ, বিলাসবহুল বাথরুম বেডরুম
ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে হায়েনার চিৎকার, রক্তভেজা মেধাবীর লেখার খাতা
সাম্প্রদায়িকতার দূষিত মেঘ, মধ্যযুগীয় বর্বরের গ্রেনেড মাতম
পুঁজিবাদ আর শোষনের যাঁতাকল, হরতাল, ত্রাস...
এর কিছুই তো বিজয় নয়!
কবি নির্বাক হয়ে যান।নিষ্প্রভ হয়ে যান।বোধশুন্য হয়ে যান।
তবে কি কেবল 'বিজয়' শব্দ টি আমাদের -বিজয় আমাদের নয়?
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি
মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন
=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=
০১।
=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।
পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।
জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সমস্যা মিয়ার সমস্যা
সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।
তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন