somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংবাদিকতায় পোশাকের মূল্য

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় পড়া শেখ সাদীর সেই গল্পটি নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। সাধারণ পোশাকে মূল্যায়ন পাননি তিনি, পরে পোশাক বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় মূল্যায়নের ধরন। আরব মুলুকের সেই গল্প, পানি-ঘাসের বাংলাদেশে এসে অকেজো হয়ে গেছে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। কেবল পোশাক পরিবর্তনের কারণে আপ্যায়নের ধরন পরিবর্তন হওয়ার সেই পরিস্থিতি এখনো বহাল আছে। এ সম্পর্কে জাতির মনোভাব বোঝাতে বাংলা ভাষায় একটি প্রবাদই যথেষ্ট, তা হলো, আগে দর্শনদারি তারপর গুণবিচারি। এই দর্শনদারি শব্দে কেবল চেহারা বা ফিগার বা আবেদনের উপস্থিতি বিবেচনা করা হয়, তা বোধহয় ঠিক নয়। এই শব্দে পোশাকও একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ বলেই মনে করা হয়। কারণ পোশাকের গড়ন, রং নানাভাবে প্রভাব ফেলে ব্যক্তিত্ব নির্ধারণে। তাই বয়সভেদে এ দেশে পোশাকের রং বা নকশার পরিবর্তন হয়। তা হয় দুনিয়াজুড়েই। গত ঈদে বিবিসি বাংলা সার্ভিসের একটি প্রতিবেদন এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পঞ্চাশোর্ধ্ব নাগরিকেরা ঈদের কেনাকাটায় রঙিন কাপড়ের দিকে ঝুঁকছেন। অথচ, এর আগে সাধারণত মনে করা হতো, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাপড়ের দুনিয়া ধূসর হতে থাকবে। যা হোক, ে আরাম পাওয়া যাচ্ছে না, এমন পোশাকে বিব্রত থাকলে তথ্য সংগ্রহ এবং তা থেকে সংবাদ বের করে আনার কাজটিই ব্যাহত হবে। ধরা যাক গরমের দিনে কোনো জনসভার সংবাদ সংগ্রহ করতে হবে, সেটি হচ্ছে খোলা মাঠে। সেখানে ভারী পোশাকে যাওয়া শুধু বেমানানই নয়, কাজেরও ক্ষতি হবে। যা হোক, পত্রিকা ও স¤প্রচারমাধ্যমের একটি অংশ অর্থাৎ রেডিওতে ড্রেসকোডের কড়াকড়ি তেমন একটা না করলেও চলে। কিন্তু টেলিভিশনের রঙিন ভুবনে, পোশাকের নিয়ম না মানার কোনো উপায় নেই। তা মানতে হয়, মাঠে কাজ করা সাংবাদিককে, কিংবা এসিতে বসা সংবাদ উপস্থাপককে। সংবাদ উপস্থাপককে অবশ্য মেকআপ আর আলো-আঁধারের এক জগতে রাখা হয়। সে সুযোগ আধুনিক স্টুডিওতে থাকে। তাদের ড্রেসকোড মানা না-মানার বিষয়টি দুনিয়াজুড়েই মানা হয় কড়ায়-গন্ডায়। এমনকি আল-জাজিরাতে ড্রেসবিষয়ক জটিলতায় পাঁচজন সংবাদ উপস্থাপিকা চাকরি ছেড়েছেন বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে অবশ্য সংবাদ উপস্থাপিকাদের সাধারণত শাড়ি আর উপস্থাপকদের স্যুটেড-বুটেড দেখা যায়। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে পরিবর্তন হয় শাড়ির রং। উৎসবে তা অধিক ঝলমলে, আর শোকে হয় কালো। রমজানে কোনো কোনো চ্যানেলে ঘোমটা মাথায় ওঠে উপস্থাপিকার। সংবাদ উপস্থাপকেরা কোনো কোনো চ্যানেলে শুধু শার্ট আর এর সঙ্গে মানানসই টাই বেঁধেই বসে যেতে পারেন হট চেয়ারে। আর ঘটনার ওপর নির্ভর করে বদলায় স্যুট, আসে পাঞ্জাবি। বদলায় পাঞ্জাবির রংও। ঈদে রঙিন পাঞ্জাবি, শোকে কালো, মে দিবসে হয়তো লাল, বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে লাল-সবুজ আর পয়লা বৈশাখে লাল কিংবা সাদা অথবা এই দুয়ের মিশেল, দারুণ মানানসই পোশাক। সংবাদ উপস্থাপক ছাড়াও সাংবাদিকেরাও এই দিনগুলোতে পাঞ্জাবি পরেন। বেছে নেন ওপরের রংগুলো। সংবাদ উপস্থাপকদের ধুলোবালিতে যেতে হয় না বলে, আনুষ্ঠানিক বা ফরমাল পোশাকে তারা থাকেন। অবশ্য সাংবাদিকদের যারা ভিভিআইপি, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংবাদ সংগ্রহ করেন তাদের আনুষ্ঠানিক পোশাকে থাকতে হয়। একই নিয়ম মানেন সচিবালয়ের সংবাদ সংগ্রহকারীরাও। কিন্তু, হাট-ঘাটে কিংবা মিছিলের সংবাদ সংগ্রহে? টি-শার্ট? এ নিয়ে বিতর্ক আছে। বাংলাদেশের তারকা সাংবাদিকদের অনেকেই ঢাকার বাইরের প্রতিবেদনে পিটিসি দিয়েছেন টি-শার্ট গায়ে চাপিয়ে। আবার অনেকেই এটি অপছন্দ করেছেন, তারা বেছে নিয়েছেন শার্ট। সাংবাদিকদের ড্রেস কোড কেমন হবে? তা নিয়েও নানা মত আছে। একটি করপোরেট অফিসের মতোই গণমাধ্যমের অফিসে ফরমাল পোশাক হবে, এমনটি কেউ কেউ মনে করেন। সে ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন থেকে অধস্তন, সবাইকেই শার্ট, প্যান্টে গুঁজে আসতে হয় অফিসে। এক হিসেবে এই প্রথা ভালো। এতে সব কর্মীর মধ্যে একধরনের দূরত্ব কমে। আবার যদি স¤প্রচার, প্রধান বিবেচনার বিষয় হয় তবে শুধু সাংবাদিক ছাড়া বাকিদের ড্রেস কোডের আওতায় আনার কোনো মানে থাকে না। কেননা টিভিতে সাংবাদিকদের দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে রঙের মৌলিক নিয়ম মেনে এক রঙের ফুল স্লিভ বা ফুলহাতা শার্টই আদর্শ। সাদা বা চেক শার্ট উৎসাহিত করা হয় না। কারণ সাদা ছবি জ্বালিয়ে দেয়, আর চেক ছবিকে হিজিবিজি করে তোলে। তবে ক্যামেরাম্যানের দক্ষতায় সাদা রঙেও একজন সাংবাদিকের ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলা যায় পর্দায়। খুব বেশি ঘন না হলে লম্বালম্বি চেক শার্টও চলে। এতটা নমনীয় হলে সব ধরনের ফুল স্লিভ শার্টই ড্রেসকোডের আওতায় চলে আসে। তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হয়, শোক বা দুর্ঘটনার সংবাদ, লাল শার্ট গায়ে কখনোই নয়। এ নিয়ম মানা হলে, সাংবাদিককে পোশাক পছন্দ করতে হবে পরিবেশ বুঝে। এ বিষয়ে কোডে বিস্তারিত নির্দেশনা থাকা উচিত। মজার ব্যাপার হলো, কিছু কিছু চ্যানেলে ড্রেসকোড মানা হয়। তা লঙ্ঘনের দায়ে কোনো কোনো সাংবাদিক কথাও শোনেন। কিন্তু সেসব চ্যানেলে পোশাকের কোনো লিখিত নিয়ম বা ড্রেসকোড বা লিখিত বিধি খুঁজে পাওয়া যায় না। যা হোক, অফিসে ড্রেসকোড থাকুক বা না থাকুক, একজন সাংবাদিককে অবশ্যই চৌকস থাকতে হয় সব সময়। কারণ সেই সাংবাদিক তার প্রতিষ্ঠানের দূত হিসেবে কাজ করেন। তাকে মেপে, প্রাথমিকভাবে তার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা নেন সংবাদের উৎসরা। তারা মন্ত্রী হতে পারেন, সচিব হতে পারেন, ব্যবসায়ী হতে পারেন, নেতা বা অভিনেতা হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ছেলেদের জুতো পরিষ্কার, কোমরের বেল্ট সুন্দর হতে হয়। কারণ এই দুটি অনুষঙ্গ ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে। অবশ্য, কানে কানে তরুণ সাংবাদিকদের বলে রাখা ভালো, গবেষণা অনুযায়ী মেয়েরা ছেলেদের পোশাক খেয়াল করতে গিয়েও দুটিই দেখে প্রথমে। পোশাক কাউকে আপন করে, করে পরও। পোশাক কাছে আনে, দূরেও ঠেলে দেয়। আইনজীবীরা সাধারণত সাদা শার্ট আর কালো স্যুট পরেন। ল রিপোর্টারদের কি তবে সাদা শার্টই পছন্দ করা উচিত? এ নিয়ে বিতর্ক আছে। সিনিয়র নেতারা সাদা পাঞ্জাবি পরেন, তাদের কাছে যেতে কি সাদা পাঞ্জাবি বেছে নিতে হবে? এসব প্রশ্নের জবাবে বেশি সুবিধা পাবেন পত্রিকা ও রেডিওর সাংবাদিকেরা। কারণ একই পোশাকের দুজন মানুষ ভাব বিনিময়ে যতটা সহজ হবেন, লুঙ্গি ফতোয়ায় একজন মানুষ স্যুটেড ব্যুটেডের সঙ্গে ততটা সহজ না-ও হতে পারেন। তবে সোর্সের সঙ্গে সম্পর্কের আন্তরিকতা অবশ্য ড্রেসকোডকে ধূসর করে দিতে পারে। ধরা যাক একজন সচিব ‘ক’ নামের একজন সাংবাদিককে খুবই পছন্দ করেন। সে ক্ষেত্রে তিনি সেই সাংবাদিকের ড্রেস আমলে নেবেন না। সেই সাংবাদিকের উপস্থিতিই তার জন্য আনন্দের। তবে এমন আস্থার একটি সম্পর্ক গড়তে হলে, শুরুতে পোশাকে প্রতিফলন হতে হবে সাংবাদিকের রুচিবোধের। কারণ? সেই পুরোনো কথা, আগে দর্শনদারি...
পাদটীকাঃআমাদের লেডি সাংবাদিকদের পোশাক নিয়ে এই প্রবন্ধে কিছু বলা হয়নি।
@ আনোয়ার সাদী
মিডিওয়াচে প্রকাশিত
Click This Link
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×