somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেদিনও বসন্ত ছিলো (১৪)

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্ব প্রকাশিতের পর

কম্পাসের ফোন পাবার পর থেকেই অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করেছে মুসকানের জীবন। তার কৌশল কাজে লেগেছে। তীর নিশানা পে লাগ্ চুঁকা। মাঝের কয়েকদিন তার মনের উপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে, আপাতত সেই ঝড় থেমেছে। এখন হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে বিধ্বস্থ হয়ে যাওয়া মনের ঘরটি পুনঃনির্মাণের পালা।

এই মুহুর্তে কম্পাস ও মুসকান বসে আছে মুখোমুখি।
ছিমছাম রেস্টুরেন্ট। মধ্যদুপুরের গ্যাদারিং শেষ হয়ে যাওয়াতে রেষ্টুরেন্ট প্রায় পুরোটাই ফাঁকা। মুসকান আজ পরেছে টুকটুকে লাল শাড়ি। লাল ব্লাউজ। পায়েও পরেছে লাল রঙয়ের সেমি হিল জুতা। অতিরিক্ত ফর্সা মেয়েদের লাল শাড়িতে মানায় না। মুসকানকে মানিয়েছে। মনে হচ্ছে লাল ছাড়া অন্য কোনো রঙয়ের শাড়ি পরলে তাকে বেমানান লাগতো।

দীর্ঘক্ষণ নিরবে বসে থাকলো দু’জন। কেউ কোনো কথা বলছে না। এর মাঝে ওয়েটার এসে দু’টো কোক দিয়ে গেছে। কোক দু’টো দাঁড়িয়ে আছে টেবিলের উপর। তাদের দিকেও কেউ খেয়াল করছে না।
প্রথমে কথা বললো মুসকান-

‘আমরা বোধয় কোক খেতে পারি। বেশ আগে দিয়ে গেছে। সম্ভবত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে!

মুসকানের এই হালকা রসিকতা গায়ে না মেখে কম্পাস বললো-
‘দেখো মুসকান, ‘আই লাভ য়্যূ’ টাইপ সস্তা আবেগী সংলাপ বলে বলে বাদাম খেয়ে বেড়ানোর উপযুক্ত সময় হচ্ছে ইন্টারমিডিয়েট ফাষ্ট ইয়ার। সেই সময় আমরা দু’জনেই অতিক্রম করে এসেছি। এছাড়া গতানুগতিক প্রেমের সংজ্ঞার সাথেও আমি একমত নই। আমি মনে করি প্রেম জৈবিক চাহিদার নিরব ভূমিকা। তেতুল গাছের নিচে গিয়ে বসে থাকা। মুখে তেতুল দেয়া হবে না কিন্তু জিবে পানি টলটল করবে।

দেখো, অনেকে বলে, প্রেমের সাথে শারীরিক সম্পর্কের কোনো যোগসূত্র নেই। প্রেম হয় মনের সাথে মনের। এটা নির্ভেজাল মিথ্যে কথা। আমি হলফ করে বলতে পারি প্রকৃতি যদি বিশেষ কোনো ব্যবস্থায় কোনো ছেলে বা মেয়েকে তার (বিশেষ) শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, তাহলে সাথে সাথেই তার প্রেমিক বা প্রেমিকার মন থেকে সকল প্রেম মিলিয়ে যাবে। কলাগাছের সাথে প্রেম করে ঘর বাধার স্বপ্ন কেউ দেখে না। সুতরাং প্রেম মানেই বিয়ে এবং...

সুতরাং আমার মনে হয় আমরা সরাসরি মূল পয়েন্টে চলে আসতে পারি।’
মুসকান কিছুটা কৌতূহল নিয়ে তাকালো কম্পাসের দিকে। কম্পাস বললো,

‘দেখো মুসকান, আমি অতি সাধারণ একটি ছেলে। আমার জীবনে কোনো রসকস নেই। কাউকে দেবার মতও তেমন কিছু নেই আমার। আমি আমার জীবনকে নিয়ে একটু অন্যভাবে ভেবেছিলাম। আমার ভাবনার সেই জগৎটাকে সাজানোর জন্য আমাকে একা থাকা দরকার ছিল। মধ্যখানে তুমি এসে যুক্ত হলে। বুঝতে পারছো আমি কী বলতে চাইছি?’

মুখে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে তুলে মুসকান মাথা নাড়লো উপর-নিচে, সে বুঝতে পারছে।

কম্পাস বললো, ‘কথাটাকে তুমি হালকাভাবে নিচ্ছ মুসকান। Please take it Seriously.

মুসকানের আবারও হাসি এসে গিয়েছিল। বহু কষ্টে হাসি কন্ট্রোল করলো। চেহারায় যথাসম্ভব সিরিয়াস ভাব আনার চেষ্টা করে বললো-

‘শুনো কম্পাস। তোমার কী আছে আর কী নেই, সেটা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। আমাকে খুব কিছু দিতে হবে, সেটা তোমাকে কে বলেছে? আমি তোমার কাছ কখনো কিছু চাইবো না। এমন কি সুখও না। সুখ আমি নিজেই খোঁজে নেব। আমি বিশ্বাস করি কেউ কাউকে সুখী করতে পারে না। সুখী হতে হয় নিজে থেকে। নিজের ইচ্ছায়, আত্মবিশ্বাসে, কর্মকান্ডে। আমি শুধু তোমার কাছে থাকার বৈধ অধিকারটুকু চাই। আর কিছু না। এর বেশি কিছু না।

তুমি বলেছ তুমি তোমার জীবনকে নিয়ে ভিন্নভাবে ভেবেছিলে। তোমার সেই ভাবনার জগতে আমি কখনো প্রবেশ করবো না। আমি শুধু কাছে থেকে দেখে যাব তোমাকে, নিরবে, নিঃশব্দে। তুমি থাকলে তোমার মত। তুমি তোমার কল্পনার এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে মাথা ঘামালে। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলাম তোমার মাথার পেছনে। কখনো এক মগ কফি এনে আলতো করে রেখে দিলাম তোমার সামনে। ধোঁয়াউড়া কফিতে চুমুক দিতে দিতে কাজ করলে তুমি। মন চাঙ্গা করে উদ্দমী গতিতে কাজ করতে পারলে। ভেবে দেখো, আমার কল্যাণে কিন্তু তুমি তোমার কাজেই আরো গতি পাবে।’

নিরবে শুনে যাচ্ছিলো কম্পাস। সে ভেবে পাচ্ছে না এই নাছোড় মেয়েটাকে কী করে বিদায় করবে তার জীবনে প্রবেশ করা থেকে। কম্পাস জানে মেয়েটির এই মোহ অতি সাময়িক। এই ঘোর একদিন, খুব তাড়াতাড়িই একদিন কেটে যাবে। তখন যে কেবল মেয়েটিই কষ্ট পাবে, তা না, মাঝখান থেকে তার জীবনটাও এলোমেলো করে দিয়ে যাবে।

কম্পাস বললো, ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা যে এখনই নিয়ে ফেলতে হবে, এমন তো কোনো কথা নেই। আরো কয়েকটা দিন ভেবে দেখলে কেমন হয়?’

মুসকান বললো, ‘এখানে এত ভাবাভাবির কী আছে?’

‘তবুও পুরো ব্যাপারটি আবার গোড়া থেকে চিন্তা করে দেখলে...’

‘শুনো কম্পাস, চিন্তা-ভাবনার কাজ আমি অনেক আগেই শেষ করে ফেলেছি। আমার ডিসিশান ফাইনাল। এবার তোমার যা বলার আছে-বলো। ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে বলার দরকার নাই। এক শব্দে বলবা- Yes অথবা No.

‘দেখো মুসকান, জীবনের সব প্রশ্নের জবাব হ্যাঁ অথবা না দিয়ে হয় না। একটু ভেবে চিন্তে....

কথা শেষ করতে না দিয়েই উঠে দাঁড়ালো মুসকান। ‘থাকো তুমি তোমার ভাবা-চিন্তা নিয়ে। আমি যাচ্ছি। তোমার সাথে আর কখনো দেখা হবে না। মাঝে কিছুদিন তোমাকে বিরক্ত করলাম। পারলে ক্ষমা করে দিও। তুমি বলেছো আমি তোমার মা’কে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছি বলে তুমি আমার প্রতি কৃতজ্ঞ। যে কোনো বিনিময়েই তুমি এই ঋণ শোধ করতে চাও।

শুনো, শুধু এই কারণে তুমি আমাকে বিয়ে করো-আমি সেটা চাইবো না। তুমি আজ থেকে নিজেকে মুক্ত ভাবতে পারো। তোমার মায়ের প্রয়োজনে আমি রক্ত দিয়েছি। আমি না দিলেও কেউ না কেউ দিত। এ নিয়ে তোমার সংকোচবোধ করার দরকার নেই। এটা আহামরি বড় কিছু না। আমি এটা ইচ্ছা করেই করেছিলাম। যাতে তুমি আমার কাছে আস। এখন ব্যাপারটা যদি দাঁড়ায় এমন যে, আমি তোমাকে ভালবাসছি আর তুমি চাইছো ঋণ শোধ করতে, তাহলে তো হবে না।

ভাল থেকো,’ বলেই কম্পাসকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই হনহন করে বেরিয়ে গেল মুসকান। তার চলে যাওয়ার দিকে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে চেয়ে রইলো কম্পাস।

... চলবে

২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালি নারীর কাছে

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০২ রা জুন, ২০২৪ রাত ১২:৪৬

পরনে আজানুলম্বিত চিকন সুতোর শাড়ি, সবুজ জমিনের পরতে পরতে কবিতারা জড়িয়ে আছে বিশুদ্ধ মাদকতা নিয়ে, গোধূলির আলোয় হেঁটে যায় নিজ্‌ঝুম শস্যক্ষেতের ঘাসপাঁপড়ির আল ধরে, অতিধীর সুরের লয়ে, সুনিপুণ ছন্দে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসেন ইক্টু ঘুরাঘুরি করি.... :-B

লিখেছেন সোহানী, ০২ রা জুন, ২০২৪ সকাল ৯:২৩

এক কসাইয়ের লাশ আরেক কসাই কিভাবে কিমা বানাইলো কিংবা কত বিলিয়ন ট্যাকা টুকা লইয়া সাবেক আইজি সাব ভাগছে ওইগুলা নিয়া মাথা গরম কইরা কুনু লাভ নাইরে... আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×