অস্থিরতা হ্রাসে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর মিশরের রাজনৈতিক সঙ্কট একটি আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসির প্রতিবাদরত সমর্থকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুঁশিয়ারি পুনরাবৃত্ত করেছে সেনা সমর্থিত অন্তর্বরর্তী সরকার।
Published : 08 Aug 2013, 01:22 PM
দুপক্ষই নিজ নিজ সমর্থকদের বৃহস্পতিবার রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
আগে থেকেই কায়রোর দুটো স্থানে অবস্থান নিয়ে মুরসির ক্ষমতাচ্যুতির বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছে মুরসির সমর্থকরা। নিরাপত্তা বাহিনীর সম্ভাব্য অভিযান ঠেকাতে প্রতিবাদ অবস্থানের চারদিকে বালির বস্তা ও ইটের ব্যারিকেড তৈরি করেছে তারা।
ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার প্রাক্কালে এক বার্তায় অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আদলি মানসুর পরিস্থিতিকে জটিল বলে বর্ণনা করেছেন। আগামী নয় মাসের মধ্যে নতুন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার বদ্ধপরিকর বলে তিনি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “ভবিষ্যতের ট্রেন চলতে শুরু করেছে, প্রত্যেকেরই এই মূহুর্তটি উপলব্ধি করা উচিত এবং ট্রেনটি ধরা উচিত, যারা মূহুর্তটির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হবে তাদের অবশ্যই ব্যর্থতার দায়ভার বহন করা উচিত।”
অন্তর্বর্তী সরকার ও মুসলিম ব্রাদারহুডের মধ্যে সমঝোতায় ব্যর্থ হয়ে দেশের পথ ধরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দূত উইলিয়াম বার্নস। সমঝোতার সম্ভবনা ক্ষীণ হয়ে আসলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত বার্নাদিনো লিওন সমঝোতার সম্ভবনা পুনরুজ্জীবিত হওয়ার আশায় কায়রো রয়ে গেছেন।
মিশরের এই পরিস্থিতিকে “ভয়াবহ অচলাবস্থা” হিসেবে বর্ণনা করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
সরকারের পদত্যাগের দাবীতে কয়েকদিনের ব্যাপক বিক্ষোভের সূত্র ধরে ৩ জুলাই মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে মিশরের সেনাবাহিনী। প্রেসিডেন্ট মুরসি ও মুসলিম ব্রাদারহুডের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করে আটক রাখা হয়।
কিন্তু মুরসিকে ক্ষমতায় পুনর্বহালের দাবীতে তার হাজার হাজার সমর্থক লাগাতার প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু করে। এসব নিয়ে সৃষ্ট সহিংসতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩শ’ মানুষ নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ২৭ জুলাই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত মুরসির ৮০ সমর্থকও আছেন।
সমঝোতার প্রচেষ্টা ভেঙে যাওয়ার জন্য বুধবার মুসলিম ব্রাদাহুডকে দায়ী করেছেন প্রেসিডেন্ট মানসুর। এর ফলে সম্ভাব্য যে কোনো সহিংসতার দায়ও ব্রাদারহুডকে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হাজেম এর বেবলাবি বলেছেন, মুরসির সমর্থকদের প্রতিবাদ শিবির ভেঙে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত এবং বিষয়টি নিয়ে সরকারের ধৈয্যও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
প্রতিবাদকারীরা সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে, রাস্তা অবরোধ করছে ও নাগরিকদের আটক করে রাখছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। হুঁশিয়ারি জানিয়ে তিনি বলেছেন, “পরবর্তী যে কোনো সহিংসতা চূড়ান্ত বল প্রয়োগ করে মোকাবিলা করা হবে।”
শিবির ত্যাগ করে প্রতিবাদকারীদের এখনই চলে যাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
এর প্রতিক্রিয়ায় মুসলিম ব্রাদারহুডের মুখপাত্র গেহাদ এল হাদ্দাদ বলেছেন, “এর মানে তারা আরো বড় গণহত্যার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আমাদের দিকে বুলেট না ছুড়ে তারা ভাল কোনো প্রস্তাব দিতে পারতো।”