somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীন বাংলাদেশ পরাধীন মুক্তিযোদ্ধা

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের দিনই খবরটা পৌঁছে যায় দিনাজপুর শহরে। সর্বত্র আতঙ্ক। ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরের মধ্যেই দিনাজপুর আক্রমণ। পাকিস্তানি বাহিনী একটা বিশেষ ট্রেনে চেপে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে রওনা দিয়েছে। এ খবর ভারতীয় সামরিক গোয়েন্দাদের মাধ্যমে পৌঁছে যায় পশ্চিম দিনাজপুর জেলার বরাহার মুক্তিযোদ্ধা অপারেশন ক্যাম্পে। খবরটা শুনে ছটফট করতে থাকেন মাসুম হাসান তোরাব আলী। তাঁর বাড়ি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানার বড় হাশিমপুর গ্রামে। পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় দিনাজপুরের হাজার হাজার নিরীহ বাঙালি মারা যাবে, এ উৎকণ্ঠা তোরাবের মনে ভর করে। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে যান। যে করেই হোক বাঁচাতে হবে নিজ এলাকার মানুষকে, স্বজন-বন্ধুদের।
তোরাব ক্যাম্পের কমান্ডার ডা. আমজাদ হোসেনের সামনে ঘুর ঘুর করতে থাকেন। কমান্ডার বুঝে যান তোরাবের মনোভাব। আর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয় অপারেশনের।
চিরিরবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে জগদীশপুর রেলসেতুটি উড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পড়ে তোরাবের ওপর। মাত্র ছয় সদস্যের মুক্তিবাহিনী নিয়ে অপারেশনে বেরিয়ে পড়েন তোরাব।
ভারতের বরাহার ক্যাম্প থেকে মেশিনগান, কয়েকটি রাইফেল নিয়ে বের হয় তোরাবের বাহিনী। আরও নেওয়া হয় স্থলমাইন। যে মাইনটি পোঁতা হবে ব্রিজের পাটাতনের (স্লিপার) নিচে। দীর্ঘ ৪০ মাইল পথ হেঁটে ছুটলেন তাঁরা।
২৯ সেপ্টেম্বর রাত তিনটার দিকে পৌঁছে যান সেতুর খুব কাছাকাছি। এর আগে দীর্ঘ ছয় ঘণ্টার পথ চলার ক্লান্তিতে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর শক্তিটুকু যেন ছিল না তাঁদের।
ক্লান্ত তোরাবের চোখে স্বপ্ন উঁকি দেয়, দেশটা স্বাধীন হয়েছে। আকাশের বুকে মানচিত্রখচিত লাল-সবুজ পতাকাটি উড়ছে পতপত করে।
দূরে ট্রেনের শব্দ শোনা যায়। সংবিত ফেরে তোরাবের। আর দেরি করা যায় না। তড়িঘড়ি কাপড়ের পুঁটলি থেকে বের করেন মাইনটি। এরপর ছয় যোদ্ধা ক্রলিং করে এগিয়ে যান সেতুর কাছে। তোরাবের হাতে মাইনটি। সব ঠিক, কেবল সেতুর পাটাতনের নিচে মাটি আলগা করে পোঁতা হবে সেই মাইন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বিকট শব্দে একটা বিস্ফোরণ ঘটে। আর কিছু মনে নেই তোরাবের! যখন জ্ঞান ফিরল তখন নিজেকে আবিষ্কার করলেন শিলিগুড়ির বাগডোকরা হাসপাতালে। সহযোদ্ধারা আহত তোরাবকে কাঁধে করে প্রথমে নিয়ে আসেন ক্যাম্পে। পরে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হয় হাসপাতালে। ডান হাতের কবজি পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হয়েছে, ডান চোখটিও নেই তাঁর। চিকিৎসকেরা আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। তবে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেনি। তোরাবকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় বোম্বের সামরিক হাসপাতাল ও পুনাতে। সেখানে কৃত্রিম চোখ লাগানো হয় তাঁর।
বাংলাদেশ স্বাধীন। তবু তোরাব ঘরে ফিরছেন না। তোরাবের বাবা গহির উদ্দিন ছেলের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। সুস্থ হয়ে তোরাব ১৯৭২ সালের ২৭ জানুয়ারি ঘরে ফেরেন। মুক্তিযোদ্ধার সেই রেলসেতু অপারেশন কিন্তু বৃথা যায়নি। পরে জেনেছিলেন, মাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় পাকিস্তানি বাহিনী ভড়কে যায়। আর সামনে এগোয়নি তারা। বিশেষ ট্রেনটি পুনরায় পাকিস্তানি বাহিনীর তিন শতাধিক সদস্যকে ফিরিয়ে নেয় পার্বতীপুর হয়ে সৈয়দপুর সেনানিবাসে। যে বীর মুক্তিযোদ্ধা জীবন বাজি রেখেছিলেন দিনাজপুরবাসীকে রক্ষার জন্য, তিনি নিজেই আজ অসহায়-পরাধীন!
মুক্তিযোদ্ধা তোরাবের সঙ্গে কথা বললে কেঁদেই ফেলেন তিনি। জানান, ভিটেমাটির ১২ শতক জমির ওপর নজর পড়েছে তাঁর বিমাতা ভাইদের। গ্রামের একটি দুষ্কৃতকারী চক্রের ষড়যন্ত্রে ভাইয়েরা এখন তাঁকে উচ্ছেদ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। চক্রটি একাত্তরের পরাজিত শক্তি। যাদের দোর্দণ্ড দাপট এখনো বড় হাশিমপুরে। বারবার হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে, যেন এখনই চলে যাই সহায়-সম্পত্তি সবকিছু ছেড়ে। রাতে দুষ্কৃতকারীরা বাড়ির সদর দরজার সামনে অস্ত্র হাতে ওত পেতে থাকে। গোটা পরিবার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। ছেলেমেয়েরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে ভয় পায়।
এসএসসি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা তোরাব প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। মেধাবী ওই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা কি শিক্ষার সুযোগ পাবে না? বড় আতঙ্কে আছে ওরা। স্বাধীনতার জন্য জীবনটাকে হাতের মুঠোয় নিয়েছিলেন তোরাব, অথচ তাঁর পরিবার আজ স্বাধীন দেশে বড্ড অসহায়। স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে নিয়ে তোরাবের পরিবার আজ নিরাপত্তাহীন।
যাঁর বীরত্বের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ হাতে লেখা চিঠি দিয়েছিলেন। সেই তোরাব কি স্বাধীন বাংলাদেশেও এতটা অসহায়ই হয়ে রইবেন?

এম আর আলম | তারিখ: ১৩-১২-২০১০
http://digitalvillagebd.blogspot.com
মুলসুত্র: Click This Link
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×