somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাহবু১৫৪
জীবনে সহজেই কোন কিছু পাবার আশা করাটা বোকামী। অনেক ঘাত প্রতিঘাত পার হয়েই আসতে হয় কাংক্ষিত লক্ষে। এই পথ এত সোজা নয়। অনেক ভুল ভ্রান্তি আছে সেই পথ চলায়। হয়তো আরো অনেক কোথিন হবে সামনের পথ টুকু। তারপর ও হার মেনে নেয়ার পক্ষে আমি নই। জয়ী যে আমাকে হতেই হবে।

একজন জাকির সাহেব

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাকির সাহেব সমাজের সম্মানিত ব্যাক্তি। প্রচুর টাকা পয়সার মালিক। সমাজে তাঁর অনেক নাম ধাম। তাঁকে চিনে না দেশে এমন লোক বিরল। মসজিদ, মাদ্রাসা সহ ২ টি হাসপাতাল ও করেছেন তিনি তাঁর গ্রামের বাড়িতে। এত কিছু করেও তিনি শান্তিতে নেই। তাঁর স্ত্রী বেঁচে নেই। ২ ছেলে থাকে বিদেশ এ। তারা বাবা কে পছন্দ করেন না। লোকমুখে শুনেছে যে বাবা একজন রাজাকার। তাই বাবার ছায়াও তারা মারাতে চায় না। দেশ এ তারা আসে না প্রায় ১৫ বছর।

এ নিয়ে দুঃখের শেষ নেই। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে তাই জাকির সাহেব বলেন যে তার এত টাকা পয়সা এসব কে দেখবে? কার জন্য তিনি এসব করেছেন?? অনেক চেষ্টা করেছেন ছেলেদের দেশ এ ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু পারেন নি। তাদের মা বেঁচে থাকলে হয়ত ছেলদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা যেত। এই ছেলদের জন্যই তিনি আর বিয়ে করেন নি।

ভিতরে ভিতরে জাকির সাহেব পুড়তে থাকেন এক অবিরাম জ্বালায় যা তাঁর ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাহিরে থেকে দেখলে সেটা বুঝা না গেলেও ভিতরে ভিতরে তার এমন ই অবস্থা। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আর চোখের পাতা এক করতে পারেন না। নানা রকম চিন্তা তাঁর মনে ভির করতে থাকে। এই অবিরাম চিন্তা চেতনা থেকে তিনি বের হয়ে আসতে পারেন না। বিবেকের দংশনে তিনি পুড়তে থাকেন। মাঝে মাঝে অঝড়ে কানতে থাকেন। মনে পরে যায় সেই সব দিনের কথা। ৭১ এর যুদ্ধের কথা।

সেই সব দিনের কথা মনে হলে তাঁর সারা গায়ে শিহরণ দিয়ে উঠে। এখন ও মনে পরে তিনি তখন ছিলেন টগবগে এর যুবক। চালাক চরুর হিসেবে সেই সময় থেকেই তার সুনাম ছিল। আর একটু দুষ্টু হওয়াতে তাকে সবাই একটূ এড়িয়ে চলত। যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন জাকির সাহেব ঢাকাদতেই ছিলেন। খুপড়ি ঘরে একা থাকতেন সে। পরিবারের সদস্য যারা ছিলেন তাদেরকে গ্রামের বাড়িতে রেখে তিনি চলে এসেছিলেন ঢাকা।

চারদিকে যখন তুমুল গোলাগুলি তখন কোথাও কোন আশ্রয় খুজে পাচ্ছিলেন না। ইচ্ছা ছিল মুক্তিযুদ্ধে সক্রীয় থাকা। দেশের জন্য কিছু করা তার সেই সময় লক্ষ্য ছিল। এর মাঝে তিনি একদিন পেয়ে গেলেন কিছু বন্ধু কে। যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও সেনাদের কাজে সহায়তা করে থাকে। বিনিময়ে প্রচুর রুপিয়া পায় তারা। এটা জাকির সাহেব এর মনে ধরেছিল। কারণ টাকা পয়সার অভাব ছিল আর তার সাথে খানা পিনার একটা ব্যবস্থা করাটা জরুরি ছিল।

তাই আর কিছু না ভেবে সে যোগ দিল এই দলের সাথে। কিন্তু যোগ দেয়ার পরই সে বুঝতে পারলেন কি ভুল সে করেছে্ন। এই দল টা আসলে ছিল পাকি সেনাদের সাহায্য করার জন্য গড়া এক দল। এই দলের মূল কাজ হল মুক্তিযোদ্ধাদের খুজে বের করে তা সেনাদের হাতে তুলে দেয়া, খোজ খবর রাখা ইত্যাদি। তারপর যা করার পাকিরাই করত। সামনে থেকে এমন দৃষ্য দেখে গা শিয়রে উঠত তার। জাকির এই সব কাজ আর করবে না বলে জানিয়ে দিল রাকাকার দের গড়া দল টাকে।

সেই সময় তাদের দলনেতা তাকে হুমকি দিল যদি সে তাদের দলে না থাকে তাহলে সে আর কোনদিন তার পরিবারের কাছে ফেরত যেতে পারবে না। এ কথায় জাকির সাহেব দ্বিমত করতে পারলেন না। নিজেকে সে আজো অপরাধী ভাবেন। সেই সময় এত কিছু ভাবার সময় ছিল না দেখে ভাল মন্দ বিচার করার তাঁর পক্ষে কঠিন ছিল। এভাবে করেই দিন চলছিল।

যুদ্ধ যখন মাঝ পথে তখনই ঘটল সেই ঘটনা। তাদের দলের যত সদস্য ছিল তারা বেশির ভাগ প্রাণ হারালো মুক্তি বাহিনীর হাতে। কোন মতে পালিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন জাকির আর তার ২ সদস্য। এরপর থেকে সেই দলের মূল নেতা হিসেবে ছিলেন জাকির সাহেব। নেতা হওয়াতে তাঁর মধ্যে এক পাশবিক চিন্তা ভর করেছিল। এর ফলে সে শুরু করেছিলেন খুন, ধর্ষন, লুটতোরাজ, মুক্তি বাহিনীর সদস্যদের বাড়ি বাড়ি আক্রমণ সহ যাবতীয় কাজ কারবার। আর এতেই পাক সেনাদের নজরে পড়ে গিয়েছজিলেন তিনি।

দেশ এক সময় স্বাধীন হল। আর সেই সময় কোন রকমে গা ঢাকা দিয়েছিলেন জাকির সাহেব। স্বাধীন হওয়ার প্রায় ১০ বছর পর তিনি সবার মাঝে ফিরে আসেন এক অন্য রূপে। এর মধ্যে তিনি নিজেকে পুতপবিত্র করে ফেলেছিলেন। ২ বার হজ্জ করে এসেছিলেন। স্বনামধন্ন ব্যাবসায়ী হিসেবে তিনি অল্প দিনেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। গরীব দের সেবা করার জন্য উনি ফ্রী ক্লিনীক করেছেন। এত সম্পদ আজ দেখার কেউ নেই। দীর্ঘশ্বাস ই আজ তাঁর একমাত্র অবলম্বন। যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন ই তাঁর বিবেক তাঁকে দংশন করতে থাকবে। মরে গেলেও যে তিনি সুখ পাবেন না এটা খুব ভাল মতই জানেন।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×