somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীনের আছর!! (আত্মজীবনী)

০৮ ই আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১//ভৌতিক বেপারটি যোদিও বিজ্ঞান সম্মত নয় তবুও ইস্লামে এর অস্তিত্ত রয়েচে। এমনকি একটি গবেষনায় দেখা গেছে বিশ্বের অধিকাংশ লোক অলৌকিকতায় বিশ্বাসী।

আমার জীবনে এমন কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে যার প্রভাবে আমি একেবারে মির্তুর কাছ থেকে ফিরে এসেছি। এটাকে সাধারনত জীনের আছর বলা হয়।

২০০০সালে আমার বয়স ছিল ৯বছর। তখন আমরা চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইন সংলগ্ন শান্তিবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতাম।

কোয়ার্টার স্বল্পতার কারনে সব পুলিশ সরকারী বাসা পেতনা, তাই পোস্টিং হওয়া বিভিন্ন জেলার পুলিশরা এই এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকত।

এখানে অনেক চাকমা পুলিশের পরিবার ছিল। আমি পুলিশ লাইন স্কুলে ক্লাস ফোর এ পড়ছিলাম তখন। আমাদের বাসা থেকে পুলিশ লাইন যেতে সাঁকো দিয়ে একটা নালা পার হয়ে ২০-৩০গজের এমন একটা জায়গা পার হতে হয় যেটা বুক সমান ছোটছোট জোপে-জঙ্গলে পুর্ন ছিল। এর মাজ দিয়ে সংক্ষেপে মানুষ হাটা-চলা করতে করতে একটা রাস্তার মত তৈরি হয়ে গিয়েছিল।

২//আমরা প্রতিদিন বিকেলে পুলিশ লাইন মাঠে খেলতে জেতাম। সেদিন কিচুক্ষন খেলার পর আমি ফ্লাগ পিলারের গোরায় বসে অন্যদের খেলা দেখছিলাম। কিছুক্ষন পর আমি দেখতে পেলাম মাঠের উপর আকাশে অনেক গুল চিল বিশৃঙ্খল ভাবে উড়াউড়ি করছে। আমি খেলা দেখা বাদ দিয়ে চিল গুলো দেখতে লাগলাম।

চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছিল। আস্তে আস্তে ছেলেরা খেলা শেষ করে চলে যাচ্ছিল। আমাদের এলাকার লিটন চাকমা নামের ১৭-১৮বছর বয়সের ছেলেটি আমার কাছে এসে বল্ল- কিরে বাসায় যাবিনা? আমি বল্লাম- না যাবনা, আপনি যান।

সে কি বুজল জানিনা, আমাকে এক প্রকার টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগল। তখন চিল গুল প্রচণ্ড চিৎকার করে মনে হচ্ছিল ছেলেটার উপর আছড়ে পড়ছে।

জঙ্গল জায়গাটার সামনে এসে আমি দেখতে পেলাম অনেক গুল সাধা পোশাক পরিহিত লোকের জমায়েত। তারা একে অপরের সাথে কলাকুলি করছে, মনে হচ্ছিল যেন তাদের আজ ঈদ। ছেলেটি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল।

অর্ধেক জঙ্গল পার হতেই আমি দেখতে পেলাম সাধা জুব্বা পরিহিত লম্বা সুশ্রী মণ্ডিত এক লোক দু-হাত বাড়িয়ে আমাকে কলাকুলির আহবান করছে। আমি সেদিকে দৌড় দিতে চাইলে ছেলেটি আমাকে জাপটে ধরে কাঁধে তুলে নিয়ে আসতে লাগলো।

জঙ্গল পার হয়ে নালার সামনে সাঁকোর গোড়ায় আসতেই স্বাভাবিক পোশাক অর্থাত পেন্ট-শার্ট পরা এক লোক ছেলেটিকে বল্ল- 'একে কাঁধে নিয়ে ভাঙ্গা সাঁকো কিভাবে পার হবে' লোকটি জঙ্গলের মাজখান দিয়ে ইশারা করে বল্ল 'ঐ দিক দিয়ে জাওয়ার ভাল রাস্তা আছে'. তখন ছেলেটি লোকটির মুখ লক্ষ করে এক দলা থুতু মারল। কিন্তু থুতু নালায় গিয়ে পড়ল, কারন লোকটি তাৎক্ষনিক অদৃশ্য হয়েগেল।

এরপর ছেলেটি আমাকে কাঁধে নিয়েই মাত্র একটি বাঁশের সাঁকোটি পার হয়ে আমাকে বাসায় দিয়ে গেল!

প্রচণ্ড জ্বর আসাতে আমাকে ঔষুধ খাইয়ে শুইয়ে রাখা হয়।

৩//আমি আর আমার মেজ ভাই এক খাটে শুতাম তখন। সেদিন রাতে আমি কি করেছিলাম আমি জানিনা। পরদিন শুনলাম যে, আমি মাজরাতে ভাইয়াকে লাথি-গুসি মারা শুরু করলাম।

বাসার সবাই আমাকে চেপে ধরে রাখতে চাইলে আমি আরো জোরে চিৎকার এবং হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছিলাম। এক পর্যায়ে আব্বু দোয়া-দুরুদ পড়েও আমাকে শান্ত কর্তে না পেরে তখনি মসজিদে গিয়ে হুজুর্কে নিয়ে আসলেন। হুজুর এসে দোয়া দুরুদ পড়ে আমাকে শান্ত করলেন।

আমার ছোট মামা মাজার ভক্ত। তিনি এসব শুনে পরদিন এসে আমাকে নিয়ে বায়েজিদ বোস্তামি গেলেন।

সেখানের খাদেমের পরামর্শে মামা একটা নির্দিষ্ট লাল সুতোকে দুই টুকরো করে অর্ধেক আমার হাতে বেঁধে বাকি অর্ধেক একটা নির্দিষ্ট গাছে বাঁধলেন।

মাজার পুকুরের একটি কচ্চপ কাছে আসতেই মামা কচ্চপের পিঠের শেওলা গুলো নিয়ে আমার মুখে মেখে তারপর মুখ ধুয়ে দিলেন।

এটি ছিল এই পর্যন্ত আমার জীবনের একমাত্র মাজার জিয়ারত।

আমার আব্বু প্রচলিত মাজারের কর্মকাণ্ড পচন্দ করেন্না। বাসায় এলে আমার হাতের সুতোটি আব্বু খুলে ফেলেন।

আব্বুর নিয়ত ছিল তার একটি সন্তানকে আরবি শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। সেই লক্ষে বড় ভাইয়াকে মাদ্রাসায় দিয়ে ব্যারথ হয়ে আমার ব্যাপারে আশাবাদি ছিলেন। ক্লাস ফোর পাশ করার পর আমাকে হেফজখানায় ভর্তি করানো হল।

৪//আমি সহ ১২জন ছাত্র নিয়ে শান্তিবাগ হেফজখানাটি চালু হল। প্রাথমিক পর্যায় হওয়ায় হেফজখানার জন্য তখনো আলাদা কোনো ভবন বা অংশ ছিলনা। আমরা মসজিদের বারান্দায় পড়তাম এবং মসজিদ কমপ্লেক্সের এক অংশে বেচেলর ভাড়ার জন্য তৈরিক্রিত ছোটছোট রুম গুলোতে থাকতাম।

আমি এবং আরো ৩জনের জন্য যে রুম বরাদ্দ করা হয়েছিল তা ছিল দ্বিতীয় তলার এক পাশে। আমাদের জানালা বরাবর ছিল একটি প্রকাণ্ড আম গাছ এবং এর আশেপাশে আর কোন জনবসতি ছিলনা।

একসময় আমরা উপলব্ধি করলাম গভির রাতে কেউ যেন গাছের ডাল বেয়ে এক ডাল থেকে অন্য ডালে যাচ্ছে।

আমরা বেপারটি হুজুরকে জানালাম। তখন আমের সিজন ছিল তাই হুজুররা ভাবলো রাতে বস্তির পোলাপাইন আম পাড়তে আসে বোধয়। সিদ্ধান্ত হল গাছে একটা বাল্ব লাগানো হবে। বাল্ব লাগানোর কারনে পুরো গাছ আলোকিত হয়ে থাকতো।

বেশ কিছুদিন এমন আওয়াজ আর পাইনি।

একরাতে জমির নামের একটি ছেলে পস্রাব করতে উঠে হুজুর বলে চিৎকার দিয়ে মাথা গুরে পড়ে গেল!

হুজুর এসে তাকে মোটামুটি সুস্থ করার পর জানতে পারলাম সে নাকি দেখেছে সাদা জুব্বা গায়ে দিয়ে বড় হুজুর গাছের ডালে বসে পা দোলাচ্ছে।

এরপরদিন গাছের বিভিন্ন ডালে অনেকগুলো তাবিজ জুলানো হয়েছে।

আমরা ঐ রুমে থাকতে না চাইলেও হুজুরের মারের ভয়ে তা প্রকাশ করিনি। এর্পর প্রায় ১বচর আর কোন সমস্যা হয়নি।

৫//যারা হেফজখানায় একদিন পড়েছে তারা জানে প্রতিদিন ভোরে আমাদের দিন কিভাবে শুরু হয়।

ফজরের নামাজের এক-দেড় ঘণ্টা আগে হুজুর এসে দর্জায় শুধু দুই-তিনটি থাপ্পর দিত আর বলত- এই উঠউঠ! আর অমনি আমরা পঙ্গপালের মত এক দৌড়ে টয়লেট-অজু করে পড়তে বসে যেতাম! দ্বিতীয়বার ঘুম আসবে যার সেদিন তার কেয়ামত!

তো একদিন এভাবে ঘুম থেকে হুড়মুড় করে আমরা সবাই উঠে নিছে নেমে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসে গেলাম যথারিতি। আস্তে আস্তে যখন আমাদের ইন্দ্রিয় গুলো ফিরে আসলো তখন মনে পড়তে লাগলো, আরে রুমের ভিতর এতগুল হুজুর বসেবসে কি করছিল!

জখন নামাজের বিরতি দিল তখন আমরা একে অপরকে জিজ্ঞেশ করে নিশ্চিত হলাম যে আমরা সবাই একই কাণ্ড দেখেছি।

নাস্তার ছুটির পর আমরা হুজুরকে নিয়ে রুমে ডুকে দেখলাম অনেকগুলো আমের খোসা ও আঁটি এদিক-সেদিক পড়ে আছে!

এরপর ঐ রুমেও তাবিজ লাগানো হল।

তখনো 'আমরা এই রুমে থাকবনা' হুজুরকে এমন প্রতিবাদ জানানোর সাহস পেলামনা।

এই ব্যাপার গুলো নিয়ে আমি বেশি দৌড়াদৌড়ি করতাম। অর্থাৎ, কেউ কিছু দেখলে তা হুজুরকে জানানর দায়িত্ব আমিই নিতাম। সেদিনের পর আমি অনেক গুলো কাগজে বিভিন্ন দোয়া-দুরুদ লিখে রুমের দেয়ালে আঠা দিয়ে লাগিয়েছেলাম।

এরপর অনেকদিন আর এমন ঘটনা না ঘটাতে আমরা এসব কিছু প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।

৬//মান্নান, সাইফুল ও আমি মাজেমাজে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে সবাই উঠার আগে উঠে যেতাম।

একরাতে এভাবে উঠে আমরা নিছে নেমে মসজিদে কেরাতের শব্দ শুনে ভাবলাম হয়তো আমাদের সাথের কোনো ছেলে ছবক শিখছে। কিন্তু মসজিদের গেটে গিয়ে অবাক হতে হল। হামিদ ভাই একেবারে মিম্বারের ওখানে নামাজে দাঁড়িয়ে তেলওয়াত করছেন অত্যন্ত সুললিত কণ্ঠে।

হিন্দু থেকে ইস্লাম গ্রহনের পর এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা যিনি, তিনি হামিদ ভাইয়ের সমস্ত ব্যেয়ভার গ্রহন করে এখানে একটি রুমে থাকতে দিলেন।

হামিদ ভাই আরবি হরফ গুলোও ঠিক করে বলতে পারেননা। সেই তাকে এভাবে কেরাত পড়তে দেখে আমাদের মনে তখনি ওসব কিছু এসে গেল। আমরা মসজিদে আর না গিয়ে রুমে এসে শুয়ে পর্লাম।

পরদিন হামিদ ভাইকে জিজ্ঞেশ করলে তিনি আশ্চর্য হলেন।

আমরা এই বেপারটি আর হুজুরকে জানাইনি। এর কিছুদিন পর আরেকটি ঘটনা হল।

৭//আমাদের কারো হালকা অসুখ হলে আমাদেরকে রুমে শুয়ে থাকতে দেয়া হতো।

একদিন মেহেদি নামের একটি ছেলের জ্বর হলে সে রুমে শুয়ে ছিল।

তিনটি রুমের মাজেরটাতে সে শুয়ে ছিল আর আমরা নিচে মসজিদের বারান্দায় পড়তেছিলাম।

সেদিন সন্ধায় সে হুজুর হুজুর বলে দৌড়ে আমাদের সামনে এসে শুয়ে পড়ল। তারপর হুজুররা গিয়ে দেখল রুমের জানালার একটা কাঁচ ভাঙ্গা, সিলিং ফেনের হাতল গুলো বাঁকা হয়ে আছে এবং সমস্ত কাঁথা-বালিশ গুলো রুমে এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে।

পরে তার কাছ থেকে জানতে পারলাম একটা কাঁচ ভাঙ্গার শব্দে সে চোখ খুলে দেখে চারাপাশের কাথা বালিশ গুলো উড়াউড়ি করছে!

এরপর সব রুমেই তাবিজ জুলানো হল।

৮//এর কিছুদিন পর আমার গায়ে কতগুল বিচি উঠা শুরু হল। বিচি গুলো পানিতে ভরে থাকে অনেকটা ফোস্কার মত। রাতে এটি বেশি দেখা দিত। একটি স্থানে বিড়বিড় করলেই স্পর্শ করে সেখানে একটি ফোস্কা পেতাম। যতক্ষন খুঁটীয়ে দিবনা ততক্ষন বিড়বিড় করতো। খোটার পর ঐ স্থানে আর কোন প্রতিক্রিয়া হতনা তাই ব্যাপারটি আর হুজুর্কে জানাইনি। আমার সমস্ত শরীর কালোকালো দাগে ভরে গেল।

প্রতি সপ্তাহে আব্বু মাদ্রাসায় আমাকে দেখতে আসতেন।

এক শুক্রবারে আব্বু এসে আমার মুখে বিচির দাগ দেখে বল্লেন আমার নাকি হাম হয়েছে। আব্বু আমাকে ট্রিটমেন্টের উদ্দেশ্যে বাসায় নিয়ে এলেন।

বাসায় আমার জন্য আলাদা সব কিছুর বেবস্থা করা হোল। অর্থাৎ কাথা-বালিশ, প্লেট-গ্লাস ইত্যাদি। কারন হাম নাকি ছোঁয়াচে রোগ।

৯//প্রায় এক মাস হোমোপেথি চিকিৎসার পর হাম ভাল হতে শুরু করলো বাট আমি ধিরে ধিরে দুর্বল হয়ে যেতে লাগলাম।

এর প্রায় এক সপ্তাহ পর নানান চিকিৎসা (হোমোপেথি,এলোপ্যাথি) চলা সত্তেও আমার অবস্থা এমন হল যে আমি শোয়া থেকে নিজে নিজে উঠে বসতে পারছিনা।

আমার হুজুরের কথা মত আব্বু এবার কবিরাজি চিকিৎসার চিন্তা করে আমাকে পটিয়ার এক হুজুরের কাছে নিয়ে গেলেন। হুজুর তদবির করে আব্বুকে বল্লেন যে আমাকে জিনে আচর করেচে! এই সমস্যার সমাধান করার প্রথম এবং প্রধান ধাপ হল একটি বিশেষ রাবারের তৈরি লাঠি দিয়ে আমাকে প্রচণ্ড প্রহার করা হবে। আর এই কাজটির জন্য অবিভাবকের লিখিত অনুমোদন লাগে।

আমার স্কুল লাইফের সেই ঘটনাটি সম্পুর্ন ভাবে হুজুর মুখস্থ বলে দিলেন। এই কারনে এবং ইতিপুর্বে বিভিন্ন ডাক্তারের বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসা করা সত্তেও কোন রোগ ধরতে না পারার কারন যে এটাই তা আমার আব্বুর মনে বদ্দমুল হয়ে গেল। আব্বু বাসায় ফোন করে আম্মুর সাথে আলোচনা করে রাজি হলেন।

আমাকে প্রথমে কতগুল লাল পানি খাওয়ানো হল। কিচুক্ষন পর আমি হড়হড় করে কয়েক ধপা বমি করে পেট একেবারে খালি করে ফেল্লাম এবং ধিরে ধিরে আমি অচেতন হয়ে পড়ি।

আমার সম্পুর্ন জ্ঞান ফিরেছিল পরদিন ভোর রাতে প্রচণ্ড শরীর ব্যেথা আর পেটে খিদা নিয়ে।

এর মাজের কাহিনি গুলো পরে আম্মুর কাছে শুনেছিলাম।

১০//এই চিকিৎসার সময় গার্জিয়ান উপস্থিত থাকতে পারেনা কিন্তু আব্বু আপত্তি করাতে হুজুর রাজি হলেন আব্বুর উপস্থিতিতে।

অচেতন অবস্থায় আমাকে একটা রকিং চেয়ারে বসিয়ে হেলানের সাথে কাঁধ, হাতলের সাথে হাত ও খুঁটীর সাথে পা বাঁধা হল।

হুজুর কিচুক্ষন বিভিন্ন দোয়া পড়ার পরে আমার মুখে একটা ফু দিতেই আমি চোখ বড় করে হুজুরের দিকে তাকালাম।

এরপর তিনি আমার দুই বাহু ও দুই ঊরুতে ক্রমাগত লাঠিটি দিয়ে আঘাত করতে করতে দোয়া পড়তে লাগলেন। আর সেই সাথে আমি চিৎকার করে ছুটতে চাইছিলাম।

এভাবে ১৫-২০মিনিট পর আমি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে আবার অচেতন হয়ে গেলাম। অতঃপর হুজুর একটি তালি দিয়ে হাত মেললে আব্বু দেখলেন হুজুরের হাতে দুইটি মাছি পড়ে আছে।

একটি এক লিটারের কাঁচের বোতলে মাছি গুলোকে ডুকিয়ে অর্ধেক বোতল পানিতে পুর্ন করার পর মাছি গুলো মাছে পরিনত হল।

এই দুটি জিন আমাকে আচর করেছিল বলে আব্বুকে জানানো হল। এগুলোকে বোতল সহ মাটিতে ফুঁতে ফেলা হবে বলেও হুজুর জানিয়েছে। গায়ে মালিশের জন্য এক বোতল সরিষার তেল আর আমার গলায় দুটি তাবিজ বেঁধে দিয়ে আমাকে বাসায় আনা হল।

১১//কিন্তু দিনদিন আমার অবস্থা আরো খারাফ হতে থাকে। এক পর্জায়ে যখন দেখা গেল আমি পাশ ফিরে শোয়ার শক্তি টুকুও হারালাম তখন আমাকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হসপিটালে ভর্তি করানো হয়।

এক সপ্তাহ এইসেই পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কোন রোগ ধরতে না পেরে তারা আশা ছেড়ে দিয়েছিল। আব্বু কান্না করে দিলেন যখন শুনলেন যে তারা এমনটি ই ভাবছে।

তখনকার ডীন ডঃগোলাম মোর্তোজা আব্বুর পুর্ব পরিচিত ছিল। তিনি আমাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যেতে বল্লেন। আমাদের দুর্বল আর্থিক অবস্থার কারনে আব্বু এর চে ভালো কোন হস্পিটালের কথা ভাবতে পার্লেন্না।

আমাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক)এ ভর্তি করানো হল।

১২//এখানে এসে রাত নেই দিন নেই সব সময় বিভিন্ন ডাক্তার এবং স্টুডেন্টরা ছোটোখাটো যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে আমার শরীর চেকাপ করতো এবং আম্মু থেকে আমার জীবন ব্রিত্তান্ত নোট করতো। একদিন আমাকে ক্লাসরুমে নেয়া হল। সেখানে স্ক্রিনে আমার লাইভ এক্সরে প্রদর্শন করে নানান গবেষণা চল্ল। কিন্তু তবুও কোন সুনির্দিষ্ট রোগের নাম বলা যায়নি।

একদিন এক আমেরিকান মহিলা ডাক্তার তার সম্পুর্ন টিম নিয়ে আমাকে চেকাপ করলেন। আমার কোমর হতে ক্যালসিয়াম এবং আমার মল-মুত্রের সেম্পল নিলেন আমেরিকায় গিয়ে পরীক্ষা করবেন বলে। তিনি আম্মুকে তার ভিজিটিং কার্ড দিলেন এবং আমাদের বাসার ঠিকানা নিলেন।

সেখান থেকে রিপোর্ট এল আমার পোলিও হয়েছে। যার কারনে আমার হাড়ের সবগুল জয়েন্ট কেলসিয়াম শূন্য হয়ে গেছে। অথচ আমাকে সবগুল পোলিও টিকা দেয়া হয়েছিল!

এখানে আমাকে সকাল-বিকেল দুটি করে ট্যাবলেট খাওয়ানো হত। আম্মু প্রতিদিন লুকিয়ে হুজুরের তেল পড়া আমার গায়ে মালিশ করতো কারন একবার এক ছোকরা ডাক্তার দেখে বলেছিল, 'তেল মাখাতে চাইলে বাসায় নিয়ে যান। এখানে এসব চলবেনা।'

সেখানে সপ্তাহ পর হতে আমি ধিরেধিরে সুস্থ হতে লাগলাম ঠিক যেমন একটি শিশু বেড়ে উঠে।

আজ হাত নাড়তে পারি তো কাল পা নাড়তে পারি।

যেদিন আমি টয়লেট করবো বলতে পারলাম সেদিন যেন আমাদের পরিবারে ঈদের চাঁদ দেখা গেল!

১৩//এখানে ১৩দিন পর যখন আমি কিছু একটা ধরে হাঁটতে পারছি তখন আব্বু আমাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার আবেদন করলেন। হস্পিটাল থেকে বলা হল আপনাদের যদি খুব সমস্যা হয় তবে নিয়ে যেতে পারেন, তবে আমরা ছাড়পত্র দিতে পারবোনা।

আরো তিনদিন পর আবেদন করলে তা গ্রিহিত হয়। সেই ওয়ার্ডের সবাই অবাক হল এটা দেখে যে একটা রুগিকে বিদায় দিতে কতগুল ডাক্তার উপস্থিত হয়েছে! আসলে ব্যাপার হলো ডাক্তাররা যানে আমি অসুস্থ থেকে সুস্থ হলাম। কিন্তু কিভাবে ক্যামনে কি তা তারা ধারনা করতে পারলোনা।

আমি এমন অবস্থা থেকে উঠে এলাম যেই অবস্থা দেখে কোন ডাক্তার আমার বেঁচে থাকার ভরসা দিতে পারেনি।

আমাকে বাসায় আনার পাঁচদিন পর পর্যন্ত আমার মাদ্রাসার হুজুর, আব্বুর বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন এবং পরিচিতরা আমাকে দেখতে আসছিল। যেন এক অষ্টম আশ্চার্য!

যতক্ষন যেগে থাকি আমাকে ব্যায়াম করানো হত। আমার লাফানো শেখা দেখে পাড়ার পিচ্চিরা খুব মজা পেতো।

১৪//এর প্রায় দুইসপ্তাহ পর একদিন দুপুরে সেই আমেরিকান মহিলা ডাক্তার আমাদের বাসায় এলেন। আমি তখন ঘুমাচ্চিলাম। আম্মু যখন বল্লেন যে আমি এখন সম্পুর্ন স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে পারি তা মহিলাটি বিশ্বাস করতে পারেনি।

আমাকে জাগিয়ে তুলে হাঁটিয়ে দেখানোর পর তার বিশ্বাস হল। তিনি আমাকে সাথে নিয়ে ছবি তুল্লেন বেশ কিছু।

বাসায় আসার প্রায় ১মাস পর আমি আবার মাদ্রাসায় গেলাম। এরপর আর জিন সম্পর্কীয় কোন ঘটনা হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত কিচুদিন পরপর আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি।

প্রতি মাসে একবার আমার জ্বর, মাথাবেথা বা সর্দি হবেই......। ব্যাপারটি অবশ্য স্বাভাবিক ভাবেই নিচ্ছি...।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×