কলেজের আমলে তোলা বেশ কিছু ছবি দেখছিলাম । দেখে ভালই লাগছিল । কত্ত মজাই না করেছি সে সময় । সবাই স্কুল আর ভার্সিটি লাইফে বেশি মজা করে আর আমি করেছি কলেজে । কারন সে সময় বেশ কিছু ভাল বন্ধু জুটেছিল । সে অন্য কথা । ছবি দেখতে দেখতে হঠাৎ একজনের ছবি প্রবল দৃষ্টি আকর্ষন করল । প্রত্যেকটা ছবিতেই আছে এর উপস্থিতি । সেই ৫ বছর আগের সাথে এখনকার চেহারার কোন মিল খুজে পেলাম না । আফসোস হল । প্রবল আফসোস । এতটাই পরিবর্তন !!! পরিবর্তন স্বাভাবিক , কিন্তু তাই বলে এতটা ??? প্রকৃতপক্ষে "পরিবর্তন" না বলে বলা উচিৎ “ পরিবর্ধন” । কি শুকনা, চিকন , ছিলিম স্বাস্থ্য !!! দেখতেই ভাল্লাগে । আর এখন দেখতে ... রীতিমত “কুমড়াকৃতি” । বলাই বাহুল্য সেই ছবিটা “আমার” ।
এখনও মনে আছে কলেজে থাকতে আত্মীয়- স্বজন যারাই বাসায় আসত তারাই জিজ্ঞেস করত “ বাবা, খাওয়া দাওয়া কর না বাসায় ?” । আর এখন , বাসায় এলে প্রথমে শুধু আমার আপাদমস্তক একবার চোখ বুলায় । এর মধ্যে তার দৃষ্টি আমার ভুঁড়ির উপর স্থির থাকে কয়েক সেকেন্ড বেশি । তারপর বলে “বাহ ! স্বাস্থ দেখি আগের চেয়ে ভাল হয়েছে” । কিন্তু চোখ দেখে বোঝা যায় “ আর খাইস না বাবা, ফাইট্টা যাবি” কইতে পারলেই শান্তি পাইত ।
কি করুম বুঝতে পারতাছি না । বন্ধুরা আগে যেখানে দেখা হলে হ্যান্ড-শেক করত , তেমনি আজকাল দেখা হলে তারা তাদের হ্যান্ড দিয়ে আমার ভূঁড়ি শেক করে । তার চেয়ে বড় দুঃখের কথা, ইদানিং আমার ইয়েও চান্স পেলে আমার ভূঁড়িতে ডুগডুগি বাজায় । কইচেন দেহি কই যাই ? মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে ভূঁড়িতে দড়ি বেঁধে ঝুলে পড়ি । খাওয়া কমাতে হবে । কিন্তু কিভাবে ? খেতে বসলে হুশ থাকে না । নরমাল পেটুকরা পাকস্থলি পূর্ণ করে খায় । আর আমি সম্ভবত আমার খাদ্যনালীও বাদ রাখি না । ছোটবেলায় যেসব তরকারি খেতাম না , আজকাল সেসবও গোগ্রাসে গিলি । প্যান্টের বোতাম লাগে না , ঢোলা শার্ট সব স্কিন টাইট হয়ে গেছে । এমনকি আজকাল পাঞ্জাবি পরলেও আমার ভূঁড়ি তার অস্তিত্ব সরবে প্রকাশ করে । এমনকি সেদিন আমার ডিপার্টমেন্টের এক সিনিয়র আপু দূর থেকে ডেকে বলল, “তুমি এরকম গোল হয়ে যাচ্ছ কেন ?” ... মোটা বললেও না হয় একটা কথা ছিল । “গোল” বলার কি দরকার ছিল ?
কয়েক মাস আগে খাওয়া কমানোর উদ্যোগ নিয়েছিলাম । ভাবলাম এখন থেকে রাতে সালাদ খাব । খেলাম । কিন্তু রাতে ঘুমাতে গিয়ে দেখি ঘুম আসে না ক্ষুধার চোটে । সব সালাদ হজম হয়ে গেছে । সুতরাং ২-৩ দিনের বেশী তা আর চলল না । এরপর উদ্যোগ নিলাম সকালে জগিং করার । কিন্তু সেটাও বেশিদিন করা হল না । কারন প্রথমত, জগিং করে পা প্রচন্ড ব্যথা করত, দ্বিতীয়ত, জগিং সেরে বাসায় এসে যে পরিমান রুটি খেতাম এতে বাসার অন্যদের নাস্তায় টান পড়ত , আর তৃতীয়ত, কয়েকদিন পরেই পরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছিল । গত কয়েকদিন ধরে আবার চেষ্টা করছি । একবেলা ভাত খাচ্ছি না । সাধারনত দুপুরে । কারন রাতে ভাত না খেলে ঘুম আসতে সমস্যা হবে । যদিও আজ রূটিন ভঙ্গ করেছি । সকালে ৪ খানা তন্দুর রুটি খাওয়ার পর দুপুরে অল্প ভাত খেয়েছি । কারন লাউ শাক ভর্তা আর শিম ভর্তা দেখে লোভ সামলাতে পারিনি । আল্লাহই জানে কতদিন চালাতে পারব ।
এ লেখার উদ্দেশ্য সকলের পরামর্শ নেয়া । খাওয়া কমানো আর ব্যায়াম ছাড়া ভূঁড়ি কমানোর কোন উপায় জানা আছে ? আমি সকলের দোয়া ও সাহায্যপ্রার্থী ।