somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থ্রি ইডিয়টস ক্যারিয়ারের গাইডলাইন

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিংশ শতাব্দী পেরিয়ে এখন আমরা একুশ শতকে। এখনো আমাদের পছন্দের তালিকায় প্রফেশন হিসেবে প্রথম দিকের কয়েকটি হলো ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার। প্রতিনিয়তই উন্নত বিশ্বে প্রফেশনের চেঞ্জ হচ্ছে। কিন্তু আমরা এখনো সেই প্রফেশনগুলোতেই পড়ে আছি।
লগান, রং দে বাসন্তী, তারে জমিন পার মুভির পর থ্রি ইডিয়টস। প্রত্যেকটি মুভিই ব্যতিক্রম। আপনারা নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন আমির খান এসব মুভিতেই অভিনয় করেছেন এবং প্রতিটি মুভিই আলাদা। সর্বশেষ থ্রি ইডিয়টস মুভিটি ইন্ডিয়াতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এটি এখন ইন্ডিয়ার অন্যতম ব্যবসা সফল মুভি। এর সুবাদে আমির খান ফিল্ম ফেয়ারে সবার ওপর মানে এক নাম্বার পজিশনে অবস্থান করছেন।
২৫ জুলাই সনি টেলিভিশনে মুভিটি দেখানো হয়েছে। সে সুযোগে অনেকেই হয়তো মুভিটি দেখেছেন। তাছাড়া এর আগে অনেকেই হয়তো ডিভিডিতে মুভিটি দেখেছেন। যারা মুভিটি দেখেছেন তারা জানেন, মুভিটির মধ্যে সাবজেক্ট চয়েস হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার প্রফেশনটির কথা বারবার এসেছে। তবে আমাদের মতো অনুন্নত দেশে ভালোভাবে পড়ালেখা শেষ করে একটি চাকরি জোগাড় করাই অভিভাবকদের লক্ষ্য। তারা চান তাদের সন্তানরা সফল হয়ে সমাজে তাদের মুখ উজ্জ্বল করবে। তাই অজান্তেই তাদের আশাগুলো চাপিয়ে দিচ্ছেন সন্তানদের ওপর। একবারও বোঝার চেষ্টা করছেন না তাদের সন্তানদের সে বিষয়টি পড়তে ইচ্ছা আছে কিনা। সবচেয়ে করুণ কাহিনী হলো, কিছু কিছু পরিবারে ট্র্যাডিশন হয়ে গেছে যে, ছেলে হলে হতে হবে ইঞ্জিনিয়ার আর মেয়ে হলে হতে হবে ডাক্তার। এই সিদ্ধান্তটি পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করার পূর্বেই ঠিক হয়ে থাকে। ফলে অনেক সময় পরিবারের আশা সন্তানদের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। এর কারণ হতে পারে সন্তান হয়তো একটি বিষয়ে ভালো করছে বা তার একটি বিষয় ভালো লাগে। যেমন, হতে পারে ফটোগ্রাফি বা মিউজিক। কিন্তু তাকে যদি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইঞ্জিনিয়ার হতে বলে সে হয়তো পুরোপুরি মনযোগ দিতে পারবে না। ফলে রেজাল্ট হতে পারে উল্টো। এর ফলে অনেক সময় ছেলে-মেয়েরা হতাশ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে। এই বিষয়টিই থ্রি ইডিয়টস মুভিটিতে দেখানো হয়েছে।
থ্রি ইডিয়টস-এর তিনজনের চরিত্রেই রয়েছে ভিন্নতা। তবে র‌্যানছোর কাহিনী প্রথমে রহস্যময় থাকলেও পরে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসে সকল কাহিনী। এরপর দর্শকদের র‌্যাঙ্কুর প্রতি সহানুভূতির পাল্লা বাড়বে। র‌্যাঙ্কু যখন তার বন্ধু অর্থাৎ অন্য দুই ইডিয়টস রাজু এবং ফারহানের সাহায্যে এগিয়ে আসে তখন রাজু এবং ফারহানের অভিব্যক্তি শুধু র‌্যাঙ্কুকেই অশ্রুসিক্ত করবে না সকল দর্শককেই অশ্রুসিক্ত করবে। অন্যদিকে রাজু যে ফ্যামিলি থেকে এসেছে তেমন ফ্যামিলি থেকে আমাদের দেশের অনেক ছেলে-মেয়ে আছে যাদের একটাই আশা, পড়ালেখা শেষ করে একটি চাকরি। তাদের ফ্যামিলির যে অবস্থা থাকে আসলে এর বাইরে তাদের আর কিছু ভাবারও থাকে না। ঘরে বাবা অসুস্থ এবং বোন অবিবাহিত থাকলে রাজুদের মতো ছেলেদের সারাক্ষণ ওই চিন্তা করতেই সময় চলে যায়। মধ্যবিত্ত ফ্যামিলিরও একই অবস্থা। তারাও চান ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখা করে ভালো একটি চাকরি করুক, বাড়ি-গাড়ি করুক। কিন্তু তারা যে অন্য প্রফেশনেও ভালো করতে পারে তা বাবা-মা কখনোই চিন্তা করেন না। একই ধ্যান-ধারণার মধ্যে মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির অভিভাবকরা ঘুরপাক খাচ্ছেন। আর এটা ফারহানের চরিত্র দেখলেই বোঝা যায়।
মুভিটির অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলো পিয়া। তার বিয়ে হওয়ার কথা যে ছেলেটির সাথে সে অনেক বিত্তবান। কিন্তু সে টাকাকেই জীবনের সবকিছু মনে করে। র‌্যানছোর এ কথাটি পিয়াকে বারবার প্রমাণ দিয়ে বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। আসলে যারা শুধু পড়ালেখা করে অনেক টাকাপয়সার মালিক হয়েছেন তারা টাকাপয়সা ছাড়া আর কিছু বোঝেন না। এটা চতুরকে দেখলেও বোঝা যায়।
আমাদের অভিভাবকরাও বুঝতে চান না যে, এখন অনেক প্রফেশন এসেছে। ভালোভাবে যে কোনো কাজ করলেই জীবনে সফল হওয়া যায়। আবার অনেক ছেলে-মেয়েই শুধু চাকরির জন্য পড়ালেখা করেন। পাঠ্যপুস্তক মুখস্থ করে হলে যান এবং পরীক্ষার খাতায় লিখে দেন। পাস করে যান। কিন্তু নিজের মধ্যে কোনো ক্রিয়েটিভিটি থাকে না। তাই যখন র‌্যানছোর বোর্ডে দুটি শব্দ লিখেন তখন স্টুডেন্টস এবং শিক্ষক কেউই ধরতে পারেননি। বরং তারা উদ্ভ্রান্তের মতো বই খুঁজতে থাকেন কোথায় শব্দটি আছে। কিন্তু তারা শব্দটি বের করতে পারেননি। না পারার কারণ হলো, প্রকৃত পক্ষে শব্দ দুটি ছিল তারই বন্ধু রাজু এবং অন্যটি আরেক বন্ধু ফারহানের নাম।
মুভিটির প্রথমেই লেখা ওঠে সকল চরিত্রই কাল্পনিক। আসলে কাল্পনিক লেখা থাকলেও প্রতিটি চরিত্রই যে বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি তা মুভিটি দেখলে বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে মুভিটিতে র‌্যানছোরকে যেভাবে সফল দেখানো হয়েছে তা অনেকেরই বিস্ময়কর মনে হতে পারে। তবে তার সফলতাকেও স্বপ্নের মতো করে তুলে ধরা হয়নি। চেষ্টা এবং উদ্দেশ্য ঠিক থাকলে যে কোনো সমস্যাই যে সমাধান করা যায় তা র‌্যানছোর চরিত্র থেকে বোঝা যায়। তবে র‌্যানছোর যে মাঝে মাঝে সমস্যায় পড়েনি তা নয়।
মুভিটিতে আমাদের অনেক বিষয়ই তুলো ধরা হয়েছে। মুভিটি প্রথমে দেখতে বসলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত উঠতে ইচ্ছা করবে না। কমেডি ধাঁচের একটি মুভি এবং প্রতি মুহূর্তে আমাদের ধ্যান-ধারণাকে কমেডির মাধ্যমে নাড়া দেবে। আর শেষ মুহূর্ত না দেখা পর্যন্ত মুভির কাহিনী বোঝা যাবে না। মুভিটি ক্যারিয়ার গাইডলাইন হিসেবে কাজে দেবে। তাই এখনো যারা মুভিটি দেখেননি তারা দেখে নিতে পারেন।

Click This Link
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×