somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ডারউইন বনাম ঈশ্বর

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(এই লেখাটা কাউকে কষ্ট দেওয়ার জন্য নয়।প্লীজ কেউ দয়া করে ভুল বুঝবেন না।আমি আমার দেশকে ভালোবাসি।আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।)

সারাদিন আজ বাইরে ঘোরাঘুরি করলাম।এখন রাত প্রায় ১১ টা।যদিও আমার কখনও বাড়ি ফেরার জন্য ব্যস্ততা থাকে না।রাতে হোটেল থেকে খেয়েই বাসায় যাবো।কাজী ভাইয়ের অফিসে বিকেলে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।তখন,গভীর ঘুমে স্বপ্নে দেখলাম- বিশাল একটা জঙ্গলের গভীরে আমি।কোন পথ খুঁজে পাচ্ছি না।চারিদিকে ভয়ংকর সব মানুষ।তাদের হাতে বিচিত্র সব অস্ত্র।তারা সবাই আমার দিকে তেড়ে আসছে।(স্বপ্নের আবার কোন মাথা মন্ডু আছে নাকি?)

আমি মদ্যপান করি না।কিন্তু সিগারেটের প্রতি দুর্বলতা আছে আমার এবং আমার বন্ধু ইমরানের।সেদিন ইমরানের বহু কালের বিশ্বাস ও সংস্কারে একটা প্রবল ধাক্কা লেগেছে।তার মূলে রয়েছেন একজন অধ্যাপক।ইমরান প্রায়ই এই অধ্যাপকের বাড়ি যায়।অধ্যাপক নিজে ইমরান কে কফি বানিয়ে খাওয়ান।আজ সন্ধ্যায় আমি ইমরানের মেছে যাই।ইমরান আমাকে বলল,তুই চার্লস ডারউইন এর নাম শুনেছিস?আমি বললাম,ছাপার অক্ষরে নামটা কোথাও পড়েছি।কেন,উনি কি আজ তোর মেছে আসবেন?বলেই আমি খুব হাসলাম....।

ডারউইন যা বলেছেন,তা যদি সত্যি হয় তাহলে এতকাল ধরে আমরা যা সত্যি বলে জেনে এসেছি তা সব মিথ্যে।ডারউইন বলেছেন- এই যে জীবজগৎ,এই যে সব গাছপালা,পশুপাখি,মানুষ এর কিছুই আল্লাহ সৃষ্টি করেন নি?মুসলমানরা মনে করেন আল্লাহ,হিন্দুরা মনে করেন ভগবান আর খ্রিস্টানরা মনে করেন গড।তিনিই সৃষ্টিকর্তা।কিন্তু ডারউইন বলেছেন,কোনও পরমেশ্বরই এসব সৃষ্টি করেন নি।প্রকৃতির সব কিছুই নিজস্ব সৃষ্টি।বিবর্তনবাদ নামে ডারউইন একটা তত্ত্বের কথা বলেছেন।মানুষ ও প্রানীজগৎ বিবর্তনবাদের মধ্য দিয়েই চলছে।সেখানে পরমেশ্বরের কোন ভূমিকা নেই।এখন,ডারউই্নের কথা মানতে গেলে কোরআন,বাইবেল সব মিথ্যা!ইসলাম ধর্মের বয়স তেরো শো বছর।মহাম্মদ আল্লাহর বানী প্রচার করলেন।সেই 'আল্লাহ' সর্বশক্তিমান।মানুষের পাপ-পূর্নের নিরামক।তাহলে তেরো শো বছর আগেকার মানুষ গুলোকে সৃষ্টি করলো কে?কিংবা এতদিন আল্লাহ কোথায় ছিলেন?

মানুষের বয়স যদি বাইবেলের মতে,পাঁচ হাজার আটশো নব্বই বছর হয়,তাহলে তো প্রথম চার হাজার বছর কোন খ্রিস্টান ছিল না।খ্রিস্টানদের গড ও ছিলো না।কোথায় লুকিয়ে ছিলেন তিনি?বৌদ্ধ ধর্ম আরও পুরনো।গৌতম বুদ্ধ জন্মেছিলেন প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে।তার প্রমান আছে।হিন্দু ধর্ম তারও আগে,কারণ হিন্দু ধর্ম থেকে বেড়িয়ে এসে বুদ্ধ তার ধর্ম প্রচার করেছিলেন।হিন্দু ধর্মও কত আগে?বড় জোর ছয় সাত হাজার।কিন্তু তারও হাজার হাজার বছর আগে মানুষ ছিল,তাদের কোন ধর্ম ছিল না।ঈশ্বরও ছিল না!পাহাড়ের গুহায়,বনে জঙ্গলে মানুষ বাস করত।পাথরের অস্ত্র দিয়ে পশু শিকার করে আগুনে পুড়িয়ে খেত।তাদের কোন ঈশ্বর ছিল না!

চার্লস ডারউইন ইংল্যান্ডের এক ডাক্তারের ছেলে।প্রথমে তিনি ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন।কিন্তু তার মন বসে নি।তারপর ডারউইন তার বাবার ইচ্ছায় ধর্মতত্ত্ব পড়তে শুরু করলেন।ডারউইন এর যখন ২২ বছর বয়স,তখন তিনি একটি জাহাজে ঘোরার আমন্ত্রণ পান।সেই জাহাজে নানান রকম লোকজন ছিল।ডারউইন কে নির্বাচন করা হলো প্রকৃতি বিজ্ঞানী হিসেবে।জাহাজ টা সমদ্রে ভাসবে পাঁচ বছর ধরে।কোন বিজ্ঞানীকেই টাকা দেওয়া হবে না।ডারউইন ধনী ডাক্তারের ছেলে...।
পাঁচ বছর ধরে বহু দ্বীপ ঘুরে ঘুরে ডারউইন অনেক জন্তু-জানোয়ার,পোকা-মাকড়,লতা-পাতা সংগ্রহ করে আনেন।তারপর সেগুলো নিয়ে গবেষনা করতে করতে অনেক বছর পরে একটা বই লিখেন।সেই বইটির নাম- 'দা অরিজিন অফ স্পিসিজ'।এই বইটির মধ্যেই রয়েছে বিবর্তনবাদের তত্ত্ব।জন্তু-জানোয়ার আর মানুষের চেহারা চিরকাল এক রকম ছিল না।পরিবেশ অনুযায়ী বদলেছে।অনেক প্রানী হারিয়ে গেছে চিরতরে।ভগবান,আল্লাহ,ঈশ্বর বা কোন ধর্মেরই সর্বশক্তিমান সৃস্টার ইচ্ছেতে মানুষের সৃস্টি হয়নি।বিবর্তনের ধাক্কায় মানুষ এসেছে বানরের মতন এক প্রানী থেকে।
এখন,ইনকুইজিশানের যুগ তো আর নেই।এটা আধুনিক যুগ।বিজ্ঞানের যুগ।ডারউইন কে অনেকেই অনেক গালমন্দ করেছেন।কিন্তু পৃথিবীর আশি ভাগ বৈজ্ঞানিক ডারউইনের যুক্তি-প্রমান মেনে নিয়েছেন।ডারউইন এর বই হাজার হাজার সাধারন মানুষ পড়ে,কোরআন-বাইবেল সম্পর্কে এতকালের বিশ্বাস অনেকেরই ভেঙ্গে গেছে।তবে,এখন সবচেয়ে দুঃখের বিষয় এখনও কতকগুলো মানুষ অন্ধ-বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে বসে আছে।দেড় হাজার দু'হাজার বছরের পুরনো ধর্মগ্রন্থের বানী গুলোকে অমোঘ সত্য বলে মনে করে!সেই অনুযায়ী সমাজ চলে!

আল্লাহ নিরাকার,বর্ননার অতীত।(আমার নিজের একটা অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝেছি,নিরাকার রুপ গুনের অতীত কোনও শক্তি যদি থেকেও থাকে,তার সঙ্গে মানুষের জীবনের কোনও সম্পর্ক নেই।তার জন্য মানুষের এত পুজো-আচ্চা,প্রার্থনা,কান্নাকাটির দরকার কী?)এই নিরাকার কোনও শক্তিকে বহু মানুষ ঈশ্বর বলে বিশ্বাস করে,তার মধ্যে কিছুটা ভন্ডামি থাকতে বাধ্য।সত্যিকারের নিরাকার কোনও কিছু কী মানুষের পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব?নিরাকারের কাছে প্রাথনা!আসলে এই নিরাকারেরও চোখ-মুখ-কান সবই আছে।সব ধর্মের এই নিরাকাররাই মাঝে মাঝে কথা বলেন।তিনি মানুষের পাপ-পূর্ন দেখতে পান।ব্রাহ্মরা গান গায়,হিন্দুরা জোরে জোরে মন্ত্র পড়ে,মুসলমানরা আল্লাহ হু আকবর বলে চেচ্যায়।যার কান নেই,তাকে কিছু শোনাবার জন্য কি মুখে কিছু উচ্চারণ করতে হয়?এত রকম কারুকার্য করা মসজিদ,নিরাকারের প্রার্থনার জন্য দরকার?এগুলো কি নিরাকারের বাসস্থান?না পুতুলের খেলা ঘর?কত পরিবার রাস্তায় রাস্তায় জীবনযাপন করে!

ডারউইনের আর একটা তত্ত্ব হচ্ছে- 'স্টাগল ফর একজিসটেন্স'।পৃথিবীতে যত মানুষ জন্মায়,পঁচিশ বছরে তার সংখ্যা দ্বিগুন হয়ে যায়।বন্যা,খরা,ভূমিকম্প,দুর্ভিক্ষ,যুদ্ধে বহু মানুষ ও প্রানী মারা যায়।এর মধ্যে যারা বাঁচে,তারাই টিকে থাকে।সারভাইভাল অফ দা ফিটেস্ট!সমস্ত প্রানী কুলের মধ্যে অবিরাম জীবন যুদ্ধ চলছে।যারা জয়ী হয়,শুধু তাদেরই অধিকার আছে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার।তাহলে ঈশ্বর-আল্লাহ ,যে পিতার মতন আমাদের রক্ষনাবেক্ষণ করেছেন বলে এতকাল জেনে এসেছি,তা ঠিক নয়?মানুষের সৃস্টির সঙ্গেও আল্লাহর কোনও সম্পর্ক নেই।শিব,কালী,দুর্গা,গনেশ,বিষ্ণু-ইত্যাদি এইসব মূর্তির কোনও কিছুর মধ্যেই ঈশ্বরের প্রকাশ নেই।সবই মানুষের কল্পনা।সেই কল্পনা দিয়ে মানুষ কতকগুলো পুতুল বানিয়ে পুঁজো করে।

লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষ ঈশ্বর বিশ্বাস নিয়ে মেতে আছে,তাদের এক কথায় উড়িয়ে দেবার অধিকার কারো নেই।বিশ্বাসে,শ্রদ্ধায়,ভক্তিতে কেউ যখন নিমগ্ন থাকে তখন তাকে দেখতে বড় ভালো লাগে।যে যার ধ্যান করুক না কেন,তাতে তো কোন ক্ষতি নেই।নাস্তিকরাও এক ধরনের নিরাকার।বিবর্তনের কথা বাদ।ডারউইন এর খপ্পরে পড়ার কোনও দরকার নেই।সবাই নামাজ পড়ুন।রোজা রাখুন।সৎ থাকুন আর বেশি বেশি করে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন।
আমার দুই-তিন ধরে মাথার মধ্যে যেন ঝড় বইছে সর্বক্ষন।এক এক সময় চক্ষে অন্ধকার দেখি।মনে হয় পাগল হয়ে যাবো।পাগল হওয়ার চেয়ে ঈশ্বরে বিশ্বাসী,ভক্ত হয়ে থাকা অনেক ভালো।বাঁচতে হবে তো।বেঁচে থাকাটাই বড় কথা।
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×