somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হৃদয়ের গহীনে

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রচন্ড মন খারাপ রিয়াদের।টিউশনির টাকাটা আজও দিল না।কথা ছিল মাস পূর্ণ হবে ১৫ থেকে ১৫ তারিখে।সেটাতো এখন নেইই বরং মাসের এক তারিখ পেরিয়ে ৭ তারিখ হত।এই মাসে ১০ চলছে।ছাত্রের বাবা গেছে চিটাগাং,সেখান থেকে আসলে তার পর হবে।এদিকে টাকার প্রচন্ড দরকার।বন্ধুদের কারও কাছেই টাকা পাওয়া গেল না।অথচ পরশু যশোর যেতে হবে ।গতবার যেতে পারেনি ,পরীক্ষা ছিলবলে।এবার না গিয়ে উপায় নেই।কিন্তু টাকাইতো মেনেজ হলনা।এসব নিয়ে রিয়াদ একটু অন্নমনস্ক ছিল।এমন সময় রিয়াদের ছাত্র প্রশ্ন করল সার অংকটা মিলছে না।
-মিলছে না মানে,কাল না অংকটা করে দিলাম।
-স্যার,এটা করে দেননি তো।
-কই দেখি?
হ্যাঁ আসলেই অংকটা করে দেয়া হয়নি।এবং অংকটা বেশ জটিল।শুধু শুধু ওকে একটা ধমক দেয়া হল।টাকার চিন্তায় মাথাটাই যেন একে বারে খারাপ হয়ে গেছে।

মেসে ফিরে দেখে মিলে টাকা নেই।মিল বন্ধ।এদিকে রিয়াদের পকেট একদম শূন্য।কোন কুল কিনারা না দেখে শুয়ে পড়ল রিয়াদ।পেটের ভিতর ক্ষুধার পোকাটা ঝিঁ-ঝিঁ করে ডাকছিল এতক্ষন।কোন সাড়া না পেয়ে এবার কুট কুট করে কামড়াতে শুরু করে দিল।রিয়াদ পাত্তা না দিয়ে বালিস চেপে ধরে অসহায়ের মত পড়ে রইল।রুম মেট যখন রাতে বাইরে খেতে গেল তখন বলল ক্ষিদে নেই।সে টিউশনি বাসা থেকে খেয়ে এসেছে।রুম মেট চলে গেলে পরপর দু'গ্লাস পানি খেয়ে ঘুমাতে গেল।কিন্তু ঘুম আর আসছিল না।ক্ষিধে পোকাটার দম বোধ হয় বেশ লম্বা।একটানা কুট কুট করছে তো করছেই।এতক্ষনে মনে হল সাড়া না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।কামড়ানো থামিয়ে দিয়েছে।এইবার ঘুম রিয়াদের চোখে জাপটে আসতে লাগল।

মিলির বাসা যশোর ।কাল পৌঁছতে হলে আজকে বিকেলেই টিকিট কনফার্ম করতে হবে।রাতে গাড়ি।রিয়াদ মুঠোফোনটা বের করে মিলির পাঠানো ক্ষুদে বার্তাটা আর একবার দেখে নিল।আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব......মিলি।ভেবে চিন্তে কিছু না পেয়ে রিয়াদ একটা নাম্বার ডায়াল করল।ওপাশ থেকে হ্যালো বলতেই রিয়াদ বলল।আপনার নাম্বারটা আমি ব্লগে পেয়েছি।আপনার ও পজেটিভ রক্তের দরকার ।আমি দিতে রাজি আছি।
-থ্যাংক ইউ বাবা ।তাহলে তো আমার বেশ উপকার হয়।
-কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে ।
-কি শর্ত বাবা?বল আমি সব শর্ত মানতে রাজি আছি।
-আমি আপনাকে রক্ত দিব ।বিনিময়ে আমাকে দু'হাজার টাকা দিতে হবে।টাকাটা আমার খুব প্রয়োজন।
-তুমি চলে এসো বাবা।আমরা ব্লাড ব্যাংকে রক্তা পাচ্ছিলাম।কিন্তু সেই রক্ত নিতে চাচ্ছিনা।
-রক্ত দেয়ার পর তিন হাজার টাকা রিয়াদের হাতে গুজে দিয়েছিল।কিন্তু রিয়াদ দু'হাজার রেখে বাকি টাকাটা ফেরত দিয়ে বলল,মাফ করবেন আমার দু'হাজার টাকারই প্রয়োজন।বলেই দ্রুত চলে আসল।


রাস্তায় কোন ঝামেলে না হলে সকাল আটটার মধ্যে সে যশোর নামতে পারবে। মিলি তার জন্য অপেক্ষা করবে।শেষ পর্যন্ত মিলির পছন্দের পিঙ্ক কালারের ড্রেসটা একহাজার টাকার মধ্যেই মেনেজ করা গেল।কাল ওর জন্মদিন।মিলির গাড় কাল চোখের তীক্ষ্ণ চাহনি আর হাসি লোকাতে চাওয়া হাসি হাসি মুখটাকে মনে করে সকল ঝক্কি ঝামেলার কথা ভুলে গেল।

গাড়ীর জানালা একটু খোলে দিল রিয়াদ।বাইরের ঠান্ডা হাওয়া তার মুখে যেন একটু একটু করে কাঁটা কাচের মত ভিতরে ঢুকতে লাগল।চিন্তায় শিঠিয়ে থাকা স্নায়ু গুলো যেন ঠান্ডা পেয়ে জেগে উঠতে থাকল। ভালই লাগতে ছিল রিয়াদের ।কিন্তু পাশের সিটের ভদ্র লোকের করণে বেশি ক্ষন আর খোলা রাখা গেল না।

রক্তটা বোধ হয় একটু বেশিই দেয়া হয়ে গেছে ।ডাক্তার এক ব্যাগের বেশি নিতে চাচ্ছিল না।কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুই ব্যাগই দিল রিয়াদ।তাই এখন খারাপ লাগছে।প্রচন্ড দুর্বল লাগছে।সেই সাথে জাপটে আসছে ঘুম।কিন্তু গাড়িতে রিয়াদ ঘুমাতে পারেনা।মাঝে মাঝে অন্য গাড়ির পাশদিয়ে অতিক্রম করার সময় শব্দে কিংবা ব্রেক কষলে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়।আজকে যেন ও সব কিছুই মানছিল না।চোখের পাতা জাপটে ধরা ঘুমে আর সে কিছুই মনে করতে পারছিলন।সকাল বেলা সুপারভাইজারের ডাকে যখন চোখ খুলল তখন দেখল চারদিকে চকচকে আলো ।শীতের সকালে শিশির বিন্দুর উপর রোদের কিরণ লেগে কেমন যেন আশ্চর্য পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।
বাস স্ট্যান্ডে নেমেই দেখে ভোরের স্নিগ্ধতা নিয়ে কোনার দিকে দাঁড়িয়ে আছে মিলি।কিন্তু তার সেই স্নিগ্ধতা ছাপিয়ে রিয়াদের দুর্বলতাই যেন তাকে জেকে ধরল।কোন রকমে দুর্বলতাকে ছাপিয়ে মিলের কাছে গিয়ে বলল ´হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ ........´।কিন্তু সে মুখে ক্লান্তির ছাপ যেন লেগেই রইল।শত চেষ্টা করে যে টুকু হাসি হাসি ভাব মুখে আনা গেলে তাতে ক্লান্তির ছাপ দূর করা গেল না।মিলি অবশ্য একবার বলেছিল ,তোমাকে এমন লাগছে কেন?রিয়াদ বলেছে সারা রাত জেগে এসেছিতো তাই ।

প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে রিয়াদের ।কোন রেস্টুরেন্টে বসতে চাইছিল।কিন্তু মিলি নাকি নডুলস নিয়ে এসেছে।তাই পার্কের দিকে রিক্সা নিল।রিক্সার ঝাকিতে তার কেমন যেন বমি বমি আসতে চাচ্ছিল।কোন রকমে তা দুর করতে পেরেছে।রিক্সা থেকে নেমে পার্কের কোন কোনায় সুবিধা জনক স্থান খোঁজতে ওরা হাঁটছে।শেষতক কোনার দিকে একটা বেঞ্চিতে বসল।

বেলা বেশ চড়েছে।এর মধ্যেই ঘটল বিপত্তি।রিয়াদের শরীর যেন বিদ্রোহ করে বসল।মাথা ঘুরে পড়ে যেতে গিয়ে বসে পড়ল বেঞ্চির উপর।হতবাক হয়ে গেল মিলি।রিয়াদকে ডাক্তারের কাছে নেয়ার জন্য জোর করতে লাগল।কিন্তু রিয়াদ যেতে রাজি হলনা।বলল,জার্নি করে এসেছি তাই হয়তো খারাপ লাগছে।কিন্তু মিলি নাছোড় বান্দা,ডাক্তারের কাছে নিয়েই যাবে।রিয়াদ কোন ভাবেই যাবে না।এর আগে এ রকম হয়েছে কিনা মিলি জানতে চায়।রিয়াদ না বলে।কেন হঠাৎ করে এমন হল তা জানার জন্য মিলি যখন চাপাচাপি করতে লাগল।তখন রিয়াদ তার রক্ত দেয়ার কথা বলল।
শুনে মিলির ঠোঁট দুটো কাঁপতে থাকল এবং চোখ বেয়ে নেমে এল জলের ধারা।রিয়াদ ওর দিকে তাকাতেই তার কান্নার বেগ যেন বেড়ে গেল।বাঁধ ভাঙ্গা সেই কান্নাকে থামাতেই যেন আশ্রয় নিল রিয়াদের বুকে।বুকে মাথা রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল।আর রিয়াদের ক্লান্তি যেন নিমিশেই উবে গেল।নরম স্পর্শ আর চোখের পানির দাওয়াই পেয়ে যেন তার স্নায়ু গুলো উতেজ্জিত হয়ে উঠল।তার জন্য কেউ কাঁদতে পারে ভেবে তার চওড়া বুকটা যেন আর একটু স্ফিত হয়ে গেল।হৃদয়ে গহীনে মিলির জন্য যে টুকু জায়গা ছিল তা যেন আর একটু স্ফিতি লাভ করল।মিলির মাথায় হাত রেখে যখন বলল,কেঁদো না জানু,সব ঠিক হয়ে যাবে।ওমন একটা সমস্যায় আমি কাওকে কী এমনিতেই রক্ত দিতাম না?
কিন্তু তাও যেন মিলির কান্না শেষ হতে চায় না ।থেকে থেকে ফুফাতে থাকে।শেষে রিয়াদের উষ্ণ ঠোঁট যখন মিলির ঠোঁটকে খোঁজে নেয় তার পর সকালের রোদ পড়া শিশির বিন্দুর মত মিলির কাঁন্না শেষ হয়।এখন ওরা শীতের সকালে জড়াজড়ি করতে থাকা বাচ্চা কুকুরের মত যেন জড়াজড়ি করে একে অপরের উত্তাপ নিচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:১৭
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×