somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোর্স ভালো তো সাংবাদিক জাঁদরেল

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাই, এই মাত্র বাসটি নেমে গেল পানিতে। ব্রিজ থেইকা পইড়া গেল-ফোনটি পেয়ে কিছুক্ষণ হতভম্ভ হয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই। তার পরই অফিসে জানাতে হয় ঘটনাটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। এর অল্পক্ষণ পরেই আবারও সেই ফোন, ‘ভাই, দুইজনকে বাঁচাইতে পারছি, আর পারি নাই, অনেক মানুষ মারা যাইবো। আমিনবাজারের সালেহপুর ব্রিজ থেকে বৈশাখী পরিবহনের বাসটি নদীতে নেমে যাবার ঘটনা এভাবেই জানা যায়। একজন সাংবাদিক বা তার পত্রিকা বা টিভি বা রেডিওকে একজন সোর্স কতটুকু এগিয়ে নিতে পারে, ওপরের ঘটনা তারই ইঙ্গিত দেয়। ফোনেই জানা যায়, একজন ট্রাফিক পুলিশ ঘটনা দেখেছেন। সুতরাং পুলিশ কন্ট্রোল রুমও ঘটনাটি জানে। এই সূত্র ধরে বাস পানিতে ডুবে যাওয়ার একটি সঠিক সংবাদ তাৎক্ষণিকভাবে দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে। সোর্সের দিক থেকে তার পছন্দের বা আস্থার সাংবাদিককে এই সংবাদটি জানানো স্বাভাবিক। কিন্তু এটি তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। তার পরও পারস্পরিক হৃদ্যতার একটি সম্পর্ক সার্বিকভাবে মানুষের জানার অধিকার বাস্তবায়ন অনেকটা সহজ হয়। সোর্সের সঙ্গে সাংবাদিকের সম্পর্ক কেমন হবে-এ প্রশ্ন নতুন নয়। এ নিয়ে অনেকেই ভেবেছেন, অনেক কিছু লেখাও হয়েছে। বিশেষ করে সংবাদের সোর্স বা উৎস প্রকাশ করতে সাংবাদিককে বাধ্য করা যাবে কি না, সে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে দুনিয়াজুড়ে, হচ্ছে এখনো। ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারি উদ্ঘাটনের সেই সংবাদ উৎস কে ছিলেন, তা নিয়ে রহস্য চলেছে দিনের পর দিন। সময় বদলাচ্ছে, সেই সঙ্গে জটিল হচ্ছে পৃথিবীর অনেক কিছুই, বদলাচ্ছে সম্পর্কের ধরনও। কিন্তু একটি বিষয়ে এখনো সাংবাদিককে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়, সেটি হলো সোর্সের সঙ্গে সম্পর্ক। সাংবাদিক নীতিগতভাবে তার সংবাদের সোর্স জানাবেন না, এটা গণমাধ্যমে স্বীকৃত। সম্প্রতি কানাডাতে এই স্বীকৃতি এল আদালতের তরফে। স্বীকার করে নেওয়া হলো, সোর্সকে রক্ষার অধিকার রয়েছে সাংবাদিকের। সোর্সকে কেন গুরুত্ব দেবেন সাংবাদিক? সহজ করে বললে বলতে হয়, সংবাদ যদি একজন সাংবাদিকের মাথার মুকুট হয়, তবে একেকজন সোর্স সেই মুকুটের পালক। আর তাই যত বেশি সোর্স, সাংবাদিক তত বেশি জাঁদরেল,এটাই প্রচলিত মিডিয়াতে। সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে সাংবাদিকদের সম্পর্ক গত কয়েক বছরে গণমাধ্যম ভেদে কতটুকু বদলে গেল, তা কৌতূহলের বিষয়। যা হোক, দুইভাবে সংবাদ আসতে পারে সাংবাদিকের কাছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রচারের জন্য সংবাদ পৌঁছে দিতে পারেন সাংবাদিকের কাছে। সেটি ই-মেইলে, সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, সভা-সেমিনার করে, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ইত্যাদি করে। এসব ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সংবাদের উৎসও সভা বা সেমিনার, কোনো ব্যক্তি নয়। কিন্তু এসব সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ যেমন সংগ্রহ করতে পারেন তেমনি পরিচিত হতে পারেন তার পেশার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের সঙ্গে। তবে মনে রাখতে হবে, পরিচিত হওয়া মানেই সোর্স বানানো নয়। সোর্স পরিচিতের চেয়ে আরেকটু বেশি, সাংবাদিকের প্রতি একজন পেশাজীবী মানুষের আস্থার সম্পর্ক। দ্বিতীয় যে পদ্ধতিতে সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করেন, তাতে সাংবাদিককে যেতে হয় উৎসের কাছে। এ ধরনের সংবাদ এক্সক্লুসিভ হয়, অনুসন্ধানী হয়, অনেক বড় দুর্নীতি উদ্ঘাটন হয়। এসব সংবাদ সমাজে নাড়া দিয়ে যায়। সাংবাদিকের অনেক নামডাক হয়, তবে সংবাদের উৎস থেকে যান নীরবে। এটা তার নিরাপত্তার জন্যই দরকার হয়। দ্বিতীয় পদ্ধতিতেই সোর্সের প্রয়োজন হয়। সংবাদের উৎস নানা ব্যক্তি হতে পারেন। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে শুরু করে পথের পাশের সামান্য হকারটিও একজন সাংবাদিকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে একজন ভালো সাংবাদিকের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। সেই বন্ধুত্বের নাম দেওয়া যেতে পারে প্রফেশনাল বন্ধুত্ব। ফলে, ত্রিশের কোঠার একজন সাংবাদিকের বন্ধুত্বের তালিকায় নাম থাকতে পারে ষাটোর্ধ্ব রাজনীতিবিদ, পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যবসায়ী, আর্মির জেনারেল, সরকারের সচিবসহ অনেকের। এই বন্ধুত্ব সহকর্মীর নয়, সহযোগীর। এ বন্ধুত্ব একজন মানুষের সঙ্গে অপর মানুষটির নয়, একটি পেশার সঙ্গে অপর পেশার। এতে সম্পর্ক যেহেতু একটু বিশেষ, তাই একে রক্ষাও করতে হয় বিশেষ যতœ দিয়ে। আর সেই যতেœর একটি হলো সোর্সের নিরাপত্তা দেখা। সংবাদ প্রকাশ করার দায়ে যেন তাকে কোনো ভোগান্তিতে পড়তে না হয়, তা বিবেচনা করা। আর এই বিবেচনা থেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথাগুলো আসে রিপোর্টে। অবশ্য, বিতর্ক আছে ‘নাম প্রকাশ না করার শর্তে’ শব্দের আড়ালে রিপোর্টার তার নিজের কথাই বলে দেন। অভিযোগ সত্য হলে তা নিন্দনীয়। কিন্তু একজন সাংবাদিকের কেন তা করার প্রয়োজন হবে? এর জবাবও নিশ্চয়ই বিতর্ক সামনে এগিয়ে নেবে। সে প্রসঙ্গ থাক। পত্রিকা বা টিভি যা-ই হোক, সাংবাদিকেরা এই সোর্সের বিষয়টি বেশ উপভোগ করেন। আমি একজন সাংবাদিককে চিনি, যিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে, সোর্সরা ফল নিয়ে তাকে দেখতে গেছেন। কুশল জানতে চেয়েছেন। পত্রিকার সাংবাদিকেরা ফোনে, কথা বলে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের প্রমাণ হিসেবে কাগজপত্রও তাকে হাতে রাখতে হয়। আর এই কাগজ যারা বিশ্বাস করে সাংবাদিকের হাতে তুলে দেবেন, তাদের সঙ্গে সেই সাংবাদিকের সম্পর্ক অনুমান করা যায় সহজেই। কিন্তু টেলিভিশনের সাংবাদিকের কাগজের চেয়ে সাক্ষাৎকারের প্রয়োজন হয় বেশি। তাই সে অনুযায়ী তৈরি হয় ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক। বলা হয়, টেলিভিশন খুব সহজে পৌঁছে যেতে পারে মানুষের কাছে। তা খবর প্রচারে হোক কিংবা খবর সংগ্রহে। কিন্তু কিছু কিছু সময়ে তা কঠিন হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সেক্রেটারি যদি বঙ্গভবনে ফোন করেন, তবে সেই কথোপকথনের সংবাদ পত্রিকা সহজেই পাঠকের কাছে পৌঁছে দেবে, টেলিভিশনের জন্য তা করতে একটু কষ্ট করতে হবে। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব যদি এই বিষয়ে কিছু বলতে নারাজ হন তবে। তখন গ্রাফিকস ব্যবহার করে সেই সংবাদটি প্রচার করতে হবে। যদিও ভালো হতো সংশ্লিষ্ট কারও সাক্ষাৎকার ব্যবহার করে সংবাদটি প্রচার করলে। যা হোক, বলা হয় পত্রিকার বয়স্ক সাংবাদিকদের সঙ্গে সচিব বা কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধান পর্যায়ের মানুষদের সম্পর্ক বেশ ভালো। কেউ কেউ সকালেই সবার সঙ্গে একতরফা কথা বলে জেনে নেন, দেশে কী হচ্ছে। সে সম্পর্ক এক দিনে তৈরি হয়নি। একজন স্টাফ রিপোর্টারের সঙ্গে একজন জয়েন্ট সেক্রেটারির পরিচয় হলো, সচিবালয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কী হলো, তা সেই সাংবাদিক জানতে পারলেন সেই যুগ্ম সচিবের কাছে। যুগ্ম সচিব প্রমোশন পেলেন, সাংবাদিকও সিনিয়র হতে থাকলেন, এভাবে একপর্যায়ে দুজনই সময়ের নিজস্ব নিয়মে হয়ে উঠলেন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখন সচিবালয়ের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর মন্ত্রী মহোদয় সরাসরি ব্রিফ করেন। তাতেই সংবাদ হয়ে যায় বলে, পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্কে অনেকেই অনেককে বাঁধতে চান না। সাংবাদিকদের জন্য তথ্য এখন বহুমুখী। পাওয়াও সহজ। পত্রিকা বা টিভির সংখ্যাও অনেক। কিন্তু অন্যরা যা পারেনি, কোনো একটি মাধ্যম তা করে দেখালে, এক্সক্লুসিভ সংবাদ প্রচার করতে পারলে তা নজড় কাড়ে সবার। সে কাজটি করতেই সহায়তা করতে পারে সোর্স।
মিডিয়াওয়াচে প্রকাশিত
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:০৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×