somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সর্প নিয়ে গপ্পো-সপ্পো!

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই ছড়াটাতো তোমাদের রীতিমতো মুখস্তই বলা যায় তাই না! সেই যে বাবুরাম সাপুড়ের ছড়াটা! বাবুরাম সাপুড়ের কাছে যতোগুলো সাপ ছিলো সেগুলো কিন্তু আমাদের এই পৃথিবীরই সাপ! পৃথিবীতে প্রায় ৩০০০ রকমের সর্প মানে সাপ আছে। ভাবছো তবেই সেরেছে তাই না! অবশ্য ভয় পাওয়ার খুব বেশী দরকার নেই, কারণ এদের মধ্যে বিষধর সাপের সংখ্যা মাত্র ৩৭৫টি। বিভিন্ন রংয়ের এবং বিভিন্ন আকারের সাপ সাগর থেকে শুরু করে মরুভূমি পর্যন্ত মোটামুটি পৃথিবীর সব জায়গাতেই আছে। কোনো কোনো সাপ মাত্র কয়েক ইঞ্চি লম্বা আবার কেউ কেউ এতো বড় যে আস্ত একটা হরিণও গিলে খেতে পারে। উনাদের কেউ কেউ গাছে চড়তে পছন্দ করেন, কারো আবার মাটির নিচে বাসাবাড়ি। চলো এরকমই কিছু মজার মজার সাপের কথা জেনে নেই।

বিশ্বের দীর্ঘতম সাপদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- অ্যানাকোন্ডা। এক একটা অ্যানাকোন্ডা জন্মের সময়ই ৩ ফুট লম্বা হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এরা ৩৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। অ্যানাকোন্ডারা আবার একা একা থাকতেই পছন্দ করে। দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন নদ-নদী বা হ্রদের পাশে এদের বসবাস। বিপদ দেখলে বা ক্ষুধা লাগলে এরা চটপট নেমে যায় নদীর পানিতে। গবেষকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন যে এই উভচর সাপ জীবনের বড় অংশটিই কাটিয়ে দেয় পানিতে।
সাপ শুনলেই মনের মধ্যে ভয়ঙ্কর একটা প্রাণীর ছবি ভেসে উঠে তাই না? কিন্তু চিন্তা করো তো একটা সাপ যদি মাত্র ২ ইঞ্চি লম্বা হয় তাহলে? হ্যাঁ, এই সাপের নাম ব্রাহ্মিণী সাপ। অনেকেই একে কেঁচো বা জোঁক ভেবে ভুল করতে পারেন। এই সাপ কিন্তু সবচে বেশী পাওয়া যায় আমাদের এই এশিয়া মহাদেশেই।

কালো মাম্বার নাম শুনেছ কখনো? শুনবে কিভাবে? এরা যে আমাদের দেশ থেকে অনেক দূরে আফ্রিকায় বসবাস করে। নাম কালো হলেও দেখতে এরা কিন্তু ধূসর রংয়ের। স্থলভাগের পা-বিহীন প্রাণীদের মধ্যে মাম্বা সবচে দ্রুতগামী। ঘন্টায় ১২ মাইল পর্যন্ত দৌঁড়ানোর ক্ষমতা আছে এই সাপের।
ব্যোমস্ল্যাঙ। কি বিদঘুটে নাম তাই না? আসলে এই ভদ্রলোকের কাজকর্মও বেশ বিদঘুটে প্রকৃতির। এর এক কামড়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মানুষ মারা যেতে পারে। ইনি আবার মাটির বদলে গাছে থাকতেই বেশী পছন্দ করেন। আর প্রিয় খাবার কি জানো? পাখি। সত্যিই কি বিদঘুটে তাই না?

উত্তর আমেরিকায় এক জাতের সাপ পাওয়া যায়, যার নাম সর্পরাজ, মানে সাপের রাজা। কেন জানো? কারণ এই সাপ ছোটখাটো প্রাণীদের তো খায়ই, অন্যান্য সাপদেরকেও ছাড়ে না। ক্ষুধার সময় আশেপাশে অন্য কোনো সাপ থাকলে ‘সর্পরাজ’ ছোবল দিয়ে, লেজ দিয়ে পেঁচিয়েই তাকে মেরে ফেলে। তারপর পুরো সাপটাই একেবারে গিলে ফেলে।

অধিকাংশ সময় রং দেখেই সাপের অভ্যাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়। উজ্জ্বল রংয়ের সাপগুলো সাধারণত বিষধর হয়। একদিকে তারা শত্রুকে দূর থেকে সতর্ক করে দেয়, অপরদিকে আকৃষ্ট করে শিকারকে। অন্যদিকে, অনুজ্জ্বল রংয়ের সাপ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্বিষ হয়। এরা এদের গায়ের রং ব্যবহার করে মাটি, গাছ বা পাতার সাথে নিজেকে লুকিয়ে রাখার জন্য।

এই রকমই একটি সাপ হলো সবুজ রংয়ের গেছো সাপ। গাছের পাতার রংয়ের সাথে রং মিলিয়ে এই দুষ্টু সাপ বসে থাকে লেজ ঝুলিয়ে। আর পাখি বেচারা লেজটাকে গাছের ডাল ভেবে যেই না বসেছে অমনি গপ্! একেবারে সেই গেছোবাবার পেটের মধ্যে চালান!

দেহের আকার এবং গঠনের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন প্রজাতির সাপের শিকার করার পদ্ধতিও ভিন্ন হয়। অজগরের মতো যেসব সাপ আকারে অনেক বড়ো, তারা সাধারণত: শিকারকে শরীর দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে মেরে ফেলে। আবার অধিকাংশ বিষধর সাপ ছোবল দিয়েই শিকার করতে পছন্দ করে। কিন্তু এমন কোনো সাপের কথা কি কখনো শুনেছো যে থুতু ছুঁড়ে শিকার করে? যদি না শুনে থাকো তবে জেনে রাখো, এই সাপের নাম হচ্ছে থুতু নিক্ষেপকারী গোখরা। আক্রমণকারীকে ভয় পাইয়ে দেয়ার জন্য এবং শিকার করার জন্য এই সাপ থুতুর মাধ্যমে বিষ ছুঁড়ে দেয়।

সাপ আবার একটানা অনেকদিন না খেয়েও বেঁচে থাকতে পারে। আমাদের যেমন খুব তাড়াতাড়ি খাবার হজম হয়ে যায়, তাই ক্ষুধাও লাগে খুব ঘন ঘন। সাপদের ব্যাপার স্যাপার কিন্তু খাবারের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আলাদা। খাবার হজম করতে তাদের অনেক সময় লাগে, ফলে ক্ষুধাও কম লাগে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে রাজগোখরা বেশ কয়েকমাস না খেয়ে থাকতে পারে।

ছোটবেলায় আমরা সবাই পড়েছি Snake Charmer বা সাপুড়ের গল্প। মনে আছে না সেই যে সাপুড়ের বাঁশির সুরে সুরে সাপ কিভাবে হেলেদুলে নাচে? মজার ব্যাপার কি জানো? সাপ কিন্তু মোটেও কানে শুনতে পায় না। সাপুড়ের বাঁশির সামনে দুটো ফুটো থাকে, জানো তো! সাপ ঐ ফুটোর দিকে তাকিয়ে থাকে। আর সাপুড়ে যেদিকে বাঁশি দোলায় সেদিকে সাপও দোলে।

সাপের মুখের গঠন অন্য সব প্রাণীর চেয়ে একটু ভিন্ন ধরনের। এর জিহ্বার ঠিক মাঝ বরাবর দুই ভাগে চেরা। বেচারা সাপের তো আর নাক নেই, তাই গন্ধও নিতে পারে না। এর জন্যই তার জিহ্বার এই বিশেষ ব্যবস্থা। এই ছেঁড়া জিহ্বা দিয়েই সাপ গন্ধ নিয়ে বেড়ায়।

সাপের চোয়ালের হাড় এমনভাবে জোড়া লাগানো যে মুখের চেয়ে তিনগুণ বড়ো খাবারও সে অনায়াসে মুখে ঢুকিয়ে দিতে পারে। আর এরা কখনোই খাবার চিবিয়ে খায় না। কিছু কিছু সাপের যদিও ২০০টিরও বেশী দাঁত আছে, তবে এই দাঁতগুলি ভিতরের দিকে বাঁকা হওয়ার কারণে শিকারকে কামড় দিয়ে ধরে রাখা ছাড়া আর কোনো কাজেই লাগে না।

আমরা সাপকে খুব ভয়ঙ্কর একটা প্রাণী হিসেবে জানলেও সচরাচর এরা কিন্তু খুবই লাজুক। সাপরা কিন্তু কখনোই দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় না, এমনকি ক্ষুধা না লাগলে বা নিজেরা ভয় না পেলে সাধারণত: আক্রমণও করে না। এখনও এই লাজুক প্রকৃতির প্রাণীটি সম্পর্কে অনেক মজার মজার বিষয়ই আমাদের অজানা রয়ে গেছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×