somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কনডম, রসায়ন, ম্যাডাম ব্লাজো, অতঃপর তৎসমরা -১

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কনডম
উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের ঘটনা। নটর ডেম কলেজের বাংলা প্রভাষক “অপরাহ্ণের গল্প” নামক একটি ছোট গল্প পড়ানোর পূর্বে আমাদের একটি গল্প বলেছিলেন। কনডমের গল্প। ঠিক কনডমের গল্পও নয়; কনডম পড়ার গল্প। গল্পটি ছিল অনেকটা এরকম-
কোন একটি এনজিও কোম্পানি গ্রামে ক্রমবর্ধমান জন্মহার নিয়ন্ত্রণে গ্রামবাসীদের কনডমের ব্যবহার সম্পর্কে অবহিতকরন এবং উৎসাহিতকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের আওতায় তারা স্থানীয় একটি কনডম ব্র্যান্ডের সহযোগিতা গ্রহণ করে। তারা গ্রামের মানুষজনকে ডেকে কনডম কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা হাতে কলমে বুঝিয়ে বলছিলেন। কনডম কোম্পানির এক ব্যক্তি একটি কনডম নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলে পড়িয়ে দেখালেন কিভাবে কনডম পড়তে হয় এবং বললেন স্ত্রীর সঙ্গে যৌন ক্রিয়া সম্পাদনের পূর্বে এভাবে কনডম পড়ে নিলে স্ত্রীর সন্তানসম্ভবা হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়। গ্রামবাসীরা এরপর থেকে যৌন মিলনের সময় নির্দেশিত উপায়ে কনডম ব্যবহার করতে শুরু করে। কিন্তু বেশ কিছু মাস পরে দেখা যায় গ্রামের মহিলাদের সন্তানসম্ভবা হওয়ার হার কিছুমাত্র হ্রাস পায়নি। এতে কনডম কোম্পানির এজেন্টরা যুগপৎ বিব্রত ও বিস্মিত। তারা কনডমের মানোন্নয়নের দিকে গুরুত্ব প্রদান করেন এবং গ্রামবাসীদের এবারে উন্নত মানের কনডম সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এবারেও অধিক উন্নত কনডমও গ্রামবাসীদের স্বতঃস্ফূর্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধিকরণ কর্মসূচিতে বিন্দুমাত্র বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। গ্রামের অশিক্ষিত শক্তিশালী পুরুষদের শক্তির কাছে পরাজিত কনডম কোম্পানির শিক্ষিত এজেন্টরা কনডমের মানের মতই অধিক লজ্জিত। বিচলিত এজেন্টরা এবারে তদন্তে নেমে পড়লেন। গ্রামের পুরুষদের ডেকে তাদের পুনরায় কনডমের ব্যবহারের কায়দা-কানুনের দিকটি তুলে ধরার পূর্বে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হল তারা আসলেই ঠিকভাবে ব্যবহার করছে কিনা বা কিভাবে করছে। তখন একজন যুবক সরলমনে উত্তর দিল, আমরা তো যৌন মিলনের পূর্বেই আপনারা যেভাবে দেখিয়ে দিয়েছিলেন ঠিক সেভাবে আমাদের বৃদ্ধাঙ্গুলে কনডমটি পড়ে নিই।

রসায়ন
রসায়নে আমাদের প্রথম পাঠটা শুরু হয়েছিল অষ্টম শ্রেণীতে। রসায়ন বিষয়টা প্রথম থেকেই খুব ভাল বুঝতে পারতাম। আমি খেয়াল করলাম যখন আমি বিভিন্ন বিক্রিয়ার সমতা বিধানের চেষ্টা করতাম ঠিক তখনও আমার অনেক সহপাঠী কোন একটি মৌলের সাথে আরেকটি মৌল বিক্রিয়া করে কি যৌগ গঠন করবে সেটা নিয়েই হিমশিম খেত। কেউ কেউ আমার কাছে মাঝে মাঝে রসায়ন বুঝতে আসত। তখন তাদের Na কেন K এর সাথে বিক্রিয়া করবেনা ধরণের প্রশ্নে আমি নিজেও কিছুটা বিব্রত বোধ করতাম। কখনও কখনও রসিকতা করে আমার সেই বন্ধুটিকে অন্য আরেকজন বন্ধুকে দেখিয়ে বলতাম, ওকে বিয়ে করবি?? যদি করেও নিস তার সাথে বিক্রিয়া করাটা সম্ভবপর নয়। আর জোরপূর্বক যদি বিক্রিয়াও করে ফেলিস তাহলেও এতটুকু নিশ্চিত থাক তোরা দুজন মিলে কোন উৎপাদ উৎপন্ন করতে পারবি না। এই ধরণের বিক্রিয়া অস্বাভাবিক আর উৎপাদ অসম্ভব। আমি বুঝতে পারতাম; আমার এ ধরণের উত্তরে তারাও বুঝতে পারত। বুঝতে পারত যে, তাদের অবশ্যই কোথাও বোঝার ভুল হচ্ছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমার অবুঝ মন রসায়নকে বিশেষভাবে জৈব রসায়নকে ভালবেসে ফেলল; সমসাময়িককালে সায়েন্সে পড়ুয়া আমার অনেক সহপাঠী বন্ধুর চোখের বিষ হয়ে উঠল রসায়ন, বিশেষভাবে জৈব রসায়ন। আর সেই সময় আমি আবিষ্কার করলাম আমার কিছু বন্ধুরা তখন রসায়নের নামে আমার নব্য প্রেমিকার জনক এবং তার চৌদ্দ প্রজন্মের জাত উদ্ধারে ব্যস্ত থাকত। রসায়নের জনক আল খারেজমি কিংবা আধুনিক রসায়নের জনক জন ডালটন, পর্যায় সারণীর জনক ইভানোভিচ মেন্ডেলীফ কিংবা জৈব রসায়নের জনক ফ্রিড্রিখ ভোলার...... পারতপক্ষে কেউই বাদ যেত না।
আরে অন্যদের কথাই বা বলছি কেন? আমাকেই দেখুন না। হয়তবা মুখস্থ করতে হত বলে, জীববিজ্ঞান আমার কাছে অসহ্য লাগত। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে আমি এখন পড়ছি ফলিত জীববিজ্ঞান (Applied Biology) নিয়ে। এই পর্যায়ে এসে বুঝতে পারলাম, নাহ, ভিত্তি জীববিজ্ঞানের (Pure Biology) কিছু জিনিস মুখস্থ করতে হলেও বোঝার ছিল অনেক কিছুই। অন্তত মুখস্থ করার আগে হলেও একবার বিষয়টা বুঝে নিয়ে মুখস্থ করতে হয়। কিন্তু তখন আমি জীববিজ্ঞান বুঝতে যাব তো দূরের কথা, পড়তেও চাইতাম না। পড়তে না চাওয়ার হেতু ছিল এই যে, বুঝতে পারতাম না। বুঝতে পারতাম না কেন?? কারণ আমি বিষয়টা পড়তাম না। আমি রীতিমত একটি দুষ্টচক্রে আটকে পড়েছিলাম। আর এখন এসে টের পাচ্ছি এই দুষ্টচক্রের প্রভাব। জীববিজ্ঞান না বুঝার কারণে না পড়া আর না পড়ার কারণে না বোঝা... এই করে আমার জীববিজ্ঞান বলতে গেলে কিছুই শিখা হয়নি।

ম্যাডাম ব্লাজো
চট্টগ্রামের খুব নামকরা একটি স্কুলে পড়তাম। দশম শ্রেণীতে আমাদের ইংরেজি ক্লাস নিতেন মাইকেল মুন্না রোজারিও মহাশয়। উনি আমাদেরই স্কুলের আরেকজন ইংরেজির শিক্ষক রুডলফ লুইস স্যারের ছাত্র ছিলেন। রুডি স্যার নবম শ্রেণীতেও আমাদের ক্লাস নিতেন। আমাদের স্কুলের খুব ভাগ্যবান ব্যাচের একটা ছিল আমাদের ব্যাচটি। কারণ আমরা হেনরিয়েটা ব্লাজো ম্যাডামের ক্লাসও পেয়েছিলাম। ভাগ্যবান বলছি এজন্য যে ব্লাজো ম্যাডাম রুডি স্যারেরও শিক্ষিকা ছিলেন। চাইলে অন্যভাবেও ভাবতে পারেন, নটরডেমে আমাদের ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন নির্ঝর স্যার আর জে কে স্যার ছিলেন নির্ঝর স্যারের শিক্ষক। আর নটরডেম কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রধান জে কে (জাহাঙ্গীর কবির, ওল্ড প্ল্যাসিডিয়ান) স্যারেরও শিক্ষিকা ছিলেন ম্যাডাম ব্লাজো। ২০০১ সালে অবসর গ্রহণ করার সময় ৪৮ বছরের শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ ম্যাডামের ইংরেজি জ্ঞান অসম্ভব ভাল ছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু তিনি ক্লাস নিতেন শুধুমাত্র অনূর্ধ্ব পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রদের। তখন আমি সম্ভবত তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি। বড় ভাইয়া ইংরেজিতে অনার্স পড়তেন। ঘরে উনিই আমাকে ইংরেজি পড়াতেন। ভাইয়ার বদৌলতে ক্লাসে হয়ত অন্যদের চাইতে ইংরেজি একটু ভাল পারতাম। তাতেই আমি ভাবতাম বেশ ভাল ইংরেজি পারি। প্রায় প্রতিদিন স্কুল থেকে ঘরে ফিরে এসে ইংরেজি খাতাটা নিয়ে বসে ব্লাজো ম্যাডামের নোটের ভুল বের করতাম। ভুলগুলো বের করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতাম আর খুব গর্ব করে ভাইয়াকে দেখাতাম। ভাইয়া দেখ, ম্যাডাম না আজকে আমাদের ক্লাসে এগুলো লিখিয়ে দিয়েছেন আর সেখানে এতগুলো ভুল। আর ভাইয়াও আমার এমন বালখিল্যতা দেখে মুচকি হেসে বলতেন, তুই তো অনেক ভাল ইংরেজি পারিস রে। ভাইয়া আমার পিঠ চাপড়ে দিত আর গর্বে আমার ছাতি ফুলে ছাতা হয়ে যেত।

কনডম, রসায়ন, ম্যাডাম ব্লাজো, অতঃপর তৎসমরা -২
তে সমাপ্য
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৩৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×