somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২২ কেজি চালে জীবন দিয়ে ঘাতক হলো আহাদুল

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অন্যরকম কষ্ট। গ্রামের মানুষ ওদের ঘাতক বলে, এ দুঃখ ওরা কাকে বলবে। মানুষ হত্যা তো দূরে থাক, ৩৮ বছরের জীবনে কোন মানুষের দিকে মুখ তুলে তাকায়নি আহাদুল।
সেই আহাদুল এখন ঘাতক নামে পরিচিত। দৌলতপুরের মানুষ জানে, ১৩ই নভেম্বর এমপি আফাজউদ্দিনকে মারতে গিয়ে নিজের দেহে বাঁধা বোমায় মারা গেছে আহাদুল। মাত্র ২২ কেজি চাল আর বউয়ের একটি শাড়ির বিনিময়ে ঘাতক হয়েছে সে। দৌলতপুর উপজেলা সদর থেকে আধা কিলোমিটার পশ্চিমে গোপীনাথপুর গ্রাম। এ গ্রামেই বাড়ি দিনমজুর আহাদুলের। জরাজীর্ণ একটি মাটির ঘর। মাথা গোঁজার ঠাঁই। সম্বল বলতে এটুকুই। বাবা তারাচাঁদ আলী, মা গোলাপজান বেগম। দু’জনেই এখন বয়স আর শোকের ভারে নত হয়ে পড়েছেন। দিনমজুর আহাদুলের স্ত্রী রজনী খাতুন দুই বছর বয়সী ছেলে মিলন এবং সাত বছরের ছেলে রাসেলকে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে জানে না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম লোকটিও আর নেই, তবু তো দিনে একবেলা আহারের নিশ্চয়তা ছিল। এখন সেটাও নেই। সামনে ঘোর অন্ধকার দেখছে রজনী খাতুন।
আহাদুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় অন্যরকম কষ্ট। সাত বছরের ছেলে রাসেলও মনে করে, তার বাবা মানুষ মারতে পারে না। তার বাবা ঠিকমতো হিসাব করতে পারে না, বাজারে গেলে দোকানদাররা বাবাকে ঠকায়, পয়সা কম দেয়, কাজে গেলে মালিকরা ঠকায়, ঠিকমতো টাকা দেয় না, যা দেয় বাবা রাজি হয়ে যায়, বাবা কিভাবে বোমা বানাবে, কিভাবে মানুষ মারবে, বাবার কি সেই বুদ্ধি আছে? সবাই মিথ্যা কথা বলছে। আহাদুলের মা গোলাপজান বেগম বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, ছোটবেলা থেকে বোকা স্বভাবের ছেলেটাকে রাস্তাঘাটে কেউ মারলেও নীরবে তা সহ্য করে এসেছে, কোন প্রতিবাদ করেনি। আমার এই বোকাসোকা ছেলে বোমা মেরে মানুষ মারবে- এটা মিথ্যা কথা। রজনী খাতুন শোকে দুঃখে পাথর হয়ে গেছে, তার বিশ্বাস কেউ তাকে ফুঁসলিয়ে এ কাজ করিয়েছে। তার স্বামী এমন কাজ করতে পারে না, সে হলো বোকার হদ্দ। মানুষের মুখের দিকে চেয়ে কথা বলে না, কথা বলে মাটির দিকে তাকিয়ে। এখন সেই নাকি এমপিকে মারার জন্য বোমা নিয়ে গিয়েছিল। রজনী খাতুন বলে, ঘটনার দিন সন্ধ্যার একটু আগে সে এসে ২২ কেজি চাল, আমার জন্য একটা শাড়ি আর দুই ছেলের জন্য দুইটা পিরান নিয়ে আসে। আমি তাকে জিগাই, তুমি টাকা পাইলা কই? কোন জবাব না দিয়ে সে চলে যায়। পরে রাতে শুনি এমপির বাড়িতে সে মারা গেছে। কথাগুলো বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে উঠে রজনী খাতুন, বলতে থাকে তার দুঃখের কাহিনী। গত তিন দিনে ছেলে দু’টিকে নিয়ে খাবার খেয়েছে মাত্র এক বেলা। গ্রামের মানুষ এসে তাদের নানা কথা বলে। কেউ বলে, তোমার স্বামী এমপিকে মারতে গিয়েছিল- সরকার এখন তোমাকেও জেলে নেবে। কেউ বলে তোমরা আর কোন দিন সরকারি সাহায্য পাবে না। আপনারা কন তো আমরা কি দোষ করেছি? আমার অবুঝ ছেলে দুইটা কি দোষ করেছে? আমার স্বামী মারা গেল তার কোন বিচার তো হবেই না। এখন শুনি আমাদের বিচার হবে। এ কি দোষের নিচে পড়লাম আমরা? এখন ছেলে দুইটাকে নিয়ে আমি কোথায় যাবো, কিভাবে ওদের খাবার জুটাবো?
১৩ই নভেম্বর কুষ্টিয়া-১ আসনের এমপি আফাজউদ্দিনের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয় দিনমজুর আহাদুল এবং তার চাচাতো ভাই সিদ্দিক। সিদ্দিক এলাকায় প্রতারক হিসেবে পরিচিত। জানা গেছে, সিদ্দিকই আহাদুলের অভাবের সুযোগ নেয়। কিছু টাকা দিতে চেয়ে তার শরীরে বোমা বেঁধে এমপির বাড়িতে পাঠায়। আহাদুলকে বলা হয়েছিল তোমার শরীরে একটি টেপরেকর্ডার বাঁধা আছে। এমপি এলে তুমি এই টেপরেকর্ডারের তারটা আলাদা করলে তার কথা টেপ হবে, এটা একজনকে শুনালে সে তোমাকে অনেক টাকা দেবে। সেই টাকার আশায় ইটভাটার শ্রমিক দরিদ্র আহাদুল নিজের অজান্তে ঘাতক বোমা শরীরে বেঁধে গিয়েছিল এমপি আফাজউদ্দিনের বাসায়। টাকা পাওয়ার আগেই লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরতে হয়েছে আহাদুলকে। অভাব আর ক্ষুধার যন্ত্রণা ঘাতকে পরিণত করেছে একজন নিরপরাধ মানুষকে। এ এক অন্যরকম কষ্ট।
মানব জমিন, ৫ /১২/২০১০
লায়েকুজ্জামান, কুষ্টিয়া থেকে:
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×