ফাইকাস ইলাস্টিকা নামের রাবার গাছের জঙ্গল আছে চেরাপুঞ্জিতে। ওই গাছগুলোই জীবন্ত সেতুর আসল কারিগর। দুই ধরনের শেকড় গজায় ওই গাছে। একটি থাকে মাটির গভীরে। আরেকটি বেরিয়ে আসে বাইরে। ওই বেরিয়ে আসা শেকড় খালের ওপারে পাঠিয়ে দিলেই তৈরি হয়ে যায় সেতু। আর এ কাজটি করে জঙ্গলের খাসিয়া আদিবাসীরা।
প্রথমে একটি সুপারি গাছ কেটে খালের এপাশ-ওপাশ ফেলে রাখা হয়। এরপর রাবার গাছের মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা শেকড় ওই কাণ্ডে পেঁচাতে থাকে। কয়েক মাসের মধ্যে ওপাশে গিয়ে শেকড়টা মাটি খুঁজে নেয়। এরপর ওপাশে শক্ত করে তৈরি করে ভিত। তার কয়েক মাস পর আবার মাটি ফুঁড়ে উঠে আসে শেকড়টা। এরপর সুপারি গাছ বেয়ে ফের এপাশে চলে আসে। এভাবে চলতে থাকে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। শেকড়ের এই আসা-যাওয়ায় ধীরে ধীরে ফুটে ওঠে একটি সেতুর অবয়ব। এর মাঝে কেটে যায় ১০-১৫ বছর!
সেতুগুলো শত বছরেও অক্ষত থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে শেকড়ের গাঁথুনি। ফলে যত দিন গড়াবে, তত মজবুত হবে সেতু। হাঁটাচলার মতো পুরু হলে একসঙ্গে ৩০-৪০ জন পার হতে পারে জীবন্ত এ সেতুর ওপর দিয়ে। হাঁটার সুবিধার জন্য খাসিয়ারা শেকড়ের গায়ে রেখে দেয় বড় বড় পাথর ও মাটির চাক।
তবে এর মাঝে একটি সেতু কিন্তু অন্যগুলোর চেয়ে একেবারেই আলাদা। বিশ্বে এমন সেতু একটিই আছে। কেননা, এই সেতুর রয়েছে দুটো স্তর। একই গাছের শেকড় থেকেই তৈরি করেছে দুই স্তরের দোতলা সেতু। সবাই চেনে 'উমসিয়াং ডাবল-ডেকার রুট ব্রিজ' নামে। এরপর চেরাপুঞ্জি বেড়াতে গেলে সেতুটা দেখে আসতে ভুলবেন না কিন্তু।
লেখা: নুসরাত জাহান, কালের কণ্ঠ(মূল এখানে)