somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রেট্রো টু রামাদান – ৭ (শেষ পর্ব)

০৯ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদ মুবারাক। ঈদের এই খুশীতে রমজানকে আবার স্মরণ কেন? কিন্তু এই রমজান ছাড়া ঈদুল ফিতরের কি মূল্য হতে পারে? সারা মাসের সিয়ামের পর আপনার জন্য ঈদ, এই তো পুরস্কার নেবার আনন্দ। আর ঈদের খুশী শুরু হয় শেষ রমজান থেকে।

ছোটবেলায় চাঁদ দেখার জন্য হৈ হৈ করতাম নানার বাসার ছাদে। কে কার আগে চাঁদ দেখতে পারে। চাঁদ দেখা হলেই মুনাজাত। মুনাজাতের পর পরই দৌড়ে গিয়ে সালাম, মা কে বাবা কে নানা-নানু মামা খালাদেরকে। ঐদিনই কিছু ঈদি পেতাম। ওটার নাম ছিল খুচরা ঈদি। এরপর ঈদের দিনের সালামী যেটা তা হল আসল ঈদি। পাড়ার মাইকে এনাউন্স হত টেক্সি করে – “ঈদ মুবারাক! ঈদ মুবারাক! সম্মানিত এলাকাবাসী – আগামীকাল সকাল ৮ ঘটিকায় -চান্দগাও মসজিদে - ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। নামাজে যথাসময়ে আপনার উপস্থিতি কামনা করছি। নারায়ে তাকবীর – আল্লাহু আকবার।” এই শেষের কথাটা কোন পলিটিক্যাল প্রোপাগান্ডা ছিল না। এটা একজন মুসলমান হিসেবে উজ্জিবীত হবার শ্লোগান ছিল – এখন এই তাকবীর হয়ে গেল শুধু বাংলাদেশের একটা পলিটিক্যাল দলের ব্রান্ড লোগো – আল্লাহ মাফ করুন।

চান রাতে বাসায় ছিল মেহেদী উৎসব। মেহেদী গাছ ছিল সেখান থেকে মেহেদী পাতা এনে – বেটে – এরপর লাগানো হত। মেয়েরা ডিজাইন করবে আর ছেলেরা ডিজাইন ছাড়া। মেহেদি হাতে ঘুমিয়ে পড়তাম ছেলেবেলায়। ঘুম থেকে উঠে লাল লাল মেহেদী দেখতে কি যে ভাল লাগত – বুঝাতে পারবো না।

চান রাত্তিরে মধ্যবিত্ত লোকের বাজারের মজাই আলাদা। আমি বন্ধুদের সাথে ঘুরতাম। অনেক তাড়াহুড়া, অনেক দাম ছাড়াছাড়ি। চান রাত্তিরে রিকশায় ঘুরে আকাশের ঈদের মায়াবী চিকন চাঁদটাকে দেখার মজা অন্যরকম। এরপর বাসায় ফিরে টুকটাক বাজার – ঘর গুছানোর হেল্প। আম্মু আর আমি নতুন পর্দা লাগাতাম, নতুন বালিশের গিলাপ, নতুন বেড কভার। এসব শেষে আমি নিজের কাপড় গুছাতাম। ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুতি।

ঈদের জামাত আমার জীবনে অনেক-রকম করে পালন করেছি। মসজিদের ঈদের জামাত পড়েছি সবচেয়ে বেশী। কিন্তু আমার খালুত সাথে জামিয়াতুল ফালাহ তে ঈদের জামাতে একটা অভিনব মজা পেয়েছি। আমার খালু ভোর রাত্রি ৪টা বাজে উঠে রেডি হতেন ঈদের জামাত পাবার জন্য। এই পিকুলিয়ারিটি আমিও ফলো করলাম এক ঈদে। ৪টায় রেডি হয়ে তারপর ৫টায় চলে যেতাম ঈদের জামাতে – ভাবতাম ‘আংকেল তো দারুণ ছেলে মানুষ। ৫টায় কেউ থাকবে না – একা একা কি করবেন?’ ঈদ ময়দানে পৌঁছে অবাক! কিছু মানুষ আমাদের আগে বসে আছে। উদ্দেশ্য প্রথম সারিতে বসবেন। আমরা গিয়ে ৩য় সারি পেয়েছি। প্রথম দুই সারি ফিলাপ। আমি তখন বুঝলাম এটা পাগলামী নয় – মুহাব্বাত। ঈদের জন্য প্রেম। প্রথম সারিতে বসার জন্য হয়ত কিছু লোকের ইচ্ছা হয় টেলিভিশনে দেখানো, তবে বেশীরভাগ লোক চায় সোয়াব। আমি সোয়াব দেখিনি- সোয়াব দেখা যায় না, সোয়াব এমন পুরস্কার যা অনুভব করা যায় আর তা মাপা যায় না। অনেক ভোরে অনেক মিনি হুজুর (যারা মাদ্রাসায় পড়ে) হামদ ও নাত গায়, খালি গলায়। কি যে সুন্দর – “মদিনা যাবো, রাসুলকে সালাম জানাবো” এই ধরণের কথাগুলো।

ঈদের নামায শেষে সালাম – সেমাই – ঈদি – কোলাকুলি – হাত মিলানো আরও কত কি। এই উৎসবের ভীড়ে অনেকেই খবর রাখে না রাস্তায় পাগলটা ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়া খাচ্ছে – তার ঈদ কই? কাজের ছেলেটা বারান্দায় ঝাড়ু দিচ্ছে আর মানুষের মসজিদ যাওয়া দেখছে – তার ঈদ কই? পঙ্গু ভিখারীরা কে কার আগে ভিক্ষা পাবে তার কম্পিটিশন করছে – যেন ঈদগুলো সাবান-পানির বুদবুদের মত উড়ে যাচ্ছে – এদের ঈদ কই? হাসপাতালে এখন ওষুধ দেবার লোক নেই, ধুকে যেতে হবে হয়ত বন্ধের এই কটা দিন, তার ঈদ কই? এসব প্রশ্ন তুললে দীর্ঘ শ্বাস বের হয়ে যায়।

আমার একটা অনুরোধ – ঈদের জামাত শেষে আর আজ যেহেতু শুক্রবার – জুম্মার নামায শেষে- কবর জিয়ারাত করবেন প্লিজ। কবর বাসীর কেউ আজ আপনার মত ঈদ করবেন না। কেউ নতুন জামা পড়বেন না, সেমাই সিন্নি মুখে দেবেন না, কোলাকুলি করবেন না – শুধু আপনার দিকে চেয়ে থাকবেন যাতে আপনি আজ একটা সালাম এরপর ঈদ মুবারাক বলেন। যাতে আপনি একটু জিয়ারাত করেন। আপনার এই জিয়ারাত তাদের সেমাই – পোলাউ। কবরবাসীকে দেখার চেষ্টা করুন, আপনি দেখতে পারবেন।

সত্যি আমি দেখেছি! আমি আজকে আব্বুর কবর জিয়ারাত করে এসে আম্মুকে বলেছি –
“আব্বু তোমাদের সবার জন্য ঈদ মুবারাক বলেছেন। আমি জিয়ারাত করা মাত্রই ফেরেশতারা অনেক অনেক আয়োজন করেছে। আব্বু বাকী কবরবাসীকে বলছেন – দেখো আমার ছেলে – এই ঈদে আমার জন্য কত কিছু নিয়ে এসেছে। আমাকে সে ভুলে যায় নাই। নেন আপনারাও আমার সাথে শেয়ার করুন।”

মিথ্যে করে ভাবুন। আপনার চোখে যদি জল আসে বুঝবেন আপনার দোয়া কবুল হয়েছে। ধন্যবাদ – ঈদ মুবারাক।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×