somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা আনলাইকলী হিরো

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ কি অভূতপূর্ব সাড়া জাগিয়েছে, বাঙ্গালীর ভেতর মুক্তিযুদ্ধের ঘুমন্ত চেতনাকে পুনরায় উজ্জীবিত করে দিয়েছে—এমন সব গাল ভরা উচ্ছাস বাণীতে তখন আকাশ বাতাস মুখরিত। দারুণ সফল এই আন্দোলনের ফসল কে ঘরে তুলবে এই নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে। সরকারী দল তো লাভবান হচ্ছেই, বাম দলগুলো ও স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিল এবার বোধ হয় তাঁদের কপালে কিছু ভোট জুটবে। একটা মিছিল করলে সেখানে লোক আসবে। দেশবাসী জানবে বামপন্থীরা এখনও জীবিত।
ঠিক তখনই ময়দানে আসলেন নতুন এক খেলোয়াড়। এসেই সব ওলট পালট করে দিল। এমনকি গণজাগরণ মঞ্চের কথা বার্তা ও পাল্টে গেল। ফাঁসির দাবী পাল্টে সেখানে জায়গা করে নিল একজনের গ্রেফতারের দাবী। মোমবাতির পাশাপাশি জ্বলতে দেখা গেল একটা দৈনিক পত্রিকা। ঠিক যেমনটি চেয়েছিলেন সম্পাদক সাহেব, ‘আমার দিকে নজর দাও, আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হ্যে পড়।‘ তেমনটিই ঘটতে লাগলো। সম্পাদক সাহেবকে বিষেদ্গার ছুড়তে রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল।
ঘটনার সুত্রপাত হল শনিবার অর্থাৎ মহাসমাবেশের পরের দিন থেকে। সম্পাদক সাহেব ইচ্ছে করেই মহাসবেশের রিপোর্ট কে ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে পেশ করলেন। সেখানে ফ্যাসিবাদের লক্ষণ খুঁজে পেলেন। মনে মনে চাইছিলেন রিপোর্ট টা পড়ে সবাই রেগে যাক। রেগে যেয়ে গালি গালাজ শুরু করুক। বাধ্য ছেলের মত গণজাগরণ মঞ্চের ছেলেরা তাই করল। একে একে বক্তব্যের ভাষা, বিষয়বস্তু পাল্টে গেল। সম্পাদক সাহেবের জীবনকাহিনী নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল বাকী সব সংবাদ পত্র। উত্তরার সেই ঘটনা সবাইকে মুখস্থ করার দায়িত্ব নিলেন অনেকে।
বিভিন্ন টক শো তে ও তিনি আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হলেন। গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তারাও ভাবলেন, এই মুহূর্তে মানবতা বিরোধী দের চেয়ে ইনিই বেশী মনোযোগের দাবী রাখে। তাঁর দিকেই মনোযোগ ঘুরে গেল। সবাই আদা জল খেয়ে তাঁর পিছনে উঠে পড়ে লাগলেন। মনে মনে হাসলেন সম্পাদক সাহেব, ‘এই তো চাই’। এরপর তিনি দ্বিতীয় চাল খেললেন। পত্রিকা মারফত সবাইকে জানাতে লাগলেন এই আন্দোলন আসলে শুরু হয়েছে কিছু নাস্তিকের ডাকে। এরা শুধু নাস্তিক না, ভয়ংকর ধর্ম বিদ্বেষী। আর সেই ধর্ম হচ্ছে এদেশের নব্বই শতাংশের ধর্ম ‘ইসলাম’। আর এরা সবচেয়ে বেশী কটাক্ষ করে আমাদের মহানবী (সাঃ) কে।
গণজাগরণ মঞ্চের আগুনে ঘি পড়ল। দ্বিগুণ উৎসাহে বিষেদ্গার শুরু হল। মেরে ফেলবার হুমকি, গ্রেফতারের আল্টিমেটাম, ঠিক যেমনটা চাইছিলেন সম্পাদক সাহেব। বেশ অবাক লাগলো কেউ গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তা দের ক্ষান্ত করার চেষ্টা করলেন না। সবাই উৎসাহ জুগিয়ে গেলেন। তাঁকে দেশদ্রোহী, উস্কানি দাতা এসব বিশেষণ দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কেউ একবার ও চেষ্টা করলেন না তাঁর দেয়া তথ্য গুলো যে ভুল তা প্রচার করার। ফেসবুক কিংবা ব্লগে প্রচার করেই তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন। ভাবলেন সবাইকেই আসল তথ্য বোঝানো হয়ে গেছে।
ফলাফলটা দেশ বাসী টের পেল শুক্রবারে। সমস্ত নজর যখন সম্পাদক সাহবের দিকে, তখন শিবির তাঁর হোম ওয়ার্ক শেষ করে ফেলল। মৃত রাজীবের নামে তাঁর মৃত্যুর পরে তৈরি করা ব্লগে মহানবী (সাঃ) সম্পর্কে অশ্লীল সব কথা লিখে পোস্ট করে দিল। আর সেই পোস্ট এর প্রিন্ট আউট কিছু ধার্মিক মানুষকে পড়িয়ে উস্কে দিল। সমাবেশ ডাকা হল। পুরো প্রক্রিয়ায় শিবির একবারের জন্যও সামনে এলো না। পর্দার আড়ালে সব কাজ সেরে রাখল। এই সতের দিন মাঠে না নেমে এই ধারণার জন্ম দিল যে তাঁরা রণে ভঙ্গ দিয়ে পালিয়েছে।
এরপর এলো বাইশ তারিখ। নামাজের সময় একরাশ মুসল্লি তো আসবেই মসজিদে। এর মাঝে মুসল্লি হিসেবে মিশে যাওয়া কোন সমস্যাই না। বিশাল মিছিল যে করবে তা অনুমিত ছিল। তা করলও। কিন্তু শাহবাগ দখল কিংবা সেখানে যেয়ে উৎশৃঙ্খলতা সৃষ্টি করবে বা করার চেষ্টা করবে তা ভাবে নি। কেন ভাবে নি এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা উচিৎ। উদ্যোক্তা রা কেন ফসল কাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, কেন ব্লগারদের একপাশে সরিয়ে দিয়ে ছাত্র নেতারা হঠাৎ মাঠ দখলে নেমে পড়লেন ঠিক বোধগম্য হয় নি। রাজনীতিবিদের ওপর অনাস্থা থেকেই তো এই আন্দোলনের সৃষ্টি। আর সেই রাজনীতির ভেতর ছাত্র এবং মুল ধারা দুটোই তো পড়ে।
পুরো ঘটনা থেকে উদ্যোক্তারা শিক্ষা নিয়েছেন এমনটা মনে হচ্ছে না। তাঁরা এখনও সম্পাদক সাহেবের পাতা ফাঁদে দুই পা ঢুকিয়ে বসে আছেন। তাঁর পরবর্তী ফাঁদ হচ্ছে সরকার কে দিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করানো, উদ্যোক্তারা সেই পথেই হাঁটছেন, আর ভাবছেন গ্রেফতার হলেই বুঝি জয় আসবে। সম্পাদক সাহেব তখন তাঁর পরবর্তী চাল চালবেন। দেশে বাকশাল পুনরায় আসছে এমন সব রিপোর্ট শুরু করবেন। উদাহরন হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে বলবেন, তিনি তো শুধু কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন, যা সরকারী দলের পছন্দ হয় নি। আর এই সরকার তাঁর চিরাচরিত স্বভাবে বিরোধী কণ্ঠ কে স্তব্ধ করে দিতে চায়। সেদিন থেকেই তিনি পেয়ে যাবেন ব্যপক পাবলিসিটি। টক শো তে সম্পাদক সাহেব, বাকশাল এসব হয়ে উঠবে আলোচনার বিষয়। সরকারী দলের দমন পীড়নের তথ্য নিয়ে নেমে পড়বেন বিরোধী দলের বক্তারা। ‘শাহবাগ’ আলোচনা থেকে হারিয়ে যাবে।
উদ্যোক্তা দের অদূরদর্শিতা দেখে হতাশ বোধ করছি। তাঁরা একবারের জন্যও কেন ভাবছেন না, শুক্রবারের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের এক শতাংশও সেই পত্রিকা পড়েছে কি না সন্দেহ। তাঁদের কাছে হয়তো মোবাইল ফোনে মেসেজ এসেছে, ‘অমুক মসজিদে জুম্মা পড়তে যাও। এরপর মিছিল করবা’। ক্যাডার ভিত্তিক এই দলটি ওপরের নির্দেশে যে কোন কিছু করতে রাজী। তাই পত্রিকাটিতে কিছু ছাপা না হলেও তাঁরা এই প্ল্যান ঠিকঠাক মতই সমাধা করত, যেমনটা করেছিল ‘রামু’ তে। কেন শুধু শুধু এই পত্রিকা আর তাঁর সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিষেদ্গার করে মুল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হচ্ছে? কেন তাঁরা একবারের জন্যও চিন্তা করছে না, এটাই শেষ আঘাত না। আঘাত আবার আসবে। চেষ্টা শুরু করুন সেই আঘাত সম্পর্কে জানবার। যেখানে যা তথ্য পান, পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে চেষ্টা করুন খুঁজে বের করতে দ্বিতীয় আঘাত কোথায় কখন হানবে। শুধু শুধু একজন সম্পাদক কে ‘হিরো’ বানাতে ব্যস্ত না থেকে দয়া করে মুল কাজে মনোযোগী হউন।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাইনারি চিন্তাভাবনা থেকে মুক্তি: পূর্ণাঙ্গ তুলনার ধারণা এবং এর গুরুত্ব

লিখেছেন মি. বিকেল, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩০



সাধারণত নির্দিষ্ট কোন বস্তু যা শুধুমাত্র পৃথিবীতে একটি বিদ্যমান তার তুলনা কারো সাথে করা যায় না। সেটিকে তুলনা করে বলা যায় না যে, এটা খারাপ বা ভালো। তুলনা তখন আসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×