নাটোর ও পটুয়াখালীর বাউফলে জঙ্গি সন্দেহে তিন শিশুসহ ২৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা নিজেদের কেবল ধর্ম প্রচারক বলেই দাবি করেছেন। পুলিশও তাদের কাছ থেকে অবৈধ কিছু পায়নি। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর :
নাটোর : নাটোর পৌরসভার বড় হরিশপুর মহল্লার একটি বাড়ি থেকে কালেমার জামায়াত নামে একটি সংগঠনের নাটোর জেলা জিম্মাদার ও তার স্ত্রী-সন্তানসহ ৯ জনকে আটক করেছে। আটককৃতদের সঙ্গে দুই থেকে চার বছর বয়সী তিন শিশুও রয়েছে। নাটোর সদর থানায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৫৪ ধারায় মামলা দিয়ে গতকাল দুপুরে জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হলে তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। আটককৃতরা নিজেদের নির্দোষ এবং শান্তিপ্রিয় ব্যবসায়ী বলে দাবি করেছেন।
নাটোর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর থানার পুলিশ শহরের বড় হরিশপুর চেয়ারম্যান রোডের আবদুল আলিমের বাড়ি থেকে প্রথমে কালেমার জামায়াত নামের ওই দলের সাত পুরুষ সদস্যকে আটক করে। আটককৃতরা হচ্ছে— দলের নাটোর জেলা জিম্মাদার ও রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার কান্দার গ্রামের শাহাদত্ হোসেনের ছেলে গোলাম মোস্তফা, নূরুল ইসলামের ছেলে রাসেল ভূঁইয়া, রাজশাহী শহরের ডিঙ্গাডোবা মহল্লার আতাহার হোসেনের ছেলে কবির হোসেন ও জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে সালমান ইসলাম, পুঠিয়া উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের আবদুল জব্বারের ছেলে আসাদুজ্জামান, আজিজুল ইসলামের ছেলে মনোয়ার আবসার, নাটোরের লালপুর উপজেলার নবীনগর গ্রামের মৃত আবদুস সোবহানের ছেলে হাফেজ ইদ্রিস আলী। পরে কাল দুপুরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই বাসা থেকে জেলা জিম্মাদার গোলাম মোস্তফার স্ত্রী রেবেকা সুলতানা ও হাফেজ ইদ্রিস আলীর স্ত্রী আকলিমা বেগমকে আটক করা হয়। গোলাম মোস্তফা ‘কালেমা জামাত’ দলের নাটোর জেলার জিম্মাদার এবং অন্যরা সদস্য বলে পুলিশের কাছে তারা স্বীকার করেছেন। তাদের সঙ্গে হাফেজ ইদ্রিস আলীর ছেলে আনাস (৪) ও মেয়ে আমিনা (২) ও গোলাম মোস্তফার একমাত্র মেয়ে মাইমুনা (২) রয়েছে।
গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা কোনো অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িত নই। আমরা শুধু মানুষকে রাসুল (সা.) ও তার কালেমার দাওয়াত দিয়ে থাকি, পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহের জন্য হার্ডওয়্যার, স্টেশনারি, স্যানিটারিসামগ্রী ও তালা-চাবি বিক্রি করি। আমাদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। অযথা আমাদের আটক করে হয়রানি করা হচ্ছে। গত শুক্রবার বাসায় আমার মেয়ের আকিকার অনুষ্ঠান ছিল। স্থানীয় মানুষজনকে দাওয়াত না করায় মহল্লার এক মাইক্রোবাসচালক মাতাল অবস্থায় বাসায় ঢুকে আমার ওপর হামলা চালায়। এর প্রতিবাদ করায় পরে তারা আমাদের জেএমবির সদস্য বলে চিত্কার-চেঁচাচেচি করে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, দাড়ি রেখে পাঞ্জাবি পরা এবং ধর্ম প্রচার ছাড়া কোনো অপরাধের সঙ্গে আমরা জড়িত নই।
পুলিশ জানিয়েছে, আটক করার সময় ওই বাড়ি থেকে কোনো অস্ত্র বা নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের জিনিসপত্র পাওয়া যায়নি। রিয়াদুল জান্নাত, হায়াতুস সাহাবাহ, মুক্তি পথের দিশা ও আহছানুল মুযাকারাহ প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড নামে পাঁচটি হাদিস বই পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানিয়েছেন, তারা একত্রে কালেমা ও ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তারা রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকেন না।
নাটোরের সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) আপেল মাহমুদ বলেন, হরিশপুর মহল্লার মাইক্রোবাসচালক গোলাম মোস্তাফার সঙ্গে আটককৃতদের গোলমালের সূত্র ধরে আমরা তাদের সন্ধান পাই। তারা নিজেদের কলেমা জামাতের সদস্য হিসেবে স্বীকার করেছেন। তাদের নেতা ভোলার চরফ্যাশন কলেজের কৃষি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবদুল মজিদ। আদৌ এ নামে কোনো সংগঠন আছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
বাউফল (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর বাউফলে জঙ্গি সন্দেহে ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে বাউফল থানা পুলিশ। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সোমবার রাত ১২টার সময় বাউফল সদর ইউনিয়নের গোসিঙ্গা জামে মসজিদ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ জানায়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন— জাকারিয়া (৩০), আ. করিম (৩৭), রবিউল (২০), সেলিম (২৪), শাখাওয়াত (৩০), মুতালেব (২৮), আবু তাহের (৪৫), আ. শহীদ (৪০), শরিফ হোসেন (১৫), বিল্লাহ (২৭), ইব্রাহিম (২৫), মেহেদী হাসান (৩৫), শাজাহান পাটোয়ারী (৪৫), রুহুল আমিন (৩২), মিজান (২২)। এদের বাড়ি শেরপুর, ময়ময়নসিংহ, ঝিনাইদহ, বরিশাল ও ভোলা জেলায়। এরা নিজেদের অমুসলমানদের দাওয়াতি কাফেলা এবং কুলসুমবাগ পায়েহাঁটা দলের ৩২নং জামাত পরিচয় দিয়ে ওই দলের প্রধান মো. জাকারিয়া সাংবাদিকদের বলেন, তাদের কাজ হচ্ছে অমুসলমানদের মধ্যে হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর নীতি, আদর্শ ও সত্যকে প্রচার করা। এই অঞ্চলে তাদের এ সংগঠনের মূল পরিচালক ভোলার চরফ্যাশন কলেজের সাবেক অধ্যাপক মো. আবদুল মজিদ। চরফ্যাশন থেকে এ কাফেলাটি গত ২৭ নভেম্বর ১৫ দিনের জন্য বাউফলে এসে গুসিঙ্গা জামে মসজিদে স্থান নেয়। ওই দলের সদস্য শাজাহান পাটোয়ারী বলেন, দাওয়াতি সময়ে তারা শুকনো খাবার মুড়ি, ছাতু ও পানি ব্যতীত অন্য কোনো খাদ্যসামগ্রী খাবেন না। এ ব্যাপারে বাউফল থানার ওসি শীলমনি চাকমা জানান, অধ্যাপক আবদুল মজিদ স্বাক্ষরিত এ কাফেলার নাম (অমুসলমানদের দাওয়াতি কাফেলা) ও দলের সব সদস্যের নাম ব্যতীত এদের কাছে জঙ্গি সংগঠনের কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তবে এরা জঙ্গি কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং আদালত থেকে আসল রহস্য বের করার জন্য সাতদিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১০ ভোর ৪:০০