somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাতাসে ফুলের সৌরভ

৩০ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যেদিকে তাকাই নানা রং আর গন্ধের ফুল। সৌরভ বাতাসে

যশোর শহর থেকে আমাদের ইজিবাইক ছাড়ল সকাল সাড়ে নয়টায়। হেমন্তের মিষ্টি সকাল। নরম রোদ। পরিষ্কার আকাশ, হালকা বাতাস। মনপ্রাণে অন্য রকম ভালো লাগা, আনন্দ। আমরা যাব ঝিকরগাছার গদখালী বাজার। রাজধানী শহরে যে ফুল আসে, তার সিংহভাগ চাষ হয় ওই এলাকায়। সেখানে একটি বাজার আছে। নাম গদখালী। ফুলচাষিরা খেত থেকে ফুল তুলে ওই বাজারে নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। খুব ভোরেই সেখানে বেচা-বিক্রি শুরু হয়। আমাদের ইচ্ছা, ফুলের চাষ দেখা। খেতে গিয়ে নভেম্বরের মিষ্টি রোদে ঘুরে তাজা রজনীগন্ধা, গোলাপ আর গ্লাডিওলাসের সুবাস নেওয়া।
ইজিবাইকে চড়তে মজা। ধীরে চলে। আশপাশের সবকিছু ভালোমতো দেখা যায়। কেবল চোখের-দেখা নয়, মনের দেখাও হয়। বারবার থামিয়ে ছবি তুলতেও অসুবিধা হয় না। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম সেই গদখালী বাজারে। ভোরে বাজার বসেছিল, তার চিহ্ন সর্বত্র। তখনো বেপারি গাঁদা ফুল নিয়ে বসে আছেন। এক হাজার গাঁদা মাত্র ৪০ টাকা। কয়েকটি গাঁদা হাতে নিয়ে দেখলাম। একদম তাজা, পাপড়িতে বিন্দু বিন্দু শিশির। কারও খোঁপায় ওঠার জন্যই যেন অপেক্ষা।
সকালে গদখালী বাজারে বেজায় ভিড়। নানা রকম মানুষ। চায়ের কাপে চামচের ঠোনাঠুনির শব্দ। টানা দুই কাপ মেরে বেশ ঝরঝরে করে নিলাম শরীরটাকে। এবার বাজার ছাড়িয়ে গ্রামের ভেতরে যাওয়ার প্রস্তুতি। সেখানকার ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম নিজে যেতে পারলেন না। তার একজন সহকর্মী, নাম মিজান, আমাদের সঙ্গে এলেন। ইজিবাইক এবার চলল ঝিকরগাছার পথে। বাতাসে ফুলের সৌরভ। বুক ভরে সুবাস নিলাম। আমরা পানিসারা ইউনিয়নে চলে এসেছি। জানা গেল, এই ইউনিয়নই ফুল চাষে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এখানে যাঁর জমি আছে, তিনিই ফুলচাষি। ডানে-বাঁয়ে, সামনে-পেছনে শুধু ফুল আর ফুল। গাঁদা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস। দূরে একটি গোলাপবাগান দেখা গেল। থেমে গেল ইজিবাইক। আমরা হুড়মুড় করে ছুটে গেলাম বাগানে। বাগানের মালিক আকবর হোসেন। নিজে ছুটে এসে প্রায় দুই ডজন গোলাপ তুলে হাতে দিলেন। এত তো চাই না আমাদের। সে কথায় কানই দিলেন না তিনি। আফসোস করলেন, তাঁর খেতের একটি বিশেষ গোলাপ আমাদের না দিতে পেরে। দুই দশক ধরে তিনি ফুলের ব্যবসার সঙ্গে আছেন। নিজের জমি তো আছেই, অন্যের জমি নিয়েও চাষ করেন। গত বছর তাঁর লাভ দুই লাখ টাকা। তাঁর মতো চার হাজার ফুলচাষি আছেন এই ঝিকরগাছায়।
ইজিবাইক থামিয়ে আমরা ঢুকলাম গ্লাডিওলাস ফুলের খেতে। মিজান আমাদের দেওয়ার জন্য চার-পাঁচটি গ্লাডিওলাস ছিঁড়লেন। এবার ভিন্ন চিত্র। দূরে গাছের ছায়ায় বসে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। তাঁরা রে রে করে তেড়ে এলেন। অবশেষে জমির মালিকের হস্তক্ষেপে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে এল!
মিজান আমাদের নিয়ে গেলেন জারবেরা ফুল দেখাতে। লাল, হলুদ রং। প্লাস্টিকের ছাউনির নিচে বিশেষ কায়দায় এ ফুলের চাষ করা হয়েছে। ফুলটি এ দেশে আনা হয়েছে ভারতের পুনে থেকে। বড় আদুরে এই ফুল। খুব যত্ন-আত্তি করা লাগে। খরচ বেশি হওয়ায় সর্বস্তরে চাষ এখনো শুরু হয়নি।
একটি খেতে দেখা গেল, রজনীগন্ধা কাটা হচ্ছে। কিন্তু পাপড়ি এখনো মেলেনি। কৃষক জানালেন, রজনীগন্ধা এ অবস্থায়ই কাটতে হয়। কাটার পর এই ফুল ঢাকায় পৌঁছাতে মাঝখানে সময় যায় প্রায় ৩৫ ঘণ্টা। এ সময়ই এটি পাপড়ি মেলে।
ঝিকরগাছা অঞ্চলে ফুলের চাষ শুরু হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। আর বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয় নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে। শুরুটা হয় শের আলী সরদার নামে ফুলচাষির হাত ধরে।। তাঁর কথা যখন আলাপ হচ্ছিল, ঠিক তখনই তাঁর দেখা মিলল। ৬৫ বছরের মতো বয়স। ভ্যানে করে যাচ্ছিলেন কোথাও। যেতে যেতে হাত নেড়ে বললেন, একটু ব্যস্ত আছেন। পরে কথা হবে।
পথে যেতে যেতে একটি খেত চোখে পড়ল। ফাঁকা। ঝরঝরে মাটি প্রস্তুত। জানা গেল, এখানে গ্লাডিওলাস লাগানো হয়েছিল। এখন আলুর চাষ হবে। দূরে মাঠে পাকা ধান। পাশেই টকটকে লাল গোলাপের বাগান। এর একটি খেত পরেই সাদা গ্লাডিওলাস। পাশে গাদা ফুল। ধান, আলু, গোলাপ, গ্লাডিওলাসের কী অপূর্ব সহ-অবস্থান। ফুলখেতে অসংখ্য রং-বেরঙের প্রজাপতি। দূরে দেখা গেল, এক কৃষক ঝুড়ি ভর্তি গোলাপ মাথায় নিয়ে খেতের ভেতর থেকে সড়কে উঠছেন।
এখানকার কিছু খেতে এখন ফুল আছে। কিছু খেতে ফুল আসবে আসবে করছে। আর এক-দেড় মাস পরে ঝিকরগাছা তার সব সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হবে। তখন সব খেতেই ফুল ফুটবে। চারদিকে শুধুই তাজা ফুল আর সুবাস। ইশ, কেন যে এক মাস আগে এলাম! এ রকম যখন ভাবছি, হেমন্তের সংক্ষিপ্ত দিন তখন ফুরোনোর পথে। গোধূলিলগ্নে বিদায় জানালাম ঝিকরগাছাকে, গদখালীকে।

কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে যশোর যাওয়া যায়। গাবতলীসহ একাধিক স্টেশন থেকে বাসগুলো ছাড়ে। সেখান থেকে ঝিকরগাছা প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ। যশোর থেকে গাড়ি ভাড়া করে আপনি সেখানে পৌঁছাতে পারেন। ইজিবাইকও নিতে পারেন। নামতে হবে গদখালী বাজার। সেখান থেকে আপনি যাবেন ফুলের গ্রামগুলোতে। যশোরে থাকার জন্য মোটামুটি ভালো মানের হোটেল রয়েছে। একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের রেস্ট হাউস আছে, যেগুলো বেশ ভালো।
View this link
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:১১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×