কূটনৈতিক প্রতিবেদক | তারিখ: ৩০-১১-২০১০
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। তাই ওবামা প্রশাসনের কাছে ফোকাস দেশ হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ। খাদ্যনিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে মেলবন্ধন—বিশ্বজুড়ে সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রধান এই চারটি বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
গতকাল সোমবার এ মন্তব্য করেছেন ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রসচিব অ্যালিসা এয়ার্স। তিনি গতকাল প্রথম আলোর কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন। প্রথম আলোর সভাকক্ষে আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, শিক্ষক, সুশীল সমাজ, শিল্পোদ্যোক্তা, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা জানান, তাঁর দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির পাশাপাশি মার্কিন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে মানুষের ধারণা সম্পর্কে জানতে গত আগস্টে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি এই প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসেন। তিনি বলেন, এ সফরের অন্যতম মূল লক্ষ্য দুই দেশের চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আগামী দিনে আরও সুদৃঢ় করা।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উল্লেখ করতে গিয়ে সম্প্রতি লন্ডনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং-বিষয়ক আয়োজন নিয়ে তাঁর মুগ্ধতার কথা জানান। তিনি বলেন, ওই সমাবেশে বাংলাদেশকে এশিয়ার পরবর্তী বড় সম্ভাবনা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের ইতিবাচক ছবিটা তুলে ধরতে তৈরি আছেন। এ দেশের সৃজনশীলতা ও বৈচিত্র্য তুলে ধরার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে বাংলাদেশকে উজ্জ্বলভাবে উপস্থাপন করার সম্ভাবনা রয়েছে।
মতবিনিময় সভায় ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে উন্নয়ন-সহায়তা হিসেবে যে পরিমাণ অর্থ দেয়, তার পরিমাণ খুব কম। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা বাণিজ্য-সম্পর্ক সম্প্রসারণ করতে চাই। এ লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের প্রবেশাধিকার প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ক্রমেই বিকশিত হচ্ছে, দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের পোশাক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সাধারণকৃত অগ্রাধিকার সুবিধা (জিএসপি) পেতে তিনি ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তার কাছে অনুরোধ জানান।
ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক লতিফুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মধ্যে কিছু সংবেদনশীলতা আছে। এর কিছুটা ধারণা, বাকিটুকু অতিরঞ্জন। প্রতিবেশীর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে সহযোগিতা অর্থবহ হয়ে ওঠে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সাবেক কূটনীতিক আশফাকুর রহমান বলেন, মানুষের এমন ধারণা রয়েছে যে ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি এ অঞ্চলে দেশটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে।
মতবিনিময় সভায় অংশ নেন: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, মাহবুবুল আলম ও রাশেদা কে চৌধুরী, সাবেক সেনা কর্মকর্তা আমিন আহমেদ চৌধুরী ও এ টি এম জহুরুল আলম, সাবেক কূটনীতিক তৌফিক আলী, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সহসভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান ও বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্মকর্তা গাউসুল আজম। এ ছাড়াও মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা জন ডেনিলোউৎজ, প্যাট্রিসিয়া হিল ও মেরিনা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় স্বাধীনতার ৪০তম বার্ষিকী উদ্যাপনের ব্যাপারে মার্কিন কর্মকর্তারা জানতে চাইলে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান জানান, বিজয়ের চার দশক পূর্তিতে দেশে-বিদেশে বছরজুড়ে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
এ সময় মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা লরেন লাভলেস জানান, বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার দশক পূর্তি উপলক্ষে আগামী বছর মার্কিন দূতাবাস বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছে।
প্রথম আলো সম্পাদক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পাঁচ দিনের সফরে এয়ার্স রোববার ঢাকায় এসেছেন। বাংলাদেশ সফরকালে তিনি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিল্পোদ্যোক্তা ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
পাঠকের মন্তব্য