somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশান্তর

৩০ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শব্দের প্যালেট

বাতাবী লেবু, টক, মিষ্টি, রসগোল্লা, সাগরদাঁড়ি, মধুসূদন, রাজবাড়ি, ত্যাজ্য, বিবাহ, অমত, বাবা, মা, দেশী সমাজ,মেয়ে, সুন্দরী, কালো, ছাতা, শিক, স্পোক, সাইকেল, প্যাডেল, নৌকা, মাঝি, আব্দুল আলীম, গান, পল্লীগীতি, ভাটিয়ালী, মারফতি, মাইজভাণ্ডারী, দয়ালবাবা, হোটেল, বুন্দিয়া, পরটা, নান, নানচাকু, কংফু, ক্যারাতে, রুবেল, বাট্টু, বিজ্ঞাপন, লম্বা হওয়া, পত্রিকা, শিরোনাম, ব্রেকিং নিউজ, দু:সংবাদ, মৃত্যু, প্রাণহানি, কোরান খানি, কুলখানি, কাঁদা, অশ্রু, বিদায়, চাটাই, হোগলা, সুন্দরবন, অরণ্য, হিরণপয়েন্ট,দুবলার চর, মেলা, ভীড়, শব্দ, বাঁশি, চরকি, শৈশব, হাফপ্যান্ট, দুরন্ত, ঝড়, আম, জাম, টক, মিষ্টি, বাতাবী লেবু


সাগরদাঁড়ির রেস্ট হাউজে ঘুম ভেঙে বঙ্গের মোবাইল প্যান্টটা পরে হেটে আসতেই জীর্ণ শীর্ণ কপোতাক্ষ নদ চোখে পড়ে। কচুরিপানা ফুটে আছে। যেন একটা ডোবা। সাঁকো বেয়ে লোকজন নদী পার হচ্ছে। নদী নয়, যেন থ্যাতলানো ইঁদুরের লেজ। একটু দুরে ফুল মিয়ার নাস্তার হোটেল। কোন সাইনবোর্ড নেই। ভোর থেকে কর্কশ স্বরে গান বাজছে। নাস্তা করতে ঢুকে গেলাম। অফ সিজন। বুন্দিয়া আর পরোটা দিয়ে গেল একটা কিশোর। প্রায় হোটেলেই এমন অল্পবয়সী ছেলে কাজ করে। নতুন কিছু নয়।

কিন্তু ছেলেটা কথা শুনে চমকে গিয়েছিলাম। সঙ্গে গোটা তিনেক বন্ধু। এরা কেউ খেয়াল করেনি ছেলেটার ভাষা স্থানীয়দের সঙ্গে মিল খায় না। সাগরদাঁড়ি যশোর থেকেও অনেক দুর। কেশবপুর থেকে হেলিকপ্টার বা শেয়ারের মোটরবাইকে এখানে আসতে হয়েছে। হয়তো সেজন্য সবাই খুব ক্ষুধার্ত। পাতলা ঝোলের রসগোল্লা দিয়ে মচমচে ভাজা পরটা গিলতেই ব্যস্ত হয়েছে। কৌতুহল নিবৃত্তি করতে ছেলেটাকে ডিম আর বুন্দিয়া দিয়ে যেতে বললাম।

নিশ্চিত হলাম সে বিশুদ্ধ দক্ষিণাঞ্চলের ভাষায় কথা বলছে! নোয়াখালি বা লক্ষীপুর অঞ্চলের ভাষা । অনেক দুর। দেশের এপার আর ওপার। এতদুর সে কী করে এল? কেন এল? কাজের সন্ধানে? কে আনলো? সে বললো অনেক ছোট থেকে তার মায়ের সঙ্গে সে পথে পথে ঘুরেছে। ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য মাটি কাটার, ইট টানা কোনটাই বাদ যায়নি। তারপর এখানেই আছে।

ভাবছিলাম যে মাতৃভূমি থেকে বিলাত পাড়ি জমিয়েছিল মধুসূদন। তার উদ্দেশ্য ছিল অনেক উপরে যাওয়া। আর ছেলেটা পাড়ি জমিয়েছে মধু কবির জন্মস্থানে। নিতান্ত উদ্দেশ্যহীন ভাবে।

জমিদার বাড়ির ছায়া পড়েছে সাদা বাধানো ঘাটে। কাজ করা দরজা জানালা। জমিদার বাড়ি বলে চিনতে ভুল হয় না। সারি সারি গাছ। সেই বাড়ির আদুরে সন্তান বিলেতে পাড়ি দিয়েছিল। যদি সেখানে তার অর্থাভাব না হতো। কেপটিভ লেডি লিখে বিশাল কাটতি হয়ে যেত। বিলাতের সবাই মাথায় তুলে রাখতো তাকে। তবে কি কবি এত দেশপ্রেমিক হত? ধর্মান্তরিত মাইকেলের পকেট ঝন ঝন করতো মুদ্রায়। তবে কি কপোতাক্ষ নদের জন্য কবি কাঁদার সময় পেতো? কবিতা লিখতো? প্রিয় কবির বাড়িতে বেড়াতে এসে এসব প্রশ্ন অদ্ভুত ভাবে মাথায় ঘুরছিল।

ছেলেটা কাছে এসে দাড়ালো। বাদামী চিকন হাত, কাদা মাখা খালি পা। পানি ভর্তি কাচের গ্লাস বাড়িয়ে দিয়েছে। মধুকবির বাড়ির অদুরে পিকনিকের খাবার রান্না করার জন্য কাঠ-কয়লা দেখেছিলাম। বিদেশীরা এখানে আসে। হয়তো বকশিশ দেয় ভালই। আর সেজন্য ছেলেটা আগন্তুক দেখলেই ঘুর ঘুর করে।

মধুকবির মতো প্রবল দেশপ্রেম তারও আছে। কিন্তু ছেলেটা লক্ষীপুরের ভাঙা বাড়িতে গিয়ে কি করবে? হয়তো তার কোন বাড়িও নেই। তার পৈত্রিক সম্পত্তি নেই, স্মৃতিও নেই। সে খুব সরল ভাবে বললো তার ইচ্ছা বড় হলে একটা অনেক বড় ভাতের হোটেল দেবে। বিরাট ডেকচিতে ভাত রান্না হবে। অনেক টাকা হবে । লাভ হলে সে বাড়িতে আর যাবে না।
----
ড্রাফট ১.০
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩২
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×