somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙ্গালের দোষ, তার পাসপোর্ট

২৯ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১. দেশে এখন রাজনীতির হওয়া বেশ গরম ...ঢাকায় ২৬ নভেম্বরে গিয়েছিলাম...
রাস্তায় হরতালের চেয়ে হরতাল বিরোধী প্রচারনাই বেশি...বাসের গায়ে পোস্টার...ব্যানার...সব হরতালবিরোধী ...শুধু পত্রিকায় হরতালের ডাক পাওয়া যায়... বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেন ক্রিয়ার চেয়ে প্রতিক্রিয়ায় বেশি ...বাড়ি গেল একজনের...গাড়ি পুড়ল কত জনের ....কারণ হরতাল পালন করাটা সহজ ...একটা প্রেসব্রিফিং দিলেই হলো...কিন্তু হরতাল ঠেকানটা কঠিন...যেটার চেষ্টা সরকারী দল প্রতিবার করে...কিন্তু হিতে বিপরীত হয়...

মজা পেলাম..বনানী মোড়ের দুইটা জিনিস দেখে...একটা হলো ঘড়ি বিক্রেতা...ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি বেচতেছে...বালতির পানিতে ঘড়িগুলো চুবিয়ে রাখা ...সত্যি ওয়াটার প্রেফ...তার চাক্ষুস প্রমান...
আরেকটা মজার জিনিস হলো ...সম্মিলিত ইসলামিক জোটের পোস্টার...সেখানে হেডিং দেয়া "দেশবাসী সাবধান , খালেদা জিয়া মদ খান"...সাথে একটা ছবি... সাদা কালো ...খালেদাজিয়ার হাতে কাচের পাত্র..তাতে কালো পানি..পাশের চেয়ারে একজন পুরুষ ...সুট কোট পড়া... উনার হাত চিয়ার্র্স করার ভঙ্গিমায় তোলা...খুবই আনাড়ি ফটোশপের কাজ ..লোকজন ভীড় করে দেখছে..

মদ খাওয়া কাজটা মোটেও মারাত্মক মাত্রার খারাপ না...কারণ যে মদ খায়...সে নিজের পয়সায় খায় ..বরং এরচেয়ে হরতাল অনেক বড় মাত্রার অপরাধ...কারণ সে দেশের ক্ষতি করে ...কিন্তু ভদ্রসমাজে "আমি মদ খাই".. বললে ছি: ছি: রব উঠলেও...আমি হরতালে ভাংচুর করি বললে...কেউ নাক সিটকায় না

-----------------------------------------------------------------------------
২. পরদিন ২৭ নভেম্বরে আমার ফ্লাইট ছিল...রাত ১১:৩০এ যখন LCCT Airport, Kuala Lumpur এ নামলাম, তখন কানে ভনভন...খিদাও পাইছে বেশ...
এই এয়ারপোর্টটা আমার চেনা..অনেকবার এসেছি...তাড়াতাড়ি চলে আসলাম ইমিগ্রেশনের কাউন্টারে ...কিন্তু বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীদের আলাদা লাইন করতে বলা হলো...
মাথায় চুল ছোটো করে ছাটা একজন অফিসার এসে বাংলায় জিজ্ঞাসা করলো "বাংলা?...সিনি সিনি(মালে ভাষা ) ...এদিকে এদিকে "
ইমিগ্রেশন কাউন্টার থেকে দুরে দার করানো হলো ৩০-৩৫জোন বাংলাদেশীকে ...যারা ফ্যামিলি নিয়ে এসেছেন.. তাদের যেতে দেয়া হলো ...বাঙালি মহিলাদেরকেও সোজা ইমিগ্রেশন কাউন্টারে পাঠানো হলো ...সাদা চামড়ার একটা মেয়ে এসে কিছুক্ষণ আমাদের লাইনের আসে পাশে বিভ্রান্ত হয়ে ঘুরাঘুরি করলো ..সেও ঠিক বুঝতে পারছে না...এদিকে এই আলাদা লাইনের কারণ কি ..একজন মহিলা অফিসার ব্যস্ত হয়ে মেয়েটাকে বুঝিয়ে দিল...তার স্থান এখানে না...এটা বাংলাদেশীদের স্পেশাল লাইন
আমি এগিয়ে গিয়ে পরিচয় দেই না ..."আমি একজন ছাত্র...ওয়ার্রকার না"...কারণ ওরাতো পরিচয় জানতে চায় নি ...তাদের একটাই বিভাজন "বাংলা?"বাঙালি হলে সটান লাইনে

আমাদের সবুজ পাস্পর্র্ট দেখেও ওরা নিশ্চিত হয় না ...কারণ পাসপোর্ট বানানোর হাজার কৌসল আমরা অনেক আগেই দেখিয়েছি ...হাজারখানেক অবৈধ শ্রমিক এখনো মালেশিয়ার রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়...পুলিশ দেখলে ঘুষ দেয়...রাতের বেলা বাজার করে ...কবে একটা চাকরি পাবে - বৈধ ওয়ার্র্ক পারমিট পাবে সেই আশায় ...

চাপ দাড়িওয়ালা একজন বাংলাদেশী যুবক এগিয়ে গিয়ে অফিসারের কাছে জানায় তার পরিচয়...তার উচ্চারণে ব্রিটিশ ঝাজ ...পেছন থেকে কে যেন বলে "লাভ নাই মামা ...হালারা ইংরাজি বুঝে না"

কিছুক্ষণ পরে সেও অপ্রস্তুত হয়ে লাইনের পিছনে দাড়ায় ...কয়েকজন লাইনে সামনে যাবার জন্য ফাক ফোকর খোজে ...আমি দাড়িয়ে থাকি ..পিঠের ৭কেজি বোঝাটা নামিয়ে রাখি ..২০-২৫ মিনিট পরে...৪/৫ জন মালেশিয়ান অফিসার(২ জন মহিলা )...আমাদের লাইন ধরে হটিয়ে নিয়ে যায়...দূরে একটা করিডরে...চিপা...করিডরে ঘন হয়ে দাড়ায় সবাই...সবাই কম বেশি বিরক্ত ...আমিও ..

আমি এইজন্য বিরক্ত না...যে আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র, বাংলাদেশে অন্যতম সেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছাত্র ...আমাকে এভাবে অবৈধ শ্রমিকদের মত সন্দেহ করার জন্য আমি বিরক্ত না ...কারণ ওই শ্রমিকরা আমার গ্রামের মত একটা গ্রাম থেকেই এসেছে ...

আমি বিরক্ত হই...যখন ওরা অশুদ্ধ বাংলায় বলে "পাস্পর্র্ট দাও"...একটা কাগজের কার্টুনে সবাইকে পাস্পর্র্ট রাখার ইঙ্গিত করে
আমি এগিয়ে গিয়ে বলি "ইংলিশ প্লিজ"...এবারে খাটি মালে ভাষায় উত্তর আসে "পাস্পর্র্ট সিনি"...হাত বাড়িয়ে কার্র্তুনটা সামনে ধরে ...টিকিট বোর্ডিং পাস সহ বাক্সে ফেলে দেই...
গাট্টাগোত্তা অফিসার আবার মালে ভাষায় জানায় "পাস্পর্র্ট সাহাজা"...(সাহাজা মানে অনলি)..আমি ভ্রু কুচকে না বুঝার ভান করে বলি "হোয়াট?"
আমার বোর্ডিং পাস আর টিকিট বাক্স থেকে তুলে বাড়িয়ে দেয়.... খুবই বিরক্তভাবে


সবার পাসপোর্ট জমা হবার পর...ছোটো করিডরে সবাইকে লাইনে দাড় করে...আবার লাইনে সামনে যাবার একটা হালকা হুরাহুরি ...মহিলা অফিসাররা মাঝরাতের এই নাটকে বেশ মজা পায় ...তারা হাসা হাসি করে
গাট্টা গোত্তা অফিসার এবার হুকুম করে "বসো বসো (বাংলায়...যেন বাঙালিরা এটুকু ইংরেজিও জানে না ..তাই বাংলা শিখেই এরা এসেছে তারা)"...দুই হাত নেড়ে বুঝলো মাটিতে বসতে হবে
লোকজনের মধ্যে চাপা গুঞ্জন ...ও চরম বিরক্তি ...কে জানি বাংলায় "হালার পুত " টাইপ একটা গালি দিল..আমার কানের ভনভন আওয়াজটা মনে হয় আরো বেড়ে গিয়েছিল...পরিস্কার শুনতে পাই নাই ...অনিচ্ছা স্বত্তেও একে একে সবাই বসলো ...মাটিতে ...আমিও
কম বয়সী মহিলা অফিসাররা ...একে অপরের গাটিপে হাসে ...যেন নাটকের এই অংশে তাদের বড্ড মজা

এরপরে একে একে দেকে পাস্পর্র্ট পরীক্ষা করে প্রায় সবাইকেই ছেড়ে দিল ...সোজা ইমিগ্রেশন কাউন্টারে ...গিয়ে আবার চেকিং

এইরকম ছোটো খাটো (!) বঞ্চনা প্রবাসে মেনে নেয়ায় যেতে পারে ...কারণ এটা ওদের দেশ ...নিজের দেশে নিরাপত্তার খাতিরে ওরা যেকোনো পদক্ষেপ নিতেই পারে
আর আমরা বাংলাদেশী ...আমাদের নিজেদের কোনো মান ইজ্জ্বত নাই ..নেংটি খুলে যাক তবু ..নেত্রীর মান ইজ্জ্বতে আঘাত আসলে আমরাদের লড়াইয়ে নামতে হবে ....নিজেদের ধংস করার নেশায় পাইছে আমাদের ... শরম
কিসের? আমরাত নিজের দেশটাকে অতল কোন বালতিতে চুবিয়ে রাখছি...প্রমান করেছি আমরা শরম-লজ্জাপ্রুফ...


লেখাটি ব্লগস্পটে প্রকাশিত :২৮ নভেম্বর, ২০১০
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ৯:৩৪
১৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×