somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মীর শওকত আলী

২৯ শে নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"সাধারণত রাতে ঘুমানো সম্ভব হত না। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দু'টি অপারেশন-এর ফাঁকে দিনের বেলায় কিছু সময় ঘুমিয়ে নিতাম। সাধারণতঃ সৈনিকের পোষাকেই ঘুমিয়ে পড়তাম। সৈনিকের পোষাক বলতে খাঁকি হাফপ্যান্ট এবং একজোড়া বুটই আমার পরনে থাকত।...একটা ঘটনা বলি। আমি রামগড় থেকে সীমান্ত অতিক্রম করার পর (২রা মে, '৭১ থেকে জুন, '৭১-এর মাঝামাঝি সময়ে) জেনারেল ওসমানী সাহেব ওখানে গিয়েছিলেন আমাদের দেখতে। আমি তখন অপারেশনে ব্যস্ত। আমার পরনে শুধু একটা খাঁকি হাফপ্যান্ট এবং পায়ে একজোড়া বুট ছিল। গায়ে কোনো গেঞ্জি ছিল না। মাথা থেকে সমস্ত শরীর ছিল ধুলাময়। খবর পেয়ে ঐ অবস্থায়ই জেনারেল সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম। এই একটি মাত্র ঘটনা থেকেই অনুমান করতে পারেন কি অবস্থায় আমরা যুদ্ধ করেছি।"

এই কথাগুলি বলেছেন ৫নং সেক্টরের কমান্ডার লে. জেনারেল. মীর শওকত আলী। যিনি নিজের জীবন বাজী রেখে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। অসম সাহসী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্য 'বীর উত্তম' খেতাবে ভূষিত হন।

মীর শওকত আলী মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, বিডিআর, পুলিশ ও মুক্তিযুদ্ধে উৎসাহী কিছু ছাত্র-জনতা সহ প্রায় চারশ' জনকে নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। পরে ডিসেম্বর নাগাদ সেই সংখ্যা প্রায় বিশ থেকে বাইশ হাজারে গিয়ে দাঁড়ায়। তার মধ্যে বার হাজার ছিল তালিকাভূক্ত। বাকি দশ-বার হাজার ছিল তালিকার বাইরে। মীর শওকত আলী অসংখ্য যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে লড়েছেন।

মীর শওকত আলীর জন্ম ১৯৩৮ সালের ১১ জানুয়ারি পুরানো ঢাকায় নাজিরাবাজারে। এখানের ৯ আগাসাদেক রোডে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। প্রথমে তিনি কিছুদিন ঢাকার মাহুতটুলির ফ্রি-প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়া করেন। পরে ১৯৪৫ সালে ঢাকার আরমানীটোলা সরকারি উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে এসে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে তিনি এই স্কুল থেকেই মেট্রিক পাশ করেন। পরে ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৫ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। কলেজ জীবন পার করেই মীর শওকত আলী পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে সেনাবাহীতে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে ভর্তি হন। ১৮৫৮ সালে তিনি গ্রাজুয়েট ডিগ্রী লাভ করেন। একই সময়ে তিনি সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্তও হন। তিনি ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন রেজিমেন্টে অ্যাডজুটেন্ট, কোয়াটার মাস্টার, কোম্পানী কমান্ডার সহ সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীতে কাজ করেন। মীর শওকত আলী ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে বীরত্বের সাথে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে কোয়েটা স্টাফ কলেজ থেকে চট্টগ্রামের ষোল শহরে ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে পোস্টিং দিয়ে পাঠানো হয় তাঁকে। ১৯৭১ সালের মার্চের প্রথম ভাগে তিনি ছুটি ভোগ করছিলেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর যখন ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন মীর শওকত আলী ছিলেন চট্টগ্রামে। সেসময় ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডার ছিলেন কর্নেল ঝানঝুয়া এবং সেকেন্ড-ইন-কমান্ডার ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। পঁচিশে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বর্বর হত্যাকান্ডের খবর মীর শওকত প্রথম পান চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হান্নানের কাছ থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে।

এ সময়ই মেজর জিয়াউর রহমান ও মেজর শওকতের নেতৃত্বে ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙ্গালি সৈন্যরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রথমে শওকত আলী মেজর জিয়ার সাথে এক নম্বর সেক্টরে সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসাবে কাজ শুরু করেন।

মেজর জিয়া ৩০ মার্চ রামগড় হয়ে সীমান্তের ওপারে চলে যান। তখন পুরো বাহিনীর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন মীর শওকত আলী। আর্মি, বিডিআর, ছাত্র-জনতা এবং আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক দল নিয়ে গঠিত বাহিনী নিয়ে ২রা মে পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যান তিনি। সেই সময় মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর সাথে প্রথম সাক্ষাৎ হয় মেজর শওকতের। এর আগেও অবশ্য দু'একবার ওসমানী অয়ারলেস নির্দেশ তিনি মহালছড়ি পার্বত্য এলাকায় পেয়েছেন। প্রবল হামলার মুখে ২রা মে বিকেলে মীর শওকত রামগড় অতিক্রম করে সীমান্তের ওপারে চলে যান। ভারতে অবস্থানকালীন মেজর জিয়ার সাথে থেকে প্রায় দুইমাস একত্রে কাজ করেন। পরে জিয়া 'জেড ফের্সের' কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

এর কিছুদিন পরেই মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী মেজর শওকতকে ডেকে পাঠান। তিনি জানান, "সিলেট এলাকায় আমাদের কোনো সেক্টর খোলা হয় নি এবং সিলেটের সুনামগঞ্জ, ছাতক এবং সালুটিকর এইসব এলাকায় অনেক বিডিআর এবং সৈন্য বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছেন।" জেনারেল ওসমানী তাঁকে শিলং চলে যেতে বলেন। এবং সেখান থেকেই মীর শওকত আলী ছাতক ও সুনামগঞ্জ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে যুদ্ধ পরিচালনা করেন।

এই সময়ে পাকিস্তানী আর্মিদের জন্য সিলেট থেকে নদী পথে যেসব ছোট ছোট নৌকা এবং ছোট ছোট জাহাজ রসদপত্র নিয়ে ঢাকার দিকে যেত মীর শওকত আলী তাঁর বাহিনী নিয়ে সেগুলো আটক করে রসদপত্রাদি কেড়ে নিয়ে কিছু নিজেদের জন্য রেখে বাকীগুলো বাংলাদেশ হেডকোয়ার্টারে পাঠিয়ে দিতেন। ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের আম্রকাননে ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণার পর মীর শওকতকে ৫ নং সেক্টরের দায়িত্ব দেয়া হয়।

সেনা প্রধান ও সেক্টর কমান্ডার --> মীর শওকত আলী
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×