somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ মানুষের জন্য, না-কি মানুষ নেতা আর বুদ্ধিজীবিদের জন্য?

২৯ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ১২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যদি জীবনের স্বাদ পেতে চাই তবে নিজেকে অবশ্যই বিলিয়ে দিতে হবে মানুষের মাঝে, সমাজের লাঞ্ছিত বঞ্চিত অবহেলিত নিস্ব আর ধনিক শ্রেনীর মানুষের কত ভেদাভেদ-তাদের মানসিকতার কত পার্থক্য তা শ্রেনী ভেদে সকলের সাথে মিশলেই কেবল বোঝা যায়।উঁচু তলায় বাস করে-মুখে মানবতার কথা বলে নিজেকে সত্যিকারের মানুষ বলে প্রমান করা যায় না।
আমাদের সমাজে অনেকেই আছেন যারা নিজেদেরকে সমাজ সেবক,মানব দরদী গরীবের বন্ধু বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। অথচ বাস্তবে দেখা যায় তারাই আবার কোন না কোনো ভাবে গরীবের পেটে লাথি মেরে নিজের আখের গোছাচ্ছে।নিজের বাড়ির কাজের লোকটির মাসিক বেতন ঠিক মত দেননা-দুবেলা খেতে দিতে চাননা,বাসি পঁচা খাবারগুলো বরাদ্দ থাকে ঐ সমস্ত গরীব কাজের লোকদের জন্য। কিন্তু তারাই আবার সভা সেমিনারে গরীবের অধীকার নিয়ে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে বেড়ান।
এ সমস্যা শুধু ব্যাক্তি বিশেষে নয়-আমাদের দেশের রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বদের বেলায় ও প্রযোজ্য।যে সমস্ত রাজনীতিক এ দেশে রাজনীতি করেন-তারা কেও কোনোদিন অনাহার অর্ধাহার কি জিনিষ তা অনুভব করেন নি।একজন নিম্নবিত্তের মানুষ কিভাবে কত টাকা একদিনে রোজগার করেন তা তারা জানেন না-জানতে চান ও না।অথচ সেই রাজনীতিকেরাই দেশের সকল মানুষের ভাগ্য নিয়ন্তা।তারা মানুষের ভোট ও ভাতের অধীকারের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন,কিন্তু যখন সেই সমস্ত অভুক্ত অর্ধভুক্ত মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তখন ঐ সমস্ত অসহায় মানুষের ভাতের অধিকারের কথা বেমালুম ভুলে যান!ভুলে যান একদিব এই সমস্ত অসহায় মানুষকে অনেক স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের ভাগ্যের উন্নয়নের কথা বলে তাদের মুল্যবান ভোট নিজের বাক্সবন্দি করে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর তাই-যখন কোনো দরিদ্র মানুষ সেই রাজনীতিকের কাছে যেতে চান-তখন আর তার কাছে যাওয়া সম্ভব হয় না নিরাপত্তার অযুহাত দেখিয়ে! মহামান্য রাজনীতিকও তার প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়ে নিজেকে ব্যাস্ত রাখেন তথাকথিত পুজিপতিদের স্বার্থ রক্ষায়।হত দরিদ্র মানুষগুলো যথারীতি নিজেদের ভাগ্য বিড়ম্বনা নিয়ে দারিদ্রের কষাঘাত সহ্য করেই জীবন অতিবাহিত করতে থাকেন আর নিজের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য নিজেকে দোষারপ করে আত্মতুষ্টি লাভ করে পরবর্তিতে আর ভুল না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। পরবর্তিতে আবার আসে নির্বাচন-আবার আসে অন্য কোনো রাজনীতিক আবারো নতুন নতুন কথার ফুলঝুরি,প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি। আবার ও কোনো একজন রাজনীতিক নির্বাচিত হন এবং আবারো তিনি জনগনের কথা ভুলে যান। এইতো আমাদের পরিনতি!!
এ দেশের সহজ সরল মানুষগুলো বার বার প্রতারিত হতে থাকেন। আর আমাদের রাজনীতিকেরা জনগনের ভাগ্য উন্নয়নের কথা বলে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনের ডাক দিয়ে থাকেন, জনগন ভাবে এই বুঝি তাদের ভাগ্যউন্নয়নের আন্দোলন। জনগন তাদের জীবন বাজি রেখে রাজপথে ঝাপিয়ে পড়ে,নিজেদের রক্তের বিনিময়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে। কিন্তু তাতে জনগনের ভাগ্যের উন্নতি কখনোই হয় না-যা হবার তা হয় নেতার।নেতা এম পি থেকে মন্ত্রী, মন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী বনে যান কিন্তু যে সর্বহারা জনগন তারা সব হারাদের দলেই পড়ে থাকে।তাদের ভাগ্যের চাকা কোনো দিনই আর ঘোরে না।
আমাদের দেশের নেতারা পাঁচ তারা হোটেলে বাতাস ঠান্ডা করা যন্ত্রের সাহায্যে শীতল বাতাসের নিচে বসে পোলাও বিরিয়ানী খেয়ে দেশের কোটি কোটি টাকার শ্রাদ্ধ করে দেশের জনগনের দারিদ্র বিমোচনের কৌশল নির্ধারন করেন,কাগজে কলমে দেশ থেকে দারিদ্র দূর করে দেশকে স্বাবলম্বি করে ফেলেন। অথচ দেখা যায় বাস্তবতা ভিন্ন-প্রতি নিয়ত দরিদ্রের সংখ্যা বাড়তে থাকে,অতি দরিদ্র থেকে একদিন সর্বশান্ত হয়ে যে রাজপথে আন্দোলন করে সে ভাগ্যের উন্নতি ঘটাতে চেয়েছিলো সেই রাজপথে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হন।অপর দিকে আমাদের নেতারা একের পর এক মিল কল কারখানা গড়তে থাকেন,বিদেশী ব্যাংকে টাকার স্তুপ করতে ব্যাস্ত থাকেন।সামান্য বেতনে চাকুরী করা সাবেক আমলা-সেনা অফিসার অথবা কোনো অফিসের কেরানী-নেতা, কয়েক বছরের ব্যাবধানে বনে যান শিল্পপতি-মাল্টি মিলিয়নার।এটাইত বাস্তবতা এই বাংলাদেশের।
যাদের নিজেদেরই কোনো নীতি নেই-সে সমস্ত রাজনীতিকের হাতেই আমরা তুলে দিয়েছি আমাদের ভবিষ্যত গড়ার ণীতি নির্ধারনি ক্ষমতা।তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা কত কিছুই না করে চলেছি প্রতিনিয়ত!! আমরা একবার ও ভেবে দেখিনা-ঐ সমস্ত নেতারা আমাদের জন্য কখনোই কিছু করে দেননি-বরং আমরাই তাদেরকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছি।এ দেশের মানুষ নিজের উপার্জিত অর্থেই নিজের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।কোনো নেতা বা সরকার কারও পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতে সামান্য তম ও সাহায্য করেনি বা করছেনা।কৃষক ফসল ফলিয়ে,তাঁতি তাঁত বুনে শ্রমিক মেহনত করে তার মজুরী দিয়ে নিজের ও পরিবারের চাহিদা পুরন করে থাকে।তবে কেনো আমরা ঐ সমস্ত নীতিহীন নেতাদের চামচামি করে নিজেদের মুল্যবান সময় ও শ্রম নষ্ট করব,কি লাভ তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে,কেনো তাদের জন্য আমরা রাজপথে আমাদের রক্ত ঢেলে দেব? আমাদের প্রয়োজনে কি তারা সামান্যতমও সহানুভুতি দেখাতে ছুটে আসে আমাদের কাছে? যে কৃষক শ্রমিক রাজনীতিকদের স্বার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন সেই রাজনীতিক কি একবার ও ঐ ব্যাক্তির পরিবারের সমস্যা জানার বোঝার বা সমাধানের চেষ্টা করে থাকেন? করেন না। একটা কাজ তারা করেন-আর তা হলো ঐ মৃত ব্যাক্তির লাশ নিয়ে মিছিল করে অবশিষ্ট জনগনের সস্তা সহানুভুতি আর সমর্থন আদায় করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন।ঘটা করে তার লাশ ফুলের মালা দিয়ে কবরস্থ করা হয় এবং দু একটি শোক সভা করে নেতার দ্বায়িত্ব সমাপ্ত করা হয়। দুদিন পর দেখা যায় ঐ মৃত ব্যাক্তির বৌ-বাচ্চারা ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে।হয়ত সেই নেতার দরজায় গিয়ে দারোয়ানের হাতে গলা ধাক্কা খেয়ে বিতাড়িত হচ্ছে!!
শুধু রাজনৈতিক নেতারাই নয়-বিভিন্ন এন জি ও মানবিধাকার সংগঠন শুশীল সমাজ ইত্যাদি যারা মানুষের অধীকার নিয়ে বড় বড় কথা বলে বেড়ায় তাদের সকলেই এ দেশের নীরিহ জনগনের সাথে সদা সর্বদা এক নির্মম রসিকতা করে চলেছেন।কেও শতকরা ৪৪% সুদ নিয়ে মানুষের দারিদ্র বিমচনের কথা বলে নোবেল পুরস্কার বাগিয়ে নিচ্ছেন। কেওবা মানবাধীকারের কথা বলে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ইংল্যান্ড আমেরিকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন।সবাই মানুষের কথা বলেন-কিন্তু একটিবারের জন্যও তারা মানুষের কাছে যান না।মানুষের সাথে মিলে মিশে দেখেন না কিভাবে মানুষ বেঁচে আছে।তারা সোনারগাঁ-শেরাটনে সেমিনার করে লম্বা লম্বা কথা বলেন কিন্তু দু-পা বাড়িয়ে একদিনো একটি বস্তিতে বা একটি ফুটপাতে গিয়ে দেখেন না-এই দেশের মানুষ কিভাবে জন্তু জানোয়ারের মত মানবেতর জীবন জাপন করছেন।আর সেই সমস্ত মানুষের জীবন মান উন্নয়নের কথা বলেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আর সংস্থার নিকট থেকে কোটি কোটি টাকা এনে সেই টাকা দিয়ে দামি গাড়ী কিনে নিস্ব মানুষগুলোর বুকের উপর দিয়েই তারা ঘুরে বেড়ান!!
আর আমরা নির্বিকার তাদের কর্মকান্ড দেখেও তাদেরকে মহান মানুষ বলি এবং তাদেরকে সমর্থন করি।যখন দেখি উনারা সভা সেমিনারে দেশ থেকে দারিদ্র বিমোচনের কথা বলেন আর দেশের সাধারন মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে ডাষ্টবিন থেকে খাবার কুড়িয়ে খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে তখন নিজেকে মানুষ বলে ভাবতে লজ্জা করে।লজ্জা করে পরিচয় দিতে আমি ও এ দেশের মানুষ।কিন্তু যাদের লজ্জা পাবার কথা তারা ঠিকই নির্লজ্জের মত মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়ায় আর আমরা তাদের পিছনে পিছনে জয়ধ্বনী আর জিন্দাবাদ দিতে থাকি!! তখন মনে হয় মানুষ মানুষের জন্য কথাটা ভুল-আসলে মানুষ নেতা আর তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের জন্য!!!
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×