somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আহ কি আরামের ঘুম!!! (কফি(টুট)পেষ্ট)

২৬ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রিক দেবতা হিপনোসকে ঘুমের অধিকর্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর ঘুম হচ্ছে হিপনোসের উপাসনা। হিপনোসের পুত্র মরফিয়াস আবার স্বপ্নের দেবতা। এদিকে রোমান পুরাণে হিপনোসের নাম হচ্ছে সমনাস। কোনো কোনো পুরাণে ঘুমকে বলা হচ্ছে দেবতার উপাসনা। বাইবেলে বর্ণিত আছে প্রথম পুরুষ এডামের পিঞ্জরাস্থি তুলে ইভ-এর সৃষ্টির সময় এডামকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছিল। ঘুম নিয়ে মিথ যা-ই হোক না কেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানে ঘুম হচ্ছে এমন একটা অবস্থা, যেখানে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী তার চারপাশ থেকে আলাদা হয়ে সাময়িকভাবে ‘অচেতন’ থাকে। তবে শরীরের ভেতরের বা বাইরের কোনো উদ্দীপনার কারণে আবার পূর্ণ চেতনা ফিরে পায়।

আমরা কেন ঘুমাব:
গবেষকেরা একমত হয়েছেন যে শরীর ও মনের শক্তি পুনঃসঞ্চয় (রিস্টোর) করার জন্য এবং সব ধরনের শারীরবৃত্তিক কাজের সমতা রক্ষার জন্য ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, স্মৃতি ধরে রাখতে, আবেগকে পরিচালিত করতে ও মনঃসংযোগ বাড়াতে ঘুমের ভূমিকা আছে। হরমোনের নিঃসরণ, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালাতেও ঘুমের প্রয়োজন।

কতটা ঘুমালে তবে ‘ঘুম’ বলা যায়:
শরীর ও মনের জন্য কতটা ঘুম প্রয়োজন—এ নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক, হয়েছে অনেক গবেষণা। কিছু মানুষ আছে, যাঁদের বলা হয় ‘শর্ট স্লিপার’, যাঁরা প্রতিদিন গড়ে ছয় ঘণ্টারও কম সময় ঘুমিয়ে তাঁদের স্বাভাবিক কাজগুলো সচল রাখতে পারেন। আর যাঁদের প্রতিদিন গড় ঘুমের পরিমাণ কমপক্ষে নয় ঘণ্টা, তাঁদের বলা হয় ‘লং স্লিপার’। কেউ কম ঘুমিয়েই তাঁর ঘুমের চাহিদা পূরণ করতে পারেন, আবার কারও লাগে বেশি ঘুম। সদ্য জন্মানো ছোট্ট শিশু দিনে প্রায় ১৬ ঘণ্টা ঘুমায়, আর তিন থেকে ছয় বছরের শিশুরা দৈনিক প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটায়। পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের গড়পড়তা দৈনিক ঘুমের পরিমাণ সাত-আট ঘণ্টা। বৃদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমের পরিমাণ ও গুণগত মান কমতে থাকে, ঘুম হয়ে আসে হালকা। গর্ভাবস্থায় রাতে ও দিনে ঘুমের পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে।

ঘুমের পর্যায়:
ঘুমের দুটি পর্যায় থাকে। একটি নন-র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট (NREM) পর্যায়, আরেকটি র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট (REM) পর্যায়। প্রথম পর্যায়টি আমাদের ঘুমের ৭৫ শতাংশ অংশ জুড়ে থাকে। এ সময় আমাদের প্রায় সব শারীরবৃত্তীয় কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যায়। আর REM পর্যায়টি অনেক ছোট। এ সময় আমাদের মস্তিষ্ক প্রায় জাগ্রত অবস্থার মতো সচল থাকে এবং আমরা এ পর্যায়ে স্বপ্ন দেখি।

ঘুমের সমস্যা যত:
সাধারণভাবে আমরা ঘুম কম হওয়াটাকেই ঘুমের সমস্যা হিসেবে মনে করে থাকি। ঘুমের সমস্যার মধ্যে আছে পরিমাণের তারতম্য। ঘুম না আসা বা কম ঘুম হওয়া; যেমন ইনসমনিয়া। অসময়ে ঘুম আসা; যেমন নারকোলেপ্সি, সময়মতো ঘুম না আসা, ঘুমের গুণগত মান কমে যাওয়া, ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত নাকডাকা, ঘুমের মধ্যে হাত-পা ছোড়া, ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করা বা কথা বলা বা ভয় পাওয়া বা দুঃস্বপ্ন দেখা বা দাঁত কিড়মিড় করা ইত্যাদি। প্রায় এক শ ধরনের ঘুমের সমস্যা চিহ্নিত করেছেন ঘুমবিশেষজ্ঞরা। কয়েকটি সাধারণ ঘুমের সমস্যার মধ্যে রয়েছে—
ইনসমনিয়া বা নিদ্রাহীনতা: ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও ঘুম আসতে চায় না। অথবা ঘুম এলেও সেটার গুণগত মান খারাপ থাকে যে ঘুম শেষ হওয়ার পরও তন্দ্রাভাব থেকে যায়। বারবার ঘুম ভেঙে যেতে পারে।
নারকোলেপ্সি: কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের যে স্থান থেকে ঘুম নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সে জায়গার সমস্যা হলে এ রোগ হয়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা দিনে হঠাৎ করে অসময়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
স্লিপ এপনিয়া: ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টের জন্য বারবার ঘুম ভেঙে যায়। সাধারণত শ্বাসতন্ত্রের সার্জারির মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়।
রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম: পায়ে এমন এক ধরনের ঝিনঝিনে অনুভূতি হয় যে রোগী ঘুমাতে পারেন না; বরং বারবার পা নাড়াতে থাকেন।
সমনামবোলিজম: ঘুমের মধ্যে হাঁটা-চলা করা (স্লিপ ওয়াকার)। এ সময় হাঁটতে হাঁটতে তিনি কী করেন, সে বিষয়ে পরদিন তাঁর কোনো কিছু মনে থাকে না।

কেন এ সমস্যা: নানা কারণে ঘুমের সমস্যা হতে পারে, যেমন:
ঘুমের জন্য অনুকূল পরিবেশ না থাকা। যেমন বেশি হইচই, আলো, অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম ইত্যাদি।
অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যাফেইন বা অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় গ্রহণ।
ধূমপান বা যেকোনো মাদক গ্রহণ।
অতি উদ্বিগ্নতা (অ্যাংজাইটি), বিষণ্নতা, আবেগের সমস্যা, লঘু বা গুরুতর মানসিক রোগ।
তীব্র মানসিক চাপ বা স্ট্রেস, উৎকণ্ঠা, তীব্র শোক, কর্মক্ষেত্রে অধিক মানসিক চাপ।
দিনের বেলায় বেশি ঘুমানো বা শুয়ে কাটানো।
দীর্ঘ সময়ের বিমানভ্রমণ, যখন টাইম জোন পাল্টে যায়।
যেকোনো শারীরিক রোগ ও স্থূলতা।

ঘুমের সমস্যার সাধারণ কিছু লক্ষণ:
ঘুম না আসা, আসতে দেরি হওয়া। দিনের বেলায় জেগে থাকতে না পারা। যখন-তখন, যেখানে-সেখানে ঘুমিয়ে পড়া। ঘুমের মধ্যে যেকোনো অস্বাভাবিক আচরণ করা। শ্বাসকষ্ট হওয়া, হাঁটা, কথা বলা, চিৎকার করা, হাত-পা ছোড়া ইত্যাদি।
নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘুমানোর পর জেগে ওঠে তন্দ্রাভাব ও ক্লান্তবোধ করা।
মেজাজ খিটখিটে থাকা, মনোযোগ কমে যাওয়া, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া এমনকি খিঁচুনি হওয়া।

চিকিৎসা:
ঘুমের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবার আগে যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে তা হলো—ঘুমের সমস্যা যাই হোক না কেন, এ জন্য কোনো অবস্থাতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ সেবন করা যাবে না। ঘুমের সমস্যার রয়েছে নানা রকম বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা। যেমন, বিহেভিয়ার থেরাপি, স্লিপ রেস্ট্রিকশন থেরাপি, রিলাক্সেশন এবং কেবল চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী উপযুক্ত ঘুমের ওষুধ আর ঘুমের সমস্যা নির্ণয়ের জন্য পলিসোমনোগ্রাফ, মাল্টিপল স্লিপ লেটেন্সি টেস্ট ইত্যাদি পরীক্ষা করা যেতে পারে।
ঘুমের সমস্যা: কী করবেন: প্রতি রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাবেন ও প্রতি সকালে একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করবেন।
বিছানায় হেলান দিয়ে বিশ্রাম নেওয়া (বিশেষত বিকেলের পর) বর্জন করার চেষ্টা করুন।
হালকা ব্যায়াম অনেক ক্ষেত্রে ভালো ঘুমের সহায়ক।
ঘুমাতে যাওয়ার দুই-তিন ঘণ্টা আগে একটু বেশি সময় নিয়ে হালকা গরম পানিতে গোসল করলে পেতে পারেন।
ঘুমের আধা ঘণ্টা আগে সামান্য হাঁটাহাঁটি, মেডিটেশন, গল্পের বই পড়াও ভালো ঘুমের জন্য উপযোগী।
শয়নঘরটিকে পরিপাটি, আরামদায়ক ও বাতাস চলাচলের উপযোগী। যদি রাতে বেশি সময় ইন্টারনেটে কাটাবেন না।
ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই-চার ঘণ্টা আগে রাতের খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করুন। ভাজা, পোড়া ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
দিনের বেলা কিছুটা সময় সূর্যের আলোর নিচে কাটান।
রাতে ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় বর্জন করুন। বর্জন করুন নিয়মিত মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল।
বিবাহিতদের জন্য নিয়মিত সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স ভালো ও পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য সহায়ক।
ঘুমাতে গিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা বর্জন করুন।
প্রয়োজনে নিতে পারেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ। তবে নিজে নিজে ঘুমের ওষুধ সেবন কখনোই নয়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×